প্রশান্ত মহাসাগরে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে ডারউইন তোরণ ভেঙে পড়তে দেখেছেন কয়েকজন পর্যটক৷ পাথরের তৈরি এই অনন্য ডিজাইনের প্রাকৃতিক স্থাপনাটির নাম ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ চার্লস ডারউইনের নামে দেয়া হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
ইকুয়েডরের পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে প্রাকৃতিক উপায়ে ক্ষয় হওয়ার কারণেই এই পাথরের গঠনটি ভেঙে পড়েছে৷ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রশান্ত মহাসাগরে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে উত্তরের দ্বীপটির কাছে অবস্থিত এই প্রাকৃতিক স্থাপনার এখন কেবল দুই পাশে দুটি থাম অবশিষ্ট রয়েছে৷ দ্বীপটি দক্ষিণ অ্যামেরিকা মহাদেশ থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷
এই স্থাপনাটির কাছে পর্যটকরা সামুদ্রিক কচ্ছপ, হাঙ্গর, মন্টা রে এবং ডলফিন দেখার জন্য সমুদ্রের নীচে ডাইভ করেন৷ ডাইভিং ওয়েবসাইট স্কুবা ডাইভার লাইফ জানিয়েছে, তাদের একটি নৌকায় থাকা ডাইভাররা সোমবার মধ্য দুপুরের দিকে স্থাপনাটির একটি অংশ ভেঙে পড়তে দেখেন৷ তবে কোনো ডাইভার এ ঘটনায় আহত হননি৷
ব্রিটিশ প্রকৃতি বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন ১৮৩৫ সালে এই দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণ করেন৷ সেখানে তিনি এমন সব প্রজাতির প্রাণীর দেখা পান যা পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না৷ গ্যালাপাগোসের প্রাণিজগত নিয়ে গবেষণার পর ডারউইন তার বিখ্যাত ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব’ প্রকাশ করেন৷
১৯৭৮ সালে এলাকাটিকে প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো৷ ২৩৪টি ছোট-বড় দ্বীপ মিলিয়ে এই দ্বীপপুঞ্জ গঠিত৷ এইসব দ্বীপের কেবল চারটিতে ৩০ হাজারের কাছাকাছি মানুষের বাস রয়েছে৷ দ্বীপপুঞ্জের পাশে তিন মহাসাগরের মিলনস্থলের জীববৈচিত্র্যকে ‘জীবন্ত জাদুঘর ও বিবর্তনের প্রদর্শনী' আখ্যা দেয়া হয়েছে ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে৷
এডিকে/এসিবি (এএফপি, ইএফই)
ডারউইনের ঐতিহাসিক কাজের দেড়শ’ বছর
২৪ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বই ‘দ্য ডিসেন্ট অফ ম্যান অ্যান্ড সিলেকশন ইন রিলেশন টু সেক্স’ প্রকাশনার দেড়শ বছর৷ তাঁর অনবদ্য কাজের কিছু ঝলক দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Nicolas Economou/NurPhoto/picture alliance
বিবর্তনবাদ তত্ত্ব
আধুনিক বিজ্ঞানের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার তার অন্যতম ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্ত্ব৷ এতে দেখানো হয়েছে প্রাণীরা সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃতিক নিয়মে ধীরে ধীরে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে৷ ডারউইন প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর বছরের পর বছর ধরে গবেষণা করে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন, যেখানে প্রাণীর টিকে থাকার সংগ্রামের কথা বিশদ ও পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
জীবনের সেরা ভ্রমণ
২২ বছর বয়সে চার্লস ডারউইন এইচএমএস বিগল নামের এক জাহাজে চড়ে বিশ্বভ্রমণে বের হন৷ পাঁচ বছরব্যাপী এই সমুদ্র ভ্রমণে ডারউইন প্রকৃতি ও বিভিন্ন প্রাণী পর্যবেক্ষণ করে তার নমুনা সংগ্রহ করেন৷ পরবর্তীতে এটিই তার জীবনে অসাধারণ এক গবেষণার মূল পাথেয় হয়ে ওঠে৷ তরুণ ডারউইনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে জীবাশ্ম৷ এ কারণে বিলুপ্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং গাছের জীবাশ্ম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা শুরু করেন তিনি৷
ছবি: Mary Evans/picture-alliance
ভ্রমণের দিনপঞ্জি
গালাপাগোস দ্বীপে ফিঞ্চ পাখির বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন রকমের ঠোঁট চোখে পড়ে তার৷ ভ্রমণের পুরো সময়টাতে বিভিন্ন বিষয়ে নোট রেখেছিলেন তিনি৷ সবশেষে যা ১৭৫০ পৃষ্ঠায় দাঁড়ায়, পরে ‘জার্নাল অফ রিসার্চেস ইনটু দ্য জিওলজি অ্যান্ড ন্যাচারাল হিস্ট্রি অফ দ্য ভেরিয়াস কান্ট্রিজ ভিজিটেড বাই এইচএমএস বিগল’ নামে প্রকাশ পায়৷ ভ্রমণের সময় বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর হাড় ও কঙ্কাল নিয়ে এসেছিলেন লন্ডনে৷
ছবি: Ken Welsh/Design Pics/picture alliance
প্রাকৃতিক নির্বাচন
প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে একটি প্রাণী থেকে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে৷ এই তত্ত্ব বিজ্ঞানের জগতে বৈপ্লবিক তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত৷ ‘অন দ্য অরিজিনস অফ স্পিশিস’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৮৫৯ সালে৷ এই গ্রন্থে তিনি বিবর্তনবাদকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেছেন, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে কোনো প্রাণী ক্রমাগত অভিযোজনের ফলে আপন পরিবেশের জন্যে বিশেষায়িত হতে হতে এক সময় নতুন একটি প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়৷
ছবি: Natural History Museum/dpa/picture-alliance
যোগ্যতমের বিজয়
টিকে থাকার জন্যে খাবার সংগ্রহের লড়াইয়ে প্রাণীদের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হয়৷ অন্যের খাবার হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং সন্তান জন্মদান করতেও তাদের সংগ্রাম করতে হয়৷ এসব কারণে তারা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে রূপান্তর ঘটাতে বাধ্য হয়৷
লন্ডনের গির্জাগুলো ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে নাকচ করে দেয়৷ কিন্তু তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে প্রশংসার সাথে গৃহীত হয় এটি৷ তবে প্রাকৃতিক নির্বাচন বিষয়টি কম গ্রহণযোগ্যতা পায়৷ এ কারণে ‘অন দ্য অরিজিনস অফ স্পিশিস’ বইটি ছয়বার সংশোধন করতে হয় ডারউইনকে৷
ছবি: ANDY RAIN/Epa/dpa/picture-alliance
মানুষের প্রাকৃতিক নির্বাচন
সব প্রজাতিই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ডারউইনই সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেন৷ ১৮৭১ সালে তিনি লেখেন ‘দ্য ডিসেন্ট অফ ম্যান অ্যান্ড সিলেকশন ইন রিলেশন টু সেক্স’৷ এ সময় তার ভাবনাগুলো বেশ সাড়া ফেলে এবং গ্রহণযোগ্যতা পায়৷
ছবি: akg-images/picture alliance
বিজ্ঞানীদের তীর্থক্ষেত্র
বর্তমানে ইকুয়েডরের গালাপাগোস দ্বীপে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র দেখতে অনেক মানুষ ভিড় করেন৷ দ্বীপের ঐশ্বর্যময় জীববৈচিত্রকে রক্ষা করতে এখানে এখনো চার্লস ডারউইন গবেষণা কেন্দ্র বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে৷