ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহাগেনের সমুদ্রসৈকতে ভেসে ওঠা সামুদ্রিক গুল্মলতা থেকে ল্যাম্পশেড বা চেয়ার তৈরি করেন দুই ডেনিশ ডিজাইনার৷ সাধারণ সি-উইড হলো তাঁদের কাঁচামাল৷
বিজ্ঞাপন
আসবাব তৈরিতে নতুনত্ব
03:27
ডিজাইনার ল্যাম্পশেড, দেখলেই বোঝা যায়: হালফ্যাশনের ডিজাইনারদের হাতে তৈরি৷ অথবা হয়ত একটা ডিজাইনার চেয়ার – কিন্তু এরও রহস্য আছে৷ এ সবই কেল্প বা সি-উইড, অর্থাৎ সামুদ্রিক গুল্মলতা থেকে তৈরি৷
এই গুল্ম আসে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহাগেনের সমুদ্রসৈকত থেকে৷ এখানে যে সি-উইড সাগরের জলে ভেসে আসে, অধিকাংশ লোকের কাছে তা আবর্জনা ছাড়া আর কিছু নয়: সপসপে, হড়হড়ে, আধপচা কিছু একটা৷ ইয়োনাস এডভার্ড আর নিকোলাই স্টেনফাট থমসেন সেই সামুদ্রিক গুল্মকেই তাদের কাঁচামাল করে তুলেছেন৷ এডভার্ড বলেন, ‘‘সি-উইড এমন একটি বস্তু, যা দুনিয়ার সর্বত্র পাওয়া যায়, যা সবাই জোগাড় ও ব্যবহার করতে পারেন৷ ডেনমার্কের মানুষ সহজ-সরল ডিজাইন খুব পছন্দ করেন৷
সহজ জীবনযাপনের শিল্প
প্রতি বছরের মতো এবারও জার্মানির কোলন শহরে বসেছে ইন্টারনাৎসোনালে ম্যোবেল মেসে (আইএমএম) বা আন্তর্জাতিক ফার্নিচার মেলা৷ ছবিঘরে দেখে নিন এই মেলায় প্রদর্শিত কিছু অভিনব ডিজাইন৷
ছবি: DW/B. Görtz
গল্প বলা তাঁবু
দূরের কোনো দেশের কথা মনে করিয়ে দেয়া, কোনো ইচ্ছে পূরণের প্রতীক, কোনো স্বপ্ন, কোনো সংস্কৃতিকে তুলে ধরে – এমন তাঁবুতে বাস করা মন্দ কী! আলেকসান্ডার সাইফ্রাইড অসম্ভব সুন্দর এই ‘কারগাহ তাঁবু’ তৈরি করেছেন উত্তর আফগানিস্তানের এক ধরণের ঘরের আদলে৷ জার্মান কোম্পানি রিচার্ড লাম্প্যার্টের জন্য নির্মাণ করা এই অভিনব ঘরটির পেছনের ভাবনাটা হলো, যেখানে তাঁবু ফেলা যায়, সেখানেই বাস করতে পারেন আপনি৷
ছবি: DW/B. Görtz
যেন স্বপ্ন দেখছি...
জেন ভরথিংটন ডাচ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান লেওলুক্সের জন্য তৈরি করেছেন সোফার মতো এই দোলনাটি৷ তাঁর এই ডিজাইন কোলনের আন্তর্জাতিক ফার্নিচার মেলায় ‘ইন্টেরিয়র ইনোভেশন’ অ্যাওয়ার্ড জিতেছে৷ মেলায় পুরো জানুয়ারি মাস জেনের এই স্বপ্নের ঘোর লাগানো সোফা প্রদর্শিত হবে৷
ছবি: DW/B. Görtz
সময় পেরিয়ে...
