বাবার মতোই বিমানের বদলে বিলাসবহুল ট্রেনে করে চীন সফর করলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন৷ দক্ষিণ কোরিয়া ও অ্যামেরিকার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবেই গোপন এই সফরকে গণ্য করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহে রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত বেইজিং সফর করেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন৷ অথচ কেউ ঘুণাক্ষরেও তা টের পায়নি৷ দেশে ফেরার পথে তাঁর ট্রেনের গতিবিধি দেখে প্রথম আভাস পাওয়া গিয়েছিল৷ তারপর দুই দিন ধরে জল্পনাকল্পনার শেষে পাকা খবর পাওয়া গেল৷
সরকারি সফরের স্বীকৃতি না থাকা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়ার নেতার সফরসূচিতে সরকারি সফরের প্রায় সব লক্ষণই দেখা গেছে৷ গার্ড অফ অনার থেকে শুরু করে তাঁর সম্মানে গ্রেট হল অফ দ্য পিপল-এ বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল৷ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দিয়াওইউতাই গেস্ট হাউসে কিম জন উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷ সেখানে ১৯৫৯ সালে কিম-এর পিতামহ কিম ইল সুং একটি বৃক্ষরোপণ করেছিলেন৷ সেই গাছটি আজও সেখানে রয়েছে৷ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো দৃশ্যে শি ও কিমের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক লক্ষ্য করা গেছে৷ দুই নেতার স্ত্রীদের মধ্যেও সেই রসায়ন দেখা গেছে৷
উত্তর কোরিয়ার নেতা দেশে ফিরে যাবার পর মুখ খোলে চীনা নেতৃত্ব৷ সে দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে চীন বদ্ধপরিকর৷ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের একাধিক নিষেধাজ্ঞার প্রতি সমর্থন সত্ত্বেও চীন সে দেশের সঙ্গ ছাড়েনি৷ কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা কমাতে চীন জোরালো উদ্যোগ নিচ্ছে৷ কিমের সফরের পর চীনা নেতৃত্ব সরাসরি মার্কিন প্রশাসনকে সে বিষয়ে জানিয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য কিমের ব্যক্তিগত বার্তা হাতে তুলে দিয়েছে৷ বৃহস্পতিবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে সে দেশের নেতৃত্বকে এই সফর সম্পর্কে জানাবেন৷
কিম চীনা নেতৃত্বকে বলেছেন, তিনি পরমাণু নিরস্ত্রিকরণ ও মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রস্তুত৷ উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ সর্বোচ্চ নেতার চীন সফরের খবর দিলেও পরমাণু অস্ত্র বর্জনের অঙ্গীকারের কোনো উল্লেখ করেনি৷ চীন অবশ্য কিম জং উনের একটি দীর্ঘ বিবৃতি প্রকাশ করেছে৷ তাতে বলা হয়েছে, উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার উদ্যোগের ফলেই কোরীয় উপদ্বীপে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে৷ কিম বংশের অতীত দুই নেতাও কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত করতে চেয়েছিলেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷ কিম বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করলে সেটা সম্ভব হবে৷
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর কিম জং উন প্রকাশ্যে এই প্রথম দেশের বাইরে গেলেন৷ সম্ভবত দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি নিতেই তিনি চীনের নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন বলে অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করছেন৷ উল্লেখ্য, বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী মে মাসে কিম ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি সাক্ষাৎ করতে চলেছেন৷
উত্তর কোরিয়া ও কিম জং উনের বিশেষ কিছু জিনিস
উত্তর কোরিয়ায় যেখানে সাধারণ মানুষ নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত বলে অভিযোগ রয়েছে, সেখানে নেতা কিম জং উনের আরাম-আয়েশ-বিলাসিতার কোনো কমতি নেই৷ দেখে নিন তার কিছু নমুনা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
অপূর্ব প্রাসাদ
