ঢাকায় গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু আবারো সামনে নিয়ে এসেছে বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে গৃহকর্মী নির্যাতন ও এর বিচার না হওয়ার বিষয়টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক নির্যাতনের ঘটনাই ধামাচাপা দেয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
এমনকি হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনায়ও আপসের মাধ্যমে শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যান অভিযুক্তরা।
প্রীতি উরাং নিহত হওয়ার ঘটনায় অবশ্য ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও স্ত্রী তানিয়া খন্দকার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। গত ৬ ফেব্রুযারি ঢাকার মোহাম্মদপুরে সৈয়দ আশফাকুলের অষ্টম তলার ফ্ল্যাট থেকে পড়ে প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর দিন প্রীতির বাবা লোকেশ ওরাং বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে আসামি করা হয়।
মানবাধিকার সগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের(আসক) হিসাবে গত তিন বছরে ঢাকাসহ সারা দেশে ৩৬ জন গৃহকর্মী তাদের গৃহমালিকের বাসায়মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৯০ ভাগই নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যান। কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছেন। এই সময়ে মোট নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১০৩ জন। কিন্তু ওইসব ঘটনায় মামলা হয়েছে অনেক কম ৬৯টি।
আসকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৪৫০ জন গৃহকর্মীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার বিভিন্ন থানায় প্রায় দুশোর মতো নির্যাতন ও অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
গৃহশ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন বাংলাদেশ ইনস্টিাটিউট অব লেবার স্ট্যাডিজ(বিলস)-এর যুগ্ম মহাসাচিব সৈয়দ সুলতান উদ্দিন খান। তিনি বলেন," গৃহকর্মী নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা বাস্তবে আরো বেশি । যে হিসাব আপনারা দেখেন তা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। অনেক ঘটনাই সংবাদমাধ্যমে আসেনা। আর অনেক ঘটনায়ই মামলা হয়না।”
বিলস-এর এক জরিপে অংশ নেওয়া ২৮৭ জন গৃহ শ্রমিকের ৫০ ভাগ জানিয়েছেন, তারা কোনো না কোনোভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিলস-এর তথ্য বলছে, সারা দেশে মোট গৃহকর্মীদের ৯৫ ভাগেরও বেশি নারী। গৃহকর্তার কাছে ৫০ শতাংশ গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হন। যাদের অর্ধেকেই আবার শিশু। বিলসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে সারা দেশে এক হাজার ৫৬০ গৃহকর্মী কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, আহত, রহস্যজনক মৃত্যু, আত্মহত্যা ও
হত্যার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে কর্মক্ষেত্রে নিহত হয়েছেন ৫৭৮ গৃহকর্মী।
গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সন্বয়কারী আবুল হোসেন বলেন," গৃহশ্রমিক নির্যাতন ও নিহত হওয়ার ব্যাপারে বিচারের অভিজ্ঞতা নির্মম। বিচার পাওয়ার নজির তেমন নেই বললেই চলে। যে ঘটনাগুলোতে মামলা হয় সেখানে এজাহার খুবই দুর্বল থাকে। কারণ মালিক প্রভাবশালী থাকেন গৃহশ্রমিকের তুলনায়। তারা সহজেই পুলিশকে প্রভাবিত করতে পারেন। ফলে মামলা ওখানেই অনেকটা শেষ হয়ে যায়। আর বিচারের আগেই অর্থের বিনিময়ে বা চাপ প্রয়োগ করে আপোস করে ফেলা হয়। ফলে আর বিচার হয়না।”
"আমার অভিজ্ঞতা হলো আমরা গত দুই-তিন বছরে নির্যাতনের শিকার ২০-২৫ জন গৃহকর্মী ও তার পরিবারকে আইনি সহায়তা দিয়েছি। কিন্তু আইনি সহায়তা দেয়ার পরও আমরা মামলায় বিচার পাইনি। কারণ শেষ পর্যন্ত মামলা চালানো যায়নি। আপস হয়ে গেছে,” বলেন তিনি।