এমন চেয়ারের আদি ডিজাইনার চার্লস এমেস এবং তাঁর স্ত্রী রে৷ ডিজাইন কবে করা হয়েছিল ৬০ বছরেরও বেশি আগে! পরবর্তীতে অন্য ডিজাইনাররা নিজেদের কল্পনার তুলির আঁচড়ে চার্লস আর রে দম্পতির সৃষ্টিকে নতুন জীবন দিয়েছেন বহুবার৷ তার দিয়ে তৈরি ছবির এই চেয়ারগুলোও চার্লস-রে দম্পতির কাজ থেকে প্রেরণা নিয়েই করা৷ ফার্নিচার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ভিত্রা-র জন্য দেখতে সহজ অথচ চমৎকার ডিজাইনটি করেছেন ডিটার থীল৷
ছবি: DW/B. Görtz
ডেনিশ আকর্ষণ
মেলার গত আসরে তাঁরা ছিলেন না৷ সবাই খুব মিস করেছেন তাঁদের৷ তবে এবার স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ডিজাইন নিয়ে পূর্ণ মহিমায় ফিরে এসেছেন গুবি, মুটো, নরমান কোপেনহাগেনের মতো অনেকে৷ ওসব দেশের ফার্নিচারের বিশেষ একটা বিশেষত্ত হলো, সাধারণভাবে খুব সুন্দর আসবাবগুলো ছোট কোনো ঘরেও ব্যবহার করা যায়৷ এই সোফাগুলোই দেখুন, কাঠ আর অন্য কিছু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা সোফাগুলোকে আকারে একেবারেই বড় বলা যাবে না৷
ছবি: DW/B. Görtz
আলোর মজা
ঘটনাক্রমে এই আসবাবপত্রের ডিজাইনারও ডেনিশ এবং এটিও খুব পুরোনো৷ ডিজাইনারের নাম ভ্যার্নার পান্টন৷ গত প্রায় ৫০ বছর ধরে কোলন আন্তর্জাতিক ফার্নিচার মেলায় বেশ নাম করেছেন তিনি৷ তাঁর ডিজাইন করা ‘ফান’ বা ‘মজা’ নামের ল্যাম্পটি আজও ‘বেস্ট সেলার’৷
ছবি: DW/B. Görtz
সবুজ বাস
লতানো গাছের আদলে বাতি৷ সবুজ লতা-পাতার পাশে সাদা ফুল, ফল হয়ে জ্বলন্ত এই বাতি এবারের আন্তর্জাতিক ফার্নিচার মেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে৷ আলোর সঙ্গে ক্যানাডিয়ান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বোচির নামও ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র৷
ছবি: DW/B. Görtz
সবুজ নিদ্রা
ইটালিয়ান ডিজাইনার কাপো ডি’অপেরার ডিজাইন করা এই বিছানা দেখলে কি মনে হয়, প্রচুর টাকা খরচ করে চোখধাঁধানো কোনো শয্যা তৈরির কোনো মানে আছে? কাপো আসলে বুনো পরিবেশের ছিমছাম একটা শয্যাও যে মুগ্ধ করতে পারে, তা-ই দেখাতে চেয়েছেন৷ বিছানার চাদর এলোমেলো৷ দেখে মনে হয় এই বুঝি কেউ কয়েক মুহূর্তের জন্য বিছানা ছেড়ে গেলেন, এক্ষুনি আবার ফিরে আসবেন৷
ছবি: DW/B. Görtz
একই উৎস থেকে
সার্বিয়ার ডিজাইনাররা এলইডি প্রযুক্তিকে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে এমন এক লাইট তৈরি করেছেন যার অভাব মেটাতে গেলে হয়ত একই ঘরে অনেকগুলো লাইট ব্যবহার করতে হবে৷ এই বাতির উৎস একটাই৷ এক জায়গা থেকেই বেরিয়েছে অনেকগুলো বাতি৷ দামও কিন্তু অনেক৷ ৫০ হাজার ইউরো!
ছবি: DW/B. Görtz
ভবিষ্যতে এমন হবে?
এবারও মেলায় এক তরুণ ডিজাইনারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ তাঁর কাজ ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে দেখানো৷ ডেনিশ-ইংলিশ ডিজাইনার লুইস ক্যাম্পবেল দারুণ কাজ দেখিয়েছেন৷ আইডিয়াটা চমৎকার৷ একটই বিশাল ঘর৷ এক ঘরেই শোবার ঘর, খাবার ঘর, রান্নাঘর – সব৷ একেক ঘরের ডিজাইন এমনভাবে করা যাতে একই ঘর অন্য ঘরের মতোও ব্যবহার করা যায়৷ এই রান্নাঘরটাই দেখুন৷ দেখে কেমন ওয়ার্কশপ ওয়ার্কশপ মনে হয় না!
