নার্সারির মধ্যেই বাড়ি তৈরি করেছেন এক দম্পতি৷ বাড়ি ও কাজের জায়গা একই ছাদের নীচে৷ তাঁদের সঙ্গে পরিচয় না হলে এমন অভিনব জীবনযাত্রার নানা দিক বোঝাই সম্ভব নয়৷
বিজ্ঞাপন
প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় মোনিকা টিল নার্সারির দরজা বন্ধ করেন৷ তখন গোটা গ্রিনহাউসে তিনি স্বামীর সঙ্গে একা৷ এমন কাচের সিলিং-এর নীচে সাধারণত টিউলিপ, ফল অথবা ট্রপিকাল গাছপালার সম্ভার দেখা যায়৷ কিন্তু মোনিকা ও টোমাস টিল এখানেই তাঁদের বাসা বেঁধেছেন৷ গ্রিনহাউসের নীচে পাথরের বাড়ি৷ টোমাস বলেন, ‘‘মাথার উপর বাড়তি ছাদ বেশ মনোরম এক অনুভূতি আনে৷ বিশেষ করে উপরে বৃষ্টির ফোঁটা পড়লেও দিব্যি বেরিয়ে গিয়ে সবুজ পরিবেশ উপভোগ করা যায়৷''
টিল দম্পতি বেশ ভোরে উঠে পড়েন৷ সকাল ৬টায় প্রাতরাশ করেন, একেবারে বোটানিকাল গার্ডেনের পরিবেশে৷ অনেক ক্রেতাই জানেন যে টিল পরিবার গ্রিনহাউসে থাকেন৷
কিন্তু ক্রেতারা বন্ধ দরজার সামনে অপেক্ষা করবেন, এমনটা টোমাস টিল ভাবতেই পারেন না৷ তাই নিজেই সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার প্রয়োজন মেটাতে এগিয়ে যান৷ নার্সারির মালিক হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘ক্রেতারা জানেন যে এখানে সবসময় কেউ রয়েছে৷ একমাত্র ইতিবাচক বিষয় হলো কাজের জায়গায় যাবার খরচ বাঁচে৷''
সবুজের মধ্যে সংসার
04:14
১২০ বর্গ মিটার জায়গায় গাছপালার মাঝে টিল দম্পতি থাকেন৷ এমন সিদ্ধান্তের সপক্ষে টোমাস টিল বলেন, ‘‘এটা আমাদের বসার ঘরের সবুজ অংশ৷ এখানে অনেক রকম গাছপালা রয়েছে৷ আঙুর গাছ একটু উপরে রয়েছে, কারণ গ্রিনহাউস কিছুটা সংরক্ষিত এলাকা বটে৷ (1.41) কালো বাঁশ গাছ শীতকালে কাবু হয়ে পড়ে, আমাদের এখানেও হয়েছে৷ কিন্তু আবার ধকল সামলে উঠবে৷ ইটালি সহ ভূমধ্যসাগর এলাকার ফোটিনিয়া গাছ সবসময়ে সবুজ থাকে, সেটাও এখানে রয়েছে৷ (1.55) আরও আছে ফ্যান পাম গাছ, যা ইটালিতে দেখা যায়৷''
কর্মক্ষেত্রের পাশেই ঘুম থেকে উঠতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন মোনিকা টিল৷ তিনি বলেন, ‘‘একভাবে দেখলে এটা একটা সুরক্ষার খোলস৷ একদিকে খোলামেলা বাড়ি, আমরাও বেশ খোলামেলাভাবে থাকি৷ অন্যদিকে একটা নির্দিষ্ট সীমারেখাও রয়েছে৷ যেমন মাঝেমধ্যে ক্রেতারা এলেও কর্মীরা পেছনদিকের এই অংশে আসেন না৷ সেখানে আমাদের নিজস্ব আস্তানা রয়েছে৷''
ছোট্ট একটা ভালো বাসা
বড় চিন্তা থেকে ছোট ছোট বাড়ি - পরিবেশ সচেতন ইউরোপীয়রা এই ভাবনা নিয়েই সাজিয়ে তুলছেন চারপাশ৷ পরিবেশবান্ধব বাসা তৈরি করতে গিয়ে তাঁরা এমন সব ভাবনা কাজে লাগাচ্ছেন, না দেখলে বিশ্বাসই হবেনা৷ দেখুন সেরকম কয়েকটি বাড়ি৷
ছবি: Colourbox
হবিট হাউজ
