ইংলিশম্যান জুলিয়ান চেকলে থাকেন আয়ারল্যান্ডে৷ পেশায় কস্টিউম ডিজাইনার কিন্তু নেশায় ব্যাটম্যান! মানে তিনি ব্যাটম্যান সেজে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ব্যাটম্যান গেম খেলতে ভালোবাসেন – বাস্তবে!
বিজ্ঞাপন
আয়ারল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলের একটি শিল্পাঞ্চল৷ সেখানে ব্যাটম্যান অপরাধীদের তাড়া করে বেড়াচ্ছেন৷ অথবা অন্যভাবে বলতে গেলে: জুলিয়ান চেকলে তাঁর সঙ্গীসাথীদের সঙ্গে চোর-পুলিশ খেলছেন৷ জুলিয়ান বলেন, ‘‘৪৫ বছর বয়সে এই রাবারের স্যুট পরে দৌড়দৌড়ি করে বেড়াতে একটু বোকা-বোকাই লাগে৷ কিন্তু আমি বলব, এই সাজ পরলে যেন ক্ষমতা বেড়ে যায়৷ কাজেই এর ভালো দিকও আছে, আবার খারাপ দিকও আছে৷ আর স্যুটটাও ভীষণ গরম৷''
জুলিয়ান জাতে ইংরেজ৷ বাস্তব জীবনে কস্টিউম ডিজাইনার৷ কাজেই তিনি জানতেন যে, শুধু একটা কালো ড্রেস আর কেপ পরলেই ব্যাটম্যান হওয়া যায় না৷ আসল হিরোর মতো গ্যাজেটস থাকা চাই৷ বলতে কি, সাকুল্যে ২৩টা গ্যাজেট, যার মধ্যে একটি হলো একটি ম্যাগনেটিক ব্যাট ট্র্যাকার৷ ব্লুটুথ আর একটা পুরনো আইফোন দিয়ে আমাদের ব্যাটম্যান গাড়ি ফলো করতে পারেন৷
কস্টিউম ডিজাইনার যখন ব্যাটম্যান
02:57
এছাড়া এই ব্যাটম্যানের উর্দি থেকে গ্যাস স্প্রে করা যায়, যার ফলে শত্রু আর নড়তে-চড়তে পারে না৷ আর আছে একটি আলোর পিস্তল, যার ২,০০০ ওয়াটের আলো শত্রুর চোখ ধাঁধিয়ে দিতে পারে৷ জুলিয়ান জানালেন, ‘‘এই বন্দুকটা বানাতে সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হয়েছে সামনের দিকের এই ফ্ল্যাশবাল্বগুলো দিয়ে ২,০০০ ওয়াটের কারেন্ট পাঠাতে৷ সব কিছু অনেক ছোট করতে হয়েছে; এছাড়া এই বন্দুকে ঢোকার মতো ছোট একটা ছোট প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড তৈরি করতে হয়েছে৷''
সব কিছু শুরু হয়েছিল একটা ভিডিও গেম দিয়ে, যার দেখাদেখি একটা থ্রিডি মডেল বানানো হয়৷ আর্মারের নীচে যে কাপড়ের ড্রেসটি পরতে হয়, সেটাও ডিজাইন করেছেন চেকলে৷ তাঁর বন্ধু ও সহকর্মী কামিল ক্রাভচাক প্রধানত গ্যাজেটগুলোর বন্দোবস্ত করে থাকেন৷ কামিল স্পেশাল এফেক্টস ডিজাইনার৷ মুখোশ আর বডি-আর্মারের অধিকাংশ জুলিয়ান চেকলে-র ডিজাইন অনুযায়ী থ্রিডি-প্রিন্টারে তৈরি হয়েছে৷ তবে বেশ কিছু অংশ তিনি নিজের হাতে তৈরি করেছেন৷ যেমন ফাইবারগ্লাস দিয়ে বেল্টের বাকল্ বা রাবারের মাউথগার্ড৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সেই কাজে সময় কাটিয়েছেন জুলিয়ান৷ অপরাধীদের ধরতে হলে স্মোক বম্ব খুব কাজে লাগে৷ এমন ২৩টি গ্যাজেটের দরুণ গিনেস বুক অফ রেকর্ডস-এর গেমার সংস্করণে স্থান পেয়েছেন জুলিয়ান৷
আক্সেল প্রিমাভেসি/এসি
কমিক বলতে শুধু ব্যাটম্যান বা ডোনাল্ড ডাক বোঝায় না
‘কমিক কন’ ফেস্টিভালের শুরু মার্কিন মুলুকে৷ তার ঢেউ এসে লেগেছে জার্মানিতে৷ জুন মাসের ২৫-২৬ তারিখে অনুষ্ঠিত হলো জার্মানির প্রথম কমিক কন, স্টুটগার্টে৷ এসেছিলেন পঞ্চাশ হাজার কমিক ফ্যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্যাক টু দ্য রুটস
জার্মান ছড়া-লিখিয়ে ভিলহেল্ম বুশকে কমিক চিত্রণের আদিপুরুষ বলা হয়ে থাকে৷ নিউ ইয়র্কের প্রথম কমিক চিত্রকররা, এমনকি স্বয়ং ওয়াল্ট ডিজনি বুশকে গুরু বলে মনে করতেন৷ বিশেষ করে বুশের লিখিত ও চিত্রিত দুই পাজি ছেলের কাহিনি জার্মান শিশুসাহিত্যে আজও অমর – ম্যাক্স ও মরিটৎস৷
কমিকের আবির্ভাব সংবাদপত্রে
বিংশ শতাব্দীর সূচনায় কাগজের দাম পড়ায় আর মুদ্রণ প্রক্রিয়ার ব্যাপক উন্নতি ঘটায় সংবাদপত্রের কাটতি বাড়তে থাকে; সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে পত্রিকাগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা৷ পাঠকদের মন জয় করার প্রচেষ্টায় একটি বড় হাতিয়ার ছিল কমিক৷ এমনকি পত্রিকার সাফল্য-অসাফল্য নির্ভর করতো তার কমিক সাপ্লিমেন্টের ওপর৷
ছবি: Privatsammlung/Schirn Kunsthalle Frankfurt
সুপারম্যান
আদি সুপারম্যানের দুই স্রষ্টা হলেন জেরি সিগেল ও জো শুস্টার৷ ১৯৩৩ সালে ১৪ বছরের এই দুই কিশোর ‘কাল-এল’ নামের চরিত্রটি সৃষ্টি করেন, হিব্রু ভাষায় যার অর্থ হলো ‘ঈশ্বরের কণ্ঠ’৷ প্রকাশক পেতে পেতে পাঁচ বছর গড়িয়ে যায়৷ অবশেষে ১৯৩৮ সালে ডিসি কমিকস প্রথম সুপারম্যান কমিকটি প্রকাশ করে তাদের ‘অ্যাকশন কমিকস’ সিরিজে৷ ২০১৪ সালের একটি নিলেমে সেই প্রথম এডিশনের দাম উঠেছিল ৩২ লাখ ডলার বা ২৪ লাখ ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও হাজির ছিলেন সুপারম্যান!
