সিরিয়া ও ইরাকে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে সম্প্রতি একাধিক সাফল্য সত্ত্বেও তাদের শক্তি পুরোপুরি ক্ষয় হয়নি৷ তবে ‘বিশ্বাসঘাতক'-দের শাস্তির ঘটনা তাদের দুর্বলতাও দেখিয়ে দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
Iraq: the battle for Fallujah shifts to city centre
00:40
প্রবল চাপের মুখে সার্বিকভাবে আইএস নিজস্ব শিবিরে ঐক্য বজায় রাখতে পারছে না বলে বিভিন্ন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ আর্থিক অনটন, পরাজয়সহ বিভিন্ন কারণে যোদ্ধারা পালানোর চেষ্টা করছে৷ গুপ্তচর সন্দেহে তাদের অনেককে হত্যাও করা হচ্ছে৷
আইএস-এর হাত থেকে ফালুজা শহর পুনর্দখল করতে ইরাকের সেনাবাহিনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে৷ যেসব নিরীহ মানুষ শহর ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করছে, তাদের দিকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে আইএস যোদ্ধারা৷ ইউফ্রেটিস নদীর পেরোতে গিয়ে অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছে৷ নরওয়েজিয়ান রেফিউজি কাউন্সিল এই অভিযোগ জানিয়েছে৷
উল্লেখ্য, গত মে মাস থেকেই সামরিক অভিযান চলছে৷ তবে শহরে প্রায় ৫০ হাজার নিরীহ মানুষ আটকে পড়ায় এবং আইএস-এর প্রবল প্রতিরোধের ফলে সাফল্য আসছে না৷ তবে রবিবার ইরাকি বাহিনী শহরের দক্ষিণ প্রান্ত দখল করতে সক্ষম হয়েছে৷ মোসুল শহর দখলের উদ্যোগে অবশ্য বিলম্ব ঘটছে৷
ফালুজায় এখনো সাফল্য না এলেও সিরিয়ায় মনবিজ শহর আইএস-এর দখল থেকে মুক্ত করতে অগ্রগতির খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ কমপক্ষে ১৫০ আইএস যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে মার্কিন-সমর্থিত এক গোষ্ঠীর এক মুখপাত্র দাবি করেছেন৷ তাঁর মতে, অনেক যোদ্ধা সপরিবারে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে৷ ফলে শহরে তাদের দখলে থাকা বাড়িঘর খালি হয়ে যাচ্ছে৷
সিরিয়ার সরকারি সূত্র অনুযায়ী, সেনাবাহিনী আইএস-নিয়ন্ত্রিত এলাকার রাজধানী বলে পরিচিত রাকা শহর দখলের ক্ষেত্রে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ শহরের কাছে আরও এলাকা সরকারি বাহিনীর দখলে চলে এসেছে৷ তারা তকবা সামরিক বিমান ঘাঁটির কাছাকাছি এসে পড়েছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস৷ গত বুধবার থেকে রাকা দখল অভিযান শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ৭০ জন আইএস যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে তাদের দাবি৷
এদিকে তুরস্কসহ মার্কিন কোয়ালিশন বাহিনীর হামলায় সিরিয়ায় কমপক্ষে ৭ জন আইএস যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা দাবি করছে৷ সীমান্তে এবং আজাজ শহরে এসব হামলার মাধ্যমে তুরস্কের বিরুদ্ধে হামলার প্রস্তুতিও বানচাল করা হয়েছে বলে এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে৷
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