বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা যে নাম্বার ব্যবহার করেন, এর মালিক মোবাইল অপারেটররা৷ তবে, শিগগিরই গ্রাহক চাইলে ফোন নাম্বার না বদলেই যে কোনো অপারেটরের সেবা নিতে পারবেন৷
বিজ্ঞাপন
মোবাইল ফোন নাম্বার ঠিক রেখে অপারেটর বদল করার যে সুবিধা, তাকে বলা হয়, ‘মোবাইল নাম্বার পোর্টাবিলিটি', সংক্ষেপে এমএনপি৷ আর এই এমএনপি সেবা চালু করার অনুমতি পেয়েছে বাংলাদেশ ও স্লোভেনিয়ার যৌথ কনসোর্টিয়াম ইনফোজিলিয়ন টেলিটেক বিডি৷ মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সহযোগিতা পেলে এই কনসোর্টিয়াম আগামী মার্চ-এপ্রিল নাগাদ এমএনপি সেবা চালু করতে পারবে বলে জানা গেছে৷ তবে বিটিআরসি আগামী মে মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে৷
মোটামুটি আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই সেবার আওতায় আসছেন বাংলাদেশের মেবাইল ফোন গ্রাহকরা৷ এই সেবা চালু হলে মোবাইলফোন ব্যবহারকারীরা ‘সংশ্লিষ্ট অপারেটর' মানসম্মত সেবা দিতে না পারলে সেই অপারেটর বদলে অন্য অপারেটরে চলে যেতে পারবেন৷জানা গেছে, এই সেবা নিতে হলে গ্রাহককে অপারেটর পরিবর্তন করতে হলে প্রত্যেকবার ৩০ টাকা দিয়ে আবেদন করতে হবে৷ আবেদনের পর সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেবাটি চালু হয়ে যাবে৷ তবে আগের অপারেটরে ফিরতে হলে গ্রাহককে ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হবে৷
ডিজিটাল বাংলাদেশ ‘রূপকল্প ২০২১’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান সরকার ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করেছিল৷ ইতোমধ্যে জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে৷
ছবি: Munir Hasan
আওয়ামী লীগের ইশতেহার
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ‘দিন বদলের সনদ’-এর অংশ হিসেবে ‘২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর উদ্ভব৷ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর এ ঘোষণা দেয়া হয়৷
ছবি: dapd
কম পরিশ্রমে, স্বল্প ব্যয়ে মানুষের দোরগোড়ায় সেবা
ডিজিটাল বাংলাদেশ হলো তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ যেখানে আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সকল সুবিধা ব্যবহার করে অল্প সময়ে, কম পরিশ্রমে, স্বল্প ব্যয়ে, মানুষের দোরগোড়ায় তথ্য ও সেবা পৌঁছানোর নিশ্চয়তা দান৷
ছবি: D.net/Amirul Rajiv
কৃষিক্ষেত্রে সুবিধা
কৃষিক্ষেত্রেও লেগেছে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া৷ সারাদেশে স্থাপিত প্রায় ২৪৫ কৃষি তথ্য যোগাযোগ কেন্দ্রে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কৃষি সেবা প্রদান করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
উন্নত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র
দশ আঙুলের ছাপ ও চোখের কনীনিকার (আইরিশ) প্রতিচ্ছবি সংগ্রহ করে নিবন্ধিত নাগরিকদের ‘স্মার্ট’ জাতীয় পরিচয়পত্রের পরীক্ষামূলক বিতরণ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে৷ যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে বা যারা ভোটার হওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তারা এই ‘স্মার্ট’ এই পরিচয়পত্র পাবেন৷ (এখানে পুরানো পরিচয়পত্রের ছবি)
ছবি: DW/S. Kumar Day
মোবাইল ব্যাংকিং চালু
