1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্রামাঞ্চলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে মেক্সিকোয় অসাধারণ উদ্যোগ

১ মে ২০১৯

শহুরে মানুষের পক্ষে গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রা, সেখানকার মানুষের সুখ-দুঃখ বোঝা সহজ নয়৷ মেক্সিকোয় এক পর্যটন সংস্থা এই দুই জগতের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে৷ পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে এক সেতুবন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে৷

Mexiko illegale Opiumplantage in der Nähe von Pueblo Viejo in der Sierra Madre del Sur
ছবি: Reuteers/C. Jasso

প্রত্যন্ত অঞ্চলের কঠিন বাস্তব

মেক্সিকোর এল আলমাসেন পর্বত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াই হাজার মিটারেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত৷ সেখান থেকে উপত্যকায় পানির ঢল নামে৷ ফলে গত কয়েক বছরে ভূমিক্ষয় বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সেইসঙ্গে অনেক মানুষ রুজিরুটির খোঁজে শহরে চলে যাবার ফলে গোটা অঞ্চলে কৃষিজমিতে যথেষ্ট চাষবাস হচ্ছে না৷ মুহেরেস মিলেনারিয়াস সংগঠনের বিবিয়ানা বাউতিস্তা গাইতান বলেন, ‘‘ভূমিক্ষয়ের ফলে মাটিতে ভুট্টা, গম বা বিনস চাষ অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে৷ অথচ এখানকার বেশিরভাগ মানুষ সে সব খেয়ে বাঁচে৷ একবার চাষের মাটি হারালে তা আবার ফিরে পাওয়া কঠিন৷''

কাজের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের অভাবে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে৷ ফলে আরও বেশি সংখ্যক কমবয়সিরা অঞ্চল ছেড়ে চলে যাচ্ছে৷ বিবিয়ানা এই দুষ্টচক্র ভাঙতে চান৷ তিনি ‘মুহেরেস মিলেনারিয়াস' নামের এক গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ তারা ভূমিক্ষয়ের মোকাবিলা করতে ক্যাকটাসের মতো দেখতে এগেভ গাছ বেছে নিয়েছেন৷ সেখানে এই গাছ সহজেই বড় হয়৷

সারিবদ্ধভাবে এই গাছ লাগালে মাটির নীচে শিকড়ের এক জাল সৃষ্টি হয়৷ ফলে পানি ও পুষ্টি মাটিতেই থেকে যায়৷ এভাবে উর্বর কৃষিজমির ব্যবস্থা করলে তরুণরাও আবার তাদের ভিটেমাটিতে ফিরে আসবে – এমনটাই আশা করা হচ্ছে৷ মুহেরেস মিলেনারিয়াস সংগঠনের আলেহান্দ্রা রডরিগেস বাউতিস্তা বলেন, ‘‘আমরা তরুণ প্রজন্ম, আমাদের সন্তানদের উদ্বুদ্ধ করতে চাই, যাতে তারা আমাদের এলাকা ও আমাদের জমির দেখাশোনা করে৷ বিশেষ করে ভিটেমাটি ছেড়ে তারা যাতে চলে না যায়৷ এর বেশি কিছুই চাই না৷'' 

টেকসই পর্যটনে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

05:22

This browser does not support the video element.

পর্যটনের মাধ্যমে উন্নয়নের উদ্যোগ

রাজধানী মেক্সিকো সিটি থেকে মুহেরেস মিলেনারিয়াস গোষ্ঠীর জন্য সহায়তা আসছে৷ এমিলিয়ানো ইতুরিয়াগা এই এলাকায়ই বড় হয়েছেন৷ তাঁর জীবন অবশ্য এল আলমাসেন-এর বাকি মানুষের মতো হয়নি৷ শিশু হিসেবে তিনি বাবা-মার সঙ্গে গ্রামেগঞ্জে যেতেন৷ তিনি গ্রামাঞ্চলের সমস্যাগুলি সম্পর্কে জানেন এবং চান, যে বাকিরাও তা দেখুক৷

