1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্রাম বাংলায় ক্যানসারের বিরুদ্ধে অন্য লড়াই

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৮ ডিসেম্বর ২০১৮

কথায় বলে, ‘‘ক্যানসার হ্যাজ নো অ্যানসার৷'' কিন্তু এই প্রবাদবাক্যকে ভুল প্রমাণ করছেন ক্যানসার রোগীরাই৷ তাঁরাই এখন ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর সঙ্গে সঙ্গে সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করছেন৷

NGO Palliativmedizin Indien Prayas
ছবি: DW/P. Samanta

এক সময় ধরেই নেয়া হতো, ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর জন্য কিছুই করার থাকে না৷ রোগীটির জীবনেও নেমে আসে নিঃসঙ্গতার অভিশাপ৷ বেলঘরিয়ায় ক্যানসারে আক্রান্ত এক গৃহবধূ রোগের কথা শুনে হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে আত্মহত্যা করেছিলেন৷ এই ঘটনা নাড়া দিয়েছিল সমাজকে৷ তবে মানব জীবন কি এভাবেই থেমে যাওয়ার? 

পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বছর কুড়ির নবনীতা মণ্ডলের জীবনে যখন ক্যানসার প্রথম হানা দিয়েছিল, তখন তিনিও হয়ে গিয়েছিলেন একদম নির্বান্ধব৷ কেমোথেরাপি আর হাসপাতালে ঘোরা ছাড়া জীবনের বাকি রঙগুলো কেমন যেন ফিকে হয়ে গিয়েছিল তাঁর! তখনই নবনীতার পাশে দাঁড়িয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘প্রয়াস'৷ ক্যানসারে আক্রান্ত নবনীতার জীবনে বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তারাই৷ এরপর ক্রমাগত চিকিৎসায় অনেকটাই ভালো হয়ে ওঠেন নবনীতা৷ এখনো পর্যন্ত ‘ক্যানসার সার্ভাইভার' না হলেও নবনীতা থেমে থাকেননি৷ প্রয়াসের হাতে হাত মিলিয়ে তিনিও শুরু করেছেন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতার দুরন্ত কাজ৷ আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে নবনীতা শোনাচ্ছেন তাঁর লড়াইয়ের কাহিনী৷ সেটা শুনে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উজ্জীবিত হচ্ছেন বহু ক্যানসার রোগী৷

‘গ্রামের দিকে ক্যানসার ছোঁয়াচে বলে মনে করেন অনেকে’

This browser does not support the audio element.

জীবনযুদ্ধের এ কাহিনী শুধু নবনীতার নয়৷ রুম্পা বা অনিন্দিতারও৷ ক্যানসারে দাদার মৃত্যু চোখ খুলে দিয়েছিল রুম্পার৷ আর স্তন ক্যানসারে নিজে আক্রান্ত হওয়ার পর অনিন্দিতাও থেমে থাকেননি৷ তমলুকের প্রয়াসের হাত ধরে তাঁরা শুরু করেছেন ক্যানসারবিরোধী প্রচার৷ আর এদের সবার সাফল্যকেই তুলে ধরছে প্রয়াস৷ এই সংগঠনের কর্ণধার আদিত্য মান্না হাসপাতালকর্মী৷ প্রয়াসের মাধ্যমে তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশম চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছেন কলকাতা থেকে অনেক দূরে গ্রাম বাংলার মানু্ষদের৷      

ক্যানসার মানেই জীবন থেমে যায়, সেটা কিন্তু নয়৷ একদম শেষ পর্যায়ের ক্যানসারে হলেও রোগীদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়ানো যায়৷ এই ভাবনাতেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে শুরু হয়েছে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশম চিকিৎসা৷

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে উপস্থিত হয়ে আদিত্য তাঁদের উপশম চিকিৎসার বার্তাই দিয়েছেন সারা পৃথিবী জুড়ে৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে চিকিৎসকদের থেকে চিকিৎসা কর্মীদের সহযোগিতা খুব দরকার৷ চিকিৎসকরা চিকিৎসা করেন, কিন্তু চিকিৎসাকর্মীরা রোগীর পাশে থাকেন মানসিকভাবে৷ যখন ক্যানসার ধরা পড়ে, তখন রোগী ও তার বাড়ির লোকজন বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে৷ ওদের ঘুম চলে যায়৷ এই সময় ওদের সাহস জোগানো খুব জরুরি৷ আমাদের সঙ্গে চিকিৎসকরা থাকেন৷ তাঁরাও বোঝান, এর ফলে রোগী ও তার পরিবার আশ্বস্ত হয়৷ আমাদের ফোকাস স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা৷ আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রচার চালাই৷''

‘ওদের সাহস জোগানো খুব জরুরি’

This browser does not support the audio element.