সুপারহিরোদের কাজই হলো ‘ব্যাড গাই’, মানে গুণ্ডা-বদমায়েশদের সঙ্গে লড়াই করা৷ সুপারম্যানের সতীর্থ জুটতে বেশি সময় লাগেনি, বাজারে এসে পড়েছেন ব্যাটম্যান, ক্যাপ্টেন অ্যামেরিকা, ওয়ান্ডারউওমান, দ্য ফ্ল্যাশ ও আরো অনেকে৷ তাদের সকলেই মার্কিন সৈন্যদের পকেটে করে ইউরোপের রণাঙ্গণেও পৌঁছেছেন ও সেই হিসেবে অ্যাডল্ফ হিটলারের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন৷
ছবি: Getty Images/Hulton Archives
ডোনাল্ড ডাক
সুপারহিরো না হলেও, কমিকের ইতিহাসে এই হাঁসটির জনপ্রিয়তা অন্য যে কোনো চরিত্রের চেয়ে বেশি৷ওয়াল্ট ডিজনি কমিকস ডোনাল্ড ডাককে বাজারে আনে ১৯৪৩ সালে৷ তার পরের বিশ বছর ধরে চিত্রণশিল্পী কার্ল বার্কস মাসের পর মাস ডিজনি কমিকসের অলঙ্করণ করে গেছেন৷
ছবি: imago/United Archives
ইউরোপই বা কম যায় কিসে?
অ্যাস্টেরিক্স আর ওবেলিক্সের কথা ভাবুন৷ তাদের স্রষ্টা হলেন দুই ফরাসি শিল্পী রেনে গসিন্নি ও আলবের উদ্যার্জো (ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে)৷ অ্যাস্টেরিক্সের সৃষ্টি ১৯৫৯ সালে – সে-যাবৎ ৩৬টি অ্যাস্টেরিক্স কমিক প্রকাশিত হয়েছে৷
ছবি: DPA
টিনটিন
বেলজিয়ামের চিত্রণশিল্পী এর্জ ১৯২৯ সালে এই ভ্রাম্যমান রিপোর্টারটিকে সৃষ্টি করেন৷ তারপর টিনটিন ও তাঁর কুকুর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেরিয়েছেন, তাদের নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ২৮টি কমিকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লাকি লিউক
বেলজিয়ামের এক কাউবয় যে বিশ্বজোড়া নাম করবে, তা কে ভাবতে পেরেছিল৷ সারাক্ষণ ঠোঁটের কোণে সিগারেট ঝোলানো এই মানুষটিকে প্রথম দেখা যায় ‘স্পিরু’ ম্যাগাজিনে, ১৯৪৬ সালে৷ লাকি লিউকের স্রষ্টা হলেন মরিস নামের এক চিত্রণশিল্পী৷ প্রথম লাকি লিউক কমিক বেরোয় ১৯৪৯ সালে৷ লাকি লিউককে নিয়ে ফিল্মও তৈরি হয়েছে – ছবিতে লাকি লিউকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন টেরেন্স হিল৷
ছবি: picture alliance/United Archives/IFTN
গ্র্যাফিক নভেল
গ্র্যাফিক নভেল বলতে বোঝায় একটি চিত্রিত উপন্যাস বা চিত্রে বর্ণিত উপন্যাস৷ এগুলি বই হিসেবেই প্রকাশিত হয় ও বই হিসেবেই বিবেচিত হয়, যার প্রমাণ, ১৯৮৬ সালে মার্কিন চিত্রণশিল্পী আর্ট স্পিগেলম্যানের ‘মাউস’ বা ‘ইঁদুর’ নামধারী গ্র্যাফিক নভেলটি বেস্টসেলার লিস্টে স্থান পায়, এমনকি ১৯৯২ সালে পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করে৷ ‘মাউস’ বইটিতে স্পিগেলম্যানের বাবার কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি হলোকস্ট থেকে প্রাণে বেঁচে যান৷