'গৃহশ্রমিক নির্যাতনে বিচারের অভিজ্ঞতা নির্মম'
বাংলাদেশে হত্যা ও নির্যাতনের মতো অপরাধের মামলা আইনে আপসযোগ্য নয়। তারপরেও কীভাবে আপস হয়? জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন," এটা আদালতের বাইরে করা হয়। এটার নানা কৌশল আছে। প্রথমত মামলার তদন্তে দেরি করা হয়। এরমধ্যে নিহত বা নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীর পরিবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। তারা গরিব। তাই তাদের অর্থের প্রলোভনে ফেলা হয়। তখন তারা মামলার ব্যাপারে আর আগ্রহ দেখান না। সাক্ষী দিতে যাননা। তখন মামলা এমনিতেই খারিজ হয়ে যায়।”
আর সৈয়দ সুলতান উদ্দিন খান বলেন," কেউ যদি মামলা লড়তেও চান তাহলেও কোনো লাভ হয়না। কারণ তখন অন্য সাক্ষীদের প্রভাবিত করা হয়।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী সারা দেশে এখন ২৫ লাখ গৃহকর্মী আছেন।তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ নারী৷ জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ- অনুযায়ী দেশে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে এমন শিশুর সংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজার, যাদের বয়স ৫ থেকে ১৭ বছর৷ আর এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই মেয়েশিশু৷
বাংলাদেশে গৃহশ্রমিক সুরক্ষা নীতিমালা করা হয় ২০১৫ সালে। কিন্তু সেটা কোনো আইন নয়। তাই তাদের বেতন, কর্ম পরিবেশ, কর্ম ঘণ্টা, বয়স, নিয়োগ কোনো কিছুই আইনের আওতায় হয়না। তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করারও কোনো অধিকার নেই।
"বাংলাদেশ কর্মজীবী নারী” নামের সংগঠনটিও গৃহ শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে। সংগঠনের সমন্বয়কারী নার্গিস আক্তার নীলা বলেন," গৃহশ্রমিকেরা নির্যাতনের শিকার হন গৃহ মালিকের বাড়িতে। সেখানে সে একা থাকে। তাই সে নির্যাতনের প্রতিবাদও করতে পারেনা। আর মামলা হলে তার পক্ষে সে নিজে ছাড়া আর কোনো সাক্ষীও থাকেনা। ফলে এখানে নির্যাতন বেশি। যেমন পোশাক কর্মীরা এক সঙ্গে কাজ করেন। তাই তারা প্রতিবাদ করতে পারেনা।”
আবুল হোসেন মনে করেন," রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা না পেলে গৃহশ্রমিকদের বিচার পাওয়া খুবই কঠিন। তাই তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা এবং অন্যান্য প্রোটেকশনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।”
'গৃহকর্মীরা একা কাজ করেন, অত্যাচারের সাক্ষী থাকে না'
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরের মধ্যে একটি মাত্র মামলায় বিচারের উদাহরণ আছে। ২০১৩ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর ১১ বছরের শিশু গৃহকর্মী আদুরিকে নির্যাতন করে ঢাকার পল্লবীর ডিওএইচএস এলাকার একটি ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়৷ এ ঘটনায় গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান ও তার মা ইশরাত জাহানকে তখন গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ আদালতে অভিযোগ প্রমাণ হলে ঘটনার চার বছর পর ২০১৭ সালে ১৮ জুলাই নওরীন জাহানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত।
রাজধানীতে নিম্নবিত্ত নারীদের আত্মনির্ভরশীলতার সংগ্রাম
একসময় তারা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন৷ এখন ক্ষুদ্রব্যবসার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন৷ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার এমন কয়েকজন সংগ্রামী নারীর কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Rajib Paul
হাত পাততে হয় না
ঢাকার আফতাবনগরে সড়কের ধারে বসে গরুর দুধ বিক্রি করেন সাত-আটজন নারী৷ তারা মেরাদিয়ার বাসিন্দা৷ খামার থেকে বোতলে করে গরুর দুধ নিয়ে আসেন৷ প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাস্তার পাশে বসেন৷ যানবাহনের আরোহী কিংবা পথচারীরা তাদের কাছ থেকে দুধ কিনে নিয়ে যান৷