‘হবিট’ নাম শুনলেই মনে পড়ে জে. আর. আর. টলকিনের অনন্য সৃষ্টি ‘দ্য হবিট’-এর কথা৷ ছবির এই বাড়িটিও যেন রূপকথার রাজ্য থেকেই নেমে এসেছে৷ পাহাড়ে গর্ত খুঁড়ে জায়গা তৈরি, সেই জায়গায় পাশের বন থেকে খড়কুটো, গাছের ডাল ইত্যাদি জোগাড় করে গড়ে তোলা হয়েছে দারুণ এক শান্তির নীড়৷ বাড়ির মেঝে বা দেয়ালেও ইট-শুড়কির চিহ্নমাত্র নেই, সবই খাঁটি মাটির তৈরি৷
ছবি: cc-by-nc-sa/Simon & Jasmine Dale
নৌকাঘর
জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দের ছন্দ অনেকের চোখেই ঘুম নিয়ে আসে৷ সেই শব্দের কাছে থাকতে চাইলে নদীতেই ঘর বানাতে পারেন৷ এমন ঘর অনেক আছে ইউরোপে৷ ছোট ছোট ঘরগুলো যেন নদীর জলে নৌকার মতো ভাসছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/JOKER
সার্কাস গাড়ি
দালান কোঠা বানানোয় ঝামেলা অনেক, খরচও প্রচুর৷ কার্বন নিঃসরণ কমানোয় ভূমিকা রাখতে আগ্রহীরা তাই নানা উপায়ে সেই ঝামেলা এড়িয়ে কম খরচেই বানাচ্ছেন বাড়ি৷ সার্কাসের দল যে ধরণের ওয়াগন নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতো, আজকাল সেইগুলোতেও গড়া হচ্ছে বাড়ি৷ পূর্ণাঙ্গ বাড়ির সব সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এসব বাড়ি যখন যেখানে খুশি নিয়েও যাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অন্যরকম গ্রাম
বার্লিনে তখন পর্যটক এবং ছাত্ররা সবে দলে দলে আসতে শুরু করেছে৷ সেই তুলনায় বাড়ি-ঘর বেশ কম৷ স্থানীয় এক আবাসন বিশেষজ্ঞের মাথায় কম খরচে অভিনব বাড়ি বানানোর একটা বুদ্ধি এলো৷ পুরোনো কন্টেইনার জড়ো করলেন সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা একটা জায়গায়৷ কয়েকদিনের মধ্যেই সেই কন্টেইনারগুলোই হয়ে গেল আলাদা আলাদা বাড়ি৷ সব বাড়ি মিলিয়ে গড়ে উঠল অন্যরকম এক গ্রাম৷ অভিনব এই গ্রামের সব অধিবাসীই শিক্ষার্থী৷
ছবি: Jorg Duske
বাক্সবাড়ি
বাক্স না বলে, এগুলোকে জাহাজের কন্টেইনারের মতো বলাই বোধহয় ভালো৷ পার্থক্য হলো, জাহাজের কন্টেইনার আড়াআড়ি হলেও এই ধরণের বাক্সবাড়ি দাঁড়ায় খাড়াখাড়ি৷ সব মিলিয়ে তিন তলা৷ ছোট ছোট তিনটি কামরায় কম চাহিদার আধুনিক জীবনের জন্য দরকারি সবকিছুই আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গাছবাড়ি
ইউরোপের বনে বনে ছড়িয়ে পড়ছে এ ধরণের বাড়ি৷ অনেকটাই ধাতব পদার্থের তৈরি হলেও ‘পরিবেশবান্ধব ছোট ঘর’এর ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়েই তৈরি এসব বাড়ি৷ প্রকৃতির বুকে থাকার লোভনীয় অভিজ্ঞতার আকর্ষণে আজকাল এমন বাড়ি তৈরির দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই৷
ছবি: Andreas Wenning
অপরূপ কাচঘর
এক জার্মান ডিজাইনারের অপরূপ সৃষ্টি এটি৷ ঘরের ছাদ, সাগর তীর, খেলার মাঠ- মোট কথা যেখানেই একটু ফাঁকা জায়গা, সেখানেই এই বাড়ি বসিয়ে শুরু করতে পারেন বসবাস৷ চারপাশ কাচের বলে সারাদিন আলোকিত থাকে এই ঘর৷ ‘লফটকিউব’ দেখতেও দারুণ, তাইনা?
