কিছুদিন আগের কথা, হঠাৎ অফিসে গুঞ্জন বাংলাদেশে নাকি অনলাইনে ‘গোপন জিনিস' বিক্রি হয়৷ আগ্রহ নিয়ে ঘেঁটে দেখলাম সাইটটা৷ নামের সঙ্গে কাজের মিল আছে বটে তবে একটু ভিন্নভাবে৷
বিজ্ঞাপন
গোপন জিনিস ডটকম নামক সাইটটিতে বিক্রি হয় নারীর অন্তর্বাস, ঘুমের পোশাক, এমনকি কনডমও৷ অনলাইন অর্ডার দিলে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছে যায় পণ্য৷ সাইটটি দেখলেই বোঝা যায় পুরোপুরি প্রফেশনাল এক টিম রয়েছে এর পেছনে৷ তাদের ফেসবুক পাতায় পরিচিতদের মধ্যে যারা লাইক দিয়েছেন তাদের দেখে বুঝলাম বড় মাপের উদ্যোক্তারা রয়েছেন এর পেছনে৷
আমাদের সমাজে মেয়েদের ‘গোপন জিনিস' হিসেবে বিবেচিত পণ্যগুলো অনলাইনে বিক্রির আইডিয়াটা কিন্তু মন্দ নয়৷ এতে বরং অনেকের ঝামেলা কমেছে, বিশেষ করে কর্মজীবী নারীরা কাজের ফাঁকেই অর্ডার দিয়ে দিতে পারছেন তাদের পছন্দের অর্ন্তবাস৷ কিংবা যে নারী গাউসিয়া মার্কেটে গিয়ে পুরুষ ক্রেতার কাছে অন্তর্বাস চাওয়া বিব্রতকর মনে করতেন তার বিব্রত হওয়ার দিন৷
বাংলাদেশ ও বিশ্বের কয়েকটি জনপ্রিয় শপিং সাইট
সাধারণ দোকানে কেনাকাটার উপর অনেকটাই ভাগ বসিয়েছে অনলাইন শপিং সাইটগুলো৷ অনলাইনের সঙ্গে সাধারণ দোকানের যুদ্ধ কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা সময়ই বলে দেবে৷ বিশ্বের ও বাংলাদেশের কয়েকটি জনপ্রিয় অনলাইন শপিং সাইটের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
অ্যামাজন ডট কম
www.amazon.com এমন একটি ওয়েবসাইট প্রত্যেকটি দেশের জন্যই যাদের আলাদা ব্যবস্থাপনা আছে৷ ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়া – ভোক্তাদের জন্য সবকিছু আছে অ্যামাজনে৷ এমনকি ভারতের মতো বিশাল দেশসহ অন্য দেশের স্থানীয় অনলাইন শপিং পোর্টালগুলোর সঙ্গে রীতিমত প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে অ্যামাজন৷ এখন পর্যন্ত অ্যামাজন কেনাকাটার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে৷
ছবি: amazon.com
ইবে ডট কম
www.ebay.com-এর ভাবনাটা অসাধারণ৷ এই ওয়েবসাইটের সাহায্যে যেকোন মানুষ তার জিনিস ইচ্ছেমত বেচতে পারে এবং একই সময় নতুন বিক্রেতারা নতুন নতুন জিনিসও বিক্রি করতে পারে৷ তাই দেখা যায় এই সাইটে অদ্ভুতসব জিনিস নিয়ে এলে সেগুলোও অনলাইনে বিক্রি হয়ে যায়৷ ইবে-তে গেলেই দেখতে পাবেন আপনার যা চাই সবই আছে সেখানে৷ বিশ্বের কোথাও যে জিনিসটি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, ইবে-তে সেটা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷
ছবি: DW
ওয়ালমার্ট ডট কম
না বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই! ওয়ালমার্টেরও অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট আছে www.walmart.com৷ অনলাইনে বিশাল পণ্যের সমাহার আছে তাদের৷ এমনকি দোকানে যেসব জিনিস পাওয়া যায় না, অনলাইনে সেসব জিনিস পাবেন আপনি৷ সবচেয়ে সুবিধা হলো দোকানে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই৷ ঘরে বসে একটা ক্লিক করলেই দরজায় পৌঁছে যাচ্ছে ওয়ালমার্টের পণ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