ছবি: Rajib Paul
রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ
ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন খালেদা৷ থাকেন ঢাকার সিপাহীবাগে৷ ১০ বছর বয়সে ঝিয়ের কাজ নেন এই অনাথ৷ লাঞ্চনা সইতে না পেরে একসময় পালিয়ে এক নারীর আশ্রয়ে থাকেন৷ শুরুতে কাপড়, চা ও চাদর বিক্রি করে লোকসানের মুখে পড়তে হয়৷ বিয়ে করার পর সন্তানকে রেখে স্বামী চলে যায়৷ একসন্তানকে নিয়ে তার জীবন সংগ্রামের অবলম্বন এখন এই রিকশা৷ সকালে বেরিয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন৷
ছবি: Rajib Paul
গৃহকর্মী থেকে ‘পথের হোটেলের’ মালিক
স্বামী খুলনার রূপসায় ট্রেনে কাটা পড়ে এক পা হারিয়েছেন৷ গৃহকর্মীর কাজে করে সংসার চালাতেন আকলিমা বেগম৷ চার বছর হলো মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে ভাত-তরকারি বিক্রি করেন৷ সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে তার এই দোকান৷ বাজার করেন নিজেই৷ রিকশা চালক, ভ্যানগাড়ি চালক ও নিম্ন-আয়ের মানুষেরা খেতে আসেন এখানে৷ দৈনিক তিনশ থেকে চারশ টাকা আয় হয় তার৷
ছবি: Rajib Paul
অন্যকে খাইয়ে সংসার চালান নাজমা
উত্তর কমলাপুরে পাঁচ-ছয় বছর ধরে ভাত-তরকারি বিক্রি করেন নাজমা বেগমও৷ নিজেই বাজার ও রান্না করেন৷ হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ এখানে খেতে আসেন৷ প্রতিদিন ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার বিক্রি হলে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা লাভ হয় তার৷ বাসায় তাকে সহযোগিতা করেন স্বামী৷ একসময় তিনিও গৃহকর্মীর কাজ করতেন৷ তার আয়েই সংসার ও সন্তানের পড়াশোনা চলে৷
ছবি: Rajib Paul
গ্রামে ফিরতে চান ফাতেমা
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের পাশে রুটি, গুড়, ডিম ভাজি ও সবজি বিক্রি করেন ফাতেমা বেগম৷ তাকে রুটির খামি করে দেন স্বামী৷ ফাতেমা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আগে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা বিক্রি হইলে ৮০০-১০০০ টাকা লাভ হইতো৷ কিন্তু এহন জিনিসপত্রের দাম বাইড়া যাওয়ায় পেরেশানিতে আছি৷ তাই ব্যবসা ছাইড়া নওগাঁয় গ্রামে চইলা যামু কয়দিন পর৷’’
ছবি: Rajib Paul
‘খিদা থাকলে সবই শিখতে হয়’
ওয়ারীর নবাব স্ট্রিটে চার-পাঁচ বছর ধরে ডাব বিক্রি করেন মাকসুদা বেগম৷ প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা-১১টা পর্যন্ত বিক্রি শেষে ঘরে ফিরে সংসারের কাজ করেন৷ তার স্বামীও ডাব বিক্রি করেন৷ তাদের আয়ে দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ পাঁচজনের সংসার চলে৷ ডাব কাটা শেখা প্রসঙ্গে মাকসুদা বলেন, ‘‘পেটে খিদা থাকলে সবই শিখতে হয়৷’’ দিনে ৫০ থেকে ৬০টি ডাব বিক্রি করলে ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয় তার৷
ছবি: Rajib Paul
‘খাইয়া লইয়া হমান’
নাছিমা আক্তার একসময় ছাপাখানায় কাজ করতেন৷ কিন্তু ঠিকঠাক মজুরি না পেয়ে নিজেই ক্ষুদ্র ব্যবসায় নেমেছেন৷ ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে রিকশা মেরামতের অস্থায়ী গ্যারেজ চালান তিনি৷ স্বামী রিকশা মেরামত করেন৷ এক মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে৷ আরেক মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে৷ ছেলের বয়স দেড় বছর৷ তবে গ্যারেজের আয় নিয়ে তেমন সন্তুষ্ট নন নাছিমা৷ তার কথায়, ‘‘খাইয়া লইয়া হমান৷’’
ছবি: Rajib Paul
মরিয়ম বিবির চায়ের দোকান
গোপীবাগ খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দুই মাস ধরে একটি চায়ের দোকান চালাচ্ছেন মরিয়ম বিবি৷ সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দোকানদারি করেন তিনি৷ মাসে তিন হাজার টাকা দিতে হয় ভাড়া৷ প্রতিদিন লাভ হয় ২০০-৩০০ টাকা৷ স্বামী ভাঙারির ব্যবসা করেন৷ তাদের দুই ছেলে দুই মেয়ে৷ এক মেয়ে কলেজে পড়ে৷
