কম্পিউটার বা অনলাইনের নাম শুনলেই যে সব বাবা-মা চটে যান, তাঁদের জন্য আশার খবর: কম্পিউটার এবার শিশুশিক্ষাতেও চালু হচ্ছে৷ অনলাইন ভিডিও টিউশনি শুরু করেছেন বার্লিনের এক বিজনেস ম্যানেজমেন্টের ছাত্র৷
বিজ্ঞাপন
ভিডিও-র মাধ্যমে শিক্ষা
04:23
কম্পিউটার থেকেই আসছে কণ্ঠ:
‘‘আমার নাম নুমসি৷ আমি আজ তোমাদের ইতিহাস থেকে একটা কাহিনি শোনাবো, সিজার অগাস্টাসের কাহিনি, রোমান সাম্রাজ্য যখন ধ্বংস হতে চলেছে৷''
লুকাস ড্যোলিং ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র৷ শিক্ষকদের মতে, এবার তার রোমান সাম্রাজ্য সম্পর্কে কিছু জানার সময় হয়েছে৷ ভাগ্য ভালো, পড়ার বিষয় আজকাল অনলাইনেই পাওয়া যায়৷ লুকাস বলে: ‘‘বইতে কিছু পড়ার আগে ফিল্মে সেটা দেখে নিলে, বিষয়টা কিছুটা সহজ হয়ে যায়৷ তাতে বুঝতে সুবিধে হয়, কেননা বিষয়টা সম্পর্কে কিছু-কিছু জানা থাকে৷''
অনলাইনে পড়ালেখার কিছু ওয়েবসাইট
ঘরে বসে অনলাইনে ভিডিওর মাধ্যমে পড়ালেখার জন্য বাংলাদেশে কয়েকটি ওয়েবসাইট চালু হয়েছে৷ সেখানে বিভিন্ন শ্রেণির পড়ালেখার পাশাপাশি রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন পরীক্ষার টেস্ট৷
ছবি: Chamok Hasan
শিক্ষক ডটকম
২০১২ সালের আগস্ট মাসে যাত্রা শুরু করা শিক্ষক ডটকমে কম্পিউটার বিজ্ঞান থেকে শুরু করে পদার্থ, রসায়ন, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিজ্ঞান সহ নানান বিষয়ে বাংলায় লেকচার পাওয়া যায়৷ তাদের কার্যক্রমের জন্য সাইটটি ইতিমধ্যে ডয়চে ভেলে, গুগল, ইন্টারনেট সোসাইটি ও আইএসআইএফ থেকে পুরস্কার পেয়েছে৷ বিস্তারিত: www.shikkhok.com ৷
খান অ্যাকাডেমি বাংলা
বিল গেটস তাঁর সন্তানদের পড়াশোনার জন্য খান অ্যাকাডেমির সহায়তা নিয়েছেন৷ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সালমান খানের তৈরি এই ওয়েবসাইটটির পরিচয় এমনই অসাধারণ৷ সেই প্রতিষ্ঠানের লেকচারগুলো বাংলায় পাওয়া যায় এই লিংকে http://khanacademybangla.com/৷
ছবি: http://khanacademybangla.com/
সৃজনশীল ডটকম
একজন শিক্ষার্থী যেন ঘরে বসেই তার সুবিধামত সময়ে স্কুলের সিলেবাস অনুযায়ী অধ্যায়ভিত্তিক ও টার্মভিত্তিক যত খুশি তত পরীক্ষা দিতে পারে সে লক্ষ্যে চালু হয়েছে এই ওয়েবসাইটটি৷ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী তার নিজের প্রস্তুতি কেমন হচ্ছে তা জানতে পারে৷ এছাড়া এই সাইটে (http://www.srijonshil.com/) পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন বিষয়ের উপর অডিও ভিজ্যুয়াল টিউটোরিয়ালও রয়েছে৷
ছবি: http://www.srijonshil.com/
চ্যাম্পসটোয়েন্টিওয়ান ডটকম
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের উদ্যোগে চালু হওয়া এই ওয়েবসাইটে (http://www.champs21.com/) ইংরেজি ও বাংলা উভয় মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজির ওপর বিভিন্ন ধরণের টেস্ট রয়েছে৷ স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ থেকে উপকৃত হতে পারেন৷
