‘গুন্ডে’ ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিকৃত তথ্য প্রকাশের অভিযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে৷ বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ গণজাগরণ মঞ্চও সরব এই ইস্যুতে৷
বিজ্ঞাপন
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার রবিবার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘গুন্ডে'-তে ইতিহাস বিকৃত করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে৷ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তার ব্যাপারে আমরা কৃতজ্ঞ, কিন্তু সেটি মূলত সহায়ক শক্তি হিসেবেই ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়ার কথা, মূল যোদ্ধা হিসেবে নয়৷''
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিনগুলো সম্পর্কে ইমরান লিখেছেন, ‘‘...নয় মাসের মরণপণ যুদ্ধ করে যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পর্যুদস্ত করে ঢাকা ঘেরাও করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন নিশ্চিত পরাজয় জেনেই ইয়াহিয়া খান ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববাসীর নজরকে সরিয়ে নেয়ার কূটকৌশল গ্রহণ করে৷''
শাহবাগ আন্দোলনের বছরপূর্তি
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা৷ তবে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আরো অনেক ইস্যুতে এখন সরব গণজাগরণ মঞ্চ৷ শাহবাগ আন্দোলনের বর্ষপূর্তি নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি৷ বর্ষপূর্তিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন আন্দোলনের কর্মীরা৷ গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে চলবে এই আন্দোলন৷
ছবি: DW/M. Mamun
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু
পাঁচ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় গণজাগরণ মঞ্চের অনুষ্ঠান মালা৷ তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হয় বর্ষপূর্তি৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘ফাঁসির’ দাবি
শাহবাগ আন্দোলনের এক বছর পূর্তির শোভাযাত্রায় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ‘ফাঁসির’ দাবিতে সোচ্চার ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
জনতার ভিড়
গণজাগরণের মঞ্চের আয়োজিত বর্ষপূর্তির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় সাধারণ মানুষের ঢল নামে৷ এক বছর পূর্তিতে ঢাকার শাহবাগ থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে গণজাগরণ মঞ্চ কর্মীরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘প্রতীকী ফাঁসি’
শোভাযাত্রায় ‘প্রতীকী ফাঁসির’ চিত্রও তুলে ধরা হয়৷ বলাবাহুল্য, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের উদ্যোগকে সমর্থন করলেও ফাঁসির বিষয়ে সমর্থন নেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের৷
ছবি: DW/M. Mamun
আলোকচিত্র প্রদর্শনী
আন্দোলনের বছর পূর্তিতে শাহবাগে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন শাহবাগ ছাড়িয়ে গোটা বাংলাদেশে এবং পরবর্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘নাস্তিক ব্লগার’
শাহবাগ আন্দোলন থেকে সৃষ্ট গণজাগরণের মঞ্চের গত এক বছরের পথচলা মোটেই সহজ ছিল না৷ বরং আন্দোলনের এক পর্যায়ে খুন হন ব্লগার রাজিব হায়দার৷ এরপর ঢালাওভাবে ব্লগারদের নাস্তিক এবং ইসলাম ধর্মবিরোধী আখ্যা দিয়ে তাঁদের শাস্তির দাবিতে রাজপথে নামে হেফাজতে ইসলাম৷ এক পর্যায়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ব্লগে ‘ইসলাম ধর্ম নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য ও কটূক্তির' অভিযোগে চার ব্লগারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
ছবি: Getty Images
‘সমর্থন আগের মতোই’
তবে ‘নাস্তিক ব্লগার’ প্রচারণার কারণে শাহবাগে জনসমর্থন কমেনি বলে মনে করেন ব্লগার আরিফ জেবতিক৷ শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম এই কর্মী বলেন, ‘‘আমাদের শুরুতে যে জনসমর্থন ছিল, আজকেও সেই একই জনসমর্থন আছে৷ এবং আমি চ্যালেঞ্জ করি যে কোনো মিডিয়া এটা জরিপ চালিয়ে দেখতে পারে৷’’
ছবি: Arif Jebtic
ভিন্নমত
শুরুর দিকে শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন অবশ্য মনে করেন, ‘‘রাজনৈতিক দল এবং আমাদের রাজনীতিক নেতারা আসলে আমাদের আন্দোলনটা খেয়ে ফেলেছে৷’’ দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত আসিফ গত বছর বাংলাদেশে কয়েকমাস কারাভোগের পর বর্তমানে জার্মানিতে অবস্থান করছেন৷
ছবি: DW/A. Islam
বিভিন্ন ইস্যুতে সরব গণজাগরণ মঞ্চ
প্রসঙ্গত, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবির পাশাপাশি আরো অনেক ইস্যুতে সরব রয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ৷ সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ‘রোড মার্চ’ করে গণজাগরণ মঞ্চ৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
10 ছবি1 | 10
ইমরান লিখেছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে যে ২২ নভেম্বর থেকেই বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী একযোগে আক্রমণ চালানো শুরু করে এবং পাকিস্তানিদের উপর চূড়ান্ত আক্রমণে তাদের দিশেহারা করে তোলে৷ অবশ্যম্ভাবী বিজয়ের মাত্র ১৩ দিন আগে, ৩ ডিসেম্বর ভারত পশ্চিম পাকিস্তান সীমান্তে আক্রমণের শিকার হয়ে যুদ্ধে জড়ায় এবং বাংলাদেশ অঞ্চলে এই যুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর সঙ্গে মিলে যুদ্ধে অংশ নেয়৷''
গুন্ডে সিনেমায় ‘ইতিহাস বিকৃতির অংশটুকু' প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার বিকেল চারটায় ঢাকার শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে গণজাগরণ মঞ্চ৷ ইমরান এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘‘সিনেমাটির প্রযোজক সংস্থা এক বিবৃতির মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে কিন্তু ইতিহাস বিকৃতির অংশটুকু প্রত্যাহার করেনি৷ এর ফলে এ ব্যাপারে আরো শক্ত প্রতিবাদ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে৷''
এদিকে, বাংলা ব্লগেও ‘গুন্ডে' নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে৷ আমার ব্লগ ডটকমে ব্লগার আরিফ এ চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘আমি মনে করি এমন আপত্তিকর চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত যে ভারত যাতে আর কোন দিন আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখাতে সাহস না পায়৷''
একই বিষয়ে সামহয়্যার ইন ব্লগে মিজানুর রহমান মিলন লিখেছেন, ‘‘ভারত যে কারণেই আমাদের সহযোগিতা করুক, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান আছে - আমরা কেউ (তা) অস্বীকার করব না৷ এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ৷ কিন্তু তাই বলে দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম ও নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আমরা বিকৃতি বা অবমূল্যায়ন করতে দিতে পারি না৷ এটা ঠিক ভারতীয়রা তাদের বীরত্ব দেখবে বা দেখাবে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসেরও যাতে প্রতিচ্ছবি ও প্রতিধ্বনিত হয় সেটাও থাকতে হবে৷''
উল্লেখ্য, ‘গুন্ডে' ছবির কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে এর প্রদর্শন বন্ধে ভারতের কাছে দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শামীম আহসান রবিবার এই প্রসঙ্গে জানান, বর্তমান আঙ্গিকে গুন্ডের প্রদর্শন অবিলম্বে বন্ধে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে৷