1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘গ্যাস সংকটের সহসা সমাধান নেই’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ অক্টোবর ২০২২

বাংলাদেশ এখন গ্যাস সংকটে ধুকছে৷ এর প্রভাব পড়ছে শিল্প উৎপাদন, বিদ্যুৎ এবং গৃহস্থালি খাতে৷

Symbolbild I Energiearmut I Hohe Energiepreise
ছবি: Robin Utrecht/picture alliance

গ্যাস  সংকটের কারণে একদিকে যেমন ভুগছেন সাধারণ মানুষ অপরদিকে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পকারখানার উৎপাদন৷ দেশের রপ্তানি আয়ের মেরুদণ্ড পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা জানান, এই খাতে গ্যাস সংকটের কারণে শতকরা ২০-৩০ ভাগ উৎপাদন কমেছে৷ তাদের অভিযোগ, সরকারের কাছ থেকে সংকট সমাধানের কোনো আভাস মিলছে না৷    

আর এই খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংকট সমাধানে সরকারের যে উদ্যোগ তাতে আশু সংকট কাটার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ 

দেশে এখন উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত আছে ১০ দশমিক ৬৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট৷ গ্যাসের প্রতিদিনের মোট চাহিদা তিন হাচার আটশ মিলিয়ন ঘনফুট৷ সরবরাহ আছে দুই হাজার আটশ মিলিয়ন ঘনফুট৷ ফলে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না৷

এরমধ্যে বিদ্যুৎ খাতের চাহিদা দুই হাজার দুইশ ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট৷ সরবরাহ আছে এক হাজার ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট৷ তবে গত দুই-একদিনে সরবরাহের পরিমাণ নয়শ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে গেছে৷

সার কারখানায় গ্যাসের দৈনিক চাহিদা তিনশ ২০ মিলিয়ন ঘনফুট৷ সরবরাহ করা হয় একশ ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট৷ এলএনজির চাহিদা আটশ ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট৷ সরবরাহ আছে চারশ ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট৷ গৃহস্থালির রান্নার কাজে ছয়শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও এখন সরবরাহ করা যাচ্ছে সর্বোচ্চ চারশ মিলিয়ন ঘনফুট৷

সংকট কাটার কোনো লক্ষণ দেখছি না: ড. শামসুল আলম

This browser does not support the audio element.

দেশে দুইভাবে গ্যাসের চাহিদা মেটানো হয়৷ দেশীয় উৎপাদন দিয়ে এবং আমদানি করে৷ দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে দৈনিক প্রায় দুই হাজার তিনশ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়৷ আর আমদানি করা হয় সাতশ থেকে সাতশ ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট৷ এলএনজি আমদানি করা হয় চারশ ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট৷

দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় পাঁচশ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি নিয়মিতভাবে কেনা হচ্ছে৷ স্পট মার্কেট থেকে আনা হতো দুইশ মিলিয়ন ঘনফুট৷ তবে গত জুলাই মাস থেকে উচ্চমূল্যের কারণে কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে৷ এই ঘাটতি মেটানোর জন্য দেশীয় কূপগুলো থেকে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা৷

সুতরাং গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে হলে হয় উৎপাদন বাড়াতে হবে অথবা আমদানি বাড়াতে হবে৷ আমদানি বাড়ানো কঠিন কারণ বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ডলার সংকটে আছে৷ অন্যদিকে বাংলাদেশে গ্যাসের প্রকৃত মজুত কত, নতুন গ্যাস কূপ খনন কবে সম্ভব হবে তা নিশ্চিত নয়৷ এই কাজে রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান বাপেক্স এবং রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম নিয়োজিত আছে৷

গৃহস্থালিতে সংকট

চলমান এই গ্যাস সংকটের কারণে গৃহস্থালির রান্নার কাজে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ঢাকাসহ সারাদেশেই এই সংকট চলছে৷

ঢাকার নারিন্দার বাসিন্দা এম কে জিলানী বলেন, ‘‘গত এক বছর ধরেই আমরা গ্যাস সংকটে আছি৷ এখন সেটা আরো তীব্র হয়েছে৷ এখন সারাদিনে সন্ধ্যার পর কয়েক ঘন্টার জন্য গ্যাস থাকে৷ অন্য সময় যে গ্যাস থাকে তা দিয়ে চাও বানানো যায় না৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এখন এক বেলা রান্না করে তিন বেলা খাই৷ আগে সকালে নাস্তায় রুটি খেতাম এখন পান্তা ভাত খেতে বাধ্য হচ্ছি৷''

রামপুরার বাসিন্দা কান্তা আফরোজ বলেন, ‘‘প্রতিদিন সকাল ৯টার মধ্যে গ্যাস চলে যায়৷ আসে দুপুরের পরে তিনটার দিকে৷ তাই সকাল ৯টার মধ্যে নাস্তা এবং দুপুরের খাবার তৈরি করতে না পারলে বিপাকে পড়ে যাই৷’’

সংকট সমাধানের আশ্বাস পাচ্ছি না: মোহাম্মদ হাতেম

This browser does not support the audio element.

