শুধু ব্রিটেনের ইউকিপ পার্টি নয়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এমন অনেক দলের উত্থান দেখা যাচ্ছে, যারা নানা কারণে ইউরোপীয় ঐক্য প্রকল্পের বিরোধিতা করে চলেছে৷ এই অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দাবি জোরালো হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Oliver
বিজ্ঞাপন
ইউরোপের নানা দেশে ‘ইউরোস্কেপটিক' বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্কে সংশয়বাদীদের শক্তি বাড়ছে৷ অর্থাৎ সাধারণ মানুষের ভোটেই তারা সংসদে এসে নিজেদের ভাবধারা তুলে ধরছে৷ ব্রিটেন ছাড়াও ফ্রান্স ও ডেনমার্কে তাদের যথেষ্ট সাফল্য দেখা যাচ্ছে৷ সেই সঙ্গে রয়েছে উগ্র দক্ষিণপন্থি কিছু দল, যারা তাদের সার্বিক কর্মসূচি নিয়ে হাঙ্গেরি ও গ্রিসের মতো দেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে৷ তবে সব দলই যে ইইউ থেকে নিজের দেশকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করতে চায়, এমনটা বলা চলে না৷ প্রত্যেকেরই নিজস্ব অ্যাজেন্ডা রয়েছে৷ ফলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টেও তাদের মধ্যে ঐক্যের পথে বাধা রয়ে গেছে৷ যেমন জার্মানির এএফডি পার্টি অভিন্ন মুদ্রা ইউরো ত্যাগ করে পুরানো ডয়চে মার্ক আবার চালু করার পক্ষে সওয়াল করছে৷ ফ্রান্সের ন্যাশানাল ফ্রন্ট মূলত বিদেশিদের অভিবাসনের বিরোধিতা করে আসছে৷ হাঙ্গেরির দক্ষিণপন্থি দল ইইউ-কে উপেক্ষা করে সে দেশে প্রায় এক স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলছে৷
ইউরোপের বস্তিগুলো
ইউরোপের শহরগুলোর বস্তিতে তিন কোটিরও বেশি মানুষের বাস৷ এসব বস্তিতে নেই বিদ্যুৎ ও পানির সুব্যবস্থা৷
ছবি: FILIPPO MONTEFORTE/AFP/Getty Images
অমানবিক অবস্থা
বেশিরভাগ বস্তিতে এক ছাদের নীচে অনেকে বাস করেন৷ মাত্র চার বর্গমিটার এলাকায় তিন জন মানুষ গাদাগাদি করে থাকে৷ নেই বিশুদ্ধ পানি, শৌচাগার বা নিরাপত্তা৷
ছবি: AFP/Getty Images
প্যারিসের অন্য রূপ
ইউরোপের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নাম রোমা৷ অভিজাত শহর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উপকণ্ঠে একটি বস্তির ছবি এটি৷ ইউরোপের বিভিন্ন শহরের বস্তিতে রোমাদের সংখ্যাটাই বেশি৷ এদের বেশিরভাগই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এবং বেকার৷
ছবি: DW/G. Ketels
ঘর হারানোর ভয়
আমাদের দেশের মতোই বেশিরভাগ বস্তি অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে৷ তবে প্রধান শহরগুলোতে কিছু বস্তি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত৷ রোমারা এসব বস্তিতে খুব আশঙ্কার মধ্যে থাকে, কেননা তারা শ্রেণি বৈষ্যমের শিকার এবং যে-কোনো সময় তাদের বের করে দেয়ার ভয় দেখানো হয়৷
ছবি: Pablo Blazquez Dominguez/Getty Images
প্রদীপের নীচে অন্ধকার
ইউরোপকে সবসময় ধনসম্পদে পরিপূর্ণ এবং জীবনযাপনের জন্য ভালো স্থান বলে তুলে ধরা হয়৷ কিন্তু ফ্রান্স থেকে সার্বিয়া বা তুরস্ক সব জায়গাতেই কিন্তু বস্তি রয়েছে৷ ইউরোপের সবচেয়ে বড় বস্তিটি স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের কাছে অবস্থিত৷ ৪০ বছর আগে গড়ে ওঠা এই বস্তিতে বাস করেন প্রায় ৩০,০০০ মানুষ৷
ছবি: DW
বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা
