ঢাকার গুলশানে কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে ১২ ঘণ্টা পর জিম্মি সংকটের অবসান ঘটেছে৷ এ ঘটনায় ২০ জিম্মি ও ৬ বন্দুকধারী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সামরিক বাহিনী৷ একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
বিজ্ঞাপন
ঐ রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলায় ২০ জন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর৷ জিম্মি করার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে রাতেই তাদের হত্যা করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে৷ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক বলেন, অভিযানকারীরা ভেতরে ঢোকার পর ২০ জনের মৃতদেহ পায়৷এছাড়া অভিযানে ৬ জন হামলাকারী নিহত হয়েছে এবং একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি৷ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ঐ অভিযানটির নাম দেয়া হয়েছে অপারেশন থান্ডারবোল্ট৷ সেনা কমান্ডোরা ছাড়াও নৌ, পুলিশ, বিজিবি এবং র্যাবের সদস্যরা অংশ নেন৷ রেস্টুরেন্ট থেকে উদ্ধারকৃতদের মধ্যে এক জন জাপানী এবং দুই জন শ্রীলঙ্কান নাগরিক রয়েছেন৷
১৩ জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজন বিদেশি নাগরিক৷ হলি আর্টিজান বেকারিতে শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ঘণ্টাখানেকের এই অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন এক র্যাব কর্মকর্তা৷ নিহতরা জিম্মি না হামলাকারী সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি৷ অভিযানের শুরুতেই নারী ও শিশুসহ পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে সেখানে ঠিক কতজন আটকা পড়েছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে কতজন জীবিত উদ্ধার হয়েছেন - তা এখনও স্পষ্ট হয়নি৷
জিম্মি ঘটনার অবসানের পরপরই বিশ্বের প্রধান প্রধান গণমাধ্যম সংবাদটি প্রচার করে৷
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, প্যারা কমান্ডোদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান অংশ নেয় অভিযানে৷ এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন তিনি৷ সেনা সাঁজোয়া যান হলি বেকারির দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢোকে৷ অন্তত একজন বিদেশি নাগরিক সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেলেও, পুলিশ কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি৷
গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ঘটনার দায় স্বীকার করেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর' বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম৷
কারা এবং কেন অতর্কিত এ হামলা চালিয়েছে সে বিষয়ে পুলিশ এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেনি৷ প্রত্যক্ষদর্শীর দেয়া বর্ণনা তুলে ধরেছেন অধ্যাপক ম্যাক্স আব্রাহামস...
রাতে হামলার পরপরই ক্যাফে থেকে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন এমন একজন কর্মী বলেছিলেন, অন্তত ২০ জন সেখানে ছিলেন তখন, যাদের মধ্যে ছিলেন বেশ কয়েকজন বিদেশি৷
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