আলীবাবা ডট কম
www.alibaba.com বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন শপিং পোর্টাল৷ এই পোর্টাল থেকে আপনি অনেকরকম পণ্য কিনতে পারবেন৷ কৃষি থেকে শুরু করে রাসায়নিক সবধরনের দ্রব্য পাওয়া যায় এখানে, যাই কিনুন ঠিক আপনার বাসায় পৌঁছে দেবে৷ কোন পণ্য অর্ডার করার পর তাদের পাঠানোর প্রক্রিয়া এবং দাম নেয়ার পদ্ধতি বেশ সন্তোষজনক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y.Ming
ফ্লিপকার্ট ডট কম
www.flipkart.com এটি একটি ভারতীয় অনলাইন শপিং এর ওয়েবসাইট, যেটি বিশ্বব্যাপী বাজার বিস্তার করেছে৷ এশিয়ার মানুষের কাছে এই সাইটটি ব্যাপক জনপ্রিয়৷ অ্যামাজনের পর কেনাকাটার দিক থেকে বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফ্লিপকার্ট৷ এই সাইটটি শুরু হয়েছিল অনলাইনে বই বিক্রির মধ্য দিয়ে, এখন বিশাল মহীরূহে পরিণত হয়েছে এটি৷
ছবি: flipkart.com
রকমারি ডট কম, বাংলাদেশ
অনলাইন এ বই কেনার কথা ভাবছেন? তাহলে www.rokomari.com-এ একবার আপনাকে প্রবেশ করতেই হবে৷ ২০১২ সালের ১৯শে জানুয়ারি এই সাইটটির যাত্রা শুরু হয়৷ এর মাধ্যমে অল্প খরচে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয় বই৷
বিক্রয় ডট কম, বাংলাদেশ
বাংলাদেশে কেনা-বেচার ক্ষেত্রে এই সাইটটি খুব জনপ্রিয়৷ বাড়ি, গাড়ি থেকে মোবাইল ফোন যা বিক্রি করতে বা কিনতে চান অতি সহজেই এই সাইটটির সাহায্যে তা করতে পারবেন৷ এমনকি চাকরির খোঁজও পাবেন এখানে৷ শুধু তাই নয় কোরবানির পশু ক্রয় উপলক্ষ্যে www.bikroy.com-এ একবার ঢুঁ মারতে পারেন৷ গত বছরও ক্রেতাদের ঘরে বসেই কোরবানির পশু পছন্দ করার সবচেয়ে বড় আয়োজন রেখেছিল বিক্রয়ডটকম৷
দারাজ ডট কম ডট বিডি
www.daraz.com.bd এটি জার্মানভিত্তিক কোম্পানির একটি শপিং সাইট৷ এখানে পোশাক থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্সসহ প্রায় ব্যবহারিক সব পণ্য পাওয়া যায়৷
আজকের ডিল ডট কম
www.ajkerdeal.com বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা অনলাইন শপিং পোর্টাল৷ বাংলাদেশভিত্তিক প্রথম বাংলা ই-কমার্স এবং বাংলাদেশি মালিকানায় বাংলাদেশি প্রথম ই-কমার্স সাইট৷ আজকের ডিল ডট কম বিডি জবস-এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান৷ এই সাইট থেকে আপনি প্রায় সবধরনের কেনাকাটা করতে পারবেন৷
প্রিয়শপ ডট কম
www.priyoshop.com ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে চালু হয়৷ অথ্যাধুনিক ট্রেন্ডের পোশাক থেকে শুরু করে গহনা, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি – সবকিছুই পাওয়া যায় এই সাইটে৷
সহজ ডট কম