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সব ধরণের জরুরি সেবাই পাওয়া যায়৷ এ সবের মধ্যে রয়েছে – টাকা জমা, টাকা তোলা ও পাঠানো, বিভিন্ন ধরণের বিল প্রদান (বিদ্যুৎ বিল,গ্যাস বিল,পানি বিল ), কেনাকাটা করা, বেতন ভাতা প্রদান ও গ্রহণ, মোবাইল ফোন টপ আপ ইত্যাদি৷
ছবি: TAUSEEF MUSTAFA/AFP/Getty Images
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেবা
২০ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নির্মাণ ও ল্যাপটপসহ ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে৷ ডিজিটাল কন্টেন্ট শেয়ার করার জন্য ‘শিক্ষক বাতায়ন’ নামে একটি ওয়েবপোর্টাল চালু করেছে সরকার৷
ছবি: Munir Hasan
২২টি কর্মপন্থা
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ২২ কর্মপস্থা নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নে জোর দেয়া হচ্ছে৷ এগুলো হচ্ছে – সরকারি অফিস আদালতে ই-সেবা চালু করা, ই-গভর্নেন্স চালুর মাধ্যমে সরকারি কর্মকাণ্ডের গতি বাড়ানো, ভূমি রেকর্ড ডিজিটাইজেশন, সরকারি সেবাসমূহ ইউনিয়ন অফিস থেকেই প্রদানের ব্যবস্থা, তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি৷
ছবি: play.google.com
ঘরে বসে অর্থ উপার্জন
আইসিটি খাতে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গেই ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের ধারণা বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছাতে শুরু করেছে৷ বর্তমানে দেশে তরুণ ফ্রিল্যান্সার একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে৷ তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে৷ লাখো তরুণ বিভিন্ন পর্যায়ে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে নিজে সাবলম্বী হয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.U. Zaman
ডট বাংলা ডোমেইন
ইন্টারনেট জগতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ডোমেইন (ইন্টারন্যাশনালাইজড ডোমেইন নেম-আইডিএন) ডট বাংলা (.বাংলা) ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ পেয়েছে বাংলাদেশ৷ ইন্টারনেটে একটি রাষ্ট্রের জাতীয় পরিচয়ের স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করে এই ডোমেইন৷
ছবি: Ministry of Women and Children Affairs
তথ্য আদান-প্রদান
দেশে বর্তমানে নানা ধরনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম রয়েছে৷ স্বল্প খরচে এ সব মাধ্যম ব্যবহার করে অনায়াসেই এক স্থান থেকে আরেক স্থানে তথ্য আদান প্রদান ও ভাবের বিনিময় হচ্ছে৷ ভিডিওতে কথা বলার জন্য রয়েছে একাধিক সফটওয়্যার৷ স্কাইপ, ইমো, ফেসবুক, গুগুল ছাড়াও যে কোনো মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে থ্রি জি প্রযুক্তির সংযোজনের ফলে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সব ধরনের তথ্য ও ভাবের আদান প্রদান করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন, ড্রাইভিং লাইসেন্স
এখন আয়কর রিটার্ন ফরম অনলাইনে পূরণ করা যায়৷ অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রেলওয়ে ও বাস টিকেট
অনলাইনে অনেক সহজে টিকেট কাটা ও সিট বুকিং করা যায়৷ এসএমএস-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক যাত্রীদের জন্য তথ্যসেবা প্রদান করা হয়৷ এছাড়া বাসের টিকেট কাটা যায় অনলাইনেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
সব ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ
