স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের হাতে দলিত ও সংখ্যালঘুদের নিগৃহীত হবার ঘটনা দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছে৷ অনেকদিন চুপ থাকার পর শনিবার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী৷ জোর গলায় বলেছেন,‘‘যদি মারতে হয় আমায় মারো, দলিতদের নয়৷''
বিজ্ঞাপন
গো-রক্ষকদের নিশানা করে তাদের মাফিয়া বলতেও ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তবে হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবরের নেতৃত্ব যাতে চটে না যায়, সেজন্য আসল ও নকল গো-রক্ষকদের মধ্যে ফারাক টেনেছেন তিনি৷ এটা যে মোদী করেছেন শুধুমাত্র কৌশলগত কারণে, সেটা বোঝা কঠিন নয়৷
আসলে গো-রক্ষা আন্দোলন সংঘ পরিবারের এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি৷ তার ওপর আগামী বছর গো-বলয়ের বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশ এবং মোদীর স্বরাজ্য গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচন৷ কাজেই গো-রক্ষার নামে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যে তাণ্ডব চলছে, তাতে গো-বলয়ে দলিতদের ভোট যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায়, সেজন্যই সম্ভবত মোদীর এই ‘সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না' নীতি৷ প্রশ্ন উঠেছে, সংসদের অধিবেশন চলাকালীন মোদী সংসদের বাইরে গলা ফাটালেন অথচ সংসদের ভেতরে একটি কথাও তিনি বললেন না কেন? বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল চেপে ধরবে এই ভয়ে? বহুজন সমাজ পার্টির দলিত নেত্রী মায়াবতীও জানতে চেয়েছেন এর উত্তর৷ আর সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদের মন্তব্য: বাইরের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যেসব কথা বলেছেন, সেগুলে যদি তিনি আগে বলতেন, তাহলে দলিত বা সংখ্যালঘুদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটতো না৷
অনেক হিন্দুও গরু বা মহিষের মাংস খান
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে থাকলেও ভারতে গরু বা মহিষের মাংস অনেকেই খেয়ে থাকেন৷ সে দেশে যত মানুষ গরু বা মহিষের মাংস খান তাদের মধ্যে সোয়া কোটিই হিন্দু৷
ছবি: AP
গরু কম, মহিষ বেশি
হিন্দু প্রধান দেশ ভারতে ধর্মীয় কারণেই গরুর মাংস কম খাওয়া হয়৷ তবে মহিষের মাংস খান অনেকেই৷ গরু এবং মহিষের মোট ভোক্তা প্রায় ৮ কোটি৷ ২০১১-১২-তে একটি জরিপ চালিয়েছিল ভারতের ‘দ্য ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস’ (এনএসএসও)৷ সেই জরিপ থেকে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
সাধারণ মানুষের মাঝে মাংস নিয়ে বিরোধ কোথায়?
জরিপ থেকে আরো জানা গেছে, যাঁরা গরু বা মহিষের মাংস খান তাঁদের বেশিরভাগই মুসলমান হলেও সেখানে সোয়া এক কোটি হিন্দুও এসব মাংস খান৷
ছবি: Getty Images/P. Guelland
সংখ্যাটা বাড়ছে
জরিপ থেকে আরো জানা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশে গরু বা মহিষের মাংস খাওয়া বাড়ছে৷ এক কোটি মানুষের মধ্যে জরিপটি চালিয়েছিল এনএসএসও৷
ছবি: DW/S.Waheed
মাংস খাওয়ায় ভারত সবার পেছনে
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) ১৭৭টি দেশে সব ধরণের মাংস খাওয়ার হার সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ তালিকায় সবার নীচে রয়েছে ভারত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
রপ্তানিতে সবার আগে
এফএও-র তথ্য অনুযায়ী, গবাদি পশুর, বিশেষ করে গরু এবং মহিষের মাংসের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ভারত৷ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং নগরায়ণের কারণে মানুষের মাংস খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ তারপরও অবশ্য অন্য সব দেশের তুলনায় ভারতের মানুষ এখনো অনেক কম মাংস খায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
