কোভিড কেয়ার সেন্টার তৈরি হয়েছে গোশালায়। সেখানে সকাল বিকেল রোগীদের দুধ এবং ঘিয়ের সঙ্গে গোমূত্র মিশিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। অবৈজ্ঞানিক এই ঘটনা ঘটছে গুজরাটে। এখনো পর্যন্ত সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশে বালিয়ার বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিংহ ভিডিও পোস্ট করেছেন সোশ্যাল নেটওয়ার্কে। সেখানে দেখানো হয়েছে সকালে খালি পেটে কী ভাবে গোমূত্র পান করতে হবে। ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, গোমূত্র পান করলে করোনা হবে না।
গুজরাটের বনসকণ্ঠা জেলার একটি গ্রামে কোভিড কেয়ার সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। বস্তুত গোটা দেশেই কোভিডের ভয়াবহতার কারণে অসংখ্য কোভিড কেয়ার সেন্টার তৈরি হয়েছে। সেখানে রোগীদের ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আইসোলেশনের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
করোনা রুখতে দিল্লিতে গোমূত্রের আজব পার্টি
একুশ শতকে এসেও প্রচার করা হচ্ছে, গোমূত্র খেলে শরীর শুদ্ধ হয়ে যাবে, হবে না করোনা। এমনই দাবি নিয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আয়োজিত হল 'গোমূত্র পার্টি'। আয়োজনে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
গোমূত্র পার্টি
চীনে যখন করোনার প্রকোপ শুরু হয়ে ছিল, তখনই বিজেপি এবং তার শাখা সংগঠনগুলির কোনও কোনও নেতা বলেছিলেন, গোমূত্র পান করলে করোনা হবে না। ভারতে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করার পরে সেই আশ্চর্য কাজটিই প্রকাশ্যে করে দেখাল গেরুয়া শিবির। আয়োজন হল গোমূত্র পার্টির।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
বাবা চক্রপানি মহারাজ
স্বঘোষিত এই বাবাজির ধর্মীয় গোষ্ঠীর নাম অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির সঙ্গে তাঁর ভালই ঘনিষ্ঠতা। এর আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে এসেছেন তিনি। কেরালায় বন্যায় সময় বলেছিলেন, যাঁরা গোমাংস খান, তাঁদের ত্রাণ দেওয়া উচিত নয়।
ছবি: AFP/J. Andrabi
গোমূত্র ভক্ত
সেই চক্রপানি বাবাই এ বার দিল্লিতে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করেছিলেন। যেখানে প্রায় ২০০ জন যোগ দিয়েছিলেন। গোমূত্র, গোবর, দুধ, ঘি দিয়ে তৈরি হয়েছিল পানীয়। ভক্তরা খেলেনও তা ঢকঢক করে। এতেই না কি প্রতিহত হবে করোনা।
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
বিজেপির লাইনেই বাবাজি
চক্রপানি মহারাজ প্রথম নন, এর আগে গোমূত্র খেয়ে করোনা প্রতিহত করার কথা বলেছিলেন আসামের বিজেপি নেত্রী সুমন হরিপ্রিয়। উত্তরপ্রদেশ থেকে জেতা বিজেপির বিতর্কিত সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর বলেছিলেন গোমূত্র খেলে ক্যান্সারও আটকানো যায়।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
কারা গেলেন পার্টিতে
শনিবার চক্রপানি মহারাজের গোমূত্র পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ২০০ জন। তাঁদের অধিকাংশই মহারাজের ভক্ত। বহু গরিব মানুষ নিছক অন্ধবিশ্বাস থেকে হাজির হয়েছিলেন সেখানে।
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
মাথায় হাত চিকিৎসকদের
গোমূত্র পার্টির কথা শুনে মাথায় হাত চিকিৎসকদের। তাঁদের বক্তব্য, স্বঘোষিত বাবাজিরা বলছেন গোমূত্র খেলে শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ, রোগের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়বে শরীরে। কিন্তু বাস্তব ঠিক তার বিপরীত। গোমূত্র এবং গরুর গোবর খেলে শরীর আরও খারাপ হতে পারে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
হতে পারে যক্ষ্মা
দিল্লির এক চিকিৎসকের বক্তব্য, কিছুদিন আগে উত্তরাখণ্ডে গোমূত্র খেয়েছিলেন এক ব্যক্তি। প্রবল শরীর খারাপ নিয়ে কিছুদিন আগে তিনি এসেছিলেন চিকিৎসকের কাছে। তাঁর গোটা শরীরে যক্ষ্মা ছড়িয়ে গিয়েছে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
কে বোঝে কার কথা
এক দিকে চিকিৎসকরা যখন বিজ্ঞানের কথা বলছেন, তখন হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলের মদতে স্বঘোষিত বাবাজিরা দিকে দিকে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করে বেড়াচ্ছেন। প্রশাসনও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ছবি: AFP/J. Andrabi
গ্রেফতার করা হোক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাক্তন আমলার বক্তব্য, চাইলে এই বাবাজিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে সে কাজ হচ্ছে না।
ছবি: AFP/J. Andrabi
9 ছবি1 | 9
কিন্তু গুজরাটের কোভিড কেয়ার সেন্টারটি সম্পূর্ণ অন্যরকম। একটি গোয়ালঘর বা গোশালায় তৈরি হয়েছে সেন্টারটি। যার দেওয়ালে লেপা রয়েছে গোবর। চিকিৎসার জন্য দেওয়া হচ্ছে দুধ, ঘি এবং গোমূত্র। সেন্টারের কর্মকর্তাদের দাবি, আয়ুর্বেদিক প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা চলছে বলেই এ ধরনের জিনিস খাওয়ানো হচ্ছে রোগীদের।
যদিও চিকিৎসকদের বক্তব্য, এতে শরীরের আরো বেশি ক্ষতি হচ্ছে। চিকিৎসক সাত্যকি হালদারের বক্তব্য, ''এই ধরনের চিকিৎসার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। গোমূত্র পান করে শরীরে নানা সমস্যা হতে পারে। অতীতে তেমন ঘটনা আমরা দেখেছি।'' গুজরাটের ওই কোভিড সেন্টারটির বিরুদ্ধে সরকার অবশ্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
ভারতে যত ‘গরু-বাণী’
গত কয়েক বছরে ভারতে গরু নিয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উক্তি, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: AP
অক্সিজেন শুধু গরুর
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত জুলাই মাসের একটি জনসভায় গরু নিয়ে করেন বিস্ফোরক মন্তব্য৷ তিনি বলেন, ‘‘বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে গরুই একমাত্র প্রাণী যে একাধারে অক্সিজেন নিশ্বাসের সাথে বাতাস থেকে গ্রহণ করে ও শ্বাস ছাড়ার সাথে তা পরিত্যাগও করে৷ এই কারণেই গরুকে আমরা মায়ের সম্মান দিই৷’’ একই সভায় তিনি বলেন যে ভারতের গির অঞ্চলের গরুর দুধে নাকি রয়েছে সোনা!