২০১৭ সালে তিনি   ‘রুতোপিয়া' নামেরএক স্টার্টআপ কোম্পানি খোলেন৷ মেক্সিকোর গ্রামাঞ্চলে টেকসই ভ্রমণের ব্যবস্থা করে সেই সংস্থা৷ এমন পর্যটনের পোশাকি নাম ‘ইকোটুরিজম'৷ তবে বাস্তবে তা মোটেই তত টেকসই হয় না৷ এমিলিয়ানো বলেন, ‘‘মেক্সিকোয়  ইকোটুরিজমেপরিবর্তন আনতে হবে৷ এখনো এই ব্যবসা বড়ই একপেশে৷ অর্থাৎ মানুষ গ্রামাঞ্চল ও বিভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগায়৷ কিন্তু তার বদলে কিছু ফিরিয়ে দেয় না৷''

রুতোপিয়া এই পরিস্থিতির উন্নতি করতে চায়৷ তাদের ভ্রমণসূচি ন্যয়ভিত্তিক হয়৷ গ্রামের মানুষকে সমানাধিকারের ভিত্তিতে সহযোগী হিসেবে গণ্য করা হয়৷ আয়ের সিংহভাগ গ্রামাঞ্চলেই থেকে যায়৷ সেই অর্থ সরাসরি বিনিয়োগ করা হয়৷ যেমনটা মুহেরেস মিলেনারিয়াস গোষ্ঠীর পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পে করা হচ্ছে৷

পর্যটকদের জন্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা

এমন এক ভাবনা পর্যটকদেরও মন জয় করেছে৷ তাঁরা আজ এল আলমাসেন-এ যাচ্ছেন৷ গোষ্ঠীবদ্ধভাবে এমন ভ্রমণে অংশ নেওয়া যায়৷ এবার রুতোপিয়ার কিছু কর্মীও সঙ্গে রয়েছেন৷ তাঁরা নিজেদের স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে দেখেন৷

প্রায় ৫ ঘণ্টা যাত্রার পর পর্যটকদের দল এল আলমাসেন-এ পৌঁছালো৷ এমিলিয়ানো ইতুরিয়াগা বলেন, ‘‘প্রথমদিকে দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ প্রায়ই ততটা সহজে ঘটে না৷ বিশাল সাংস্কৃতিক পার্থক্য রয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে ভাষার সমস্যাও রয়েছে৷ কিন্তু পর্যটকরা যখন বোঝেন, যে তাঁদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তখন দ্রুত সেই প্রাচীর দূর হয়৷''

সন্ধ্যার মধ্যে পর্যটকের দল স্থানীয় মানুষের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়লো৷ তাঁদের মধ্যে কথোপকথন হচ্ছে, একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করছেন৷ সকালেও তাদের মধ্যে যে ব্যবধান ছিলো, এখন তা অনেকটাই কেটে গেছে বলে মনে হচ্ছে৷

পরের দিন সকালে মিক্সতেদো ভাষা শিক্ষার পাঠক্রমে আলেহান্দ্রা বলেন, পর্যটকরা এল আলমাসেন-এর জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনছেন৷ সেই সমৃদ্ধি শুধু আর্থিক মাপকাঠি দিয়ে বিচার করা যায় না৷ এই গ্রামের কোনো মানুষের পর্যটনের সামর্থ্য নেই৷ তাই গোটা দেশ থেকে তরুণ-তরুণীরা এল আলমাসেন এলে ভালই হয়৷ পর্যটকদের দলে ছিলেন লুইস আলব্যার্তো হুয়ারেস প্রাদো৷ তিনি বলেন, ‘‘এই ভ্রমণ আমাকে বেশ নাড়া দিয়েছে, মনে অনেক নতুন প্রশ্ন জেগেছে৷ এখানকার মানুষের সঙ্গে আলোচনার সময়ে তাঁরা আমাকে এমন এক জায়গা দেখিয়েছেন, শহুরে মানুষ যা চেনেই না৷''

আরেক পর্যটক গাব্রিয়েলা ম্যুনৎসিং তোবার-এরও একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ তাঁর মতে, ‘‘আমার দেশ ও সংস্কৃতি এভাবে চেনার সুযোগ সত্যি অসাধারণ ছিল৷ সেই অভিজ্ঞতা আমার জীবন বদলে দিয়েছে৷''

দু'দিন পর বিদায়ের পালা৷ তবে গ্রামের মানুষ তাঁদের কয়েক মাস পর আবার ফিরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ কারণ তখন এল আলমাসেন-এ বড় আকারের পুলকে উৎসব পালিত হবে৷

মাল্টে রোভেয়ার-কালমান/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