বিশ্বের সর্বোচ্চ দূষিত ১৫টি শহরের অন্যতম ভারতের রাজধানী দিল্লি৷ দীপাবলীর পর থেকে অবস্থার অবনতির ফলে বর্তমানে জারি হয়েছে জরুরি পরিস্থিতি৷
বিজ্ঞাপন
প্রতি শীতেই ভারতের রাজধানীর চিত্র থাকে একই রকম৷ ঘন ‘স্মগ’ বা ধোঁয়াটে মেঘ বুঝিয়ে দেয় আসলেই কতটা দূষিত দিল্লীর আবহাওয়া৷ পাশাপাশি, দীপাবলিরপর বেড়েছে বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস ও পার্টিকুলেট ম্যাটার, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) নির্ধারিত বিপজ্জনক মাপের ২৫ গুণ বেশি৷
পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা হয়েছে ‘পাবলিক হেলথ ইমারজেন্সি’ বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অবস্থা৷
কিন্তু কেন প্রতি বছরই একই চিত্র
বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় পার্টিকুলেট ম্যাটার হচ্ছে বাতাসে ভাসমান এমন কোনো বস্তু যার আয়তন আড়াই মাইক্রনের কম৷ এই বস্তু সহজেই বাতাসে মিশে রক্তপ্রবাহে ঢুকে শরীরে বিষ ছড়ায়৷ কতখানি পার্টিকুলেট ম্যাটার শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর নয়, তার মান নির্ধারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)৷ সোমবার দিল্লিতে এই মাত্রা ছিল ৬১৩, যা স্বাভাবিকের প্রায় ২৫ গুণ৷ এই মাত্রাই রবিবারে বেড়ে হয় এক হাজার৷
বায়ুদূষণে মৃত্যুতে বাংলাদেশ পঞ্চম
বাংলাদেশের শতভাগ মানুষই মাত্রাতিরিক্ত দূষিত বায়ুতে বসবাস করছে৷ এজন্য ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ‘দি স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার রিপোর্ট ২০১৯’ এ এমন তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: bdnews24.com
বায়ুদূষণে ঝুঁকি
বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যু ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরির অন্যতম কারণ বায়ুদূষণ৷ দূষিত বায়ু গ্রহণের কারণে হৃদযন্ত্রের অসুখ, শ্বাসকষ্টজনিত জটিল সমস্যা, ফুসফুস সংক্রমণ ও ক্যানসারের মতো রোগে ভুগছে মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/S. Ziese
মৃত্যুর কারণ
বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হয় বায়ুদূষণ তার মধ্যে পঞ্চম৷ ২০১৭ সালে ৪৯ লাখ মানুষ দূষিত বায়ুর কারণে মারা গেছে৷ মোট ১৪.৭ কোটি বছর সুস্বাস্থ্যে কাটানোর সুযোগ হারিয়েছে৷
ছবি: Greenpeace/V. Zalevskiy
দূষণের শিকার বেশিরভাগ মানুষ
একটি দেশের বায়ু স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপযোগী তা পরিমাপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডাব্লিউএইচও’র মানদণ্ড রয়েছে৷ সে অনুযায়ী ৯০ ভাগ মানুষই এমন অঞ্চলগুলোতে বাস করে যেখানকার বায়ু সুস্বাস্থ্যের উপযোগী নয়৷ ডাব্লিউএইচও-র সবচেয়ে নীচের লক্ষ্যমাত্রাটিও পূরণ করতে পারছে না এমন এলাকায় বাস করে অর্ধেকের বেশি মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
মাত্রাতিরিক্ত দূষণ দক্ষিণ এশিয়ায়
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ু দক্ষিণ এশিয়ায়৷ ডাব্লিউএইচও’র মাত্রা অনুযায়ী ২০১৭ সালে সবচেয়ে দূষিত বায়ু ছিল নেপালে৷ এরপর রয়েছে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান৷ এই অঞ্চলে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর বায়ু আছে ভুটানে৷ ডাব্লিউএইচওর নীচের মাত্রাটির কাছাকাছি তাদের অবস্থান৷ অঞ্চল ভিত্তিতে মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণে দক্ষিণ এশিয়ার পরে আছে সাব সাহারা আফ্রিকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Swarup
