উত্তর ভারত জুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ৷ সঙ্গে রাজধানী দিল্লিসহ আশেপাশের এলাকায় চলছে লাগাতার বিদ্যুৎ সংকট৷ আবহাওয়া বিভাগের অশনিসংকেত: বৃষ্টিপাত হবে স্বাভাবিকের চেয়ে কম৷ অবস্থা মোকাবিলায় মোদী সরকার ‘‘অ্যাকশন-প্লান’’ হাতে নিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
রাজধানী দিল্লি তথা উত্তর ভারত তীব্র তাপপ্রবাহে জ্বলছে৷ দিল্লির তাপমাত্রা এখন ঘোরাফেরা করছে ৪৬-৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷ সম্ভবত তারই জেরে গত এক সপ্তাহের বেশি দিন ধরে দৈনিক দফায় দফায় ১ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং ও জলকষ্ট৷ জনজীবনে ত্রাহি ত্রাহি রব৷ ঘেরাও করা হয়েছে দিল্লি প্রশাসনের সচিবালয়৷ মোদী সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল দিল্লির উপ-রাজ্যপাল নাজিব জঙের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকের পর, বিদ্যুৎ সংকেটের জন্য সাবেক কংগ্রেস জামানার নীতি-পঙ্গুত্ব এবং বিদ্যুৎ নীতিতে ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করেছেন৷ সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার বিদ্যুৎ সংকটের সমাধানের জন্য জরুরি ‘‘অ্যাকশন-প্ল্যান'' হাতে নিয়েছে৷ দু-একদিনের মধ্যে দিল্লিবাসীদের দুর্ভোগ অনেকাংশে দূর হবে৷
পানির সংকটে বন্দি জীবন
ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে এখন চলছে তীব্র তাপদাহ এবং পানির সংকট৷ চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় ঝলসে যাচ্ছেন দিল্লিবাসী৷
ছবি: DW
তাপদাহ
গ্রীষ্মের সময়ে পানির সংকট লাখ লাখ দিল্লিবাসীর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে৷ আবহাওয়ার কাছে বড় বেশি অসহায় তারা৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসন৷
ছবি: DW/M. Krishnan
পানি বিতরণ
নতুন দিল্লির দক্ষিণের একটি বস্তিতে পানি বিতরণের ছবি এটি৷ বস্তিবাসীদের জন্য নিয়মিত পানির সংযোগ নেই৷ মূলত ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষ এখানে বাস করে৷
ছবি: DW/M. Krishnan
ঘুসের বিনিময়ে পানি
পানির জন্য এভাবেই লড়াই করতে হয় বস্তির মহিলাদের৷ পৌরসভার পানি বিতরণের এই সেবা বিনা খরচার হওয়ার কথা৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই পানির জন্য ঘুস দিতে হয়৷ মোটের উপর পানির ট্যাংকার নিয়মিত আসেও না৷
ছবি: DW
আকাল এবং বর্জ্যের মধ্যে
পানির জন্য এ রকম অপেক্ষা বস্তিবাসীর জীবনে এক নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এত অপেক্ষার পর যে পানিটুকু মেলে তাও আবার অধিকাংশক্ষেত্রে পরিষ্কার থাকে না৷ ময়লা পানি নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায়ও নেই তাদের৷
ছবি: DW
সবচেয়ে বিপদে আছেন যারা
দিল্লির বস্তি এবং কোলোনিগুলোতে অবস্থানরতরা পানি সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন৷
ছবি: DW
দৈনিক রুটিন
নিয়মিত পানি সরবরাহ ব্যবস্থার আওতায় আসা এই মানুষদের কাছে স্বপ্নের ব্যাপার৷ পৌরসভার পানির ট্যাংকার তাই ভরসা তাদের৷ ছবিতে এক ব্যক্তি পৌরসভার ট্যাংকার থেকে পানি নিয়ে ভ্যানে করে বাড়ি ফিরছেন৷
ছবি: DW/M. Krishnan
অপর্যাপ্ত সরবরাহ
এসব পানির পাত্র পূর্ণ করতে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হয় বস্তিবাসীকে৷ কিন্তু তারপরও অপর্যাপ্ত সরবরাহের জন্য সবাই পানি পায় না৷ এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে সরকারও বিশেষ উদ্যোগী নয়৷
ছবি: DW
7 ছবি1 | 7