হিন্দুরা দ্বিতীয়
ভারতের মোট মুসলমানের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি মুসলমান গরু বা মহিষের মাংস খান৷ সংখ্যার দিক থেকে তারপরেই রয়েছে হিন্দুরা৷ নিজেদের মোট সংখ্যার শতকরা হারের বিচারে মুসলমানদের পরেই রয়েছেন খ্রিষ্টানরা৷
ছবি: DW/S.Waheed
যাঁরা বেশি খান
মুসলিম জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি নিম্ন বর্ণের হিন্দু বা উপজাতিরাও যথেষ্ট গরু বা মহিষের মাংস খান৷ উচ্চ বর্ণের অনেক হিন্দুও গরু বা মহিষের মাংস পছন্দ করেন৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
7 ছবি1 | 7
এ সব ঘটনার শুরুটা হয় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে৷ সে সময় উত্তর প্রদেশের দাদরিতে গো-মাংস রাখার অভিযোগে নকল গো-রক্ষকদের গণপিটুনিতে মারা যান মহম্মদ আখলাক৷ এরপর গুজরাটে দলিত নিগ্রহের সপ্তাহ দুয়েক পর মধ্যপ্রদেশে গো-মাংস নিয়ে যাবার অভিযোগে মুসলিম মহিলাদের মারধর করা হয়৷ দলিত ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার একের পর এক ঘটনা ঘটে চলে হরিয়ানা, রাজস্থান ও মহারাষ্ট্রে৷ মোদীর স্বরাজ্য গুজরাটের উনা শহরে একটি মৃত গরুর চামড়া ছাড়ানোর অপরাধে দলিতদের বেধড়ক মারধর করে তথাকথিত গো-রক্ষক বাহিনী৷ এতে রাজ্য জুড়ে শুরু হয় দলিত আন্দোলন৷ শুরু হয় আহমেদাবাদ থেকে উনা শহর পর্যন্ত দলিতদের ১০ দিনের বিশাল পদযাত্রা৷ সাধারণত মরা গরুর চামড়া ছাড়ানোর কাজটা করে দলিতরা৷ তাঁরা সেই কাজ বন্ধ রাখে৷ গণবিক্ষোভ যেভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, তা সামলাতে না পেরে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন আনন্দিবেন৷ গুজরাটে আগামী বছরের ভোটে দলিত নিগ্রহের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে পারে এই আশঙ্কায় আনন্দিবেনকে সরিয়ে দেবার সিদ্ধান্তও নেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব৷
গো-রক্ষকদের সরাসরি সমাজ বিরোধী আখ্যা দিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এরা বেআইনি কাজ কারবারে জড়িত৷ গো-রক্ষকের মুখোস পরে মাফিয়াগিরি চালাচ্ছে এরা৷'' ওদিকে পাঞ্জাবের গবাদি পশু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গো-রক্ষকদের সংগঠিত এই তোলাবাজিতে তাঁদের বৈধ ব্যবসায় প্রায় লাল বাতি জ্বলার উপক্রম৷ সরকারের দরজায় মাথা খুঁড়েও কোনো ফল হয় না৷ ‘নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট'-অর জন্য চেষ্টা করেও কোনো ফল না পেয়ে বিনা কাগজে গরুর চালান পাঠাতে গিয়ে হরিযানা গো-মাফিয়ারা লরির ড্রাইভার আর খালাসিদের মারধর করে গরুগুলি নিজেদের খাটালে নিয়ে যায়৷ পাঞ্জাবে গবাদি পশুর বড় বড় মান্ডি, মানে বাজারে মাফিয়া চক্রের লোক থাকে৷ লরিতে গবাদি পশু বোঝাই করার সঙ্গে সঙ্গে সেই খবর পৌঁছে যায় গো-মাফিয়াদের কাছে৷ গোটা বিষয়টার মধ্যে একটা সংগঠিত মাফিয়া চক্র সক্রিয়া চক্র কাজ করছে, যারা গরুপিছু ২০০ টাকা এবং লরি পিছু ২,০০০ টাকা তোলা নেয়৷ একটি লরিতে থাকে ১০টি গরু৷ বৈধ ব্যবসায়ের জন্য লরিতে গরু বিক্রির জন্য নিয়ে যাবার সময়ে ভুঁয়ো গো-রক্ষক মাফিয়াদের তোলাবাজির টাকা দিতে হয়, যার পরিমাণ দিনকে দিনই বাড়ছে৷
ঘরে বসেই যেভাবে কিনতে পারেন কুরবানির গরু
সামনেই কুরবানির ঈদ৷ পবিত্র এই ধর্মীয় উৎসবে প্রায় সব মুসলমানই সামর্থ অনুযায়ী পশু কুরবানি দেয়ার চেষ্টা করেন৷ যাঁরা সবচেয়ে কম ঝামেলায় ঈদের গরু বা অন্য গবাদি পশু কিনতে চান, তাঁরা চাইলে ঘরে বসেই কাজটা সেরে নিতে পারেন৷
ছবি: Getty Images/J Mitchell
এখনই পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত এখনইডটকম
