1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের তদন্ত চায় জাতিসংঘ

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৭ আগস্ট ২০২২

বাংলাদেশে গুম, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড ও পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় জাতিসংঘ নিরপেক্ষ তদন্ত চায় বলে জানিয়েছেন দেশটি সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল বাচেলেট৷

ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেল বাচেলেটছবি: Munir Uz Zaman/AFP

চারদিনের বাংলাদেশ সফরের শেষদিন বুধবার বিকেলে তিনি ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির নানা ইস্যু নিয়ে কথা বলেন৷ বাচেলেট বলেন, ‘‘গুম, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড ও পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত চায় জাতিসংঘ৷'' 

মানবাধিকার মান নিশ্চিতের পরামর্শ

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান বলেন, “নির্যাতন, বিচারবির্হিভূত হত্যাকাণ্ড, গুম - এমন সব অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের বিরুদ্ধে। আমি সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি৷ স্বাধীন, স্বচ্ছ ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের কথা বলেছি। সেই সঙ্গে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছি।”

শুধুমাত্র আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের নিয়ে ঢাকায় করা সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েও মন্তব্য করেছেন বাচেলেট৷ তিনি বলেন, “এই আইনটি বাতিল বা সংশোধনের জন্য সরকারের সঙ্গে আগের আলোচনায় পরামর্শ দিয়েছি।”

ওটিটি প্লাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রস্তাবিত আইন সঙ্গে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছি।” 

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাচেলেট বলেন, “আমি বিভিন্ন পর্যায়ের যতজনের সঙ্গে কথা বলেছি, সবার কাছেই মানবাধিকার ইস্যুতে উদ্বেগ তুলে ধরেছি। আমি বলেছি, যতগুলো মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ আসছে সেটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আমাদের জানাতে হবে এবং জনগনের কাছে তুলে ধরতে হবে। আমি মনে করি, জনগনের কাছে সত্য তুলে ধরাটা জরুরী। ন্যায়বিচার দিতে হবে। তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করলেই লংঘনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।”

অভিযোগ আমলে নেয়ার আহ্বান

বাচেলেট আরও বলেন, “সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় আমি এই আহ্বান জানিয়েছি যে, অভিযোগ অস্বীকার না করে আমলে নিন। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মেকানিজমের মাধ্যমে তদন্ত করুন। তদন্তে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে বাদ, তবে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নিন।” বিশ্বের সব দেশকেই এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে একই পরামর্শ দেয়ার কথাও জানান জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার।

ঢাকা সফর নিয়ে তিনি বলেন, “দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সমস্যা ও আগামী বছর হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কেও আমরা সরকারকে সব স্টেকহোল্ডার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের সঙ্গে বসে, সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছি।”

তিনি আরও বলেছেন, “বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের সময় সুনাম অর্জন করছে। তাই বাংলাদেশের সরকারের এমন একটা ব্যবস্থা করা উচিত যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানবাধিকার সমুন্নত রেখে কাজ করতে পারে। এখানে তাদের বিরুদ্ধে কেন এমন অভিযোগ আসবে?”

‘‘বাংলাদেশ আগামী নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে৷ একটি উত্তেজনাকর ও মেরুকরণের দিকে যাচ্ছে৷ এই অবস্থায় সুশীল সমাজের কর্মকাণ্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলেও দেশটিতে সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন অধিকার কর্মীদের কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে বলে মনে করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল বাচেলেট৷

তিনি বলেন, ‘‘টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এসময় রাজনৈতিক দল, কর্মী, সুশীল সমাজের কর্মীদের সভা সমাবেশের সুযোগ দেওয়া জরুরী৷ তাদের অধিকার থেকে যদি বঞ্চিত করা হয় তাহলে সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে৷ নারী, সংখ্যালঘু, তরুণদের দাবি বা চাওয়া শুনতে হবে৷ ওই সময়টাতে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকবে সেখানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে৷ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ি মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশকে কাজ করতে হবে৷''

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক

এর আগে বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন বাচেলেট৷ বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সামরিক শাসনামলে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন প্রতক্ষ্য করেছে বাংলাদেশ৷ এমনকি আমাদের বিচার চাইতেও বাধা দেওয়া হয়েছে৷'' 

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের বাংলাদেশ সফর

03:40

This browser does not support the video element.

তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যার কথাও উল্লেখ করেন৷ প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, তিনি এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় সেই হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন৷ এসময় জাতিসংঘের হাইকমিশনার বাচেলেট বলেন, তার পরিবারকেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, যখন তার দেশে একটি অত্যাচারী সরকার ক্ষমতায় ছিল৷''

‘‘বাচেলেট কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান৷ প্রধানমন্ত্রী জবাবে বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সেই সুযোগের ব্যবস্থা করতে পারেন,'' যোগ করেন করিম৷

গত রোববার বাংলাদেশে আসেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাচেলেট৷ প্রথম দিনেই তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ এ সময় গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সংবাদমাধ্যম এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়৷ 

পরদিন তিনি মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে গুম নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বাকস্বাধীনতা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, নারী নির্যাতন নিয়ে আলোচনা হয়।

মঙ্গলবার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যান বাচেলেট। সেখানে রোহিঙ্গারা জাতিসংঘের এই কর্মকর্তার কাছে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করে রাখাইনে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। তবে রাখাইনের এখনকার পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠানো শুরু করাটা ঠিক হবে না বলে মত দিয়েছেন বাচেলেট। যতদিন পর্যন্ত রাখাইনের পরিস্থিতি অনুকূল হবে না ততদিন রোহিঙ্গাদের পাঠানো ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