ভারতের সংসদে উত্তেজনা
১৬ জুলাই ২০১৪![Das indische PArlament in Neu Dheli](https://static.dw.com/image/17222545_800.webp)
এই সাক্ষাৎকারে মোদী সরকারের অনুমোদন ছিল কিনা তা নিয়ে ভারতের সংসদ উত্তাল হয়ে ওঠে৷
পাকিস্তানের সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত এক সংস্থার আমন্ত্রণে গত ২ জুলাই লাহোর গিয়েছিলেন রামদেব এবং সঙ্ঘপরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ভারতীয় সাংবাদিক বেদপ্রতাপ বৈদিক৷ প্রতিনিধিদলে ছিলেন কংগ্রেস নেতা মনিশঙ্কর আইয়ার এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমান খুরশিদ৷
সফর শেষে অন্যরা ফিরে এলেও বৈদিক থেকে যান এবং গোপনে সাক্ষাৎ করেন ২০০৮ সালের মুম্বই সন্ত্রাসী হামলার মূল হোতা বলে অভিযুক্ত জামাত-উদ-দাওয়ার শীর্ষ ব্যক্তি হাফিজ সাঈদের সঙ্গে, যার নাম রয়েছে ভারতের ‘মোস্ট-ওয়ান্টেড' অপরাধীর তালিকায়৷
এই গোপন ও স্পর্শকাতর সাক্ষাৎকার নিয়ে পর পর দুদিন ভারতের সংসদ তোলপাড় হয়ে ওঠে৷ শুরু হয় সরকার ও বিরোধী দলগুলির মধ্যে তুমুল বাক বিতন্ডা৷ বিরোধী কংগ্রেস সরকারকে চেপে ধরেন এবং জানতে চান হাফিজ সাঈদের সঙ্গে বৈদিকের এই গোপন বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের অনুমোদন ছিল কিনা? কংগ্রেসের প্রশ্ন, কী পরিচয়ে তিনি বৈঠক করেন? ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশন এই সাক্ষাৎকারের কথা আগে থেকেই জানতো কিনা?
সরকারের তরফে অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সংসদে বলেন, বৈদিক এক স্বাধীন সাংবাদিক হিসেবে সাঈদের সাক্ষাৎকার নেন৷ এরসঙ্গে সরকারের কোনো যোগ নেই৷ সাংবাদিক হিসেবে তিনি সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন৷ এটা তাঁর পেশাগত স্বাধীনতা৷ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গেও তিনি দেখা করেন৷
বৈদিক নিজেই নিজের সাফাই দিয়ে বলেছেন যে, সাংবাদিক জীবনে তিনি এমনি অনেক বিতর্কিত এবং বিপজ্জনক সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যার মধ্যে আছেন তালিবান নেতা থেকে তামিল টাইগারের সর্বাধিনায়ক প্রভাকরণ এবং মাওবাদী নেতা সকলেই৷ এতে অন্যায়টা কোথায়?
কিন্তু ভারতের রাজনৈতিক দলগুলি বিষয়টাকে এত সরল বা হাল্কাভাবে নিতে নারাজ৷ প্রশ্ন উঠেছে এটা কী চ্যানেল-টু ডিপ্লোম্যাসি? মিডিয়া যখন বৈদিক-হাফিজ সচিত্র সাক্ষাৎকার নিয়ে এত হৈচৈ করছে, তখন পুরো বিষয়টা খোলসা করতে সরকারের আপত্তি কোথায়? শেষপর্যন্ত সরকার কংগ্রেসের এই দাবি মেনে নেন৷
আসলে সমস্যাটা বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনে, যার তিনজন সদস্য এখন প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন৷ বলা হয়, বৈদিকও ঐ ফাউন্ডেশনের সদস্য৷ সঙ্ঘপরিবারের ‘থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক' বলে মনে করা হয় ঐ সংস্থাকে৷ তাই কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী তাঁকে সঙ্ঘ পরিবারের সদস্য বলে অভিহিত করেন৷ বৈদিকের রং গৈরিক না লাল, সেটা প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন তাঁর মিশনটা কী ছিল৷ আর প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞাতসারেই তিনি দেখা করেছিলেন কিনা৷
তবে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় চ্যানেল-টু ডিপ্লোম্যাসি একটা পরিচিত পথ৷ কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান সূত্র খুঁজতে সাবেক বিজেপি প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী এবং কংগ্রেস-জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং জমানাতেও এমনটা হয়েছিল৷ কিন্তু গোটাটাই হয়েছিল লোকচক্ষুর আড়ালে৷ মিডিয়ার প্রচার আলোতে নয়৷ তবে কূটনীতিকদের মতে, বৈদিক কাশ্মীর নিয়ে যেসব বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তা সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে৷ বৈদিক নাকি এমন কথাও বলেছেন যারমধ্যে কাশ্মীরের স্বাধীনতার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত আছে৷ দুই কাশ্মীরকে এক করে এক অখন্ড কাশ্মীর গঠনের কথা বলেছেন যা হবে স্ব-শাসিত৷ এটা বিজেপি বা সঙ্ঘপরিবারের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অবস্থানের বিপরীত৷ অন্যদিকে যোগাগুরু রামদেব বৈদিকের সমর্থনে বলেছেন, বৈদিক হাফিজ সাঈদের মন বুঝতে গিয়েছিলেন এবং তাঁর ভারত-বিরোধী মনোভাব ছাড়তে বলেছিলেন৷