বাতের ব্যথা জীবনের একটা দীর্ঘ সময় ধরে পীড়া দিতে পারে৷ সাময়িক স্বস্তি ছাড়া চূড়ান্ত সমাধানের আশা বড়ই কঠিন৷ জার্মানির এক গুহার বাতাস রোগীদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসছে৷ বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে আরও গবেষণা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
রাইনার ব্লুমব্যার্গকে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতে হয়৷ ২৮ বছর বয়স থেকে তিনি ক্রনিক পিঠের ব্যথায় ভুগছেন৷ এখনো পর্যন্ত কোনো ওষুধে কাজ হয় নি৷ ব্লুমব্যার্গ বলেন, ‘‘আসলে প্রায় ২৮ বছর ধরে পিঠের ব্যথায় ভুগছি৷ এখন জানা গেছে সেটা অ্যাংকিলোসিং স্পন্ডিলাইটিস৷ তার সঙ্গে গাউট আর অস্টিওপোরোসিসও ধরা পড়েছে৷’’
রাইনার ব্লুমব্যার্গ-এর আপাতত একটাই আশা – পুরানো এক খনি৷ গত শতাব্দীতে শ্রমিকরা এখানে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতেন৷ সেখানে এখন বাতের রোগের নিরাময় করা হয়৷ ইউরেনিয়াম ভাঙলে ব়্যাডন নামের যে তেজস্ক্রিয় গ্যাস সৃষ্টি হয়, সেটাই এই চিকিৎসার চাবিকাঠি৷ এই গ্যাসের ঘনত্ব বেশি হলে ফুসফুসের ক্যানসার হয়৷ কিন্তু কম ডোজ বা পরিমাণ আশ্চর্য ফল দিতে পারে৷
হাঁটু ও কোমরের ব্যথায় যা করণীয়
বয়স বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় হাঁটু ও কোমরসহ শরীরের নানা জায়গায়, নানারকম ব্যথা৷ এ সব ব্যথাকে দূরে রাখতে কী করবেন তা জেনে নিন একজন জার্মান অর্থপেডিক্সের কাছ থেকে৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
অবাক হলেও সত্যি
জার্মানিতে হাঁটু ও কোমরের ব্যথায় ভুগছেন অন্তত ৫০ লাখ মানুষ৷ মিউনিখ শহরের অর্থপেডিক্স ডা. কনরাড শয়ারার জানান, ‘‘শুনতে অবাক লাগলেও ব্যথাকে দূরে রাখার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে হাঁটা-চলা এবং শরীর দুলিয়ে নৃত্য করা৷ কারণ একমাত্র শরীরকে ঠিকমতো সচল রাখলেই এ অসুখ কাছে ঘেষতে পারে না৷’’
ব্যথা শুরুর প্রথম লক্ষণ
শারীরিক কোনো পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে তার প্রভাব পড়ে, ব্যথাও হয়৷ অনেকের অবশ্য কম বয়সেও এ সব ব্যথা হয়ে থাকে৷ হাঁটা-চলা করার সময় শরীরে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে কোমর এবং হাঁটু দু’টোয়৷ ডা. শয়ারার জানান, এই দু’টো অঙ্গে যখন ব্যথা অনুভব হয় তখন অনেকেরই হাঁটা-চলার আগ্রহ কমে যায়৷ আর এটাই হচ্ছে ব্যথা শুরুর প্রথম লক্ষণ৷
ছবি: Fotolia/Edler von Rabenstein
নিয়মিত ব্যায়াম
‘‘হাঁটা-চলা বন্ধ করলেই ব্যথা কমে যাবে – এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা৷ বরং নিয়মিত হাঁটা-হাঁটি এবং বিশেষ কিছু ব্যায়াম করে ব্যথা কমানো সম্ভব৷’’ বলেন ডা. কনরাড শয়ারার৷ তাছাড়া জোড়ে হাঁটার সময় পেশিতে চাপ পড়ে, যা পেশির জন্য খুবই ভালো৷ তবে এতে দুর্ঘটনা ঘটার কিছুটা ভয় থাকে৷ এক্ষেত্রে হাতে লাঠি বা ‘স্টিক’ থাকলে হাঁটু ও নিতম্বে চাপ খানিকটা কম পড়ে৷
ছবি: Fotolia/Kalle Kolodziej
নাচ ব্যথা কমায়
গান মনের দুঃখ-কষ্ট ও চাপ কমিয়ে দিয়ে মেজাজ ভালো করে৷ আর গানের সাথে ইচ্ছেমতো নাচলে কমে শরীরের ব্যথা৷ কারণ নাচার সময় শিরা এবং কোমরের ব্যথা কমে যায়৷ নাচ শুরুর পর পরই হাঁটু বা নিতম্বে ব্যথা হতে পারে৷ কিন্তু তখন না থেমে গিয়ে নিয়মিত ‘নাচ’ চালিয়ে যান৷ একসময় দেখবেন ‘ব্যথা’ উধাও!