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি ঈদ-উল-আজহা, অর্থাৎ কুরবানির ঈদ৷ আরবি শব্দ ‘ঈদ-উলয়আজহা’-র অর্থ ত্যাগের উৎসব৷ ত্যাগের মানসিকতা থেকেই এই ঈদে সব মুসলমানই সামর্থ অনুযায়ী পশু কুরবানি দেন৷ এবারের ঈদে কেউ যদি কুরবানির পশু কিনতে চান, তাহলে www.akhoni.com-এ চোখ রাখুন৷ হ্যাঁ, এটি একটি অনলাইন পোর্টাল৷ সুলভ মূল্যে পণ্য ঘরে পৌঁছে দেয়াই তাদের কাজ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
সন্তোষজনক সেবার আশ্বাস দেয় এখানেইডটকম
ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে আপনার মোবাইলেই ইংরেজিতে www.ekhanei.com লিখে প্রবেশ করতে পারেন পশু কেনার এই সাইবার হাটে৷ এখানেইডটকম-এর ওয়েবসাইটে আপনি যেমন দেখবেন তেমন পশুই পাবেন৷ তার মানে, ছবিতে পশুর যেমন রং, গড়ন, ওজন ইত্যাদির উল্লেখ আছে, ঠিক সেরকমই সরবরাহ করা হবে৷ তাছাড়া ক্রেতা সাধারণকে সন্তোষজনক সেবা দেয়ার জন্য বাছাই করা বিক্রেতাদেরই এখানে পশু বিক্রি করতে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/J Mitchell
ইন্টারনেটে গবাদি পশুর সবচেয়ে বড় বাজার বিক্রয়ডটকম
অনলাইন কেনাকাটার জগতে বিক্রয়ডটকম খুবই পরিচিত৷ যাঁরা এখনো চেনেন না, তাঁরা এই কুরবানির পশু ক্রয় উপলক্ষ্যেই www.bikroy.com-এ একবার ঢুঁ মারতে পারেন৷ গত বছরও ক্রেতাদের ঘরে বসেই কুরবানির পশু পছন্দ করার সবচেয়ে বড় আয়োজন রেখেছিল বিক্রয়ডটকম৷ এবারও সেই নিশ্চয়তা দিচ্ছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hibbeler
বাঙালির জন্য ঈদের মাংস
বাঙালিরা যেমন পছন্দ করেন তেমন মাংস সরবরাহ করে থাকে বলেই সম্ভবত এই অনলাইন পোর্টালটির নাম www.bengalmeat.com৷ ‘হালাল’ এবং ‘নিরাপদ’ মাংসের আশ্বাসও দেয় বেঙ্গলমিটডটকম৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman.
আরো দুটি বড় বাজার, তবে...
www.clickbd.com এবং www.kaymu.com-এও পেয়ে যেতে পারেন পছন্দের কুরবানির পশু৷ তবে দরকষাকষিসহ অন্য কিছু বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করলে ঠকে যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman.
যেভাবে কিনবেন...
প্রথমেই যেখান থেকে কিনতে চান সেই পোর্টালে যেতে হবে৷ বিক্রয়ডটকম থেকে কিনতে হলে ব্রাউজারে www.bikroy.com লিখে ‘এন্টার ’ দিন৷ তারপর আপনার শহরটি বেছে নিন৷ দেখবেন অনেক পণ্যের কথা লেখা আছে৷ ‘পোষা প্রাণী ও জীবজন্তু’ ক্যাটাগরিতে গিয়ে ছবি দেখে পশু পছন্দ করুন৷ ফোন করেই দাম চূড়ান্ত করতে পারেন৷ দর কষাকষির সময় পশু ঘরে পৌঁছানোর খরচ, হাসিল বা ট্যাক্সসহ অন্যান্য খরচ কে দেবে তা-ও ঠিক করে নিতে ভুলবেন না যেন!
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
6 ছবি1 | 6
পাঞ্জাবের জনৈক গরু বিক্রেতা এদের দু'লাখ টাকা দিতে বাধ্য হয়, যাতে তাঁর গরু বোঝাই লরিটিকে আটকানো না হয়৷ কিন্তু গরু মাফিয়াদের দৌরাত্মে তাঁরও ব্যবসা লাটে উঠেছে৷ সেই ব্যবসায়ী এখন ডেয়ারি কারবার শুরু করেছেন৷ উল্লেখ্য, পাঞ্জাবে উন্নত প্রজাতির দুধেলা গবাদি পশুর প্রজনন কেন্দ্র আছে৷ উচ্চমানের গবাদি পশুর চাহিদা মেটাতে সেখান থেকে দেশে এবং বিদেশে বছরে প্রায় তিন লাখ গবাদি পশু চালান যায়৷ যাঁরা ডেয়ারির ব্যবসা করেন, তাঁরাই এর বড় খরিদ্দার৷ সম্প্রতি আর একজন গরু ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ ও নেপালে ১০ হাজার উচ্চমানের দুধেলা গরু রপ্তানির অর্ডার ছিল৷ বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে সরকারি অফিসে দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও ‘নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট' জোগাড় করা যায়নি৷ কারণটা সহজবোধ্য৷
দেখা গেছে, বেশির ভাগ গবাদি পশু মারা যায় প্লাস্টিক খেয়ে৷ তাই হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবারের শীর্ষ নেতৃত্ব যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন মোদী সরকারকে৷ সেটাই হয়ত হবে গো-রক্ষার জন্য প্রকৃত গো-সেবা৷ হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির সেবাও৷