তিনি ইন্টারনেটে ঝড় তুলেছেন৷ বিয়েবাড়ির আসরে গানের তালে পা মিলিয়েছেন বলিউড নায়ক গোবিন্দার ধাঁচে৷ আর তাতেই ‘ড্যান্সিং আঙ্কল' ঢেউ তুলেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়৷
বিজ্ঞাপন
আদতে সঞ্জীব শ্রীবাস্তব অধ্যাপক৷ ভাবা ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইন্সটিটিউটে তিনি ইলেকট্রনিকস পড়ান৷ কিন্তু এর বাইরেও তাঁর একটা পরিচয় হলো, তিনি নাচেও বেশ দক্ষ৷ বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে তিনি নায়ক গোবিন্দার স্টাইলে জমিয়ে দিয়েছেন মঞ্চ৷ তবে সেটা আর কেবল বিয়েবাড়িতেই সীমাবদ্ধ নেই৷ ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ রাতারাতি হয়েছে ভাইরাল৷
১৯৮৭ সালের ‘খুদগর্জ' সিনেমার গোবিন্দার কথা মনে পড়ে? ‘আপ কে আ যানে সে'গানের সঙ্গে তাঁর নাচের স্টেপ সে সময়ের দারুণ হিট৷ স্ত্রী অঞ্জলিকে পাশে নিয়ে সেই গানের তালেই অবিকল নেচেছেন এই প্রবীণ অধ্যাপক৷ ৫০ বছর বয়সে পৌঁছে তিনি আজও মনকে বুড়িয়ে যেতে দেননি৷ আর তাতেই মন্ত্রমুগ্ধ সোশ্যাল মিডিয়া৷ তিনি হয়ে গেছেন ‘ভাইরাল আঙ্কল' বা ‘ড্যান্সিং আঙ্কল'৷ অগুনতি ভক্ত টুইটারে তাঁর প্রাণশক্তি আর নাচের প্রশংসা করে চলেছে৷
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও এ ব্যাপারে চুপ থাকতে পারেননি৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন৷ মধ্যপ্রদেশের জল-হাওয়ার মধ্যেই একটা বিরল ব্যাপার আছে বলে তিনি মনে করেন৷ নইলে মধ্যপ্রদেশের বিদিশার বাসিন্দা ডাব্বু ওরফে সঞ্জীব এমন নাচতে পারলেন কী করে?
যে যা-ই বলুক, সঞ্জীব নিজে ভিডিও আপলোড করার কথা ভাবতেই পারেন না৷ তিনি নাচের ভক্ত৷ মা কৃতী নৃত্যশিল্পী ছিলেন৷ তাই নাচ তাঁর রক্তে৷ কিন্তু ফিল্ম লাইনে নেমে বা নাচকে কেরিয়ার করার সুযোগ তিনি পাননি৷ বরং তথাকথিত জটিল রসকষহীন ইলেকট্রনিকস তাঁর পেশা হয়ে গিয়েছে৷ বেড়ে গিয়েছে বয়সও৷ কিন্তু তাই বলে মনের বয়স তাঁর বাড়েনি৷ বিয়েবাড়িতে সুযোগ পেয়ে সেটাই দেখালেন৷ আর তাতেই এখন সারা দেশ ‘ডাব্বু আঙ্কল' বলে উল্লসিত৷
পিএস/এসিবি
অন্য দেশের নাচই গ্রহণ করে চলেছে জার্মানি
জার্মানরাও নাচতে ভালোবাসেন৷ তবে অন্য দেশের নাচই নাচতে বেশি পছন্দ করেন তাঁরা৷ কোনো নাচের ট্রেন্ড জার্মানিতে হয়ত থাকে শুধুমাত্র একটি গ্রীস্মে, আবার কোনো নাচ প্রতিষ্ঠত হয়ে যায় স্থায়ীভাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবচেয়ে বড় কথা ‘বিশেষ কিছু’
নাচের দিক থেকে যে জার্মানরা ভীষণ এগিয়ে আছে বা অত্যন্ত প্রতিভাধর, তা বলা যায় না৷ সত্যিকার অর্থেই জার্মানির প্রায় সব নাচের ‘স্টাইল’ বা কৌশলই ভিনদেশ থেকে আমদানি করা৷ জার্মানদের নাচ বলতে আঞ্চলিক, ঐতিহ্যবাহী এবং লোকনৃত্য – যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে তেমন পছন্দ নয়৷ বরং অ্যামেরিকান ‘হিপহপ’ নাচ বেশ অনেকদিন থেকেই জার্মানিতে জনপ্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাচ, নাকি নাচের লড়াই ?
