1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গোলাপি সাজে কলকাতা

আলী সেকান্দার কলকাতা থেকে
২১ নভেম্বর ২০১৯

কলকাতা এখন গোলাপি রঙের শহর৷ নেতাজি সুভাস চন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পুরনো কলকাতার অলিগলিতেও লেগেছে গোলাপি রঙের ছোঁয়া৷ সড়ক বিভাজনগুলোর বাতি থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে গোলাপি আলো৷

কলকাতার সবচেয়ে উঁচু ভবন ‘দ্য ফরটিটু’তে গোলাপির খেলাছবি: Sikander Ali

এই গোলাপি রঙের উৎস একটি ক্রিকেট ম্যাচ, গোলাপি বলের দিবারাত্রির টেস্ট৷

বাংলাদেশ-ভারতের এই টেস্ট ম্যাচ শুরু হবে কাল (শুক্রবার) স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় ইডেন গার্ডেনসে৷ এই ম্যাচ কেন্দ্র করেই কলকাতা সেজেছে অপরূপ রূপে, গোলাপি রঙে৷

দিবারাত্রির টেস্ট ক্রিকেটের শুরুটা চার বছর আগে হলেও বাংলাদেশ বা ভারত কখনোই ফ্লাড লাইটে টেস্ট ম্যাচ খেলেনি৷ তাই কলকাতাতেই দিবারাত্রির টেস্টে অভিষেক হচ্ছে প্রতিবেশী দুই দেশের৷ ঐতিহাসিক এই ম্যাচ ঘিরে শহর জুড়ে চলছে উন্মাদনা৷ ছেলে-বুড়ো সবাই চাচ্ছে ভারতের গোলাপি বলের প্রথম টেস্ট ম্যাচটি মাঠে বসে দেখতে, ইতিহাসের সাক্ষী হতে৷ টেস্টের মতো অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় খেলার টিকিটের জন্যও চলছে হাহাকার৷ ভারতের ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই-এর সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী জানান, বুধবারই ম্যাচের চারদিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে৷ এই খবর জানার পরও ইডেনের সামনে মানুষের ভিড় একটুও কমেনি৷ ব্যারিকেড দিয়ে টিকিটপ্রত্যাশী দর্শকদের ঠেকাতে হচ্ছে পুলিশকে৷ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (সিএবি) থেকে ‘টিকিট নেই’ জানিয়ে দেওয়ার পরও কেউই জায়গা ছাড়ছে না৷ তীর্থের কাকের মতো কলকাতার ক্রিকেটানুরাগীরা অপেক্ষা করছেন একটি টিকিটের জন্য৷ তাদেরই একজন সৌমেন সাহা এসেছেন শিলিগুড়ি থেকে ঋদ্ধিমান সাহাদের খেলা দেখতে৷ উঠেছেন কলকাতার নিউমার্কেটের পাশেই একটি হোটেলে৷ অথচ ম্যাচ দেখার জন্য কোনো টিকিট জোগাড় করতে পারেননি৷ তিনি বলছিলেন, ‘‘এত দূর থেকে যখন এসেছি তখন খেলা তো দেখতেই হবে৷ ভারত গোলাপি বলে এই প্রথম খেলছে দিবা-রাত্রির টেস্ট ম্যাচ৷ এটা তো ঐতিহাসিক একটি ম্যাচ৷ খেলা হচ্ছে আমাদের কলকাতায়৷ যে করেই হোক ম্যাচটা দেখতে চাই৷ শেষ দিন পর্যন্ত আশা ছাড়ছি না৷’’