ছবি: http://www.champs21.com/
ইউটিউবে বাংলা শিক্ষা
বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশের নোয়াখালির মেয়ে সাওসান ইউটিউবে বাংলা শেখানোর চেষ্টা করছেন৷ ভিন্নভাষী যারা বাংলা শিখতে আগ্রহী কিংবা বিভিন্ন দেশে বেড়ে ওঠা বাঙালি প্রজন্ম, যাঁদের কাছ থেকে বাংলা ভাষা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে, তাঁদের জন্য এই ভিডিও চ্যানেল (http://www.youtube.com/84Enchantress)৷ এই চ্যানেলটি ২০১২ সালে ডয়চে ভেলের সেরা ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতার ‘বেস্ট ভিডিও চ্যানেল’ ক্যাটেগরিতে মনোনীত হয়েছিল৷
ছবি: https://www.youtube.com/user/84Enchantress
চমক দেখিয়ে অঙ্ক শেখান চমক হাসান
গণিতের মতো জটিল বিষয়কে আনন্দের সঙ্গে শেখানোর চেষ্টা করছেন বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি গবেষণারত চমক হাসান৷ একসময় সামনাসামনি সেটা করলেও প্রবাসে থাকার কারণে এখন তাঁর মাধ্যম ইউটিউব চ্যানেল (http://www.youtube.com/ChamokHasan)৷ ছবিটিই বলে দিচ্ছে কেমন মজা করে অঙ্ক শেখান তিনি৷
ছবি: Chamok Hasan
6 ছবি1 | 6
অনলাইন টিউশনের ফি মাসে ১৫ ইউরো৷ লুকাসের মায়ের তাতে আপত্তি নেই, কেননা লুকাস এ ভাবে স্কুলের পড়া আরো ভালো বুঝতে পারে বলে তাঁর ধারণা৷
বার্লিনের ফ্রিডরিশহাইন এলাকার একটি বাড়ির ছাদের ঘরে এই সব ভিডিও তৈরি করা হয়৷ তাতে থাকে নানা কমিক চরিত্র, কমিকের মতোই স্পিচ বাবল্-এর মধ্যে হাতে লেখা সংলাপ, সেই সঙ্গে রংচঙে সব ছবি৷ এ সব দিয়ে ফিল্ম তৈরি হয়৷
‘সোফাটিউটর'
সোফাটিউটর সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন স্টেফান বায়ার, বিজনেস ম্যানেজমেন্টের ছাত্র৷ বিভিন্ন বিষয়ে টিউশনের এই সব ভিডিও ছবি তৈরি করতে শুরু করেন ২০০৮ সালে৷ আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দশ হাজার ফিল্মে! যা কিনা প্রতি মাসে প্রায় ৬০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর কাজে লাগে৷ বায়ার বলেন: ‘‘আমি কী লিখছি, ক্যামেরা তার ছবি তুলছে৷ আমি কথাও বলছি৷ কাজেই যে দেখছে, সে বিষয়টির উপর পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারছে৷ আজও সোফাটিউটরের ভিডিওগুলোতে বহু উপাদান থাকে, যেগুলো হাতে লেখা কিংবা হাতে আঁকা কিংবা হাতে তৈরি৷ আমরা কাগজের তৈরি পুতুল ব্যবহার করে থাকি৷ আজও আমাদের ভিডিওগুলোতে হাতের লেখার একটা বড় ভূমিকা আছে৷''
সম্পাদক আর শিক্ষকরা প্রথমে একত্রে স্কুলের পাঠক্রম নিয়ে আলোচনা করেন – যা থেকে তৈরি হয় ভিডিও ফিল্মগুলির চিত্রনাট্য৷ প্রতি সপ্তাহে একশো কর্মী আলেচনায় বসেন৷ এঁরা হলেন গ্র্যাফিক আর্টিস্ট, ওয়েব ডিজাইনার কিংবা তথ্য প্রযুক্তির লোক৷
‘কমিক চরিত্রেরা অঙ্ক শেখায়'
সেরা শিক্ষার্থীদের রাজ্যসভা ভবনে থাকার সুযোগ