ছবি: DW/B. Görtz
9 ছবি1 | 9
আবার এমন কাঁচামাল ব্যবহার করা, যা দিয়ে নানা ধরনের কাজ করা যায়, সেটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ – মানুষজনকে দেখানো যে, এই ধরনের কাঁচামাল আমাদের চারপাশে আর আমরা তা নানাভাবে ব্যবহারও করতে পারি৷''
নিজেদের স্টুডিওতে সি-উইড-কে প্রসেস করেন দুই শিল্পী৷ রং অনুযায়ী ভাগ করেন, তারপর ভেজা জামাকাপড়ের মতো বাতাসে শুকোতে দেন৷ শুকনো সি-উইড গুঁড়ো করা হয়৷ টাটকা কুড়নো গুল্ম ব্যবহার করার ফলে কোনো গন্ধ হয় না৷
‘মধ্যযুগীয় রসায়নশাস্ত্রের মতো'
রয়াল ডেনিশ অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এর স্নাতক নিকোলাই স্টেনফাট থমসেন বলেন, ‘‘ডিজাইনার হিসেবে আমরা এখানে নতুন কিছু একটা করার চেষ্টা করছি; মধ্যযুগীয় রসায়নশাস্ত্রের মতো সি-উইড থেকে কাজের জিনিস তৈরির চেষ্টায় আছি; আবার ভাবছি, সে পদার্থ দিয়ে কি ধরনের আকার হবে বা কী ধরনের ডিজাইন করা যাবে৷''
সি-উইড, জল, আঠা আর কাগজের টুকরো মিশিয়ে এই পদার্থটি তৈরি করা হয়েছে – যা থেকে ল্যাম্পশেড বানানো সম্ভব৷ চীনেমাটির বাসনের মতোই তা চুল্লিতে পোড়াতে হবে৷ তার ফলে ঘন বাদামি থেকে হালকা সবুজ, সব ধরনের রং বেরিয়ে আসবে৷ দুই ডিজাইনার সি-উইড থেকে চেয়ারও সৃষ্টি করেছেন৷
জার্মান তরুণদের পছন্দের আসবাবপত্র
সবার জন্যই সব দেশেই আসবাবপত্র পাওয়া যায়৷ তবে বাড়িতে এনে নিজেই কিছুটা কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে সেগুলোকে বানাতে হয়৷ আর এসব আসবাবপত্রই জার্মান তরুণদের বেশি পছন্দ
ছবি: Getty Images
নিজেই কাঠমিস্ত্রী
মানুষের পছন্দের কত কী থাকে, কিন্তু তাই বলে আসবাবপত্র? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, আসবাবপত্রের কথাই হচ্ছে৷ সোফা, টেবিল, চেয়ার, খাট, আলমারি, বড়-ছোট – সবার জন্যই সব দেশেই আসবাবপত্র পাওয়া যায়৷ তবে বাড়িতে এনে নিজেই কিছুটা কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে সেগুলোকে বানাতে হয়৷ আর এসব আসবাবপত্রই জার্মান তরুণদের বেশি পছন্দ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দামে সস্তা
ফার্নিচারগুলো দোকানে সুন্দর করে সাজানো থাকে, ঠিক আপনি যেমনটা চান সেরকমই৷ বাড়িতে নিয়ে যাবার সময় সব ফার্নিচারই ভাঁজ করা থেকে, অর্থাৎ ফার্নিচারের প্রতিটি অংশ আলাদা করা থাকে, যা পরে আপনাকে একাই বাড়িতে তৈরি করতে হয় বা লাগাতে হয়৷ সাথে দেয়া থাকে তার বর্ণনা এবং প্রয়োজনীয় স্ক্রু, পেরেক ইত্যাদি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তরুণদের পছন্দ