ছবি: picture-alliance/dpa
বাগানবাড়ি
জার্মানির প্রায় সব শহরেই দেখা যায় এ ধরণের বাড়ি৷ এটাও পরিবেশবান্ধব৷ ছোট্ট একটু জায়গার ওপর এই বাড়ি তৈরির সময় আশপাশে বাগান করার জায়গাও রাখা হয়৷ সেখানে কেউ ফুলের বাগান করেন, কেউ বা সযত্নে করেন শাকসবজির ক্ষেত৷
ছবি: Colourbox
8 ছবি1 | 8
গ্রীষ্মে কাচের নীচে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়৷ তখন ছায়ার প্রয়োজন পড়ে৷ টোমাস টিল বলেন, ‘‘খুব গরম পড়লে আমরা নার্সারি সারাদিন অথবা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখি৷ পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হয়৷ যেমন আকাশে সামান্য মেঘ থাকলে একটা অংশ খুলে রাখা যায়৷ তখন উপরের ঘরে টিকে থাকা যায়৷''
যে সংস্থার প্রধান কর্মীদের এত কাছাকাছি বসবাস করেন, সেখানে কাজের পরিবেশ কেমন? নার্সারির কর্মী কারিনা বলেন, ‘‘সহজ পরিবেশ৷ একদিকে নিজেদের মধ্যে ও মালিকদের সঙ্গে খুবই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে৷ আবার কখনো মালিক দম্পতির মধ্যে মনোমালিন্য হলেও আমরা বুঝতে পারি৷ অর্থাৎ সবকিছু একেবারে প্রত্যক্ষ, খাঁটি৷''
১৯৯৩ সালে টিল পরিবার সাহস করে বাড়ি ও নার্সারি তৈরি স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেন৷ দুজনেই জানতেন, তাঁরা ঠিক কী চাইছেন৷ বাড়ি নির্মাণের পেছনে বেশ কয়েক লাখ ইউরো বিনিয়োগ করে সুফল পাওয়া গেছে৷ তবে নির্মাণের কাজ বেশ কঠিন ছিল৷ সেইসঙ্গে ছিল বিশাল ঝুঁকি৷ কারণ নার্সারির বাজারে প্রতিযোগিতা খুবই বেড়ে গেছে৷
আজব এক উল্টো বাড়ি
জার্মানিতেই তৈরি হয়েছে এমন এক বাড়ি যা পুরোপুরি উল্টো৷ বাড়ির ছাদ নীচে আর টেলিভিশন, ফ্রিজ, আসবাবপত্র সব ওপরে! চলুন ঘুরে দেখি আজব সেই বাড়ি৷
ছবি: picture-alliance/ZB/Sauer
উল্টো দুনিয়া
২০০৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জার্মানির মেকলেনবুর্গ ফোয়রপমার্ন রাজ্যের ট্রাসেনহাইডে-তে নির্মাণ করা হয় অদ্ভুত এই বাড়ি৷ জার্মান ভাষায় বাড়িটির নাম, ‘ডি ভেল্ট শ্টেট কপ্ফ’, অর্থাৎ ‘পৃথিবীটা মাথার ওপরে দাঁড়িয়ে’৷ সত্যিই তাই৷ বাংলায় ‘হেঁট মুণ্ডু ঊর্ধ্ব পদ’ বলে একটা কথা আছে, ঠিক সেভাবে এ বাড়ির ছাদটা নীচে, আর নীচে থাকার জিনিসগুলো সব ওপরে৷ পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে এই বাড়ি৷
ছবি: picture-alliance/ZB/Lösel
স্ক্রু আর আঠার কেরামতি
বাড়িটির নকশা করেছেন দুই পোলিশ স্থপতি ক্লাউডিউসৎজ গোলোস এবং সেবাস্টিয়ান মিকিচিউক৷ কেমন করে উল্টো করে সব তৈরি বা স্থাপন করা হলো? সবই স্ক্রু আর আঠার জাদু৷ ঘরের আসবাবপত্র, টেলিভিশন থেকে শুরু করে সাধারণত মেঝেতে বা ছাদের নীচে থাকে এমন সব জিনিস ওপরে লাগানো হয়েছে শুধু স্ক্রু আর আঠা দিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Büttner
অবাক তাকিয়ে রয়...
দর্শনার্থীরা গিয়ে অবাক হয়ে দেখেন সবকিছু৷ ছবিতে দেখুন, এক দর্শনার্থীর চোখের সামনে উল্টো হয়ে ঝুলছে একটা গাছের টব৷ অবাক তো লাগবেই!
ছবি: picture-alliance/dpa/Büttner
ভাগ্যিস সিঁড়িটা ঠিকঠাক!
উল্টো বাড়ি হলেও বাড়ির একটা জিনিস অন্তত ঠিক আছে৷ কী সেটা, জানেন? সিঁড়ি৷ সিঁড়িও যদি ওপরের দিকে থাকতো তাহলে দর্শনার্থীদের কী বিপদটাই না হতো!
ছবি: picture-alliance/ZB/Sauer
স্টিলের কাঠামো
ঘরের সব আসবাবপত্রের চাপটা পড়ে ছাদের ওপর৷ এমন বাড়ির কাঠামোটা একটু বেশি শক্ত না হলে কি চলে? সে কথা ভেবেই ইট-শুঁড়কির জায়গায় স্টিল ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে ‘ডি ভেল্ট শ্টেট কপ্ফ’, নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছে ৩ লক্ষ ইউরো!
ছবি: picture-alliance/ZB/Sauer
5 ছবি1 | 5
মোনিকা টিল বাসা থেকেই মার্কেটিং-এর কাজ করেন৷ কেনাকাটা করতে তেমন বাইরে যেতে হয় না৷ সবই তো প্রায় বাড়ির আশেপাশে গজায়৷ চারিপাশের প্রকৃতি থেকেই তাঁরা প্রতিদিন নতুন করে তাঁদের শক্তি পান৷
বন্ধু, ভিডিওটি দেখলেন? কেমন লাগলো আমাদের জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!