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখানে কম নেই৷ সমস্যার আসল কারণ ‘ট্র্যান্সমিশন' এবং বণ্টন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা৷ সপ্তাহ খানেক আগে প্রবল ঝড়-তুফানে বহু জায়গায় বিদ্যুৎ পরিবাহী টাওয়ারগুলির ক্ষতি হয়েছে, বলেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী৷ তবে দিল্লির কাছে বাওয়ানা পাওয়ার প্লান্টের উৎপাদন ক্ষমতা ১৫০০ মেগাওয়াট হওয়া সত্ত্বেও উৎপাদন হতো মাত্র ২৯০ মেগাওয়াট৷ নতুন সরকারের নির্দেশে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহ করায় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ দেয়ায় বিদ্যুতের জোগান অতিরিক্ত ৪০০ মেগাওয়াট বেড়ে গেলে, আগামী ২/১ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সংকট অনেকটাই মিটে যাবে বলে মনে করেন মোদী সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রী৷ কারণ, ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও তা পরিবহন এবং বণ্টনের মতো ক্ষমতা বর্তমানে নেই৷ তার জন্য কিছু সময় লাগবে৷ এই ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে চলেছে লাগাতার চাপানউতোর৷
অন্যদিকে আবহাওয়া বিভাগ যে অশনিসংকেত দিয়েছে, তাতে মোদী সরকারের কপালে ভাঁজ৷ আবহ বিভাগের পূর্বাভাষ: গত চার বছরের মধ্যে এ বছর বৃষ্টি হবে সবথেকে কম৷ আর এল নিনোর আশঙ্কা ৭০ শতাংশ৷ প্রশান্ত মহাসাগরীয় বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ বাড়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাতের একটা যোগ আছে এবং তার প্রভাব পড়ে গোটা বিশ্বে৷ ফলে দেশের কোনো কোনো রাজ্য যেমন মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, গুজরাট ও রাজস্থান – যেখানে পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা নেই – সেখানে খরা মোকাবিলা করাই হবে মোদী সরকারের প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ৷ কারণ দেশের আর্থিক উৎপাদনের ১৪ শতাংশের বেশি এই কৃষি৷ ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক কৃষি-নির্ভর৷ বর্ষার সঙ্গে পল্লি ভারতের জীবন ও জীবিকা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত৷ কৃষিজীবীদের আয় পড়ে গেলে ভোগ্যপণ্যের চাহিদাও কমবে সেই অনুপাতে, এমনটাই বললেন দিল্লির জাতীয় কৃষি অর্থনীতি কেন্দ্রের অধিকর্তা রমেশ চাঁদ৷
পানির অপচয় রোধের দশ উপায়
পানির আরেক নাম জীবন৷ অথচ এই পানি, বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানি ক্রমশ কমে যাচ্ছে৷ যা জীবনের জন্য এক হুমকি৷ এই হুমকি মোকাবিলায় সচেতন হতে হবে আপনাকেও৷ চলুন জেনে নেই পানির অপচয় রোধের দশ উপায়৷
ছবি: Fotolia/Valua Vitaly
এক কাপ কফি তৈরিতে ১৪০ লিটার পানি!
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য বা পানীয় তালিকার কিছু পণ্য তৈরিতে অনেক পানি প্রয়োজন হয়৷ যেমন এক কাপ কফি বাগান থেকে আপনার টেবিল পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ হচ্ছে ১৪০ লিটার পানি৷ আর এক লিটার দুধের পেছনে ব্যয় ১,০০০ লিটার পানি৷ তাই এ সব পানীয়র অপচয় কমানোর মাধ্যমে পানির অপচয় রোধ করা সম্ভব৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Fotolia/dmitrimaruta
মাংস খাওয়া কমাতে পারেন
ওয়াটারফুটপ্রিন্ট ডটঅর্গ-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এক কেজি মাংস উৎপাদনে সবমিলিয়ে খরচ হয় ১৫ হাজার লিটারের মতো পানি৷ এই হিসাবের মধ্যে পশুর জন্ম এবং বেড়ে ওঠার সময় প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণও বিবেচনা করা হয়েছে৷ এবার ভেবে দেখুন, এক বেলা মাংস না খেয়ে কতটা পানি বাঁচানো সম্ভব?