‘চাপয়িরা’ নাচ এখনো আগের মতো বেশ জনপ্রিয়, যা এরই মধ্যে পুরুষদেরও পছন্দের নাচ হয়ে উঠেছে৷ চাপয়িরা নাচ হচ্ছে, আফ্রিকান – একটি ব্রাজিলিয়ান শিল্পকর্ম, যা নাচ এবং লড়াইয়ের কৌশল মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এবং যার মধ্য দিয়ে শরীরের নানা অনুভূতি প্রকাশ করা হয়৷ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জার্মানিতে এই নাচের চর্চা হচ্ছে এবং বড় শহরগুলোতে এ নাচের কোর্স রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দক্ষিণ অ্যামেরিকার জনপ্রিয় নাচ ‘সালসা’
জার্মানিতে নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো প্রায় সবাই ‘সালসা’ নাচের ভক্ত৷ যদিও অনেক জার্মানেরই কোমর দোলানো ‘সালসা নাচ’ নাচতে বেশ কষ্ট হয়৷ নৃত্য গবেষণা কেন্দ্রের ক্রিস্টিয়ানে রোজেনব্যার্গ-আহলহাউস বলেন, আসলে প্রতিটি দেশেরই কিছু নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে৷ জার্মানরা উত্তেজনাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে, যেখানে কিছু কিছু দেশের মানুষ শরীর দোলানোকেই বেশি পছন্দ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কঠিন হলেও সুন্দর, আকর্ষণীয়
শরীর দোলানোর দিকে থেকে ‘সালসা’ নাচের সাথে আর্জেন্টিনার ‘ট্যাঙ্গো’ নাচের বেশ মিল৷ কিন্তু যাঁরা একবার এই নাচ শেখার চেষ্টা করেছে, তাঁরা জানে কত কঠিন এই নাচ৷এর নিদির্ষ্ট কোনো ধাপ নেই, ছেলেরা আগে পা ফেলবে আর মেয়েরা ছেলেদের অনুসরণ করবে – এটাই নিয়ম৷ কেমন সেকেলে মনে হচ্ছে, তাই না? সে কারণেই এবার এমন এক ট্যাঙ্গো কোর্স শুরু হয়েছে, যেখানে মেয়েরা আগে পা ফেলবে আর ছেলেরা তার সাথে সাথে পা ফেলে অনুসরণ করবে৷
ছবি: Scott Griessel/Fotolia
প্রাচ্যের ধ্বনি
গুরুগম্ভীরতার দিন শেষ, তবে প্রাচ্যের ‘বেলি ড্যান্স’ এখনো সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়, বিশেষকরে মেয়েদের কাছে৷ নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের নাচের স্কুলের শিক্ষিকা আঙ্গেলা ভুকো বলেন, ‘‘বেলি ড্যান্সের ট্রেন্ড আগের মতো না হলেও এর স্থিতিশীল একটা চাহিদা রয়েছে৷ ক্লাসে শুধু নাচের মুদ্রাই শেখানো হয় না, জানানো হয় মিশরীয় এই নাচের ইতিহাসও৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
মন-মেজাজ ভালো করা ‘বলিউড’ নাচ
ভারতীয় পপ নাচ – যা জার্মানরা বলিউড ছবির মাধ্যমে চেনেন, সে নাচ জার্মানিতে ‘সালসা’ বা অন্য নাচের মতো এখনো এতটা জনপ্রিয় হয়নি৷ তবে বলিউড নাচের আলাদা স্টাইলের কারণে আজকাল বিভিন্ন জায়গায় এই নাচ দেখা যায়৷ তবে ঐতিহাসিক ভারতীয় নাচ খুবই কঠিন, বলেন আঙ্গেলা ভুকো৷ কিন্তু বলিউড নাচ খুবই সহজ৷ মন ভালো করা আনন্দের গান আর সাথে খানিকটা শরীর দোলানো – ব্যাস, হয়ে গেলো বলিউড ড্যান্স৷
ছবি: picture alliance/Sascha Radke
বিপরীতমুখী নৃত্য শৈলী
অ্যামেরিকায় তিরিশ এবং চল্লিশের দশকে ফুল ফোটার সময় হলে আনন্দে হেলেদুলে এই নাচ নাচা হতো৷ এই নাচ এখন আবারো জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে, বলেন নাচের শিক্ষক ও ট্রেন্ড গবেষক মার্কুস স্যোয়ফেল৷ অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ‘সুয়িং গান’ শুনতে যেমন আজকাল ভালো লাগছে, তেমনি এই নাচও আবার ফিরে আসছে৷ ঠিক ফ্যাশনের মতোই, পুরনো স্টাইল যেমন নতুন হয়ে বারবার ফিরে আসে৷
ছবি: picture alliance/dpa
কোরিয়ার ধর্মীয় নাচ
গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার ‘গাংনাম স্টাইল’ নাচ ‘হিট’ হয়েছিল৷ পার্টিতে নাচার জন্য যে কেউ ইন্টারনেট দেখে এই নাচ শিখে নিতে পারতো, এখনও পারে৷ এই নাচ শেখার জন্য ইউটিউবে যথেষ্ট নমুনা দেওয়া আছে৷ তাছাড়া জার্মানির নাচের স্কুলগুলোও এই নাচ শেখানোর ব্যাপারে বেশ উৎসাহী৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বার্লিনে ৩১ ডিসেম্বর রাতে বহু মানুষ ‘গাংনাম’ নৃত্যের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করেছে৷
ছবি: Reuters
কলোম্বিয়া থেকে আসা ফিটনেস ড্যান্স
‘জুম্বা’ অর্থাৎ জাদুমন্ত্র, যা সারা বিশ্বের মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে৷ আসলে এটাকে নাচ না বলে বরং বলা যেতে পারে ‘অ্যারোবিক’, যার সঙ্গে রয়েছে ল্যাটিন অ্যামেরিকার নাচের ছন্দ ও মুদ্রা৷ এই ‘কনসেপ্ট’ এসেছে আসলে কলোম্বিয়া থেকে, যা বর্তমানে জার্মানির ফিটনেস সেন্টারগুলোতে খুবই জনপ্রিয়৷ সারা বিশ্বে নাকি এরই মধ্যে জুম্বা নাচের ভক্তের সংখ্যা প্রায় ১২ মিলিয়ন ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভিন্ন স্বাদের নাচ
‘বারলেক ড্যান্স’, যা পুরনো দিনে মূলত পুরুষদের আকর্ষণ করার জন্য নাচা হতো, সেই নাচে অনুপ্রাণিত হয়ে অ্যামেরিকান নাগরিক দিটা ফন টিজ সম্প্রতি জার্মান নারীদের মধ্যেও এই নাচ পরিচিত করানোর চেষ্টা করছেন৷