জার্মানির মিউনিখ শহরের কেন্দ্রস্থলে বাভেরিয়ার রাজ্যসভা ভবনে সেরা শিক্ষার্থীরা বিলাসবহুল জীবনযাত্রার সুযোগ পাচ্ছেন৷ সংসদ সদস্যদের কাছাকাছি থেকে অনেক কিছু শেখারও সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা৷
ছবি: Andreas Praefcke
৫০ জন সেরা শিক্ষার্থী
জার্মানির মিউনিখ শহরের কেন্দ্রস্থলে বাভেরিয়ার রাজ্যসভা ভবনে ৫০ জন সেরা শিক্ষার্থী বিলাসবহুল জীবনযাত্রার সুযোগ পাচ্ছেন৷ এঁদের মধ্যে এই দু’জন ভাগ্যবান শিক্ষার্থীও রয়েছেন৷
ছবি: Gerhard Brack
বিশাল প্রাসাদ
বিশাল প্রাসাদের লোহার গেট দিয়ে ঢুকছেন কালো ব্রিফকেস বগলে নিয়ে স্যুট পরা কোনো এক রাজনীতিবিদ৷ তাঁর গাড়ির পাশেই সাইকেল দাঁড় করিয়ে মাথায় বেসবল ক্যাপ পরে কোনো একজন ছাত্র প্রাসাদের ঐ একই গেট দিয়ে ঢুকছেন নিজের থাকার ঘরে৷
ছবি: Bayerischer Landtag
রাজকীয় ব্যাপার
প্রাসাদের ঝকঝকে মেঝেতে লাল কার্পেট, দেয়ালে সব বড় বড় পেইনটিং আর লম্বা করিডোর পেরিয়ে ছাত্রদের যেতে হয় নিজেদের ঘরে৷
ছবি: Bayerischer Landtag
দ্বিতীয় রাজা মাক্সিমিলিয়ন
১৮৫২ সালে বাভেরিয়ার দ্বিতীয় রাজা মাক্সিমিলিয়ন ছাত্রদের জন্য একটি ফাউন্ডেশন গঠন করেন৷ তাঁর লক্ষ্য ছিল মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া৷ ছাত্ররা বাবা-মায়ের আর্থিক সাহায্য ছাড়া এবং পড়াশোনার পাশাপাশি টাকা রোজগারের কোনো চিন্তা না করে পুরো মনোযোগ যেন লেখাপড়ায় খরচ করতে পারে৷
ছবি: picture alliance/akg
‘এক্সক্লুসিভ’ ছাত্রদের হোস্টেল
এই লক্ষ্য নিয়েই দ্বিতীয় রাজা মাক্সিমিলিয়ন সেরা ছাত্রদের জন্য এই বৃত্তির সুযোগ করে দেন৷ এটা জার্মানির ‘এক্সক্লুসিভ’ ছাত্রদের হোস্টেল৷ ছাত্র আন্দ্রেয়াস বলেন, ‘‘কারো প্রতিভা থাকলে এখানে তারা তাদের সে চাহিদা পূরণের সুযোগ পায়৷’’
ছবি: Fotolia/mylivi
বৃত্তি পাওয়ার প্রধান শর্ত
সংসদ সদস্যদের পাশে থেকে নিজেদের যোগ্য মানুষ হিসেবে তৈরি করার সুযোগ পাওয়ার জন্য এই ছাত্রাবাসে থাকার সুযোগ পাওয়া একেবারে সহজ ব্যাপার নয়৷ ‘‘এখানে বৃত্তি পাওয়ার প্রধান শর্ত, আবিট্যুর, অর্থাৎ স্কুল ফাইনালের ফলাফল হতে হবে ১,০ গ্রেড এবং নিজ স্কুল থেকে সুপারিশ করা চিঠি৷
ছবি: Bayerischer Landtag
চেয়ারম্যান হান্সপেটার বাইসার
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছেও ছাত্রদের প্রমাণ করতে হয় যে, তাঁরা শুধু স্কুলে মেধাবী ছাত্রই নন, তাঁরা অন্য ছাত্রদের চেয়ে ব্যক্তিত্ব সম্পন্নও৷ এছাড়া, থাকতে হবে সামাজিক সচেতনতাবোধ এবং বিভিন্ন কর্মতৎপরতায় নিয়োজিত করার মানসিকতা’, বলেন এই ছাত্রাবাস কমিটির সম্মানিক চেয়ারম্যান হান্সপেটার বাইসার৷
ছবি: Gerhard Brack
বিশাল ডাইনিং হল
হান্সপেটার বাইসার নিজেও একসময় এই বৃত্তি পেয়ে এই হোস্টেলেই ছিলেন৷ তিনি প্রতিদিন ঠিক দুপুর একটায় প্রাসাদের বিশাল ডাইনিং হলে বসার পর, ছাত্ররা যাঁর যাঁর আসন নেন৷ সবাইকে যে প্রতিদিন খাবার টেবিলে হাজির হতে হবে, তেমন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই৷ প্রতিবছরই কয়েকজন করে নতুন ছাত্রকে এই বিশেষ ছাত্রাবাসে থাকার জন্য বৃত্তির সুযোগ দেওয়া হয়৷
