1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘জমি দখলের জন্য পরিকল্পিতভাবে গুলি করা হয়’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১০ নভেম্বর ২০১৬

‘গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম এলাকায় আদিবাসী-বাঙালিদের ওপর হামলা পরিকল্পিত৷ জমি দখল করতেই পরিকল্পিতভাবে তাদের উপর গুলি চালানো হয়৷'' ডয়চে ভেলেকে এ কথা বলেছেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷

প্রতীকী ছবি
ছবি: Khukon Thaunaujam

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসে তিনি আরো বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষ যেমনটি দাবি করেছে তা একেবারেই ঠিক নয়৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বীজ আখ কাটতে গিয়ে বাধা দেওয়ার ফলে সৃষ্ট কোনো কাকতালীয় ঘটনা ওটা নয়৷''

বুধবারই ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে ঢাকায় ফিলেছেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ হামলায় আহতদের প্রতি আচরণেও অমানবিকতা লক্ষ্য করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিমল কিসকু ও চরণ সরেণকে হাতকড়া পরা অবস্থায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷ পুলিশের উপস্থিতিতেই তাদের আবার হুমকিও দেয়া হচ্ছে৷''

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘‘উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার আইন আছে বাংলাদেশে৷ সেই আইন মেনে অভিযান পরিচালনা করা হয়নি৷ তাছাড়া অভিযানে ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুম ছাড়া পুলিশ গুলি করতে পারে না৷''

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া

This browser does not support the audio element.

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন লেখক ও গবেষক ড. স্বপন আদনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, মৌলিক অধিকার সুরা কমিটির সদস্য জাকির হোসেন, রেজাউর রহমান, আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম, লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী ফিরোজ আহমেদ ও সংস্কৃতিকর্মী অরূপ রাহী৷

আতঙ্কে সাঁওতাল পল্লী

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ আখের খামার এলাকার সাঁওতাল পল্লী মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া এখনো থমথমে৷ বুধবার, অর্থাৎ গতকালও পুলিশের আতঙ্কে ওই দুই গ্রামের পুরুষরা বাড়ি ফেরেনি৷ তাদের ঘরে নেই খাবার৷ সবার চোখেই এক অজানা ভয়৷ আবার কখন জানি হামলা হয়, এই ভয়ে কুঁকড়ে আছেন গ্রামের বাসিন্দারা৷

দৈনিক ইত্তেফাকের গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধি গোপাল মোহন্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে৷ তবে সবার মধ্যেই আতঙ্ক৷ সাঁওতালদের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বাঙালি হিন্দু ও মুসলমানরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না৷ যে জমি নিয়ে বিরোধ সেখানে ১০ ভাগ জমির মালিক সাঁওতালরা আর ৯০ ভাগই হিন্দু ও মুসলমানদের৷ সাঁওতালরা কিছু ক্ষতিপূরণ পেলেও বাঙালিদের দিকে কেউ নজর দিচ্ছে না৷ তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে৷'' 

গোপাল মোহন্ত

This browser does not support the audio element.

গ্রামবাসী জানায়, সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ‘ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটি'-র সভাপতি শাকিল আলম বুলবুলের ইন্ধনে সাঁওতালরা বাপ-দাদার জমি ফেরত পাওয়ার আশায় ওখানে চালা ঘর তোলে৷ আবার সেই শাকিলের নেতৃত্বেই গত রবিবার চালানো হয় উচ্ছেদ অভিযান, ঘরে দেওয়া হয় আগুন৷

গোপাল মোহন্ত বলেন, ‘‘সাহেবগঞ্জ সংলগ্ন সাঁওতাল অধ্যুষিত মাদারপুর গ্রামে গিয়ে বুধবার দেখা গেছে সাঁওতাল পরিবারের নারীরা বাড়ির উঠোনে বসে আছেন৷ বহিরাগত লোক দেখলেই তারা আতঙ্কিত হচ্ছেন৷ গ্রাম ঘুরে দেখা গেল বেশিরভাগ সাঁওতাল পুরুষই পুলিশের ভয়ে বাড়িছাড়া৷ নারীরা অনাহারে আছেন৷''

