1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে নিহত ৪

১৬ জুলাই ২০২৫

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে সরকার৷

আহত ব্যক্তিকে ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়৷ছবি: Privat

ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার প্রথম আলো বুধবার রাত পর্যন্ত পাওয়া খবরে এ তথ্য জানিয়েছে৷ হাসপাতাল ও পরিবার সূত্রে পত্রিকাটি বলছে, নিহত ব্যক্তিরা হলেন শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (২৫), কোটালীপাড়ার রমজান কাজী (১৮), টুঙ্গীপাড়ার সোহেল মোল্লা (৪১) ও সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন (২৪)।

তবে, বুধবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়৷ প্রথম আলো স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিহত দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হয়। পরে রাত সাড়ে সাতটার দিকে অপরজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয় প্রথম আলো। আরও ৯ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়, তাদের অস্ত্রোপচার চলছে৷ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷

গোপালগঞ্জে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করেছে সরকার৷ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য নিশ্চিত করেছে৷ প্রেস উইং জানায়, আজ বুধবার রাত ৮টা থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে৷ ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা'র অংশ হিসেবে আজ বুধবার দুপুরে গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে এনসিপির সভা অনুষ্ঠিত হয়৷

সমাবেশ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই একদল সশস্ত্র ব্যক্তি নেতা-কর্মীদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে৷ছবি: Privat

এনসিপির মঞ্চে হামলা

দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে শহরের পৌর পার্কে ২০০ থেকে ৩০০ জন লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিপির সমাবেশস্থলে হাজির হয়৷ এই পরিস্থিতিতে মঞ্চের আশপাশে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা দ্রুত আদালত চত্বরে আশ্রয় নেয়৷ একই সাথে মঞ্চে ও মঞ্চের সামনে থাকা এনসিপির নেতা-কর্মীরাও দৌড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যায়৷ আক্রমণকারীরা মঞ্চের চেয়ার ভেঙে ফেলে এবং ব্যানার ছিঁড়ে দেয়৷ পরে জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছালে এনসিপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের সাথে মিলে হামলাকারীদের তাড়া করে৷ এতে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়৷

সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি

বেলা ২টা ৫ মিনিটে সমাবেশস্থলেএনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা পৌঁছান৷ তাদের মধ্যে ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ অন্যরা৷ কিন্তু বিকাল পৌনে ৩টার দিকে সমাবেশ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই একদল সশস্ত্র ব্যক্তি নেতা-কর্মীদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে৷ তারা চারদিক থেকে এনসিপির নেতা-কর্মী ও পুলিশের গাড়ি আটকে দেয়৷ এই সংকটময় মুহূর্তে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে৷ এনসিপির নেতা-কর্মীরা বিকল্প পথ দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে সক্ষম হয়৷

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘পুলিশ-সেনাবাহিনী যথাযথ ভূমিকা পালন করেনি৷ তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে সবকিছু ঠিক আছে৷ কিন্তু আমরা সমাবেশস্থলে এসে উল্টো চিত্র দেখতে পাই৷''

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানান, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি দল প্রথমে কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করে৷ পরবর্তীতে তারা পুলিশের একটি গাড়িতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আগুন ধরিয়ে দেয়৷

বিএনপি মহাসচিবের তীব্র নিন্দা

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ঘটনায় তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ বিকেলে এক বিবৃতিতে তিনি হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানান৷ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুষ্কৃতকারীরা পুনরায় দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে নৈরাজ্যের মাধ্যমে সুবিধা আদায়ের চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে৷'' 

অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থান

এই হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার৷ সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘গোপালগঞ্জে আজকের সহিংসতা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং নিন্দনীয়৷ গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে তরুণ নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারে বাধা দেওয়া তাদের মৌলিক অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন৷''

সরকার জানিয়েছে, অভিযুক্ত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা কোনো ছাড় পাবে না এবং অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে৷

পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ

এর আগে, দিনের প্রথম ঘটনা ঘটে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে৷ সদর উপজেলার উলপুর সংযোগ সড়কে পুলিশের একটি গাড়িতে ভাঙচুর হয় ও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়৷ এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন৷

ইউএনও'র গাড়িতে হামলা-ভাঙচুর

সকাল ১১টায় সদর উপজেলার বৌলতলী ইউনিয়নের গান্দিয়াসুর এলাকায় ইউএনও এম রকিবুল হাসানের গাড়িতে আক্রমণ চালায় ২০-৩০ জনের একটি দল৷ এনসিপির কর্মসূচি উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ইউএনও ওই এলাকায় যাচ্ছিলেন৷ আক্রমণকারীরা অকস্মাৎ তার গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে৷ পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হস্তক্ষেপে তাকে উদ্ধার করা হয়৷

এসএসজি/এপিবি (দ্য ডেইলি স্টার, দৈনিক প্রথম আলো)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