ছবি: Colourbox
সাইকেল চালান
বাতের ব্যথা অথবা ‘রিউম্যাটিক পেইন’-এর জন্য সাইকেল চালানো খুবই উপকারি৷ আর রাস্তায় সাইকেল চালানো সম্ভব না হলে বাড়িতে, অর্থাৎ ‘হোমট্রেইনার’-এর মাধ্যমে সাইকেল চালাতে পারেন৷ তবে লক্ষ্য রাখবেন যেন পা দু’টোকে বেশি বড় বা ফাঁক করতে না হয়৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb
5 ছবি1 | 5
বাড ক্রয়েৎসনাখ শহরে জার্মানির একমাত্র খনি অবস্থিত, যেখানে পাথরের মধ্যে জমা ব়্যাডন গ্যাস কাজে লাগিয়ে রোগ নিরাময় করা হয়৷ বাতের রোগীরা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে সেখানকার বাতাস গ্রহণ করেন৷ তাতে আশ্চর্য ফল পাওয়া যায়৷ অনেক রোগী বার দশেক সেখানে বসার পর বেশ কয়েক বছরের জন্য বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেয়েছেন৷ বাত বিশেষজ্ঞ ড. হান্স ইয়োকেল বলেন, ‘‘বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এই শহরের এক ফার্মাসিস্ট এই গুহার মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছিলেন, যে সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ ব়্যাডন রয়েছে৷ ১৯১২ সাল থেকে তিনি সেখানে চিকিৎসা শুরু করেন৷’’
ব়্যাডন শরীরের উপর ঠিক কী প্রভাব রাখে, তা আজও জানা যায়নি৷ ডার্মস্টাট শহরে হেল্মহলৎস ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা ব়্যাডন বিকিরণ থেরাপির প্রভাব ও ঝুঁকি পরীক্ষা করতে চান৷ ব্যথা তাড়ানোর চিকিৎসার উন্নতি করা অথবা নতুন করে গড়ে তোলাই ড. ক্লাউডিয়া ফুর্নিয়ের লক্ষ্য৷ বায়ো পদার্থবিদ ড. ক্লাউডিয়া ফুর্নিয়ে বলেন, ‘‘অন্যদিকে তথাকথিত ব়্যাডন সুইমিং পুলে অনেক কম ডোজে ব়্যাডন থাকে, যেখানে স্নান করা যায়৷ অথবা গুহার মধ্যে সরাসরি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ক্রনিক রোগীরা তা গ্রহণ করতে পারেন৷’’
গবেষকরা তাঁদের গবেষণার জন্য আলাদা একটি ব়্যাডন কামরা তৈরি করেছেন৷ সেখানে ইঁদুরদের বাত সারাতে তাদের উপর বিকিরণ করা হয়৷ ব়্যাডন ডিকম্পোজিশন বা ভাঙনের ফলে যে পদার্থ সৃষ্টি হয়, তা নিয়েও গবেষকদের আগ্রহ রয়েছে৷ সেগুলি শরীরে মধ্যে জমা হয় ও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটায়৷ গবেষকদের অনুমান, এই আলফা-বিকিরণ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা চাঙ্গা করে তোলে৷
