গেল সোমবার হ্যাকারদের একটি গ্রুপ অনলাইনে দাবি করেছে যে, তারা নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক জনপ্রিয় মুভি চ্যানেল হোম বক্স অফিস বা এইচবিও-এর বেশ কিছু ফাইল চুরি করেছে৷ এগুলো ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার দাবি করেছে তারা৷
বিজ্ঞাপন
অর্থ না দেয়া হলে একটি টেলিভিশন সিরিজের পুরোটাই ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবার হুমকি দেয়া হয়েছে৷ একইসঙ্গে এগুলোর সত্ত্ব সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু নথিও ফাঁস করে দেবার হুমকি দেয়া হয়েছে৷
ধারণা করা হচ্ছে, হ্যাকার দলটি ব্যাপক জনপ্রিয় সিরিজ ‘গেম অফ থর্নস’-এর পাঁচটি এপিসোডের ড্রাফট স্ক্রিপ্ট চুরি করেছে৷ এর মধ্যে সামনেই আসছে এমন একটি পর্বও আছে৷
এছাড়া এইচবিও-র ফিল্ম প্রোগ্রামিং ডিপার্টমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট লেসলি কোহেনের ই-মেল অ্যাকাউন্ট থেকে এক মাসের ই-মেল চুরি করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
সত্ত্ব সংশ্লিষ্ট তথ্য চুরির বিষয়টি আগেই প্রকাশ করেছিল এইচবিও কর্তৃপক্ষ৷ চোরদের ধরতে এখন পুলিশ ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছে নেটওয়ার্কটি৷
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
হ্যাকাররা ‘মি. স্মিথ’ নামে অনলাইনে এইচবিও সিইও রিচার্ড প্লেপলারের কাছে একটি বার্তা পাঠায়৷ কালো ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর সাদা অক্ষরে তারা একটি আল্টিমেটাম দেয় সেই ভিডিওতে৷
সংক্ষেপে যা ছিল সেই বার্তায় তা হল, তিন দিনের মধ্যে তাদের ছয় মাসের ‘বেতন’ পরিশোধ করতে হবে৷ তাদের দাবি, বিভিন্ন কোম্পানিকে ব্ল্যাকমেল করে গ্রুপটি বছরে ১ কোটি ২০ লাখ থেকে প্রায় দেড় কোটি ডলার আয় করে৷
সে হিসেবে ছ'মাসের জন্য অন্তত ৬০ লাখ ডলার বা ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দিতে হবে এইচবিওকে৷ তবে এই অর্থ দিতে হবে বিটকয়েনে৷
অর্থ না দিলে যে এইচবিও শো ও অন্যান্য নথি সম্বলিত যে দেড় টেরাবাইট তথ্য তারা চুরি করেছে বলে দাবি করেছে, তা প্রকাশ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে৷ তারা সরাসরি কোম্পানিটির সিইও রিচার্ডের সঙ্গেই যোগাযোগ চালাবে বলে জানিয়েছে৷
ছ'মাসের চেষ্টায় এইচবিও নেটওয়ার্কের এই তথ্য চুরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে হ্যাকাররা৷