পশ্চিমবঙ্গে উপশম চিকিৎসা পরিষেবা প্রায় নেই বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা৷ কেরালা, মহারাষ্ট্র, ত্রিপুরাতে এই চিকিৎসা পদ্ধতি চালু হলেও পশ্চিমবঙ্গে তা সামান্য৷ সম্প্রতি কল্যাণীর মদনপুরে এমন একটি উপশম চিকিৎসা হাসপাতালও খোলা হচ্ছে৷

কলকাতা মেডিকেল কলেজের অঙ্কোলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান শ্যামলকুমার সরকার বলেন, ‘‘ক্যানসার রোগী বা তার বাড়ির লোকেরা উদ্বেগ, দুশ্চিন্তার মধ্যে কাটান৷ রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি চিকিৎসার পরেও কিছুটা খামতি থেকে যায়৷ মানসিকভাবে তাঁদের পাশে থাকা, তাঁদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য প্রয়াসের মতো এমন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দরকার৷ অনেক বড় হাসপাতালেই চিকিৎসা করা হয়৷ কিন্তু রোগীর মনোবল বাড়ানোর জন্য কাজ তেমন হয় না৷ উপশম চিকিৎসা বা প্যালিয়েটিভ কেয়ার রোগীর চিকিৎসার যতটুকু ফাঁক আছে, সেটা পূরণ করে৷''

সচেতনতার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে কলকাতা থেকে দূরবর্তী জেলাগুলি৷ ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষ সেখানে অনেকটাই অস্পৃশ্য৷ ক্যানসার রোগীর একই বিছানায় শোওয়া-বসা বা একই পাত্র থেকে খাবার খাওয়ার চল নেই সেখানে৷ এমনকি রোগীর চিকিৎসা-পরবর্তী ফলোআপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সচেতনতার অভাবে বাড়ির লোকেরা অনেক সময়ই করান না৷ প্রয়াস সংগঠনের তরফে রোগী ও তার পরিবারের সেই দূরত্বকে মেটানো হয়৷ পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার কীভাবে দূর করা যেতে পারে তা-ও আলোচনা করা হয়৷ এসবই উপশম চিকিৎসার মধ্যে পড়ে৷

‘সচেতনতা গড়ে উঠতে সময় লাগবে’

This browser does not support the audio element.

এভাবে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা কতটা বাড়বে? প্রয়াসের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ড. ললিতকুমার খাঁড়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষদের মনে একটা সময় টিকাদানের ক্ষেত্রেও ভয় ছিল৷ আজ তাঁরা সেই ভয় অতিক্রম করে সন্তানদের টিকাকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন৷ এটা একদিনের প্রচারের ফল নয়৷ দীর্ঘদিন প্রচারের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে৷ ক্যানসারের ক্ষেত্রেও এই সচেতনতা গড়ে উঠতে সময় লাগবে৷''

২০১৫ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত নবনীতা এখন সুস্থতার পথে৷ তিনি কলেজ পড়ুয়া, বোটানির সফল ছাত্রী৷ কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি উপশম চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে রোগীদের বাড়িতেও পৌঁছে যান৷ পড়াশোনার পাশে এই কাজটা তিনি ভালোবেসেই করেন৷ নবনীতা ভবিষ্যতে ক্যানসার নিয়ে কাজ করতে চান৷

নবনীতা তাঁর কাজের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন৷ অ্যামেরিকার ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অফ লাঙ ক্যানসার' ও ‘ইউরোপিয়ান স্কুল অফ অঙ্কোলজি'র তরফে তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়েছে৷ বিদেশে উপশম চিকিৎসা নিয়ে তিনি বক্তৃতাও দিয়েছেন৷ তাঁর কাজ উদ্বুদ্ধ করছে বিশ্বের আরো অনেক ক্যানসার রোগীকে৷ নবনীতার পরিবার এই ক্যানসার নিয়ে প্রচারে প্রথমে সায় দেয়নি৷ কিন্তু এখন তাঁরা মেনে নিয়েছেন৷

নবনীতা জানান, ‘‘গ্রামের দিকে ক্যানসার ছোঁয়াচে বলে মনে করেন অনেকে৷ রোগীকে বোঝানোর পাশাপাশি আমি বাড়ির লোকদেরও বোঝাই৷ ক্যানসার চিকিৎসা এমনিতেই জটিল, সেখানে মানসিক সাহায্য পেলে রোগীদের সুবিধাই হবে৷ আমি বোঝাই, আমি যেমন পেরেছি, আপনারাও পারবেন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