ফ্লুরোসেন্ট মার্কারের মাধ্যমে আলফা পার্টিকেলের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়৷ প্রাথমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা এর মধ্যেই দেখতে পেয়েছেন, যে ব়্যাডন চিকিৎসার পর ইঁদুরের জয়েন্ট আবার সচল হয়ে উঠেছে৷ এই চিকিৎসার কার্যকরিতা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গেল৷ গুহার বাতাস গ্রহণ করে রোগীদেরও ঠিক একই উপলব্ধি হয়ে আসছে৷ ফলে রাইনার ব্লুমব্যার্গ ভবিষ্যতে বেদনামুক্ত হয়ে বেঁচে থাকার আশা করতে পারেন৷
নানা ব্যথা লাঘবের ১০ উপায়
আজ মাথা ব্যথা তো কাল পেট ব্যথা কিংবা কান ব্যথা অথবা দাঁত ব্যথা৷ বাতের ব্যথাও আছে অনেকের৷ আর মনের ব্যথা তো লেগেই আছে৷ তাই সহজ উপায়ে এ সব ব্যথাকে দূরে রাখার উপায় জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Lars Zahner/colourbox
মন ব্যথা?
হাসি কিন্তু মন ভালো করে দেয়! সুন্দর জামা-কাপড় পরে এক টুকরো চকলেট মুখে দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে পড়ুন৷ হাসুন বা হাসি হাসি মুখ করে থাকুন৷ কারণ ‘হাসি আর অনুভূতি’ একে-অপরের ওপর প্রভাব ফেলে৷ তবে জোর করে হাসলে কিন্তু হবে না৷ এই তথ্য জানা গেছে জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট আম মাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণা থেকে৷
যোগব্যায়াম
সপ্তাহে দু’দিন যোগব্যায়াম বা ইয়োগা হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা, ঘাড় ব্যথা ইত্যাদি কমায়৷ একটি সমীক্ষার ফলাফলে এ তথ্য জানা গেছে৷ তথ্যটি প্রকাশ করে ‘জার্নাল অফ রয়মাটোলজি’ ম্যাগাজিন থেকে৷ দেখা যা, যাঁরা ইয়োগা করেননি তাঁদের তুলনায় যাঁরা নিয়মিত যোগব্যায়াম করেছেন, তাঁরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভালো বোধ করেন৷
ছবি: Colourbox/D.Vietrov
শিশুদের অপারেশনের ব্যথায়
শিশুদের যে কোনো অপারেশনের পর মা-বাবাকে পাশে পেলে ওদের ব্যথা অনেকটাই কমে যায় বলে জানা গেছে ক্যানাডার হালিফাক্স-এর ডালহাউসি বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণা থেকে৷ গবেষকরা জানান, অপারেশনের পর, অর্থাৎ শিশুরা জ্ঞান ফিরে মা-বাবাকে দেখলেই তা শিশুদের ব্যথার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে৷
ছবি: Getty Images/AFP
কান ব্যথায় পেঁয়াজ ও অলিভ অয়েল
পেঁয়াজে থাকা সংক্রমণ দমনকারী পদার্থ কানের ব্যথা বা সংক্রমণে কমাতে বেশ উপকারী৷ পেঁয়াজ ছোট ছোট করে কেটে গরম করার পর একটি পরিষ্কার কাপড়ে ঢেলে পুটলি বানিয়ে যেখানে ব্যথা, সেখানে আধঘণ্টা ধরে রাখুন৷ অথবা গরম অলিভ ওয়েলে একটা ছোট নরম কাপড় ভিজিয়ে সেটা কানের ঠিক পেছনে কয়েক মিনিট চাপ দিয়ে রাখুন৷ এই দু’টো উপায়ই কান ব্যথা কমাতে বেশ সাহায্য করে৷
