স্টেডিয়াম এক, কিন্তু মাঠে কখনো ফুটবল, কখনো অ্যামেরিকান ফুটবল অথবা পপ কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়৷ ছাদ ও মাঠ, দু'টি অংশই প্রয়োজনমতো নাড়াচাড়া করা যায়৷ জার্মানির আধুনিক এক স্টেডিয়ামে অভিনব এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ডর্টমুন্ড শহরে জার্মানির সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামে কৃত্রিম উপায়ে ঘাসে রোদ ফেলা হচ্ছে৷ শালকে ক্লাবের স্টেডিয়ামে গোটা মাঠই নড়াচড়া করা যায়৷ সেই স্টেডিয়ামে ফুটবল ছাড়াও অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়৷
ইউরোপের সবচেয়ে আধুনিক স্টেডিয়ামে অন্যান্য খেলার ম্যাচ ও পপ কনসার্টও অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান উলরিশ ডারগেল বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠান ছিল৷ মার্কিন গায়ক ব্রুস স্প্রিংস্টিন ৬০ হাজার মানুষের সামনে গান গেয়েছেন৷ শনিবার ছিল বায়ার্ন মিউনিখ ক্লাবের বিরুদ্ধে ম্যাচ৷ রবিবার রাইনফায়ার ক্লাবের অ্যামেরিকান ফুটবল ম্যাচ হয়েছে৷ অর্থাৎ এক সপ্তাহের মধ্যে ১ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ এখানে তিন-তিনটি ভিন্ন অনুষ্ঠান দেখেছেন৷’’
ইউরো ২০২৪ এর জন্য নির্বাচিত জার্মান স্টেডিয়ামসমূহ
১৪ আবেদনকারীর মধ্যে জার্মানির ১০টি শহর ইউরো আয়োজনের সুযোগ পেয়েছে৷ এই স্টেডিয়ামগুলির ভেতরটা আপনাদের দেখাবো৷ আর তাতেই বুঝবেন জার্মানি উয়েফাকে কীভাবে বোঝাতে সমর্থ হল যে তুরস্ক নয় জার্মানিতেই ইউরো অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত৷
ছবি: AP
বার্লিন: অলিম্পিক স্টেডিয়াম
১৯৩৬ সালে অলিম্পিক গেমসের জন্য নির্মিত হয় এই স্টেডিয়াম৷ ১৯৮৫ সাল থেকে এখানে জার্মান কাপের ফাইনাল, ডিএফবি পোকাল অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে৷ একইসাথে ২০০৬ এর বিশ্বকাপ ফাইনাল এবং ২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালও হয়েছে এই ভেন্যুতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Lang
মিউনিখ: আলিয়ানৎস আরেনা
দেখলে মনে হয় মিউনিখের সড়কের মাঝখানে একটা উড়ন্ত বস্তু৷ এটা হল আলিয়ানৎস আরেনা৷ ২০০৫ সাল থেকে জার্মানির সবচেয়ে বড় ফুটবল দলের হোম গ্রাউন্ড এটি৷ বায়ার্ন যখন খেলে তখন স্টেডিয়ামের বাইরের রং হয় লাল৷ আর জাতীয় দলের খেলা থাকলে বাইরের রঙ হয় সাদা৷ ২০০৬ এর বিশ্বকাপের জন্য নির্মিত এই স্টেডিয়ামে ২০১২ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ আর ‘ঘরের মাঠে’ সেই ফাইনালে বায়ার্নকে হারিয়েছিল চেলসি ৷
ছবি: DW/A.Götzmann
ডর্টমুন্ড: সিগনাল ইডুনা পার্ক
জার্মানির সবচেয়ে বড় ফুটবল স্টেডিয়াম এটি৷ এর আসন সংখ্যা ৮১ হাজার ৩৬০৷ ২০০৬ এর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এই মাঠেই ইতালির কাছে পরাজিত হয়েছিল জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/SvenSimon
লাইপজিগ: রেড বুল আরেনা
