জেনিটিক্যালি মোডিফায়েড ‘গোল্ডেন রাইস'-এর পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷ ওদিকে দেশি জাতের ধান রক্ষায় যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের দাবি, এই রাইসের মাধ্যমে বহুজাতিক কোম্পানিগুলি এবার বাংলাদেশের ধান দখল করতে চান৷
বিজ্ঞাপন
দেশীয় ধানে বিটা ক্যারেটিন বা ভিটামিন এ নেই৷ অন্যদিকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে আবিষ্কৃত ‘গোল্ডেন রাইস'-এ ভিটামিন এ পাওয়া যাবে৷ বাংলাদেশ রাইস রিচার্স ইনস্টিটিউটের (বিরি) বিজ্ঞানীদের দাবি, এই ধান শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের ভিটামিন এ-এর অভাব পূরণ করবে৷ শিশুদের রক্ষা করবে রাতকানা রোগ থেকে৷
কুষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সংবাদমাধ্যকে জানান, ‘‘বিরি-র অনুরোধে ন্যাশনাল টেকনিক্যাল কমিটি অন ক্রপ বায়োটেকনোলজি গত ২০শে সেপ্টেম্বর মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই ধান উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে৷
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্ষম ধান
বাংলাদেশের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে নানাভাবে৷ কৃষিও রয়েছে এর মধ্যে৷ তবে আশার কথা, এই প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images
বাংলাদেশেই উদ্ভব
বাংলাদেশের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে নানাভাবে৷ কৃষিক্ষেত্রও এর মধ্যে রয়েছে৷ তবে আশার কথা, এই প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম কিছু ধানের জাত উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, ব্রি-র মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস৷
ছবি: N.Nanu/AFP/Getty Images
লবণাক্ততা
উপকূলীয় অঞ্চলে যেখানে জমিতে লবণের পরিমাণ বেশি সেখানে রোপা আমন মৌসুমে ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৫৩ ও ব্রি ধান৫৪ – এই চারটি জাত বেশ কার্যকর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোরো ধান
লবণাক্ত পরিবেশে জন্মানোর জন্য বোরো ধানের জাতের মধ্যে রয়েছে ব্রি ধান৪৭ এবং ব্রি ধান৬১৷
ছবি: CC/Rishwanth Jayaraj
খরা
খরা মোকাবিলায় সক্ষম দুটো উন্নত জাত হলো ব্রি ধান৫৬ এবং ব্রি ধান৫৭ – দুটোই রোপা আমন ধানের জাত৷ ‘‘আরও কিছু নতুন জাত আমাদের হাতে আছে যেগুলো খরায় আরও ভালো করবে,’’ জানিয়েছেন ব্রি মহাপরিচালক৷
ছবি: AP
হঠাৎ বন্যা
ড. বিশ্বাস বলেন, রোপা আমন মৌসুমে আরেকটি পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন ধান লাগানোর পরে দেখা যায় যে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে হঠাৎ করেই পানির নীচে ডুবে যায়৷ ‘‘এই অবস্থা প্রায় সপ্তাহখানেক বা তারও বেশি সময় ধরে থাকে৷ এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রয়েছে ব্রি ধান৫১ ও ব্রি ধান৫২৷’’
ছবি: N.Nanu/AFP/Getty Images
অতি ঠান্ডা, অতি গরম
এই পরিস্থিতির জন্য এখনো কোনো ভালো জাত নেই৷ তবে ব্রি মহাপরিচালক বলেছেন, ‘‘গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে চলছে এবং আমরা আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে এমন ধানের জাত আমরা হাতে পেয়ে যাব৷’’
ছবি: DW/P. Mani Tewari
প্রচারণা
সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে কৃষকদের ব্রি উদ্ভাবিত এসব জাত সম্পর্কে জানানো হয়৷
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
ভুট্টা অথবা সূর্যমুখী বীজের জিনের সহায়তায় জিআর-২-ই বিরি ধান ২৯ কে গোল্ডেন রাইনে রূপন্তরের গবেষণা পর্যায়ের উৎপাদন এরইমধ্যে সফল করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা, গাজীপুরের বিরি সদর দপ্তরে স্বচ্ছ পর্দাঘেরা জায়গায়৷ বিরি-র মহাপরিচালক ড. জীবন কুমার বিশ্বাস সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘আগামী নভেম্বরে বেরো মৌসুমে বিরি সংলগ্ন আলাদা মাঠে এই ধান চাষ করা হবে৷ এরপর একাধিক মাঠে৷ তারপর কৃষকদের মধ্যে বীজ বিতরণের পরিকল্পনাও রয়েছে৷''
তবে এই গোল্ডেন রাইসের বিরোধিতা করেছেন বাংলাদেশে দেশি ধানের জাত নিয়ে কাজ করা উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আক্তার৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কথিত গোল্ডেন রাইসের নামে বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশের ধানকে দখল করতে চাইছে৷ ফলে দেখা যাবে, এর ‘কপিরাইট' এবং বীজের জন্য আমাদের কৃষক বহুজাতিক কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে৷''
ডয়চে ভেলের মুখোমুখি ফরিদা আখতার
তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের ভিটামিন এ-এর অভাব পূরণের জন্য নানা শাক-সবজি আছে৷ সেগুলোর চাষ বাড়ানো যায়৷ কিন্তু ধানের মাধ্যমে ভিটামিন এ-এর অভাব পূরণ হাস্যকর৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে জিএম ফুড নিষিদ্ধ হচ্ছে, সেখানে আমরা সেটাই আমন্ত্রণ জানাচ্ছি৷ এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে?''