ছবি: Bayerischer Landtag
লোভনীয় লাইব্রেরি
ছাত্রী ইভা মনে করেন, ছাত্রাবস্থায় এমন রাজকীয়ভাবে থাকা খাওয়া বা জীবনযাপন অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো৷ তিনি আরো বলেন, পরীক্ষার আগে বেশিরভাগ সময়ই লাইব্রেরিতে কাটে, এখানেই অন্যদের সাথে আলোচনা হয়৷
ছবি: Bayerischer Landtag
মিউনিখের ম্যাক্সমিলেনিউম স্ট্রিট
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব যেমন ফ্রান্স ইয়োসেফ স্ট্রাউস, যিনি দীর্ঘদিন বাভারিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তিনি এবং পদার্থবিদ্যায় নোবেল বিজয়ী ভ্যার্নার হাইসেনব্যার্গ-ও এই বিশেষ ধরণের বৃত্তি পেয়ে ছাত্রাবস্থায় এই বিলাসবহুল হোস্টেলে থাকতেন৷
ছবি: Andreas Praefcke
10 ছবি1 | 10
স্টেফান বায়ারের কাছে কল্পনাশক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ যে কারণে সোফাটিউটিরের ভিডিও-তে কমিক চরিত্ররা অঙ্ক শেখায়৷ ছাত্র-ছাত্রীদের কতটা প্রগতি হলো, তা পরিমাপ করারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ তার পরেও প্রশ্ন থাকলে, অনলাইন চ্যাটে তা পেশ করা যায়৷ গ্র্যাফিক বিভাগে নানা ধরণের কাল্পনিক চরিত্র সৃষ্টি করা হয়৷ এখানে যাঁরা কাজ করেন, তাদের সকলেরই বিশ্বাস যে ভবিষ্যতে অনলাইনের মাধ্যমেই স্কুলের পড়াশুনো চলবে৷
বার্লিনের হ্যার্মান নোল স্কুলে স্টেফান বায়ারের টিউশন পদ্ধতি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷ এটা একটা মডেল প্রকল্প৷ ক্লাস সিক্সের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্লাসে পড়ানোর জন্য সোফাটিউটরের অনলাইন মালমশলা ব্যবহার করছেন৷
অধ্যক্ষা ইলোনা ব্যারনসডরফ বলেন: ‘‘আমাদের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা হলো যে, ভিডিওগুলো ক্লাসের পড়াকে অসাধারণ মজার করে তোলে; ভিডিও-র মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পাঠ্য বিষয়টি নতুন করে সাজাতে ও পেশ করতে পারেন এবং আমার কাছে যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো – ছাত্র-ছাত্রীরা বিষয়টির সঙ্গে একবার পরিচিত হয়ে যাবার পর, ভিডিও-র মাধ্যমে নিজেরাই একা-একা পড়াশুনো করতে পারে৷''
ছাত্র-ছাত্রীরা যত স্বনির্ভর হয়ে উঠবে, শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিভিন্ন জিনিস ব্যাখ্যা করার জন্য ঠিক তত বেশি সময় পাবেন৷ ল্যাপটপ ও হেডসেট পেয়ে শিশুরা প্রায়ই বড়দের চেয়েও দ্রুত কাজ করতে পারে৷ স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডেই আজকাল ভিডিও দেখা যায়৷ মডেল প্রকল্পটি ভালোভাবে চললে স্টেফান বায়ার ও তাঁর ডিজিটাল পাঠ্য আগামী বছর থেকে নিয়মিতভাবে ক্লাসে ব্যবহার করা হবে৷