কম্পিউটার গেম
২১ আগস্ট ২০১২ক্যারোলিন গেপার্ট যখন তাঁর ছোট্ট সম্রাজ্যের দরজা খুলে দিল, তখন তাঁর মুখে ছিল হাসি৷ বার্লিনের শ্যোনেব্যার্গ এলাকার একটি পুরনো কিন্তু আলোবাতাসপূর্ণ ভবনে তাঁর এই সম্রাজ্যের অবস্থান৷ সেখানে তিনি এবং তাঁর ছয় সহকর্মী এক নতুন জগতের কাঠামো তৈরি করছেন৷ এক ভার্চুয়াল জগত - যেটি অত্যন্ত রঙিন, জটিল এবং রহস্যে ভরপুর৷
প্রতি তিনজন জার্মানের মধ্যে একজন নিয়মিত কম্পিউটার গেম খেলেন৷ এবং এই ধারা অব্যাহত রয়েছে৷ কিন্তু ঘর অন্ধকার করে শুধু হিংসাত্মক গেম খেলার প্রবণতা বোধহয় এখন আর আগের মতো নেই৷
কম্পিউটার গেম সকল বয়সি এবং সামাজিক গোষ্ঠীর কাছেই জনপ্রিয়৷ আরো মজার বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে গেমারদের অর্ধেকই হচ্ছে নারী৷ আর গেমের ক্ষেত্রে পুরুষের পছন্দের সঙ্গে অনেকক্ষেত্রেই নারীর কোনো মিল নেই৷
শুধু অ্যাকশন নয়, মেয়েরা এখন এমন গেম খেলতে পছন্দ করে, যা তাদের জন্য আরামদায়ক এবং অনেকটা কমিউনিটি নির্ভর হয়৷ সংশয়, মারামারি আর প্রতিযোগিতায় ভরপুর গেম তাদের বিশেষ পছন্দ নয়৷
মেয়েদের পছন্দ হচ্ছে সামাজিক গেম, যেগুলো ফেসবুকের মতো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটে অন্তর্ভুক্ত আছে এবং বন্ধুদের সঙ্গে খেলা সম্ভব৷ এসব গেমের মাধ্যমে নারী নতুন জগৎ তৈরির চেষ্টা করেন৷ তাদের গেমে থাকে খামার রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা অশুভ আত্মার হাত থেকে কাল্পনিক বিভিন্ন জায়গা রক্ষার লড়াই৷
এসব সামাজিক গেমে সহিংসতা কিংবা শুটিং'এর উপস্থিতি খুব কমই থাকে৷ গেপার্ট বলেন, ‘‘মেয়েদের কাছে আবহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার৷ তারা আন্তরিক পরিবেশ চায়৷'' এক্ষেত্রে গেমের খুঁটিনাটি দিক যেমন, আলো এবং শব্দের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷
গেপার্ট ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার গেম খেলেন৷ ‘টেটরিস' থেকে ‘রেসিডেন্ট ইভিল' পর্যন্ত সব ধরনের গেমই খেলেছেন তিনি৷ ‘‘এমনকি সহিংস গেম, যেখানে আমার দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিপক্ষকে হত্যা করা, তেমন গেমও বাদ দেইনি'', বলেন তিনি৷ তবে মারামারি-কাটাকাটি নির্ভর গেম তিনি বিশেষ পছন্দ করেন না৷
চাহিদা সত্ত্বেও কম্পিউটার গেম নির্মাণের ক্ষেত্রে নারীর পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া এখনো বিশেষ সম্ভব হচ্ছে না৷ কেননা, গেম নির্মাতাদের অধিকাংশই পুরুষ৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই শিল্পে নারী ডিজাইনারদের সংখ্যা বেড়েছে বটে, কিন্তু তবুও সংখ্যাটা অনেক কম৷ ইন্টারঅ্যাকটিভ এন্টারটেনমেন্ট সফটওয়্যার বিষয়ক জার্মান বাণিজ্য সংগঠন বিইউআই'এর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে গেম শিল্পে নারী ডিজাইনারের সংখ্যা মাত্র ২০ শতাংশ৷
এই শিল্পে যোগ দিতে আগ্রহী নারীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ জার্মানিতে ৪০টিরও বেশি সরকারি এবং বেসরকারি ইন্সটিটিউট বর্তমানে এই বিষয়ে ডিগ্রি গ্রহণ এবং গবেষণার সুযোগ দিচ্ছে৷
এক্ষেত্রে গেমস অ্যাকাডেমি ‘আই বার্লিন'-এর কথা বলা যেতে পারে৷ দশ বছর আগে এই প্রতিষ্ঠানে গেমিং ক্যারিয়ার শুরু করেন গেপার্ট৷ ১৮ বছর বয়সে একজন প্রশিক্ষিত ‘কমিক স্ট্রিপ' শিল্পী হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানে বৃত্তির আবেদন করেন তিনি৷ এবং তিনি হচ্ছেন মাত্র দু'জন নারীর একজন, যারা কিনা সেখান থেকে ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন এবং গেমস ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার বেছে নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তখন এই শিল্পে নারী তেমন একটা ছিল না, ফলে আমরা দু'জন অনেকটা বহিরাগত প্রাণীর মতো ছিলাম৷'' গেপার্টের বেশিরভাগ সহশিক্ষার্থী ছিলেন পুরুষ৷ এতে করে তিনি অবশ্য বিশেষ অস্বস্তি বোধ করেননি৷
বর্তমানে গেপার্ট এবং তাঁর ব্যবসা সহযোগী বোরিস মুনস'এর নিজস্ব একটি ছোট্ট সংস্থা রয়েছে৷ সেটার নাম ‘ইয়ো মেই'৷ যৌথভাবে তাঁদের নির্মিত প্রথম গেম হচ্ছে ‘কোয়োটল'৷ গেপার্ট জানিয়েছেন, এই শিল্পে মেয়েদের উপস্থিতি এত কম কেন সেটা তাঁর বোধগম্য নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার দল এবং আমি সম্পূর্ণ নতন জগত গড়তে পারি৷ এবং মানুষ সেই জগত পছন্দ করে৷ পৃথিবীতে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো পেশা৷''
প্রতিবেদন: থেরেসা ট্রপার / এআই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