বাংলাদেশের শতভাগ মানুষ
ডাব্লিউএইচওর মানদণ্ড অনুযায়ী বিশ্বের যেসব দেশের শতভাগ মানুষ মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের মধ্যে বাস করছে তার একটি বাংলাদেশ৷ একই পরিস্থিতি পাকিস্তান, ভারত, চীন, নাইজেরিয়া ও মেক্সিকোতেও৷
ছবি: Pavel Rahman/AP/dapd
বায়ুদূষণে বাংলাদেশে মৃত্যু
দূষিত বায়ুর কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হওয়া শীর্ষ ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ৷ ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ বায়ুদূষণে মারা গেছে৷ প্রথম চারটি দেশের মধ্যে আছে চীন, ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া৷
ছবি: bdnews24.com
দূষণ রোধে গড় আয়ু বাড়বে
বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্যহানি আর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে৷ প্রতিবেদন বলছে এখন বিশ্বে যেসব শিশু জন্ম নিচ্ছে, গড়ে তারা কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ মাস কম আয়ু পাচ্ছে৷ দক্ষিণ এশিয়ায় যা ৩০ মাস৷ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে তাই গড় আয়ুও বাড়বে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Ning
গড় আয়ু বেশি বাড়বে বাংলাদেশ
স্বাস্থ্যকর বায়ু নিশ্চিত করার সবচেয়ে বেশি সুফল পাবে বাংলাদেশ৷ জন্ম নেয়া শিশুদের গড় আয়ু তখন ১.৩ বছর বেড়ে যাবে৷ এমন সুবিধা পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরে থাকবে ভারত, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তান৷ তাদের গড় আয়ু ১ বছর বেড়ে যাবে৷
ছবি: Jibon Ahmed
8 ছবি1 | 8
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস জানাচ্ছে, ২০১৭ সালে বাতাসে অস্বাভাবিক পরিমাণে পার্টিকুলেট ম্যাটার বাড়ায় মৃত্যু হয়েছে ১২ লাখ ভারতীয়ের৷ হু জানাচ্ছে, এই সমস্যার ফলে বাড়তে পারে ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ অন্যান্য হৃদরোগও৷
প্রতি বছর অক্টোবর মাস নাগাদ উত্তর ভারতে পালিত হয় হিন্দু ধর্মীয় উৎসব দীপাবলি, যার উদযাপনে লাখ লাখ মানুষ মাতেন নানা ধরনের বাজি পোড়ানোয়৷ এই একই সময়ে, দিল্লি ও উত্তর ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে লাগে গম ও ধানচাষের বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ পোড়ানোর ধুম৷ হেমন্তকালীন আর্দ্রতার কারণে আগুন ও দীপাবলির বাজির গ্যাস মেঘের মধ্যে আটকে থাকে৷ সৃষ্টি হয় বিষাক্ত মেঘের পুরু আস্তরণ বা ‘স্মগ’৷
সরকার কী করছে?
ফি বছর ভোটের আগে এই সমস্যার কথা উঠলেও রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার কেউই দীর্ঘমেয়াদী সমাধান দিতে পারেননি৷ মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির বর্তমান অবস্থাকে ‘গ্যাস চেম্বার’ নাম দিয়েছেন৷ সাথে, বিষাক্ত বাতাস থেকে বাঁচতে মুখোশ বিতরণও করেছেন তিনি৷ এর আগে, দিল্লি শহরে যানবাহনঘটিত দূষণরোধে ‘ইভেন অড' পদ্ধতি চালু করেন তিনি, যার ফলে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে রাস্তায় অতিরিক্ত গাড়ি চলাচল৷
কিন্তু সমস্যা না মেটায় সোমবার থেকে রাজধানীর সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে৷ বিঘ্নিত রেল ও বিমান চলাচলও৷
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, প্রতি শীতেই আগেরবারের চেয়ে খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি৷ রাজনৈতিক দলগুলি ব্যস্ত শুধু দায় এড়ানোয়৷ ফলে, প্রাণ বাঁচাতে ভরসা ঘরের ভেতরের ‘এয়ার পিউরিফায়ার’ ও মুখোশটুকুই৷