ছবি: Rajib Paul
জমানো টাকায় ব্যবসা করেন জমিরন
একসময় তিনি ইট ভাঙতেন৷ গৃহকর্মীর কাজও করেছেন৷ সেখান থেকে টাকা জমিয়ে পরে ব্যবসায় নামেন৷ ওয়ারী ফোল্ডার স্ট্রিটে আড়াই বছর ধরে ফ্লাক্সে চা বিক্রি করেন জামিরন৷ তার দোকানে রুটি, গুড়, পানও আছে৷ প্রতিদিন ৩০০ টাকার মতো আয় হয় তার৷ ১০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি৷ দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন৷ ছেলে একটি কারখানায় কাজ করে৷
ছবি: Rajib Paul
পিঠা বানিয়ে স্বাবলম্বী ফাতেমা
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে চিতই, তেলে ভাজাসহ নানান রকম পিঠা বিক্রি করেন ফাতেমা খাতুন৷ কিডনিতে সমস্যার কারণে গৃহকর্মীর কাজ ছেড়ে দেন৷ প্রতিদিন হাজার দেড়েক টাকার পিঠা বিক্রি করে ৪০০-৫০০ টাকা লাভ করেন৷ বড় ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে৷ মেজ ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে আর ছোট ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে৷ আরেক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন৷
ছবি: Rajib Paul
‘খাইয়া-পইড়া বাঁইচা আছি
ওয়ারীতে ভ্যানগাড়ির ওপর বসে চা-পান বিক্রি করেন বৃদ্ধা আমিনা বেগম৷ আগে একটি কিন্ডারগার্টেনে চাকরি করতেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘অসুস্থ হইয়া চাকরিটা আর করতে পারি নাই৷ এহন দোকানদারি কইরা খাইয়া-পইড়া বাঁইচা আছি৷ দিনে হাজার ১২০০ টাকা বিক্রি হইলে ২০০ থেকে ৩০০ ট্যাকা লাভ থাকে৷ তয় ভালাই আছি৷’’
ছবি: Rajib Paul
শীতে ধোঁয়া ওঠা পিঠা
আফতাবনগর কমিউনিটি সেন্টারের পাশে মাসখানেক ধরে পিঠা বিক্রি করছেন আলো৷ প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন তিনি৷ দুই-আড়াই হাজার টাকা বিক্রি হলে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়৷ প্রথম স্বামী মারা গেছেন৷ তাদের তিন ছেলে এক মেয়ে৷ সবার বিয়ে হয়ে গেছে৷ পরে আবার বিয়ে করেছেন আলো৷ দ্বিতীয় স্বামী থাকেন গ্রামে৷
ছবি: Rajib Paul
সুঁই-সুতায় জীবনের বুনন
দর্জির কাজ করে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন অনেক নারী৷ শনির আখড়ার কদমতলীতে একটি কারখানায় চার-পাঁচ বছর ধরে পতাকা তৈরি করছেন শিরিন বেগম৷ বছরের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা-১২টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় তাকে৷ এজন্য প্রতিদিন ৮০০ টাকা পর্যন্ত মেলে৷ তার স্বামী ট্যানারিতে কাজ করেন৷ তাদের দুই ছেলে৷
ছবি: Rajib Paul
কাপড় বিক্রেতা আরজু
ঢাকার মতিঝিলে আইডিয়াল স্কুলের সামনে বিভিন্ন ধরনের পোশাক বিক্রি করছেন আরজু৷ তার বাসা কামরাঙ্গীরচরে৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে কাপড় এনে গাছের নীচে চৌকিতে বসেন তিনি৷ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ক্রেতারা এগুলো কিনে নিয়ে যান৷ প্রতিদিন ১০০০ থেকে ৪০০০ টাকার বিক্রি হয়৷ স্বামীর সঙ্গে আরজুর বিচ্ছেদ হয়েছে৷ তাদের এক মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে৷ আরেক মেয়ের বয়স পাঁচ বছর৷
ছবি: Rajib Paul
হাড়ভাঙা খাটুনি
খিলগাঁও রেললাইনের পাশে ১০-১২ বছর ধরে ইট-সুড়কি ভাঙেন শাহনাজ৷৷ একবস্তা ২০ টাকা করে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আসে তার হাতে৷ শাহনাজের স্বামী ভ্যানগাড়িচালক৷ তাদের এক ছেলে এক মেয়ে৷ মেরাদিয়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন তারা৷
ছবি: Rajib Paul
শহরের পরিচ্ছন্নতাকর্মী
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী আরজাম্মা প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ঝাড়ু দেন৷ ওয়ারীতে জয়কালী মন্দিরের সামনে তাকে দেখা যাচ্ছে৷ তিনি বিয়ে করেননি৷ স্বামীবাগের তিন নম্বর তেলগু সিটি কলোনিতে তার বাসা৷