এসব ফার্নিচার দামে কিছুটা কম, জায়গাও কম লাগে৷ যেমন চারজন বসে খাওয়ার জন্য একটি টেবিল, সবসময় সেটাকে সেভাবেই রাখা হয়৷ পরে কখনো মেহমান এলে সেটাকে বড় করার ব্যবস্থা থাকে, যাতে ৮ জন মানুষ বসে খেতে পারে৷ সোজা কথায় ছোট বাড়িতে কম জায়গায় এসব ফার্নিচার আঁটানো সম্ভব৷
ছবি: picture alliance / dpa
আইকিয়া বা ইকেয়া
এ ধরনের ফার্নিচার জার্মানির অনেক দোকানে পাওয়া গেলেও বেশিরভাগই পাওয়া যায় ‘ইকেয়া’ নামক এক সুইডিশ দোকানে৷ এটা একটি চেন শপ, বিশ্বের অনেক দেশেই যার শাখা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাচ্চাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
তরুণদের পছন্দের দোকানগুলোতে বাচ্চাদের জন্য রয়েছে বিশেষ ফার্নিচার৷ আর এসব দোকানে ছোট্ট বাচ্চারা যেতে ভীষণ পছন্দ করে৷ ওদের খেলার এবং খাওয়ার জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা৷ মায়েরা ছোট বাচ্চাদের খেলতে দিয়ে নিজেরাও মনের সুখে কেনাকাটা করতে পারেন৷ আর বাচ্চারাও মনের আনন্দে নিজেদের মতো করে খেলতে পারে৷ বলা বাহুল্য, বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য সেখানে বেবিসিটারও থাকে৷
ছবি: DW
জায়গা বাঁচায়
একটি সুন্দর ডাবল বেড শুধু ঘুমানোর জন্য নয়, পাশাপাশি ড্রয়ারেরও কাজ করে৷ শুধু তাই নয়, কোনো বিছানা তুলে জায়গা বাঁচানোর জন্য সেটাকে আলমারি করে রাখা যায়৷
ছবি: Museum für Kommunikation Frankfurt
প্রচণ্ড ভিড়
এই ধরনের দোকানগুলোতে সবসময়ই থাকে প্রচণ্ড ভিড়৷ আর ইকেয়া হলে তো কথাই নেই৷ দোকানের সামনেই কয়েক হাজার গাড়ি পার্ক করার জন্য বিশাল জায়গাসহ কয়েক তলা বিশিষ্ট পার্কিং হাউস রয়েছে৷ তারপরও জায়গা পাওয়া যায়না৷ যদিও এসব ফার্নিচারের দোকানগুলোতে ফার্নিচার ছাড়াও ছোটখাটো জিনিস পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আনন্দ পাওয়া যায়
তরুণদের নতুন ফার্নিচার কেনার কথা হলেই যেন প্রথমেই এ ধরনের দোকানের কথা মনে পড়ে, বিশেষ করে ইকেয়ার কথা৷ তরুণরা দোকান থেকে ফার্নিচার নিয়ে এসে ঝটপট নিজেরাই তৈরি করে ফেলে৷ তাদের ভাষায় পয়সা বাঁচানো এবং নিজেদের হাতে তৈরি করার মধ্যেও রয়েছে আলাদা আনন্দ৷
ছবি: Getty Images
8 ছবি1 | 8
সেই চেয়ার শুধুপ্রোটোটাইপ হলেও, ৮০ কিলো ওজনের মানুষের ভার বইতে পারে৷ এডভার্ড বলেন, ‘‘এখনো আমরা মূল পদার্থটার বিকাশ ঘটাতে, সেটাকে কিভাবে ব্যবহার করা যায়, তা ভেবে বার করতে ব্যস্ত৷ এটা শুধু চেয়ার তৈরির জন্যে ব্যবহার হবে, বলে আমার মনে হয় না৷ এটা এমন একটা বহুল প্রকৃতির পদার্থ হবে, যা কৃষি কিংবা বাড়ি তৈরির কাজেও ব্যবহার করা চলবে৷''
সামুদ্রিক গুল্মলতা থেকে আবার খুব ভালো সার হয়৷ তবে সে আরেক কাহিনি৷