ছবি: picture-alliance/dpa
পানির ট্যাপের দিকের নজর রাখুন
মুখ ধোয়া বা দাঁত ব্রাশ করার সময় পানির ট্যাপ বন্ধ রাখুন৷ একান্ত যদি গরম পানি পেতে ট্যাপ একটু খুলে রাখতে চান, তাহলে সেই পানি ব্যবহার করতে পারেন ব্রাশ ধোয়ার কাজে৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
কাপড় বা থালাবাসন পরিষ্কারে সতর্ক হন
কাপড় ধোয়া বা থালাবাসন পরিষ্কারের মেশিন এখন ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে৷ পুরোপুরি ভর্তি না হওয়া অবধি এ সব মেশিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন৷
ছবি: Fotolia/lightpoet
অপ্রয়োজনে ফ্লাশ নয়
অনেকেই যখন-তখন টয়লেট ফ্লাশ করে থাকেন৷ এতে প্রচুর পানি অপচয় হয়৷ তাই একান্ত প্রয়োজন না হলে ফ্লাশ করা থেকে বিরত থাকুন৷
ছবি: by-studio - Fotolia.com
পুকুরে ময়লা ফেলা নয়
বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষ সুযোগ পেলেই পুকুর বা খালে ময়লা ফেলে৷ এতে করে পানি দূষিত হয়৷ আর দূষিত পানি পুনরায় পান উপযোগী করে তুলতে খরচ হয় প্রচুর অর্থ এবং বিদ্যুৎ৷ তাই পুকুরে বা খালে ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে বা মাটিতে গর্ত করে ময়লা ফেলুন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
পানির পাইপের দিকে নজর দিন
অনেক সময় পানির পাইপে থাকা বিভিন্ন জোড়া হালকা হয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি বাইরে পরে যায়৷ একটু সতর্ক হলেই এভাবে পানির অপচয় রোধ করা যায়৷ এছাড়া ছাদের ট্যাংকি ভর্তি হয়ে যাতে পানি বাইরে পরে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখুন৷ সময়মতো পানির পাম্প বন্ধ করে দিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গোসলের সময় অপচয় নয়
বাথরুমে থাকা গতানুগতিক বা পুরনো পানির ঝরনাগুলো সরিয়ে ফেলুন৷ বর্তমানে বাজারে পানি সাশ্রয়কারী ঝরনা পাওয়া যায়৷ সেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পানির অপচয় রোধ সম্ভব৷ আর গোসলের সময় প্রস্রাব করার অভ্যেস তৈরির মাধ্যমে দিনে অন্তত একবার ফ্লাশ করার পানি বাঁচানো সম্ভব৷
ছবি: Fotolia/Valua Vitaly
পানি কখনো ফেলে দেবেন না
পানি পান করার পর যদি গ্লাসের তলায় খানিকটা পানি থেকে যায়, তাহলে তা ফেলে দেবেন না৷ সেটুকু আপনার গাছের গোড়ায় ঢালতে পারেন কিংবা চায়ের কেটলিতে জমাতে পারেন৷
ছবি: mdxphoto - Fotolia.com
সম্ভব হলে বৃষ্টির পানি জমা করুন
বৃষ্টির পানি জমা করে তা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার এমনকি পান করাও সম্ভব৷ বর্তমানে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের বিভিন্ন সরঞ্জামও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে৷ মনে রাখবেন, আপনার সামান্য উদ্যোগ পানির অপচয় রোধে বড় ভূমিকা রাখতে পারে৷ তাই চেষ্টা করে দেখুন না!
ছবি: DW/Karin Jäger
10 ছবি1 | 10
সেজন্য ভোগ্যপণ্য কোম্পানিগুলি কিছুটা চিন্তিত৷ দেখা দিতে পারে মুদ্রাস্ফীতিও৷ তবে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি মেটাতে মোদী সরকার নিজেদের তৈরি রেখেছেন৷ রাজ্যগুলিকে আগে থেকেই যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত করার নির্দেশ দিয়েছেন৷ মোদী সরকারের কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিং জরুরি ‘‘অ্যাকশন-প্ল্যান'' হিসেবে সেচ পাম্পের জন্য ডিজেলে ভরতুকি, নামমাত্র সুদে কৃষি ঋণ এবং সস্তায় বীজ সরবরাহ করার কথা বলেছেন৷ শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে থাকবে কৃষি পণ্য বিষয়ক বিমাব্যবস্থাও৷