ছবি: Sikander Ali

কলকাতা টেস্ট ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল সাদা পোশাকে, লাল বলে৷ সৌরভ গাঙ্গুলী বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার পরই ম্যাচটি দিবা-রাত্রির করার প্রস্তাব দেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি-কে৷ ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাওয়ার পর খেলতে রাজি হন ক্রিকেটাররা৷ সৌরভ উৎসবের একটা উপলক্ষ্য খুঁজছিলেন৷ গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্ট আয়োজন করে কলকাতার মানুষকে উৎসব করার সুযোগ এনে দিয়েছেন৷ এই ম্যাচটিকে ঐতিহাসিক রূপ দিতে তিনি বেছে নেন গোলাপি রঙের বল৷ ইডেন গার্ডে্ন্স সাজানো হয়েছে গোলাপি রঙের ছোঁয়ায়৷ স্টেডিয়ামের প্রতিটি পিলার গোলাপি রঙের কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ গ্যালারির লাইটগুলো মোড়ানো হয়েছে গোলাপি রাঙতায়৷ আলো জ্বলে উঠলেই তাতে গোলাপি দেখায়৷ ইডেনের স্টাফদের পোশাকও গোলাপি রঙের৷ পিচ কিউরেটর সুজন মুখার্জি বলছিলেন, ‘‘এই টেস্ট ম্যাচটি বিশেষ একটি জায়গা নিয়ে নিয়েছে৷ খেলা শুরুর আগেই ব্যাপক উন্মাদনা দেখতে পাচ্ছি৷ জীবনে কখনো এতটা ক্রেজ দেখিনি৷ ম্যাচের আকর্ষণ বাড়াতেই গোলাপি পোশাক দেওয়া হয়েছে৷ শহরের সব জায়গায় গোলাপি লাইটিং হয়েছে৷ বড় বড় দালানগুলোতে গোলাপি আলো দেখা যাচ্ছে৷ এর কারণ হলো দিবা-রাত্রির টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি দর্শকদের আকৃষ্ট করা৷ কর্তৃপক্ষ এই উদ্যোগে সফলই হয়েছে বলব৷’’

কলকাতার সবচেয়ে উঁচু ভবন ‘দ্য ফরটিটু’-র ১৩ তলায় জ্বলছে গোলাপি আলো৷ এসপ্লানেড ধর্মতলা থেকে দেখা যাচ্ছে এই ভবনের গোলাপি রূপ৷ ওদিকে নন্দন, রবীন্দ্র সদন ভাসছে আলোর ঝলকানিতে৷ পথচারী বারীন মিত্র কলকাতার এই রূপ দেখে মুগ্ধ৷ তিনি খুব খুশি ভারতের দিবা-রাত্রির প্রথম টেস্ট ম্যাচটি তার শহরে হচ্ছে বলে৷ টিকিট কেটে খেলা দেখতে না পারলে টিভিতে খেলা দেখতে চান তিনি৷ ২২ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত অফিস থেকে ছুটি নিয়ে রেখেছেন খেলা দেখবেন বলে, ‘‘টিকিট না পেলেও খেলা তো মিস করা যাবে না! পরিবার নিয়ে টিভিতে খেলা দেখবো৷ গোলাপি বলের প্রথম টেস্ট খেলা হচ্ছে৷ আমাদের সৌরভদা’ এই খেলা এনেছে৷ আমরা উনাকে খুব ভালোবাসি৷ ‍দাদার কারণেই শহর বদলে গেছে৷ এই ম্যাচ দেখতে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা আসবেন৷ শুনেছি তাদের অভিষেক টেস্ট দলের খেলোয়াড়রাও আসছেন৷ ভারতের সাবেক ক্যাপটেনরা থাকবেন৷ বড় অনুষ্ঠান হবে৷ নিউজ দেখেছি সবকিছুই হবে গোলাপি রঙের৷ দারুণ একটা ব্যাপার৷’’

ছবি: Sikander Ali

এসপ্লানেড থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সড়কের বিভাজনের বাতিগুলোকে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গোলাপি রঙের রাংতা দিয়ে৷ আর তাতেই পুরো শহর হয়ে উঠেছে গোলাপি৷ গঙ্গার বুকে যে লঞ্চ চলছে তাতেও রঙ দেওয়া হয়েছে গোলাপি৷ বিভিন্ন বাহনে গোলাপি স্টিকার ব্যাবহার করে নতুনত্ব আনা হয়েছে৷ টেস্ট ম্যাচ ঘিরে কলকাতার এই রঙ পরিবর্তনকে সাদরে গ্রহণ করেছেন প্রিয়াঙ্কা সেন৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এ ছাত্রী বাংলাদেশ-ভারতের দিবা-রাত্রির টেস্ট ম্যাচ দেখার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছেন৷ তার অনুভূতিটা অন্য রকম, কিছুটা পরিতৃপ্তির, ‘‘দাদা প্রথম দিনের জন্য চারটা টিকিট জোগাড় করে ফেলেছে৷ ভাই-বোন মিলে খেলা দেখতে পারছি, এতে খুশি৷’’ গোলাপি বলের টেস্টের ভেন্যু কলকাতা এখন গোলাপি শহর৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