ভেনেজুয়েলার স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুয়াইদো'র দেশ ছাড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশের সুপ্রিমকোর্ট৷ তাঁর বিরুদ্ধে সাংবিধানিক নির্দেশ লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার ভেনেজুয়েলার বিচারবিভাগের সুপ্রিম ট্রাইব্যুনাল গুয়াইদো'র উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে, পাশাপাশি তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেয়৷ ৩৫ বছরের গুয়াইদো গত সপ্তাহে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন এবং প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের ডাক দেন৷ এরপর থেকেই দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়৷
দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি এবং সাংবিধানিক নির্দেশ লঙ্ঘনের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত গুয়াইদো দেশ ত্যাগ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট৷
গুয়াইদো মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘কারাভোগের হুমকিতে আমি ভীত নই, কারণ, এদেশে এটা নতুন কিছু নয়৷'' মানবতা রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
আন্তর্জাতিক সমর্থন
মাদুরো'র নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করে নতুন নির্বাচনের গুয়াইদো'র উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্র পরিচালিত তেল কোম্পানির বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, গুয়াইদো'র বিরুদ্ধে দেশটি কঠোর ব্যবস্থা নিলে তারাও কঠোর ব্যবস্থা নেবে৷ ব্রাজিল, ক্যানাডা এবং অর্গানাইজেশন অফ অ্যামেরিকান স্টেটস গুয়াইদো'র প্রতি সমর্থন জানিয়েছে৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের সমর্থন রয়েছে৷
মাদুরোবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ভেনেজুয়েলা
ভেনেজুয়েলার পুনর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিরোধীদল৷ তাদের আহ্বানে রাজধানী কারাকাসের পথে নেমে এসেছে হাজারো মানুষ৷
ছবি: Reuters/C.G. Rawlins
প্রহসনের নির্বাচন!
গত ১০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ক্ষমতা গ্রহণকে রীতিমতো ‘প্রহসন’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন সরকারবিরোধীরা৷ বিরোধীরা দাবি করছেন, মাদুরো একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁর সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়েছিলেন, যা অবৈধ৷ তবে ধোপে টিকছে না এই অভিযোগ৷ কারণ, হাইকোট এই নির্বাচনকে বৈধতা দিয়ে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷
ছবি: Reuters/C.G. Rawlins
অর্থনৈতিক মন্দা
বিশ্লেষকরা বলছেন, মাদুরোবিরোধী বিক্ষোভ চাঙ্গা হওয়ার মূল কারণ অর্থনৈতিক মন্দা৷ গত দুই বছরে তেলের দাম কমে যাওয়া, রাজস্ব ঘাটতি, অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি, আমদানিকৃত নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের ঘাটতি, জনদুর্ভোগই এই বিক্ষোভকে চাঙা করছে বলে তাঁরা মনে করেন৷
ছবি: Reuters/C.G. Rawlins
২০১৭ সালের বিক্ষোভের পুনরাবৃত্তি!
২০১৭ সালে সরকারবিরোধী রাজনীতিকরা চার মাস ধরে দেশব্যাপী বিক্ষোভ, ধর্মঘট করেছিলেন, হাজার হাজার মানুষ তাতে শামিল হয়েছিল৷ এ সময় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১২০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী নিহত এবং হাজার হাজার আহত হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Llano
স্বৈরাচার পতন দিবস
২৩ তারিখ ছিল ভেনেজুয়েলার স্বৈরশাসক মারকাজ পেরেজের পতনের ৬১ তম বার্ষিকী৷ সেটি উদযাপনের পাশাপাশি সরকারবিরোধী বিক্ষোভে কারাকাসের পথে সমবেত হাজারো জনগণ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Llano
অন্তর্বর্তীকালীণ প্রেসিডেন্ট?
এদিকে ভেনেজুয়েলায় চলমান বিক্ষোভকে যেন উস্কে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প৷ তিনি দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা হুয়ান গুয়াইদোকে ভেনেজুয়েলার অন্তর্বর্তীকালীণ প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি দিয়েছেন৷ ২৩ তারিখের জনবিক্ষোভে হুয়ান নিজেকে দেশনেতা ঘোষণা করার পরই ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এই স্বীকৃতি আসে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Parra
একদল সেনাসদস্য গ্রেফতার
প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন দেশটির একদল সেনাসদস্য৷ মাদুরোকে উৎখাতের ডাক দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোমবার ভিডিও পোস্ট করে একদল সৈন্য৷ পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়৷
ছবি: Imago/Xinhua
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাদুরোকে প্রত্যাখান
লাতিন অ্যামেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ আর যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডা মাদুরো সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি৷ যুক্তরাষ্ট্র এই সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷ প্যারাগুয়ে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সেখানে দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/M.P. Del Carpio
বন্ধু কেবল বলিভিয়া, জর্জিয়া ও কিউবা!
মাদুরোর দ্বিতীয় মেয়াদের শপথ অনুষ্ঠান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বয়কট করলেও কিউবা পাশে ছিল৷ বলিভিয়া ও জর্জিয়ার প্রেসিডেন্টও তাতে উপস্থিত ছিলেন৷ মাদুরো অবশ্য দাবি করেন, ৯৪টি দেশ অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Cubillos
8 ছবি1 | 8
মাদুরো'র প্রত্যাখ্যান
বুধবার নিকোলাস মাদুরো রাশিয়ার এক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘নতুন কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়৷ কিন্তু পার্লামেন্ট নির্বাচন এগিয়ে নেয়া যেতে পারে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, নতুন নির্বাচনের জন্য ২০২৫ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷''
মাদুরো'র আদালত
ভেনেজুয়েলার সুপ্রিমকোর্টের বেশিরভাগ সদস্য মাদুরো'র ঘনিষ্ঠ সহযোগী৷ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ক্রিস্টিয়ান সেরপা যুক্তরাষ্ট্র থেকে দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নির্দেশ অনুযায়ী আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়৷ গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন ক্রিস্টিয়ান সেরপা৷
এদিকে বুধবার জার্মান পত্রিকা বিল্ডকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি মাদুরো'র সরকারের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে গুয়াইদো৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের দেশে এখন স্বৈরশাসন চলছে৷ অনেক মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে৷ এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে, পুরো দেশ ভয়াবহ দুর্নীতিগ্রস্ত এবং মাদুরো একজন স্বৈরশাসক৷ গত এক সপ্তাহে ৭০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তিনশ' জনেরও বেশি রাজনৈতিক বন্দি কারাভোগ করছেন৷''