www.shohoz.com বাংলাদেশের এই অনলাইন শপিং সাইটটি মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছে ঈদের সময় বাসের টিকেট বিক্রির জন্য৷ ঈদে বাস ও ট্রেনের টিকেট কেনার ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই এখন সহজ ডট কম-এর আশ্রয় নেন৷ এছাড়া বিভিন্ন কনসার্টসহ নানা ইভেন্টের টিকেট কেনার অন্যতম মাধ্যম এখন সহজ ডট কম৷
11 ছবি1 | 11
গোপন জিনিস ডটকম বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান অনলাইন বেচাবিক্রির এক উদাহরণমাত্র৷ ১৬ কোটি মানুষের দেশটিতে এখন বলতে গেলে অনেককিছুই পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে৷ ফেসবুক বন্ধুদের দেখি মাঝেমাঝেই বিভিন্ন পণ্য অনলাইনে কেনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে৷ আজ একজন লিখছেন খাবার অর্ডার করার আধাঘণ্টার মধ্যে হাজির হয়েছে তা৷ আরেকদিন আরেকজন লিখছেন কাঙ্খিত পণ্য যথাসময়ে পৌঁছায়নি তাঁর কাছে৷ ঢাকাবাসী আমার ছোটভাই আবার পেয়াজ, রসুন, মসলাও কেনেন অনলাইনে৷ তাতে নাকি সময় বাঁচে, দামও বেশি নয়৷
বাংলাদেশের অনলাইন মার্কেটে সম্ভাবনার কথা কয়েকদিন আগে জেনেছিলেন মালিহা কাদিরের কাছ থেকে৷ সম্প্রতি ‘ইয়াং গ্লোবাল লিডার' স্বীকৃতি পাওয়া এই উদ্যোক্তা বাংলাদেশে ‘সহজ ডটকম' নামের একটি অনলাইন পোর্টালের প্রধান৷ তাঁর ওয়েবসাইট থেকে বাস, লঞ্চ ও ফেরির টিকিট বিক্রি হয়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি পরিষ্কারই জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ইকমার্সের সম্ভাবনা অনেক৷ তবে একটু সময় লাগবে৷
পশ্চিমা বিশ্ব, এমনকি পাশের দেশ ভারতও যেভাবে অনলাইন বেচাবিক্রিতে এগিয়ে যাচ্ছে সে তুলনায় বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে আছে বৈকি৷ আর এই পেছানোর পেছনে সরকারের ধীরগতিও কিছুটা কাজ করছে বলে আমি মনে করি৷ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার এখনো অনলাইনে বেচাবিক্রির পথ সহজ করতে পারেনি৷ পেপ্যালের মতো অর্থ প্রদানের যেসব সেবা অনলাইনে কেনাবেচার পথ সহজ করে দেয়, সেসব এখনো চালু হয়নি বাংলাদেশে৷ সরকারের এক্ষেত্রে আরো উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে৷
আর সততাও এক বড় প্রশ্ন৷ এই তো কিছুদিন আগে একবন্ধু জানালেন, অনলাইনে একটি পণ্য অর্ডার করার পর বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে ফোনে নাকি একজন জানালেন, অনলাইন অর্ডারটা বাতিল করে সরাসরি তাদের থেকে কিনলে নাকি একই পণ্য ৩০ শতাংশ ডিসকাউন্টসহ একদিন আগেই ডেলিভারি করা হবে৷ এরকম প্রতারণা অনলাইন শপের উপর থাকা ক্রেতার বিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারে৷ তাই সততা এবং প্রতারণা ঠেকাতে নজরদারিও জরুরি হবে অনলাইন মার্কেটকে নিরাপদে সম্প্রসারণের সুযোগ দিতে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