একে তো করোনা মহামারি অন্যদিকে হাড় কাঁপানো শীত, যার কারণে বার্লিনের গৃহহীনদের অবস্থা করুণ৷ এমন পরিস্থিতিতে তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক হোটেল৷
বিজ্ঞাপন
ক্রিস্টিয়ানের থাকার নিজস্ব কোন জায়গা নেই৷ রাস্তায়ই কাটে তার দিনরাত৷ গ্রীষ্মে হয়তো মানিয়ে নেয়া যায়, কিন্তু বিপত্তিটা হয় তীব্র ঠাণ্ডায়৷ এবার অবশ্য মাথা গোঁজার আরামদায়ক ঠাঁই পেয়েছেন ক্রিস্টিয়ান৷ নভেম্বর থেকেই তার মতো ভবঘুরে গৃহহীনরা বার্লিনের একটি হোটেল থাকার জায়গা হয়েছে৷ ক্রিস্টিয়ান বলেন, ‘‘আবর্জনার স্তূপে ঘুমানোটা খারাপ ছিল না তবে হোটেলের বিছানা তার চেয়ে অনেক ভালো৷’’
এর আগের শীতগুলোতে তিনি ক্যাথলিক চার্চ পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটিয়েছেন৷ সেখানে গৃহহীনদের জন্য ৪০টি বিছানা বরাদ্দ ছিল৷ আশ্রয়কেন্দ্রের পরিচালক ভল্ফগাং ভিল্শ জানান, ‘‘এ বছর করোনার কারণে পরিস্থিতি ভিন্ন৷ সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখার কথা ভেবে সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে৷ তাছাড়া ছোট কক্ষে কয়েকজন একসাথে রাত কাটানো বা মেঝেতে বিছানা করে থাকাও সম্ভব নয়৷’’
যেই হোটেলগুলো গৃহহীনদের জন্য এগিয়ে এসেছে তার মধ্যে পেনজিয়ন রাইটার একটি৷ এজন্য অবশ্য নগর প্রশাসন থেকে তারা কিছুটা ক্ষতিপূরণ পাবে৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে হোটেল ব্যবসায়ীদের যা খুবই প্রয়োজন৷ করোনার কারণে পর্যটক বা ব্যবসায়িক ট্যুর প্রায় বন্ধ থাকায় অনেকদিন থেকেই হোটেল ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে৷
হিমশীতল তাপমাত্রা
গৃহহীনদের জন্য মাথা গোঁজার একটি জায়গা যে কতোটা জরুরি তা বোঝা গেছে গত কয়েকদিনের ঠাণ্ডায়৷ তাপমাত্রা নেমেছিলো মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে, যা রাস্তায় ঘুমানোর জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ৷ এমন জরুরি অবস্থায় গৃহহীনদের জন্য বার্লিনের হোটেলগুলোকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে আবেদন জানায় বার্লিনের চ্যারিটি সংস্থা৷ তাদের ডাকে সাড়া দেয় হোটেলগুলোও৷ গৃহহীনদের জন্য মোট এক হাজার ৪২৬ টি শয্যা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় বলে জানান, বার্লিন স্যোশাল সার্ভিসের মুখপাত্র স্টেফান স্ট্রাস৷ ঘুমানোর জন্য শুধু বিছানাই নয়, অনেক হোটেল গৃহহীনদের জন্য সকালের নাস্তা এবং রাতের খাবারে ব্যবস্থাও করে৷
গৃহহীনদের নতুন সম্ভাবনা
গৃহহীনদের দেখাশোনা দায়িত্বে রয়েছেন সিস্টার আরনল্ড৷ তাদের সাথে কথা বলা এবং তাদের মনের অবস্থা বোঝাই তার প্রধান কাজ৷ হোটেলে থাকা ভবঘুরেদের নিয়ে তিনি আশাবাদী৷ সিস্টার আরনল্ড বলেন, ‘‘জীবনের সব আশা ছেড়ে দেওয়া হতাশাগ্রস্থ গৃহহীন এই পুরুষেরা কয়েক সপ্তাহ হোটেলে সুন্দরভাবে আরাম করে থাকায় হয়তো তাদের বোধদয় হবে৷ তারা চাকরি খুঁজবে, থাকার জন্য বাড়ি ভাড়া নেবেন৷ তাদের উন্নত জীবনের সম্ভাবনা আর সুযোগ রয়েছে৷’’
টেসা ক্লারা ভাল্টার/এনএস
প্রচণ্ড শীতে যেভাবে বাঁচে গাছ ও প্রাণী
খাবারের, পানির অভাব৷ তবুও প্রচণ্ড শীতে যেভাবে লড়াই করে বেঁচে থাকে বিভিন্ন গাছ ও প্রাণী, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: H.Schweiger/WILDLIFE/picture alliance
বরফজমা জঙ্গল