জাতিসংঘের মতে, ২০২০ সালের মধ্যে সাহারা অধ্যুষিত আফ্রিকায় মোট জনসংখ্যার ২৬.৬ শতাংশ বস্তিতে বাস করবে, যা বর্তমানের চেয়ে একটু বেশি৷ এশিয়ার মোট জনসংখ্যার ৫৭.৭ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করবে৷ সেই তুলনায় ইউরোপের দেশগুলোতে মোট জনসংখ্যার মাত্র ২.৩ শতাংশ মানুষ থাকবে বস্তিতে৷
ছবি: Mindjazz pictures
বৃত্ত থেকে বের হওয়ার উপায় নেই
বিশ্বের অন্যান্য বস্তির তুলনায় ইউরোপের বস্তিগুলোর মানুষ অবশ্য সুযোগ সুবিধা থেকে ততটা বঞ্চিত নয়৷ তবে বিশ্বের সব বস্তিতে একটা বিষয়ে মিল আছে আর তা হলো শিক্ষার আলো থেকে বস্তিবাসীরা বঞ্চিত৷ ফলে এরা কেউ এই দরিদ্রতা থেকে বেরিতে আসতে পারে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কণ্টকিত জীবন
ইউরোপের বস্তিগুলো কেবল রোমা সম্প্রদায় নয় অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাথা গোঁজার জায়গা৷ বিশেষ করে স্পেনে অর্থনৈতিক মন্দার পর অনেকেই বাসা ভাড়া এবং বাড়ি বন্ধকীর অর্থ শোধ করতে না পারায় বস্তিতে ঠাঁই নিয়েছেন৷
ছবি: DW
গৃহহীন
ইটালির রাজধানী রোমের উপকণ্ঠে একটি শরণার্থী শিবিরে এই পরিবারটির বাস৷ আসলে একটা বস্তির আকার ও আয়তন কি হবে তা পরিমাপ করাটা কঠিন৷ তবে বরাবরই কর্তৃপক্ষ যা ঘোষণা করে তার চেয়ে বস্তিবাসী মানুষের সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে৷
ছবি: FILIPPO MONTEFORTE/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
ইউরোপের অনেক ভোটারের দৃষ্টিতেই রাজনীতির মূল স্রোতের নেতারা আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকট সামলাতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ প্রবৃদ্ধির অভাব, চরম বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের ধীর গতির সরাসরি কুফল ভোগ করছেন তাঁরা৷ এই অবস্থায় মানুষ এমন সব দলকে সমর্থন করছে, যারা জনমোহিনী বিকল্প কর্মপন্থা তুলে ধরছে৷ ফ্রান্স ও জার্মানির শীর্ষ স্তরের নেতারাও এই অবস্থায় কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধির উপর জোর দিতে শুরু করেছেন৷ হতাশ ভোটাররা ‘পপুলিস্ট' দলগুলির ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিন, এটা তাঁরা চান না৷ এই সব দল মানুষের ক্ষোভ ও ভয়ের ভিত্তিতে উঠে এলেও বিকল্প পথ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারে না৷ দায়িত্বশীল, দীর্ঘমেয়াদি বা বাস্তবসম্মত নীতিও তাদের ঝুলিতে নেই৷ শক্তি বাড়া সত্ত্বেও তারা এখনো মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলির জায়গা নিতে পারে নি৷ ফলে পরিস্থিতি বদলানোর জন্য এখনো সময় রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷
তবে বর্তমান অচলাবস্থা কাটাতে ইউরোপীয় কাঠামোর আমূল সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলে ইউরোপীয় নেতারা মনে করছেন৷ ব্রাসেলস-এর হাতে বড় বেশি ক্ষমতা রয়েছে এবং ইউরোপীয় কমিশনের যথেষ্ট জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই – এই অভিযোগ সম্পর্কে তেমন মতবিরোধ নেই৷ এই অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের স্পষ্ট এক রোডম্যাপের প্রয়োজন রয়েছে বলে অনেক নেতা মনে করছেন৷ একমাত্র এভাবেই ইউরোপের হতাশ ভোটারদের ইউরোপীয় সমন্বয়ের আদর্শের পথে ফেরানো সম্ভব হবে বলে তাঁদের আশা৷