খাদ্যপণ্যের বিপণীর সঙ্গে ‘গণসচেতনতার’ কি কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে? গ্রাহকদের রাসায়নিক ও জিন-প্রযুক্তি বর্জিত অরগ্যানিক পণ্য কেনার উৎসাহ দিয়ে জার্মানির একটি সুপারমার্কেট ‘গ্রিন বাসকেট’ বা ‘সবুজ চুবড়ি’ পুরস্কার পেয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সুপারমার্কেট মানে কাঁচাবাজার৷ সেই শাকসবজি, ফলমূল, দুগ্ধ-পনির ইত্যাদি খেয়েই তো মানুষ বেঁচে থাকে৷ কাজেই তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কী থাকতে পারে?
দেখলে এই সুপারমার্কেটটিকে অন্যান্য কাঁচাবাজারের দোকান থেকে খুব আলাদা বলে মনে হবে না, কিন্তু গত বছর এই দোকানটিতে অরগ্যানিক পণ্যের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে৷ স্থানীয় চাষি ও খামার মালিকদের কাছ থেকেও অনেক বেশি পণ্য আসছে৷ ক্লাউডিয়া ক্লেবাখ এই সুপারমার্কেটের ম্যানেজার৷ ক্লাউডিয়া বোঝালেন, কীভাবে গ্রাহকদের অরগ্যানিক পণ্য কিনতে উৎসাহিত করা যায়৷ তাঁর মতে, ‘‘প্রথমে আমরা গ্রাহকদের এই সব অরগ্যানিক পণ্যের গুণাগুণ বোঝানোর চেষ্টা করে দেখেছি, ও সব এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বেরিয়ে যায়৷ তারপর আমরা চাষিদের ডেকে দোকানেই তাদের দিয়ে তাদের পণ্য সম্পর্কে বলতে বলেছি৷ চাষিরা তাদের খামার ও চাষবাসের ছবি এনে দেখিয়েছেন, বুঝিয়েছেন কী ভাবে তারা কাজ করেন৷ এভাবেই ব্যবধান দূর হয়৷''
‘গ্রিন বাসকেট’ সুপারমার্কেট
03:45
একটি খামার ক্লেবাখের সুপারমার্কেট থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে৷ এরা ক্লেবাখের স্থানীয় পণ্য-সরবরাহকারীদের মধ্যে পড়েন: গ্রিন ফডার বা কাঁচা ঘাসপাতা থেকে নিজেরাই পশুখাদ্য উৎপাদন করে থাকেন৷ খামারচাষি হলগার ফ্যুর্নস্টাল বললেন, ‘‘খোঁয়াড়টাও খড় দিয়ে ঢাকা৷ এখানে জন্তুজানোয়ার পায়ে শেকল ছাড়াই নড়াচড়া করতে পারে৷ তাদের নড়াচড়া করার জন্য প্রচুর জায়গা আছে৷ খোঁয়াড়ের ভিতরে ও বাইরে একই তাপমাত্রা, একই বাতাস – যা কিনা জন্তুজানোয়ারের পক্ষে ভালো৷''
ঠিক এই খামার থেকেই তাঁর নিজস্ব ‘গণসচেতনতা' কর্মসূচি শুরু করেছিলেন ক্লাউডিয়া৷ নাম দিয়েছিলেন ‘এয়ারফারুংসফেল্ড বাউয়ার্নহোফ' বা ‘খামারের অভিজ্ঞতা'৷ তাঁর ‘গ্রিন বাস্কেট' পুরস্কার পাওয়ার সেটাও একটা কারণ৷ তিনি এবং ওলাফ কেজার-ভাগনার এই নন-প্রফিট গণসচেতনতা কর্মসূচিটি চালান৷ লক্ষ্য হল, জনতাকে অরগ্যানিক কৃষিপণ্য সম্পর্কে সচেতন করা – শুধু শহরের মানুষদের কৃষিখামার দেখানোই নয়৷
খাবার যেখানে প্রাণনাশক!