ঢাকার প্রায় অর্ধেক এলাকায় এই গ্যাস সংকট চলছে৷ ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা৷

গ্রাহকদের অভিযোগ, ‘‘গ্যাস না থাকলেও বিল পুরোটাই আদায় করা হচ্ছে৷’’

দেশের মোট চাহদার শতকরা ১০ ভাগ গৃহস্থালির৷ আর এই খাতে গ্যাস সংকট চলছে দুই বছর ধরে৷ প্রথমেই এখানে সরবরাহ কমানো হয়৷ দেশে এখন গৃহস্থালির কাজে গ্যাস লাইন দেয়া বন্ধ আছে৷ ফলে এলপি গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে৷

শিল্প উৎপাদন কমছে

গ্যাস সংকটে দেশের বড় শিল্প কারখানাগুলোতে কমেছে উৎপাদন৷ বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে তৈরি পোশাক শিল্প৷ এই খাতে গড়ে উৎপাদন কমেছে শতকরা ২০-৩০ ভাগ৷ 

আবার যারা ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবহার করছেন তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে৷ বাজার থেকে চড়া দামে জ্বালানি তেল কিনতে হচ্ছে তাদের৷ উৎপাদন কমে যাওয়া ও ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি আয়ে ভাটা পড়বে বলে আশঙ্কা তাদের৷

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ‘‘আজকে (রবিবার) নিট ওয়্যার খাতে গত মাসে রপ্তানির যে হিসাব বের হয়েছে তাতে রপ্তানি ৬.১ ভাগ কমে গেছে৷ আগের মাসে রপ্তানি বেড়েছিলো ২৫ শতাংশ৷  সেই হিসাব করলে আমাদের রপ্তানি কমেছে শতকরা ৩১ ভাগ৷''

তিনি বলেন, ‘‘গ্যাস সংকটের কারণে আমার কারখানায় উৎপাদন ৫০ ভাগের নিচে নেমে এসেছে৷ কারণ গ্যাস না থাকার কারণে ডায়িং ফ্যাক্টরিগুলো সময় মত এবং চাহিদা মত ফেব্রিক সরবরাহ করতে পারছে না৷ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই এখন তার ক্যাপাসিটির ৫০ ভাগের বেশি উৎপাদন করতে পারছে না৷''

তার কথা, ‘‘এতে রপ্তানি যেমন কমছে তেমনি শ্রমিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷ তারা ওভারটাইম করতে পারছে না৷  ফলে তারা বাড়তি আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷’’

 তিনি বলেন, ‘‘আমরা বার বার সরকারের সঙ্গে এই গ্যাস সমস্যা নিয়ে কথা বলছি ৷ কিন্তু কোনো সমাধানের আশ্বাস পাচ্ছি না৷’’

বিজিএমইএ'র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘‘গ্যাসের সাথে ডলার সংকট এবং ইউরোপের বাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ায় আমরা সংকটে আছি৷’’

তিনি জানান, ‘‘যেসব কারখানা পুরোপুরি গ্যাসের ওপর নির্ভশীল তাদের উৎপাদন কমে গেছে৷ আর যাদের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে৷ বাজার থেকে উচ্চ মূল্যে জ্বালানি তেল কিনে তাদের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হচ্ছে৷ আর সব মিলিয়ে উৎপাদন কমে যাচ্ছে৷’’

চাহিদা অনুয়ায়ী সরবরাহ করতে পারছি না: মোহাম্মদ কামরুজ্জামান খান

This browser does not support the audio element.

‘সংকটের আপাতত সমাধান দেখছি না’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গ্যাস নিয়ে বাস্তবে কোনো বিজ্ঞান ভিত্তিক জরিপই হয়নি৷ আসলে আমাদের কতটুকু গ্যাস আছে, কী পরিমাণ সম্ভাবনা আছে তা নিয়ে আমাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছে৷ ফলে আমরা জানি না যে, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে৷ সরকারের যে উদ্যোগ তাতে আশু সংকট কাটার কোনো লক্ষণ দেখছি না৷’’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘এই সংকটের নামে এখন নানা গোষ্ঠী লাভবান হচ্ছে৷ বিদ্যুৎ সংকটের কথা বলে একটি গোষ্ঠীকে রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করতে দেয়া হয়েছে৷ তারা বসে বসে পয়সা নিচ্ছে৷ এক টাকার বিদ্যুৎ পাঁচ টাকায় কিনছি৷ এক টাকা তিন পয়সার গ্যাস এখন আমরা আমদানি করছি ৮৩ টাকায়৷ একটা কূপ খনন করতে দেশের প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের লাগে ৬০-৭০ কোটি টাকা৷ অথচ রাশিয়ন গ্যাজপ্রমকে দিয়ে ৬৬টি কূপ খনন করানো হলো প্রতিটি ২৪০ কোটি টাকা দিয়ে৷ দুর্নীতি করবেন আবার মানুষের দু:খ ঘোঁচাবেন এটা তো হয়না৷’’

চেষ্টা করছে পেট্রোবাংলা

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘‘দেশে গ্যাস সংকটের কারণ সরবরাহ কম৷ চাহিদা অনুয়ায়ী আমরা সরবরাহ করতে পারছি না৷ দেশে উৎপাদনে ঘাটতি আছে আবার স্পট প্রাইস বেড়ে যাওয়ায় আমরা স্পট আমাদানিও এখন বন্ধ রেখেছি৷ আগে যে দীর্ঘ মেয়াদে চুক্তি ছিলো সেই গ্যাসই আনা হচ্ছে৷’’

তার কথা, ‘‘সারাবিশ্বেই জ্বালানির সংকট চলছে৷ আমরাও তার বাইরে নই৷ তবে আমরা দেশীয় উৎপাদন এবং আমদানি দুটিই বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি৷ নতুন কুপ খনন ও গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানের কাজ চলছে৷’’

তবে কবে নাগাদ এই সংকটের সমাধান হতে পারে তা জানাতে পারেননি তিনি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