এই লাইপজিগ শহরেই ১৯০০ সালে জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ ২০০৬ সালের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ঐতিহাসিক সেন্ট্রালস্টাডিয়নে নতুন একটি অংশ তৈরি করা হয়৷ ২০১০ সালে এর নাম বদলে রেড বুল আরেনা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
কোলন: রাইনএনারগি স্টাডিয়ন
কোলনের নতুন এই স্টেডিয়ামটি ২০০৬ এর বিশ্বকাপের সময় তৈরি করা হয়েছিল৷ চার কোনার স্তম্ভগুলি রাতের আকাশকে আলোকিত করে৷ একসঙ্গে ৪৬,১৯৫ জন দর্শক এই মাঠে বসে খেলা দেখতে পারে৷ ডিএফবি’র কোচিং অ্যাকাডেমি থেকে খুব একটা দূরে নয় এই মাঠ৷
ছবি: picture-alliance/ULMER
গেলজেনকিরশেন: ভেল্টিন্স আরেনা
গেলজেনকিরশেনের উত্তরে একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত শালকের এই হোম স্টেডিয়ামটি৷ এখানে আসন সংখ্যা ৫৪,৭৪০৷ খারাপ আবহাওয়ার সময় এর ছাদের ওপরের অংশ ঢেকে যায়, ফলে বৃষ্টিতে খেলা থামে না৷ ২০০৬ এর বিশ্বকাপের অন্যতম ভেন্যু ছিল এটি৷ এছাড়া কনসার্ট, স্কিইং এবং শুটিং এর জন্যও এই মাঠ ব্যবহার করা হয়৷
জার্মানির অন্য অনেক স্টেডিয়ামের মতো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই স্টেডিয়ামে স্পন্সরের নাম চোখে পড়তো বেশি৷ কিন্তু বর্তমানে এটি ‘পিপলস পার্ক স্টেডিয়াম হিসেবে’ তার পুরানো রূপে ফিরে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/HOCH ZWEI/P. Szyza
ফ্রাঙ্কফুর্ট: কমারৎসবাঙ্ক আরেনা
আশ্চর্যের কিছু নেই যদি শোনেন যে ফ্রাঙ্কফুর্টের এই স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে ৪৮, ০০০ করা হয়েছে৷ জার্মানির অর্থনীতির রাজধানী খ্যাত ফ্রাঙ্কফুর্ট এমনিতেই সারা দুনিয়ার ব্যবসায়ী আর পর্যটকদের আকর্ষণ করে৷ তার ওপর নদী আর ডিএফবি এর জন্যও বিখ্যাত এটি৷ জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন নতুন সদর দপ্তরের নির্মাণ কাজ চলছে স্টেডিয়ামের পাশেই৷
ছবি: dpa
ড্যুসেলডর্ফ: এস্প্রিট আরেনা
এই স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা ৫১,০০০৷ তবে এই স্টেডিয়ামের একটি বিশেষত্ব রয়েছে৷ কোন সিট খালি থাকলে আপনি বুঝতেই পারবেন না যে সেটা ফাঁকা, এমনভাবেই ছবি আঁকা আছে সিটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
স্টুটগার্ট: মার্সেডিজ-বেনৎস -আরেনা
মার্সেডিজ-বেনৎস, পোরশের মতো বড় বড় কোম্পানির কারণে স্টুটগার্ট মোটরগাড়ির রাজধানী বলে খ্যাত৷ এই স্টেডিয়ামও ২০০৬ বিশ্বকাপের ভেন্যু ছিল৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
গোটা বিশ্বে কোনো স্টেডিয়ামে এমন অভিনব ছাদ নেই৷ আবহাওয়া খারাপ হলে ফাইবার গ্লাসের তৈরি স্বচ্ছ অংশ দুদিক থেকে স্টেডিয়াম ঢেকে দেয়৷ ছাদ খুলতে সময় লাগে আধ ঘণ্টা৷ ৪,০০০ বর্গ মিটারের ছাদের দুই অংশের সম্মিলিত ওজন প্রায় ২,০০০ টন৷ উলরিশ ডারগেল বলেন, ‘‘তার উপর এই ছাদ রিট্র্যাক্টেবল৷ রবি উইলিয়ামস-এর মতো সংগীতশিল্পী এই স্টেডিয়ামে এলে আমরা ছাদ বন্ধ রাখতে পারি৷ তখন যন্ত্রপাতি ও সাজ-সরঞ্জাম বৃষ্টি থেকে রক্ষা পায়৷ দর্শকরাও রোদের তাপ টের পান না৷’’