এতকাল বলা হয়েছে, মানবদেহে আর্সেনিক প্রবেশের অন্যতম উপায় পানীয় জল৷ এবার গবেষকরা জানিয়েছেন এক নতুন তথ্য৷ ভাতের মাধ্যমেও নাকি শরীরে ছড়াতে পারে আর্সেনিক, যা শরীরে ক্যান্সারের মতো রোগের কারণ হতে পারে৷
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images
আর্সেনিক দূষণ
বাংলাদেশের কয়েকটি অঞ্চলে আর্সেনিকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে অনেক আগেই৷ পানীয় জলের মাধ্যমে এই আর্সেনিক শরীরে প্রবেশ করে বলেও জানা গেছে বিভিন্ন গবেষণায়৷ এবার ‘‘প্লোস ওয়ান’’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র বলছে, ভাতের মাধ্যমেও শরীরে ছড়াতে পারে আর্সেনিক বিষ৷ ভূগর্ভস্থ পানিতে থাকা আর্সেনিক যে চালের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে, তা নিয়ে এটাই এখন অবধি সবচেয়ে বড় গবেষণা৷
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images
সহজে মানুষের নাগালে
ভূগর্ভস্থ পানিতে প্রাকৃতিকভাবেই আর্সেনিক বিষের মিশ্রন ঘটে৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সত্তরের দশকে ‘সবার জন্য পানি’ সংক্রান্ত এক প্রকল্পের আওতায় অনেক অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়৷ ফলে মাটির নীচের আর্সেনিকযুক্ত পানি সহজে সাধারণ মানুষের নাগালে চলে আসে৷
ছবি: MUFTY MUNIR/AFP/Getty Images
ভাত বেশি খেলে সমস্যা
‘‘প্লোস ওয়ান’’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি তৈরি করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা ১৮,৪৭০ জন স্বেচ্ছাসেবীর দেওয়া নমুনা পরীক্ষা করেছেন৷ তারা সবাই আর্সেনিক-দূষিত এলাকায় বসবাস করছেন৷ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে যারা বেশি করে ভাত খান তাদের প্রস্রাবে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি৷ অপেক্ষাকৃত কম ভাত খাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে এই তুলনা করেছেন গবেষকরা৷
ছবি: Suhail Waheed
মানবদেহের ক্ষতির কারণ
ব্রিটেনের লিচেস্টারে অবস্থিত ডি মোন্টফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিসিন বিশেষজ্ঞ পারভেজ হারিস বলেন, ‘‘গবেষণায় পানিতে আর্সেনিক দূষণ এবং ‘ফুড চেইনে’ তার প্রভাবের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে৷ একইসঙ্গে এটাও পরিষ্কার যে চালের মাধ্যমে পরিবাহিত আর্সেনিক মানবদেহের ক্ষতির কারণ হতে পারে৷ বিশেষ করে চামড়ায় ক্ষতের সঙ্গে এটির সম্পর্ক পাওয়া গেছে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
জটিল পরিস্থিতি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ৪১৭টি গ্রামে পরিচালিত এক গবেষণায় সেখানকার মানুষের প্রস্রাবের নালীর কোষের জেনেটিকে ক্ষতির নমুনা পাওয়া গেছে৷ এরফলে একটি কোষ থেকে আরেকটি কোষে ডিএনএ কোড সঠিকভাবে স্থানান্তর হতে পারছে না৷ এধরনের জটিলতা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় বলে মনে করেন গবেষকরা৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
ক্যান্সারের ঝুঁকি
এর আগে প্রকাশিত আরেক গবেষণা থেকে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে স্বল্প পরিমাণে আর্সেনিক নিয়মিত শরীরে প্রবেশ করলে মূত্রাশয়, কিডনি, ফুসফুস অথবা চামড়ায় ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷
ছবি: Fotolia/Schlierner
ভাত কম খান
বায়োমেডিসিন বিশেষজ্ঞ পারভেজ হারিস বলেন, ‘‘আড়াইহাজার এবং আর্সেনিক দূষণের শিকার অন্যান্য অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে যারা প্রতিদিন গড়ে ১ দশমিক ছয় কেজির বেশি ভাত খান, তাদের প্রতি আমাদের পরামর্শ হচ্ছে আপনারা ক্যালোরির উৎস হিসেবে ভাতের উপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে দিন৷ এক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে গম এবং কম আর্সেনিক দূষণযুক্ত এলাকায় উৎপাদিত চাল৷ সিলেট অঞ্চলের চালে আর্সেনিকের মাত্রা কম৷’’
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images
অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য
গবেষকরা বলছেন, তাদের এই গবেষণা আর্সেনিক দূষণের ঝুঁকিতে থাকা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে৷ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে কম্বোডিয়া, চীন, ভারত এবং ভিয়েতনামে আর্সেনিক নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
‘খামারের অভিজ্ঞতা' কর্মসূচির ওলাফ কেজার-ভাগনার বললেন, ‘‘কীভাবে পশুপালন করতে হয়, খামারচাষিরা সেটা ব্যাখ্যা করছেন না; বরং অতিথিরা নিজেরাই স্বাধীনভাবে আবিষ্কার করছেন, কীভাবে পশুপালনের কাজ চলে৷''
প্রতিটি গন্ধ, প্রতিটি স্পর্শ যেন একটি সংলাপ৷ অতিথিরা পায়ে হেঁটে খামার দেখেন আর সেই সঙ্গে তাদের মনে জাগে নানা প্রশ্ন৷ সেখান থেকেই চাষিদের সঙ্গে সংলাপের সূচনা৷ চাষিরা জানেন যে, অতিথি-দর্শকদের এই সব প্রশ্ন হল খামারের পণ্য ও ব্যবসা সম্পর্কে সেরা ফিডব্যাক৷ খামারচাষি ইউডিট গার্টে-মেৎস বললেন, ‘‘আমাদেরও অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ আমরা এখন জানি, কীভাবে অভ্যাগতদের সাথে ব্যবহার করতে হয়, কীভাবে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়৷ কীভাবে হাল্কা মেজাজে থাকতে হয়: সব কিছু খুব ব্যক্তিগতভাবে না নেওয়াই ভালো৷''
চাষিরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, গ্রাহকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আদানপ্রদান থেকে তারা নিজেরাই লাভবান হন৷