ছবি: Christian Jung - Fotolia.com
বাতের ব্যথায় গোলমরিচ
ভালোভাবে গরম করা একমুঠো গোলমরিচ একটি কাপড়ে নিয়ে তা ব্যথার জায়গায় কিছুক্ষণ ধরে রাখলে বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে৷ তবে ‘‘বাতের ব্যথায় ফিজিওথেরাপি, হাঁটাচলা, ব্যায়াম খুবই জরুরি৷’’ এ কথা বলেন জার্মান বাত বিশেষজ্ঞ ড. ইয়োহানেস পেটার হাস৷
ছবি: picture alliance/Arco Images GmbH
মাসিকের ব্যথা কমাতে
পিরিয়ডের ব্যথায় গরম পানির সেঁক, অর্থাৎ ‘হট ওয়াটার ব্যাগ’ বেশ উপকার করে৷ তলপেট, কোমর ও উরুতে হট ওয়াটার ব্যাগটি খানিক্ষণ ধরে রাখলে বেশ আরাম হয়৷ মাসিকের কারণে মাথা ধরা বা শরীর খারাপ লাগার ভাব কমাতে নাকের সামনে মাঝে মাঝে পুদিনা পাতা ধরে রাখলে খানিকটা ‘ফ্রেশ’ বা তাজা বোধ হয়৷
ছবি: Fotolia/Picture-Factory
মাথা ব্যথা
গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে গোসল করার পর, বেশি করে আদা দিয়ে চা তৈরি করুন এবং ধীরে ধীরে তা পান করুন৷ আদা রক্তের প্রবাহকে ঠিক রাখে৷ শুধু তাই নয়, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হলে বমিভাবও হয়৷ আদা ঐ ভাব কমাতে দ্রুত সাহায্য করে৷ তাছাড়া এক গ্লাস গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস ঢেলে পান করতে পারেন৷ তারপর বাকি অর্ধেক লেবু কপালে ঘষতে পারেন, অবশ্যই ভালো লাগবে৷
ছবি: Colourbox
জটিল মাথা ব্যথা ‘মাইগ্রেন’
জার্মানিতে মাথা ব্যথায় ভোগেন প্রায় ৮০ লাখ মানুষ৷ তার মধ্যে জটিল ব্যথা বা মাইগ্রেনে ভোগা রোগীর সংখ্যা শতকরা ১০ জন৷ ‘‘আমি আমার মাইগ্রেনের রোগীদের সপ্তাহে তিনদিন ব্যায়াম, মুক্ত বাতাসে হাঁটাচলা, সময়মতো খাওয়া-দাওয়া, যথেষ্ট ঘুম, কম কাজের চাপ ও যথেষ্ট পানি পান করার কথা বলি৷’’ – এই পরামর্শ জার্মানির মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার চার্লি গাউল-এর৷
ছবি: Colourbox/L Dolgachov
কোমর ব্যথা
কোমর ব্যথায় নিজে থেকে কিছু না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াই শ্রেয়৷ তবে নারীদের ক্ষেত্রে কোমর ব্যথায় হাই হিল একেবারেই পরা উচিত নয়৷
ছবি: Fotolia/Peter Atkins
গলা ব্যথায়
ঋতু পরিবর্তন মানেই গলা ব্যথা৷ তাই এ সময় একটু সাবধানে থাকা উচিত৷ গলা ব্যথায় আদার রস, মধু ও লেবুর রস বেশ উপকারী৷ এছাড়া গলা ব্যথায় লবঙ্গের ব্যবহার বহুদিনের৷ লবঙ্গ অ্যান্টি-ব্যক্টেরিয়াল, তাই গলা ব্যথা শুরু হলেই লবঙ্গ চিবোতে থাকুন, ব্যথা কমে যাবে৷