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং-এ এই বিশাল প্রাসাদ রয়েছে৷ কুমসুসান প্রাসাদটি কিম ইল সুং এর সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে৷ বিশ্বে আর কোন কমিউনিস্ট নেতার এমন বিশাল প্রাসাদ নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
হোটেল
রিউগইয়ং বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোটেলগুলোর একটি৷ পিরামিড আকারের ১০৫ তলা এ হোটেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালে৷ সেই সময় দেশে কিম ইল সুং এর শাসন ছিল৷ কিম ইল সুং ছিলেন কিম জং উনের দাদা৷ এখনও হোটেলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
আকাশে শাসন
উত্তর কোরিয়ার কাছে বিভিন্ন ধরণের এক হাজারটি বিমান আছে, যেগুলোর বেশিরভাগ সোভিয়েত ইউনিয়ন অথবা চীনে তৈরি৷ এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধে ব্যবহার করা যায় এমন হেলিকপ্টার, যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান এবং ড্রোন৷ কিম জং উনের কাছে এএএম এবং ট্রিপল এ সিস্টেমের মতো কিছু বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও আছে৷
ছবি: Reuters/Kcna
স্কি রিসোর্ট
কিম জং উনের নির্দেশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৩৬০ মিটার উঁচুতে মাসিকরিয়ং নামে এক জায়গায় একই নামে একটি স্কি রিসোর্ট বানানো হয়েছে৷ এই স্থানটি উত্তর কোরিয়ার সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ এর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন কোটি মার্কিন ডলার৷ পর্যটকদের জন্য এখানে ১২০ কক্ষ বিশিষ্ট হোটেল রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo/MAXPPP
জং উনের মোবাইল নেটওয়ার্ক
শোনা যায়, উত্তর কোরিয়ায় কেবল কিম জং উন এবং তাঁর কাছের মানুষদের ব্যবহারের জন্য একটি বিশেষ মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ কোরীয় লিংক নেটওয়ার্কের প্রযুক্তি পরিচালক আহমাদ আল নোয়ামিনি জানিয়েছে, সাধারণ মানুষ এই মোবাইল পরিষেবার সুবিধা ভোগ করতে পারে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/KCNA via KNS
ব্যক্তিগত দ্বীপ
দেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি গোপন দ্বীপ রয়েছে৷ কিম জং উনের অতিথি হয়ে উত্তর কোরিয়া গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক তারকা৷ এই দ্বীপে রাখা হয়েছিল তাঁকে৷ শোনা যায়, এখানে আনন্দ বিনোদনের সবধরনের ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিম জং উনের ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার অবতরণের জায়গাও রয়েছে সেখানে৷
ছবি: Tourism DPRK
গল্ফ কোর্স
কিম জং উনের উত্তর কোরিয়ায় অসাধারণ কিছু গল্ফ ক্লাব রয়েছে৷ সরকারি কর্মচারীরা গল্ফ ক্লাবগুলোকে সবসময় ঝকঝকে করে রাখে৷ গল্ফ ছাড়া উত্তর কোরিয়ায় ফুটবল, বাস্কেটবল, আইস হকি আর কুস্তি জনপ্রিয় খেলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo
সেনা ঘাঁটি
উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনীতে অনেক যুদ্ধ জাহাজ, টহল নৌকা এবং বড় বড় সামরিক জাহাজ রয়েছে৷ নিজেদের সামরিক শক্তিকে শক্তিশালী করা উত্তর কোরিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য৷ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে দেশটি৷
ছবি: REUTERS/KCNA
বিলাসবহুল গাড়ি
শোনা যায়, ২০১৪ সালে কিম জং উন ১ দশমিক ৬ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে গাড়ি কিনেছিলেন৷ এর মধ্যে মার্সিডিজ বেনৎস, লিমোজিন আর আছে লাক্সারি স্পোর্টস কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
পিয়ানো ভীষণ পছন্দ
শোনা যায়, কিম জং উনের কাছে ২০টিরও বেশি পিয়ানো আছে৷ এমন গুজবও রয়েছে যে, তিনি প্রতিদিনই পিয়ানো বাজান, আর যদি সুরের কোনো গণ্ডগোল হয়, সেটাকে তিনি পিয়ানোর দোষ হিসেবে মনে করেন, নিজের নয়৷
ছবি: Reuters/KCNA
সাবমেরিন
কিম জং উনের কাছে সোভিয়েত আমলের কিছু পুরানো সাবমেরিন রয়েছে৷ এছাড়া দেশটির কাছে আরো বেশ কয়েকটি চীনের সাবমেরিন রয়েছে৷ আর কিছু সাবমেরিন উত্তর কোরিয়ার সেনারা নিজেরাই তৈরি করেছে৷