1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্রাম্য সালিশ, ফেরদৌসীর লাশ ও কিছু প্রশ্ন

১৭ আগস্ট ২০১১

সমাজে নারীর অবস্থান আসলে কোথায়? বিশেষ করে পুরুষশাসিত সমাজে? এনিয়ে হতেই পারে বিতর্ক৷ সাম্প্রতিক এক গ্রাম্য সালিশের ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়৷ কারণ, সন্তান সহ আত্মহত্যা করেছেন ফেরদৌসী নামের এক মহিলা৷

Women in the Darfur refugee camp of Abu Shouk await a distribution of blankets, mats and water jugs from the Spanish red Cross on Sunday, March 25 2007. Aid workers say refugees usually receive these type of items only once, when they arrive in a camp. But after four years of conflict, Darfur refugees need a second hand out, and camps like Abu Shouk are overflowing. (AP Photo/ Alfred de Montesquiou)
সমাজে নারীর অবস্থান আসলে কোথায়? প্রশ্নটা আসলে থেকেই যায়...ছবি: AP

হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের ঘটনা৷ সেই এলাকার মাধবপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা ফেরদৌসী বেগম গ্রাম্য সালিশের শিকার হয়ে চলন্ত ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন৷ একা তিনিই নন৷ সঙ্গে তাঁর চার সন্তান ছিল৷ তাঁর স্বামী জিলন মিয়া চাকরিসূত্রে থাকেন দুবাইয়ে৷ ট্রেনর তলায় ঝাঁপ দেওয়ার পর ফেরদৌসী স্বয়ং এবং তাঁর দুই সন্তান আট বছরের বন্যা আর বারো বছরের জীবন সেখানেই মারা পড়ে৷ অন্য দুটি সন্তান, দশ বছরের শাওন আর চার বছরের ঝর্ণা গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে৷

এবার জানা যাক, কীভাবে হল এই পরিস্থিতি৷ আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা এএফপি তাদের খবরে এই ঘটনাটিকে ‘বাংলাদেশ - অপরাধ এবং মানবাধিকার'৷ এই শীর্ষ শিরোনামে রেখেছে৷ বাংলাদেশের সংবাদসংস্থা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম সহ দেশের সবকটি সংবাদপত্র মঙ্গলবারের কাগজে এই ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে নারীর অধিকার এবং এই ধরণের ঘৃণ্য সালিশী সভার যাথার্থ্য নিয়ে৷

নারীকে স্বয়ং এগিয়ে আসতে হবে, রুখে উঠতে হবে এ ধরণের অনাচারের বিরুদ্ধেছবি: AP

প্রশ্ন উঠলেই তো হল না৷ প্রশ্ন হল, এর সমাধানসূত্র কোথায় বা কীভাবে? সে পথের সন্ধানে বেরিয়ে প্রথমে হাইকোর্টে ওঠা একটি মামলার রায়ের দিকে তাকানো যাক৷ রংপুরের বদরগঞ্জে সালিশের মাধ্যমে এক গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় হাইকোর্ট তাঁর রায়ে বলেছেন, এ ধরণের সালিশ-ব্যবসা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে৷ গ্রাম্য সালিশী বন্ধ করতে ব্যর্থ হলে পুলিশের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷

হাইকোর্ট তাঁর এই রায় জানান গত ৩১ জুলাই৷ তারপরে দুটি সপ্তাহও পেরোয় নি৷ ১৫ই আগস্ট ঘটে গেল হবিগঞ্জে ফেরদৌসীর নির্মম মৃত্যু৷ চলন্ত ট্রেনের বীচে ঝাঁপিয়ে পড়লেন চার সন্তানকে নিয়ে এক মা৷ কারণ, ওই সালিশীর বিচারসভা তাঁকে সমাজচ্যুত করে এবং গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেয়৷ অসহায় অপমানিতা নারীটি আর কোন পথ খুঁজে পাননি৷

গ্রাম্য সালিশী সভার বাড়াবাড়ি সমাজে মহিলাদের অবস্থানকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছেছবি: AP

অমানবিক এই ঘটনার নেপথ্যপট কেমন ছিল? দেখা যাক, কী হয়েছিল ঘটনাটি আসলে৷ ব্রাম্ভণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সেজামুরা গ্রামের ফজলুর রহমানের কন্যা ফেরদৌসীর সঙ্গে ১৪ বছর আগে মাধবপুর উপজেলার আন্দিউড়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা জিলন মিয়ার বিয়ে হয়৷ বছর তিনেক আগে জিলন মিয়া দুবাই চলে যান কাজের জন্য৷ তিনি তাঁর চাচাতো ভাইকাদিরকে বলে যান, তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসীকে বাজারহাট করার জন্য সাহায্য করতে৷ সে কারণেই কাদির এই কাজের জন্য যাতায়াত করত ফেরদৌসীর বাড়িতে৷ আর গ্রাম্য মাতব্বররা এটিকেই বিষয় করে তোলে৷ ফেরদৌসীর নামে অপবাদ রটাতে থাকে৷ প্রাথমিক এক বিচারসভায় ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমানের উপস্থিতিতে কোন প্রমাণ না থাকায় বিষয়টি চাপা পড়ে যায়৷ এরপর ফের গত রোববার সুলতানপুরের মাতব্বররা ফেরদৌসীর বিচারে বসেন৷ আতিকুর সে সময়ে ছিলেন না৷ ফলে সহজেই ফেরদৌসীকে একতরফাভাবে দোষী সাব্যস্ত করা সহজ হয়ে যায় মাতব্বরদের পক্ষে৷ তারপরেই এই অসহায় মহিলা আর তাঁর সন্তানদের মৃত্যু৷

অসহায় অপমানিতা নারীটি আর কোন পথ খুঁজে পাননি...ছবি: AP

এভাবে গ্রাম্য সালিশী সভার বাড়াবাড়ি সমাজে মহিলাদের অবস্থানকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে যে সে বিষয়ে সব মহলই একমত৷ এখন প্রশ্ন, সমাধানের প্রধান রাস্তা কী প্রশাসন? নাকি, মহিলাদের মধ্যে জাগরণ? অনেকেই মনে করেন, নারীকে স্বয়ং এগিয়ে আসতে হবে৷ তাকে রুখে উঠতে হবে এ ধরণের অনাচারের বিরুদ্ধে৷ আর সে কারণে বাড়ানো প্রয়োজন সচেতনতা৷ সেই সচেতনতার জন্য হয়তো প্রশাসনকেও নিতে হবে কিছুটা দায়িত্ব৷

প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