তাপমাত্রার পারদ যত নীচের দিকে নামে, তত কমতে থাকে কোনো গাছের বেড়ে ওঠার ক্ষমতা৷ শক্তি সঞ্চয় করতে শুরু করে তারা৷ বরফজমা ঠান্ডা আবহাওয়ায় পানির অভাবও দেখা দেয়, কারণ, মাটি থেকে জমে যাওয়া পানি শুষে নিতে পারে না গাছের শিকড়৷ ফলে, শীতপ্রধান অঞ্চলের কোনিফার প্রজাতির গাছ, যার মধ্যে পাইনগাছও পড়ে, তাদের পাতার ওপর এক ধরনের মোমের মতো আস্তরণ তৈরি করে, যাতে করে পানি বেশি খরচ না হয়৷
ছবি: Stephan Rech/imageBROKER/picture alliance
পাতা ঝরানোর মৌসুম
কোনিফার গাছের পাতায় মোমের আস্তরণ৷ কিন্তু সব গাছ একরকম নয়৷ বেশ কিছু গাছ পানির ব্যবহার কমাতে পাতা ঝরিয়ে দেয় শীতকালে৷ কিছু কিছু গাছ তো তাদের শরীরের ভেতর বিশেষ চিনি তৈরি করতে পারে, যার সাহায্যে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় তারা৷
ছবি: Andrew McLachlan/All Canada Photos/picture alliance
ভাঁড়ার মজুত
শুধু গাছ কেন, শীতকাল বেশ কিছু্ প্রাণীর জন্যেও লড়াই করে বেঁচে থাকার সময়৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে পিকা নামের একটি প্রাণীকে৷ উত্তর অ্যামেরিকা, এশিয়া ও ইউরোপের কিছু অঞ্চলে পাওয়া যায় তাদের৷ পিকা ও অন্য আরো কয়েকটি প্রজাতির প্রাণী শীত আসার আগে থেকেই খাবার সঞ্চয় করতে থাকে, যাতে করে ঠান্ডার দিনগুলি অভুক্ত থাকতে না হয়৷
ছবি: H.Schweiger/WILDLIFE/picture alliance
পশমের জামা গায়ে
শীতকালে মানুষ ঠান্ডা থেকে বাঁচতে গায়ে সোয়েটার, কোট চাপায়৷ আর বিশেষ কিছু শেয়াল ও ভালুক গায়ে চাপায় অতিরিক্ত চর্বি আর ভারী পশম৷ আর্কটিক ফক্স পুরো শীতকালজুড়ে তার কালো পশম ঝেড়ে ফেলে৷ বদলে, তখন দেখা যায় মোটা সাদা পশম, যা শরীরকে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করে৷
টানা ঘুম
মাটিতে দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তাতে ঢুকে গোটা শীতকাল টানা ঘুম দিয়েই কাটিয়ে দিতে পছন্দ করে বেশ কিছু প্রাণী৷ এই ঘুমকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘হাইবারনেশন’ বা শীতনিদ্রা৷ দীর্ঘ ঘুমের সময় হৃৎপিণ্ডের কম্পনকে একদম ঢিমে করে ফেলে তারা, যাতে করে শক্তি সঞ্চয় হয়৷
ছবি: picture alliance/Arco Images/Sunbird Images
পোকামাকড় যা করে
বেশির ভাগ পোকামাকড়ের শরীরের বেশির ভাগটাই থাকে পানি৷ শীতের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে কিছু পোকামাকড় এক ধরনের বিশেষ ‘অ্যান্টিফ্রিজ’ বা বরফরোধ করে এমন পদার্থ তৈরি করে৷ গবেষণা বলছে, আগুনরঙা গুবরেপোকা মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের শীতেও এভাবেই নিজেকে বাঁচায়৷
ছবি: D. Vorbusch/McPHOTO/picture alliance
অন্ধকারে বেঁচে থাকা
আন্টার্কটিকার ভয়াবহ শীতে খোলা জায়গায় প্রায় কোনো প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারে না৷ কিন্তু এক ধরনের আগাছা সূর্যের আলোহীন শীতকাল কাটায় একেবারে মাটির সাথে মিশে গিয়ে৷ এতে করে তীব্র বাতাস ও বরফ, কোনোকিছুই হার মানাতে পারে না তাকে৷ পরে বসন্তকালে সূর্যের দেখা পেলে আবার নতুন করে সোজা হয়ে ওঠে এই ধরনের আগাছা৷
পেইন্টেড টার্টল নামের কচ্ছপ শীত কাটায় পুকুরের পানির তলায়৷ মাঝে মাঝে অক্সিজেন নিতে ওপরে উঠলেও, বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, শীতের মাত্রা বাড়লে তারা একবারে অনেকটা অক্সিজেন শরীরে জমিয়ে নিতে পারে৷ ফলে, দীর্ঘ সময় অক্সিজেন না নিয়েই পানিতে থাকতে পারে তারা৷