মাঠের বৈশিষ্ট্যও নির্মাতাদের গর্বের কারণ৷ বেকিং ট্রে-র মতো গোটা মাঠও সরিয়ে ফেলা যায়৷ নির্বিঘ্নে নাড়াচাড়া করতে সিমেন্টের মেঝের উপর টেফলন মোড়া স্টিল রেল বসানো হয়েছে৷ তার উপর ঘাস বসানো বিশাল পাত নড়াচড়া করা যায়৷ সুইচ টিপে হাইড্রলিক পদ্ধতিতে থামগুলি মেলা ধরা বা গুটিয়ে নেওয়া যায়৷
হাইড্রলিক পদ্ধতিতেই ঘাস বসানো পাত ধীরে ধীরে তার গন্তব্যে ঠেলে দেওয়া হয়৷ উলরিশ ডারগেল বলেন, ‘‘চারটি হাইড্রলিক ড্রাইভের সাহায্যে প্রায় ১১ হাজার টন ওজনের ঘাস বসানো পাত সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যেই স্টেডিয়ামে নির্দিষ্ট জায়গায় বসানো হয়৷ তারপর তার উপর ফুটবল খেলা হয়৷ যখন কনসার্টের আয়োজন করা হয়, তখন হাইড্রলিক ড্রাইভের সাহায্যে ঘাস বসানো পাত বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷’’
গোটা প্রক্রিয়াটা অনেকটা শুঁয়োপোকার চলার মতো৷ ৮ টন ওজনের ড্রাইভের ৪টি হাইড্রলিক সিলিন্ডার গোটা মাঠটিকে কার্যত উপড়ে নিয়ে ৭৫ সেন্টিমিটার পদক্ষেপে ঠেলে নিয়ে চলে৷ মোট ১৮০ মিটার দূরত্বে চূড়ান্ত অবস্থান পর্যন্ত এভাবে মাঠ সরিয়ে ফেলা হয়৷
পুরুষদের ফুটবলে পাঁচ নারী রেফারি
গত রবিবার নতুন এক ইতিহাস হলো জার্মান ফুটবলে৷ প্রথমবারের মতো বুন্ডেসলিগায় পুরুষদের এক ম্যাচ পরিচালনা করলেন নারী রেফারি বিবিয়ানা স্টাইনহাউস৷ বিশ্ব ফুটবলে এমন কৃতিত্ব আছে আর মাত্র চারজনের৷
ছবি: imago/Zumapress
বিবিয়ানা স্টাইনহাউস (জার্মানি)
ছিলেন ফুটবলার৷ একসময় হয়ে গেলেন রেফারি৷ রেফারি হিসেবে তাঁর কৃতিত্বের স্মারক ছয়টি জাতীয় পুরস্কার৷ ছয়বার জার্মানির সেরা রেফারি হয়েছেন তিনি! তবে এতদিন শুধু ৮০টি দ্বিতীয় বিভাগ লিগ ম্যাচেই রেফারির ভূমিকায় দেখা গেছে তাঁকে৷ গত রবিবার হ্যার্থা বার্লিন বনাম ভ্যেরডার ব্রেমেন ম্যাচের মাধ্যমে প্রথম নারী রেফারি হিসেবে বুন্ডেসলিগায়ও অভিষেক হয়ে গেল তাঁর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Schmi
নিকোল পেটিগনাট (সুইজারল্যান্ড)
সুইজারল্যান্ডের এই সাবেক রেফারির কৃতিত্বটা অনন্য৷ নারী হয়েও উয়েফা কাপে পুরুষদের ম্যাচ পরিচালনা করার প্রথম নজির গড়েন তিনি ২০০৩ সালে৷ এছাড়া সুইস সুপার লিগ এবং অস্ট্রিয়ান বুন্ডেসলিগাতেও রেফারির ভূমিকায় অনেকবার দেখা গেছে তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/Pressefoto ULMER
গ্লাডিস লেংওয়ে (জাম্বিয়া)
জাম্বিয়ায় পুরুষদের পেশাদার ফুটবল লিগ ম্যাচ পরিচালনা করা প্রথম নারী রেফারি গ্লাডিস লেংওয়ে৷ নারীদের বিশ্বকাপসহ অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচেও রেফারির ভূমিকায় দেখা গেছে তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jaspersen
ক্লাউডিয়া উমপিয়েরেজ (উরুগুয়ে)
উরুগুয়ের হয়ে খেলেছেন দীর্ঘদিন৷ তবে এখন রেফারির ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে৷ উরুগুয়েতে পুরুষদের ফুটবল লিগের প্রথম নারী রেফারি তিনি৷
ছবি: imago/Zumapress
কাটেরিনা মনজুল (ইউক্রেন)
গত ১৩ বছরে দেশে-বিদেশে অনেক ম্যাচ পরিচালনা করেছেন তিনি৷ ইউক্রেনে পুরুষদের ম্যাচ পরিচালনা করা প্রথম নারী রেফারি কাটেরিনা মোনজুল৷