২০২০ সালের মধ্যে দেশের সকল ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করার প্রচেষ্টা আছে সরকারের৷ এছাড়া ২০১৮ সালের মধ্যে ব্রডব্যান্ডের সম্প্রসারণ ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
13 ছবি1 | 13
ভয়েস কল ও ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য, দুর্বল নেটওয়ার্ক কাভারেজ, নেটওয়ার্ক সমস্যা, ভয়েস কলের নিম্নমান, গ্রাহক সেবার অসন্তুষ্টি দূর করবে এই এমএনপি সেবা৷ এই সেবা চালু হলে কোনো অপারেটরের সেবায় গ্রাহক সন্তুষ্ট না হলে তার পছন্দের আরেক অপারেটারে চলে যেতে পারবেন৷ কিন্তু ফোন নাম্বার একই থাকবে৷ এতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে গ্রাহকদের ভালো সেবা দেয়ার প্রতিযোগিতা বাড়বে বলে আশা করা যায়৷
বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন একজন গ্রাহক যদি অপারেটর পরিবর্তন করেন, তাহলে তাঁর ফোন নাম্বারটিও পরিবর্তন হয়ে যায়৷ ফলে গ্রাহককে আবার নতুন করে তাঁর নেটওয়ার্কে তাঁর নতুন নাম্বার ছড়িয়ে দিতে হয়৷ এটা কষ্টসাধ্য এবং সময় সাপেক্ষ৷ বিদেশে একজন গ্রাহক জম্মের পর একটি নির্দিষ্ট মোবাইল ফোন নাম্বার নেয়৷ এবং সেই নাম্বার নিয়েই মৃত্যুবরণ করেন৷ এর মানে হলো গ্রাহকই হবেন ফোন নাম্বারের মালিক৷ অপারেটর নয়৷ আর গ্রাহক তার ইচ্ছামতো অপারেটর পরিবর্তন করতে পারবেন৷''
বিটিআরসি জানায়, এতে করে অপারেটরগুলোর মধ্যে সেবার মান বাড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হবে৷ যেসব অপারেটর সেবার মান বাড়াতে পারবে না, গ্রাহক তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে৷ কোনও অপারেটর এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ক্ষতির কোনো সুযোগ নেই৷ ভালো সেবা দিতে না পারলে গ্রাহক থাকবে না৷ ফলে ভালো সেবা দিয়েই অপারেটরগুলোকে টিকে থাকতে হবে৷ তবে মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর চালু করা যে অন নেট (একই অপারেটরে) এবং অফ নেটের (অন্য অপারেটরের নাম্বারে) মধ্যে যে বৈষম্য আছে, এমএনপি চালু হলে তা আরও সমস্যা তৈরি করতে পারে৷ বিটিআরসি এমএনপি সেবা চালুর আগেই দু’টি সেবার মধ্যে বর্তমানে যে পার্থক্য রয়েছে তা কমিয়ে এনে সমস্যার সমাধান করবে৷''
DR Sahajahan Mahmud - MP3-Stereo
বাংলাদেশে মোট মোবাইল ফোন অপারেটর পাঁচটি৷ গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক ও টেলিটক৷ বিটিআরসি'র গত ৩১ আগস্ট জানিয়েছিল, দেশে এখন মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ৯৩ লাখ৷ এরমধ্যে সেই সংখ্যা ১৪ কোটি হয়ে গেছে বলে মনে করা হয়৷ তবে শুধু গ্রামীন ফোনের গ্রাহকই দুই তৃতীয়াংশ৷
মোবাইল ফোন অপারেটর, বিশেষ করে যাদের গ্রাহক বেশি, তাদের এক ধরনের অনীহার কারণে এতদিন এই এমএনপি সুবিধা চালু করা যায়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়৷
২০১৩ সালের ১৩ জুন বিটিআরসির দেওয়া এক নির্দেশনায় মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে পরবর্তী সাত মাসের মধ্যে এমএনপি চালু করতে বলা হয়৷ নির্দেশনায় এমএনপি চালুর জন্য তিন মাসের মধ্যে সব অপারেটরকে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করতে বলা হয়৷ কিন্তু তারা তখন জানায়, এমএনপি চালু করতে পাঁচ বছর সময় লাগবে৷
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিশ্বের ৭২ টি দেশে এমএনপি সেবা চালু রয়েছে৷ প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২০১১ সাল এবং পাকিস্তানে এই সেবা ২০০৭ সাল থেকে চালু রয়েছে৷