‘ইউনিভার্স বস' ক্রিস গেইল ওয়ানডে মাতাবেন এবারের বিশ্বকাপ পর্যন্তই৷ ৫০ ওভারের এই আন্তর্জাতিক ফরম্যাট থেকে বিদায় নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷ তাই এই বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখতে চান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
পারবেন কি তা? ওয়েস্ট ইন্ডিজের এখনকার যে দল, তাতে সম্ভাবনা জোরালো না হলেও একেবারে ফেলে দেয়া যায় না৷ তবে সেজন্য গেইল ঝড়ের উপাখ্যান চাই৷ সেই গেইল ঝড়, যা গত দুই দশক মাতিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের৷
‘‘আমি দাগ টেনে দিতে চাই - অথবা বলা যেতে পারে তার কেটে দিতে চাই,'' বিদায়ের ঘোষণা দিয়ে বলেন ক্রিস৷ ‘‘তরুণদেরও কিছুটা উপভোগ করার সুযোগ দিতে চাই এবং পেছনে বসে তাদের পার্টি উপভোগ করতে চাই৷''
এভাবেই বলেন মজার মানুষ গেইল৷ তবে ২০১৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ তাঁর জন্য যে অনেক বড় বিষয় সেটিও উল্লেখ করতে ভোলেননি৷ ‘‘সত্যি বলতে কি, এটা আমার জন্য বড় একটা বছর৷ ২০১৯ সালটিও বড় কিছু করেই শেষ করতে চাই,'' বলেন তিনি৷
বয়স ৩৯৷ চলমান ইংল্যান্ড সফরের আগে খেলেছেন ২৮৪ ওয়ানডে৷ উইন্ডিজ ইতিহাসে ক্রিকেট গ্রেট ব্রায়ান লারার পরেই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তাঁর নাম৷ দশ হাজার রানের মাইলফলক থেকে মাত্র ২৭৩ রান দূরে৷ লারার ১০,৪০৫ রান পেছনে ফেলতে পারবেন কি? পারতেই হবে তাঁর৷ বিশ্বকাপ ছাড়াও হাতে আছে প্রস্তুতি ম্যাচ৷
‘‘৫০ ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বকাপই শেষ কথা,'' বলেন গেইল৷ সেই শেষ কথাতেই তাঁরও শেষ কথা৷
কিন্তু বিশ্বকাপ ট্রফি কি তুলে ধরতে পারবে গেইলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ? স্কাই স্পোর্টসকে আইপিএলের নেট সেশনে গেইল বলেন, ‘‘অবশ্যই, তরুণদের কাছে এটা আমার পাওনা,'' বলেন তিনি৷ ‘‘আমার জন্য তাদের এটা করতেই হবে এবং আমাকে ট্রফি দিতেই হবে৷ তবে আমিও আমার অংশের অবদানটুকু রাখতে চাই৷''
৩১ মে বিশ্বকাপ মিশন শুরুর আগে আয়ারল্যান্ড ও বাংলাদেশের সঙ্গে তিনদেশীয় সিরিজ খেলবে ক্যারিবীয়রা৷
গেইলের ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু ভারতের বিরুদ্ধে টরন্টোতে ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে৷ সেরা স্কোর ২১৫৷ সেঞ্চুরি আছে ২৩টি৷ স্পিন বোলার হিসেবেও সফল এই মায়েস্ত্রো৷ ১৬৫ উইকেট শিকার করেছেন৷ এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকার আছে একটি৷
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গেইল ও আফ্রিদির যত রেকর্ড
ইংল্যান্ডকে একাই উড়িয়ে দিলেন ক্রিস গেইল৷ তার আগে শহীদ আফ্রিদির ঝড়ও দেখেছে ইডেনের দর্শক৷ তাঁরা ভালো খেললে সব প্রতিপক্ষেরই সর্বনাশ৷ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেশ কিছু রেকর্ড আছে দু’জনের৷ চলুন দেখে নেয়া যাক৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
সবচেয়ে বেশি ছক্কা
২০০৭ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন ক্রিস গেইল৷ গত ১৬ মার্চ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৮ বলে অপরাজিত ১০০ রান করার পথে ১১টি ছক্কা মেরেছেন তিনি৷ তাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁর মোট ছক্কা হয়ে গেছে ৬০টি৷ গেইলের পরেই আছেন ভারতের যুবরাজ সিং৷ তাঁর ছক্কা গেইলের প্রায় অর্ধেক, ৩১টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Mukherjee
‘দ্রুততম’ আফ্রিদি
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অন্তত ১২৫টি বল খেলেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে স্ট্রাইকরেটে সবচেয়ে এগিয়ে পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদি৷ ২০০৭ থেকে এ আসর (১৭.০৩.২০১৬) পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোট ৩১টি ম্যাচ খেলে ৫০৫ রান করেছেন তিনি৷ স্ট্রাইকরেট ১৫৫ দশমিক ৮৬!
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
সবচেয়ে বেশি ফিফটি
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ফিফটি বা তার চেয়ে বড় ইনিংস খেলার রেকর্ডেও সবার ওপরে ক্রিস গেইল৷ তাঁর পঞ্চাশ বা পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস আছে ন’টি৷ এমন সাতটি ইনিংস খেলে তাঁর পরেই আছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার মাহেলা জয়াবর্ধনে৷ যাঁরা এখনো খেলছেন তাঁদের মধ্যে শুধু ভারতের রোহিত শর্মাই আছেন কাছাকাছি৷ তাঁর পঞ্চাশ বা পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস আছে সাতটি৷
ছবি: AP
এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কা
এই রেকর্ডটিও ক্রিস গেইলের৷ রেকর্ডটি এ পর্যন্ত দু’বার নিজের নামে লিখিয়েছেন গেইল৷ ফলে প্রথম আর দ্বিতীয় স্থানে শুধু তাঁরই নাম৷ ২০০৫ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫৭ বলে ১১৭ রান করতে ১০টি ছক্কা মেরেছিলেন ক্যারিবীয় এই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান৷ গত ১৬ মার্চ ইংল্যান্ডকে উড়িয়েছেন ১১টি ছক্কা হাঁকিয়ে৷ ফলে ইলের আগের রেকর্ড গেইলের কাছেই ম্লান৷
ছবি: Getty Images/G. Copley
আরেক আফ্রিদি
শহিদ আফ্রিদি ক্রিজে যতক্ষণ থাকেন, মাতিয়ে রাখেন সমর্থকদের৷ স্কোরবোর্ডে ওঠে ঝড়৷ তবে সমর্থকদের একেবারে উল্টো অভিজ্ঞতাও হয়৷ অনেক সময় এমনও হয়, আফ্রিদি ক্রিজে এলেন এবং গেলেন৷ তাঁর নামের পাশে তখনো শুন্য৷ টি-টিয়োন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি শুন্যের রেকর্ডটিও কিন্তু আফ্রিদির৷ এ আসরে মোট পাঁচবার কোনো রান না করে আউট হয়েছেন শহীদ আফ্রিদি৷ শ্রীলঙ্কার তিলকরত্নে দিলশানও এ দুর্ভাগ্য বরণ করেছেন পাঁচবার৷