1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘গ্রামের জীবন – গ্রামের মাঝে জীবন’

২৫ নভেম্বর ২০১২

রুজিরুটির তাগিদে গ্রাম থেকে শহরে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশেই দেখা যায় না৷ জার্মানি তথা ইউরোপে এই প্রবণতা রুখতে অনেক অঞ্চলে চলছে অভিনব এক প্রকল্প৷

Ortskern des Dorfes Steimelhagen (Gemeinde Morsbach). Klaus Krämer erinnert sich an die Olympischen Spiele 1972 in München. Foto: DW/Klaus Krämer 24.08.2012
ছবি: DW

নাম স্ভেন লাখমান৷ পেশায় আঞ্চলিক ম্যানেজার৷ তাঁর কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই৷ জার্মানির রাইনল্যান্ড প্যালেটিনেট রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে ঘুরে বেড়ান৷ কখনো দরজায় বেল বাজিয়ে গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন৷ কখনো বা গ্রামের উন্নয়নের বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের সামনে ভাষণ দেন৷ নানা বিরোধের নিষ্পত্তি করারও চেষ্টা করেন৷ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরাও তাঁর কাজের মধ্যে পড়ে৷

স্ভেন লাখমান নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লক্ষ্য করছেন, কীভাবে গ্রামের জনসংখ্যার মধ্যে বয়স্কদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, তরুণ-তরুণীরা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যাচ্ছে৷ এই প্রবণতা থামানো যাচ্ছে না, বললেন তিনি৷ তবে লাখমান সমস্যাটির গভীরে যাবার চেষ্টা করেছেন৷ তিনি মনে করেন, ‘‘অনেক এলাকায় আমরা সমীক্ষা চালিয়েছি৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, যে বয়স্ক মানুষেরা নিজেদের পরিচিত পরিবেশে বসবাস করাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন৷ তবে তার মানে এই নয় যে নিজের বসতবাড়ি বা নিজের গ্রামকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে৷ পাশের গ্রাম হলেও তাঁদের আপত্তি নেই৷ কিন্তু এর থেকে বেশি দূরে যেতে চান না অনেকেই৷''

বয়স্কদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে স্ভেন লাখমান বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে শুধু জ্বালানি সাশ্রয়ের বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে ঘরের মধ্যে চলাফেরার পথে বাধা দূর করার পক্ষেও সওয়াল করেন৷ তাঁর মতে, অশীতিপর মানুষের জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি৷ কিন্তু গ্রামাঞ্চলের পরিষদগুলির আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় তাদের পক্ষে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করা কঠিন৷ সরকারি অনুদান পাওয়ার আশাও কম৷ তাই শিল্প বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে আকর্ষণ করতে গ্রামাঞ্চলে বিশেষ এলাকা ‘কমার্শিয়াল এরিয়া' হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে৷ সেখানে বড় বড় দোকান, গুদাম বা দপ্তর গড়ে উঠছে৷ এর ফলে কর বাবদ আয় বাড়ছে গ্রামের প্রশাসনিক পরিষদের৷ কিন্তু গ্রামগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতার ফলে এত বেশি জায়গা ‘কমার্শিয়াল এরিয়া' হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, যা চাহিদার তুলনায় বেশি৷ শিল্প সংস্থাগুলিকে আকর্ষণ করতে যে সব ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন স্ভেন লাখমান৷

গ্রামগুলোতে পরিবেশ সহায়ক জ্বালানির উৎস ব্যবহৃত হচ্ছেছবি: Reiner Heß

ঠিক এই ধরণের বিপদ এড়াতেই গ্রামাঞ্চলের পরিষদগুলি স্ভেন লাখমান-এর সহায়তা নিতে পারে৷ ভেস্টারভাল্ড এলাকায় তিনি ২১টি গ্রামের একটি অঞ্চলের প্রকল্পকে এ ক্ষেত্রে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরছেন৷ অন্য অনেক অঞ্চলের মতো এখানেও অনেকে গ্রামের কেন্দ্রস্থল ছেড়ে বাইরের দিকে ‘কমার্শিয়াল এরিয়া'-য় গিয়ে সস্তায় বাড়িঘর নির্মাণ করেছিল৷ এর ফলে মূল গ্রামগুলি অবহেলিত হতে থাকে৷ ২০০৪ সালে সেখানে নতুন এক উদ্যোগ শুরু হয়, যার পোশাকি নাম ছিল ‘গ্রামের জীবন – গ্রামের মাঝে জীবন'৷ ইতিমধ্যে গোটা জার্মানিতে এই প্রকল্পকে আদর্শ হিসেবে গণ্য করা হয়৷ এর আওতায় গ্রামের বাইরের দিকের জমির ব্যবহারের বদলে গ্রামের কেন্দ্রস্থলের উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল৷ এই উদ্যোগকে জনপ্রিয় করতে বিশাল আকারের প্রচার অভিযানও চালানো হয়েছিল৷

গ্রামকে বসবাসের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে স্থপতিদের নিয়ে এক প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়৷ কম খরচে পুরানো অথচ আকর্ষণীয় বসতবাড়ি সংস্কারের প্রস্তাব দেন স্থপতিরা৷ সেরা প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়ন করতে বিনিয়োগকারীদের জন্যও বিশেষ আর্থিক ভরতুকির ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ বিশেষ করে তরুণ দম্পতিরা এই প্রকল্প সম্পর্কে বিশেষ উৎসাহ দেখান৷ যাঁরা সেই সব ঘরবাড়ি বেছে নেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষই এসেছিলেন শহর ছেড়ে গ্রামে থাকতে৷ মোট ১২৮টি বাড়ি নতুন করে বসবাসের উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে, প্রায় ১ কোটি ৯৫ লক্ষ ইউরো অঙ্কের বেসরকারি বিনিয়োগ এসেছে৷

গ্রামের কেন্দ্রস্থলের আকর্ষণ বেড়েই চলেছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানালেন মেয়র ক্লাউস ল্যুটকেফেডার৷ তিনি বললেন, ‘‘আসলে গ্রামের কেন্দ্রস্থলে বসবাস করার অনেক সুবিধা রয়েছে৷ সুবিধাজনক অবস্থান তো বটেই, এখানে দোকান-বাজার, ডাক্তারখানা সবই নাগালের মধ্যে৷ তাছাড়া সব বয়সের মানুষই এখানে মিলেমিশে থাকেন৷ ফলে সবারই আখেরে লাভ হয়৷ এ কারণেই জায়গাটা এত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷''

শুধু ভেস্টারভাল্ড নয়, এমন প্রকল্প ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক অঞ্চলে৷ এর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সাহায্যও পাওয়া যাচ্ছে৷ জার্মানিতে ২৪৪টি, ইইউ দেশগুলিতে প্রায় ২,০০০ অঞ্চল এর ফলে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে৷

প্রতিবেদন: কারিন ইয়েগার/এসবি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