সাঁওতালরা যা বলছেন

সাঁওতাল অধ্যুষিত মাদারপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত রুমিলা কিসকু বললেন, ‘‘আমরা গরিব মানুষ৷ কৃষি কাজ করে সংসার চলে৷ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল আলম বুলবুলের কথামতো বাপ-দাদার জমি ফেরত পাবার আশায় ধার-দেনা করে চালা ঘর তোলা হয়েছিল৷ আবার তার নেতৃত্বেই চালানো হয় উচ্ছেদ, পুলিশের উপস্থিতিতে ঘরগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়৷ সেই আগুনে চাল-ডাল, লেপ-তোষক বালিশ কিছুই রক্ষা পায়নি৷ পুলিশ গুলি করে আমাদের দু'জনকে মারলো৷''

সুব্রত সরকার

This browser does not support the audio element.

আরেকজন বললেন, ‘‘হামলার সময় দর্বৃত্তরা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি লুট করে নিয়ে যায়৷ এখন সবসময় রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকি, কখন না জানি আবার হামলা হয়৷ এছাড়া পাওনাদারের চাপও আছে৷ ধার করা সেই টাকা কী করে পরিশোধ করবো৷ আমাদের অনেক লোককে পুলিশ আসামি করেছে৷ গ্রেপ্তারের ভয়ে তারা পালিয়ে আছে৷''

সেদিন যা ঘটেছিল

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের পাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে প্রশাসন ও চিনিকলের লোকজন হাজির হয়৷ উচ্ছেদের চেষ্টা করলে সাঁওতাল ও বাঙালিদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে৷ এতে আট পুলিশ সদস্য আহত হন৷ আর বাঙালি ও সাঁওতালদের অন্তত ৩০ জন আহত হন৷ মারা যান দুই জন৷ গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন আছেন কয়েকজন৷ এরপর ওই পল্লীতে আগুন দিয়ে বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়৷

ওই ঘটনার পর পুলিশের ধরপাকড় ও মামলার ভয়ে এলাকার পুরুষরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে৷ চিকিৎসাধীনরাও আতঙ্কে আছেন৷ পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে (উঠানে) বসে আছেন নারীরা৷ তাদের খাওয়ার মতো কিছু নেই৷

গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) সুব্রত সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক৷ ঘরে আগুন ও লুটপাটের ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি৷ কারা আগুন দিয়েছে, তা আমরা জানি না৷''

যে কারণে এই হামলা

১৯৫৫ সালে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ওই এলাকায় ১ হাজার ৮৪০ একর জমি অধিগ্রহণ করে৷ ওইসব জমিতে উৎপাদিত আখ চিনিকলে সরবরাহ করা হচ্ছিল বলে চিনিকল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে৷ গত ১ জুলাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজন জমির একাংশে একচালা ঘর নির্মাণ করেন৷ ওই সময়ই তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়৷

সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার জমি উদ্ধার কমিটির সহ-সভাপতি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণের সময় চুক্তিপত্রে উল্লেখ করেছিল কখনো ওই সব জমিতে আখ ছাড়া অন্য ফসলের চাষ হলে প্রকৃত মালিকদের জমি ফেরত দেওয়া হবে৷ কিন্তু কিছুদিন ধরে ওই সব জমিতে ধান ও তামাক চাষ হচ্ছে৷ অথচ জমি ফেরত দেওয়া হচ্ছে না৷ এ নিয়ে আন্দোলন করেও কাজ হয়নি৷ তাই তারা জমিতে ঘর তৈরি করেছেন৷''

তবে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল আউয়াল বলেন, ‘‘অভিযোগটি ভিত্তিহীন৷ অধিগ্রহণের সময় চুক্তিনামায় বলা হয়, কখনো চিনিকল বা খামার বন্ধ হলে সে ক্ষেত্রে ওই সব জমি সরকারের কাছে চলে যাবে৷ ফেরত দেয়ার কথা বলা হয়নি৷''

বিষয়টি নিয়ে আপনার কিছু বলার আছে? জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