ছবি: AP
ক্যান্সাররোধে গরু
ভোপাল কেন্দ্র থেকে লোকসভায় গেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা৷ নির্বাচনের আগে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে গোমূত্র পান করে নাকি ক্যান্সারমুক্ত হয়েছেন তিনি৷ পরে যদিও ড. এস এস রাজপুত, যিনি প্রজ্ঞার একটি অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন, জানান যে প্রজ্ঞার ক্যান্সার রয়েছে এমন কোনো তথ্যউপাত্ত তাঁর মেডিকাল রিপোর্টে পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Imago Imaged/Hindustan Times
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও গরু
একই সাক্ষাৎকারে প্রজ্ঞা গরু নিয়ে একটি মন্তব্যেই থামেননি৷ গরুর গায়ের চামড়ায় হাত বোলালে নিয়ন্ত্রণ করা যায় রক্তচাপ, বলে তাঁর বিশ্বাস৷ তিনি বলেন, ‘‘গরুর পিঠ থেকে ঘাড়ের দিকে হাত বোলালে যিনি হাত বোলাচ্ছেন, তার রক্তচাপ কমে আসবে৷ এই চিকিৎসা অমৃতের সমান৷’’
ছবি: IANS
শ্রীকৃষ্ণ ও গরুর দুধ
সম্প্রতি আসামের শিলচরের বিধায়ক ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতিক দিলীপ পাল বলেন, ‘‘ঠিক ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ঢঙে একটি গরুর সামনে বাঁশি বাজালে গরুর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা উন্নত হয়৷’’
ছবি: DW/S.Mishra
গোমূত্রের যত সুফল
ভারতে বর্তমান রাজনীতি ও অর্থনীতিতে গোমূত্রের বিশাল গুরুত্ব৷ বাবা রামদেবের ‘পতঞ্জলি’ সংস্থা গত কয়েক বছরে গোমূত্র ও গোমূত্রজনিত নানা পণ্য থেকে বিরাট ব্যবসা করেছে৷ রাজীব দিক্ষিত নামে এক ইউটিউব ব্যক্তিত্ব রামদেবের গোমূত্রপণ্যের ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি রাখতে গিয়ে বলেন যে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, আলসার, দৃষ্টিহীনতা, অতিরিক্ত মেদ, গ্লুকোমাসহ একাধিক শারীরিক অসুবিধার সমাধান নিয়মিত গোমূত্র পান৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain
গরুর জন্য মন্ত্রণালয়
ভারতই বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে রয়েছে গরুর পৃথক মন্ত্রণালয়৷ ২০১৪ সালে সরকার গঠন করে ভারতীয় জনতা পার্টি৷ ভারতের বৃহত্তম রাজ্য রাজস্থানেও ক্ষমতায় তারাই৷ সেই রাজ্যেই গঠিত হয় প্রথম ‘গরু সংরক্ষণ মন্ত্রণালয়’৷ পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয় ‘আয়ুষ’ (আয়ুর্বেদ, যোগ, ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানি, হোমিওপ্যাথি ও সিদ্ধ চিকিৎসা গবেষণার মন্ত্রণালয়) সম্প্রতি ৫৮০ কোটি রুপি ব্যয় করেছে গোশালা নির্মাণখাতে৷
ছবি: DW/S.Mishra
6 ছবি1 | 6
উত্তরপ্রদেশে গোমূত্র খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বালিয়ার বিধায়ক সুরেন্দ্র সিংহ। দুইদিন আগে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন তিনি। যেখানে বলা হয়েছে, সকালে খালি পেটে ৫০ মিলিলিটার গোমূত্র সঙ্গে ১০০ মিলিলিটার জল মিশিয়ে খেলে করোনা হবে না। এই বিধায়কের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কিছুদিন আগেই ল্যানসেট পত্রিকায় একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, করোনার প্রথম ঢেউ ভারত ভালোভাবে সামলালেও দ্বিতীয় পর্যায়ের ঢেউ সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে। তার জন্য সরকারকেই দায়ী করা হয়েছে। সম্প্রতি নেচার পত্রিকাতেও একই কথা বলা হয়েছে। বিজেপি অবশ্য এই লেখাগুলিকেও চক্রান্ত বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। তারই মধ্যে এই দুইটি ঘটনা সামনে আসায় বিরোধীরা আরো সরব হয়েছে।