ফরিদা আক্তারের কথায়, ‘‘জিএম ফুড বিটি বেগুন বাংলাদেশের বেগুন চাষীদের নিঃস্ব করছে৷ আর এবার গোল্ডেন রাইস বাংলাদেশের চাষীদের কাছ থেকে ধানের অধিকারও কেড়ে নেবে৷''
প্রসঙ্গত, বহুজাতিক কোম্পানি সিনজেনটা-র সঙ্গে চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে বিরি এই প্রযুক্তি নিয়েছে৷ এই প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির অধ্যাপক ইগনো প্রটেকাস এবং জার্মানির ফ্রাইবুর্গ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পেটার বায়ার৷
অন্নপূর্ণা চলনবিল
বছরের প্রায় ছয়মাস চলনবিল পানিতে ডুবে থাকে৷ তবে শীতকালে শুকানোর পর সেই বিলের জমিতে বোরো আবাদ করেন কৃষকরা৷ কদিন আগে ধান ঘরে তুলেছেন তাঁরা৷ চলনবিলে ধান কাটার উৎসব নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
ব্যস্ত কৃষক
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিলে বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক৷ গ্রামে ধান কাটায় এখনো আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না৷ ছবিটি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বিল নাদুয়া থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মাঠেই সকালের খাবার
চলনবিলে ফসল কাটার মাঝে সকালের খাবার খাচ্ছেন কৃষকরা৷ সাধারণত সূর্য ওঠার আগে থেকেই এখানে ধান কাটা শুরু হয়৷ তাই কৃষকরা সকাল আর দুপুরের খাবার সঙ্গে নিয়ে আসেন৷ কাজের ফাঁকে মাঠেই সেরে ফেলেন খাবার পর্ব৷
ছবি: DW/M. Mamun
মহিষের গাড়ির কদর বেশি
চলনবিলের রাস্তাঘাট এখনো খুবই অনুন্নত৷ একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু কাদায় ভরে যায় কাঁচা সড়কগুলো৷ এ অঞ্চলে মাঠ থেকে ধান আনার জন্য তাই মহিষের গাড়ির কদর বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
কাটা ধান নিয়ে বাড়ি ফেরা
চলনবিলের ভেতর থেকে মহিষের গাড়ি বোঝাই কাটা ধান নিয়ে বাড়ি ফিরছেন মজুররা৷ ফসল তোলার সময় এসব মজুররা ধান কাটার জন্য আসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী অঞ্চল থেকে৷ সঙ্গে নিয়ে আসেন নিজেদের মহিষের গাড়িও৷ সাধারণত এক বিঘা জমির ধান কেটে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দিলে এসব মজুররা দেড়মন ধান পেয়ে থাকেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
পরিবেশবান্ধব বাহন
চলনবিলে ধান বহনের জন্য মহিষের গাড়ি ব্যবহারের অন্যতম আরেকটি কারণ হলো এ বাহনটিতে অনেক বেশি মাল বোঝাই করা যায় এবং এতে কোনো জ্বালানি খরচ নাই৷ মোটের উপর পরিবেশবান্ধব এক বাহন এটি৷ অধিকন্তু কাঠের চাকা হওয়ায় যে-কোনো দুর্গম রাস্তাতেই চলতে সক্ষম এ বাহন৷
ছবি: DW/M. Mamun
মাথায় নিয়েই ফেরা
ধানের মাঠ থেকে যে কৃষকদের বাড়ি অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বে তাঁরা মাথায় করেই নিয়ে আসেন কাটা ধান৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ির আঙিনায় মাড়াই
চলনবিলে ধান কাটার পর মাড়াই পর্বটা সম্পন্ন হয় বাড়ির আঙিনাতেই৷ এ কাজে বাড়ির পুরুষদের পাশাপাশি নারী সদস্যদের ভূমিকাও থাকে অনেক বেশি৷ আগে এ অঞ্চলে গরু কিংবা হাত দিয়েই মাড়াই করা হতো৷ কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি যন্ত্র দিয়ে ফসল মাড়াই করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
নারীর ভূমিকা
মাড়াই শেষে ধান থেকে ময়লা সরাচ্ছেন চলনবিলের গৃহিনীরা৷ মাঠ থেকে ধান কেটে আনার পর চাল তৈরি পর্যন্ত সবকটি পর্যায়েই নারী সদস্যদের ভূমিকা থাকে বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ধান সিদ্ধ
ধান মাড়াই শেষে সিদ্ধ করছেন চলনবিলের গৃহিনীরা৷ এ কাজটিও মূলত বর্তায় গৃহিনীদের উপরই৷ ধান সিদ্ধ করার কাজে ব্যবহৃত জ্বালানিও আসে ধান থেকেই৷ এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ধানের খড় কিংবা তুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
অবশেষে চাল
সবশেষে ধান ভাঙানোর কাজ চলছে চলনবিলের একটি বাড়িতে৷ ফসল কাটার মৌসুমে ধান ভাঙানোর ভ্রাম্যমাণ কল নিয়ে বাড়িতেই হাজির হন অনেকে৷ এক মন ধান ভাঙাতে কৃষকদের গুনতে হয় ২০-২৫ টাকা৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
গোল্ডেন ধানের চাষ কি বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক? আপনার মতামত জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