রবিবার আবার গ্রিসের জন্য চরমপত্র জারি করা হয়েছে৷ আরও একটি ইইউ শীর্ষ সম্মেলন প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়া দেশটির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে৷ ব্যার্ন্ড রিগার্ট মনে করেন, এই পরিকল্পনা ঝুঁকিতে ভরা৷
বিজ্ঞাপন
বিদ্রোহী গ্রিসকে আবার সঠিক পথে ফেরত আনতে অনেক কষ্টে ইউরোজোন শেষ চেষ্টা করতে এক ঐকমত্যে পৌঁছেছে৷ তাতে সাফল্য আসবে কিনা, তা নিয়ে গভীর সন্দেহ রয়েছে৷ বামপন্থি ব়্যাডিকাল প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস-কে এর আগেও অনেকবার ‘সাধারণ' সময়সীমা, ‘শেষ' সময়সীমা, ‘চূড়ান্ত' সময়সীমা দেওয়া হয়েছে৷ তাই নতুন করে আগামী রবিবার পর্যন্ত যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, তা মানা হবে এবং ফলাফল পাওয়া যাবে – এমনটা বিশ্বাস করা খুব কঠিন৷
গ্রিক হওয়ার বিপদ
গ্রিসের ইউরো এলাকায় থাকা বা না থাকা নিয়ে বিতর্ক যখন চরমে, ঠিক সেই মুহূর্তে বন শহরের গ্রিক বাসিন্দারা স্বদেশবাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও, কোনো পক্ষ সরাসরি সমর্থন করতে গররাজি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘আমি গ্রিক শিখছি’
বন-এর একটি গ্রিক রেস্টুরেন্টের এই পেপার ন্যাপকিনটির ওপর বেশ কিছু গ্রিক শব্দ ও তাদের জার্মান অনুবাদ ছাপা রয়েছে৷ যে সব জার্মান রাজনীতিক গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাসকে নতুন প্রস্তাবগুলো বোঝানোর চেষ্টায় রয়েছেন, তাদের হয়ত এই ন্যাপকিনের শব্দকোষ কাজে লাগতে পারতো!
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
জার্মানিতে গ্রিকদের কোনো কমতি নেই
জার্মানিতে ৩ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি গ্রিক অভিবাসী বাস করেন৷ বিদেশি-বহিরাগতদের কেন্দ্রীয় তালিকা অনুযায়ী গ্রিকরা হলেন জার্মানির পঞ্চম বৃহত্তম বিদেশি গোষ্ঠী: তুর্কি, পোলিশ, ইটালিয়ান এবং রোমানিয়ানদের ঠিক পরেই৷
ছবি: DW
শিয়রে সংকট
গ্রিস আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণেরএকটি দেড় বিলিয়ন ইউরো পরিমাণ কিস্তি সময়মতো শোধ করতে পারেনি; কাজেই গ্রিস বস্তুত দেউলিয়া হওয়ার মুখে৷ গ্রিসের পাওনাদাররা, আইএমএফ এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দাবি, গ্রিক সরকারকে শ্রম বাজারের পুনর্গঠন, অবসরভাতা হ্রাস ইত্যাদি ব্যয়সংকোচ নীতি কার্যকরি করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ROPI
আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে
বন-এর সনাতনপন্থি গ্রিক গির্জার প্রধান যাজক সোক্রাটিস ন’টালিস জানালেন যে, ব্যয়সংকোচ সংক্রান্ত প্রতিটি পদক্ষেপ কার্যকরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রিকদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাও বেড়েছে৷ জার্মান আইন মন্ত্রণালয়ের একটি জরিপ অনুযায়ী, ২০১২ সালে এই সংখ্যা বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
এক দেশ থেকে আরেক দেশে
জার্মানিতে গ্রিক খাবারের খুব চল, বিশেষ করে এই ধরনের ছোট্ট রেস্টুরেন্ট থেকে: যেমন স্যালাড আর সাৎসিকি সহযোগে গিরোস৷ কিন্তু এথেন্সের আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বহু জার্মান অভিবাসী গ্রিক তাঁদের মতামত ব্যক্ত করতে রাজি নন৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
গ্রিকদের মনস্থির করা উচিত
গ্রিসের এলেনা আলিকি পাপিরু প্রায় দশ বছর ধরে বন-এ আছেন; অনুবাদিকা হিসেবে কাজ করছেন৷ গ্রিসের মানুষ অতীতে একের পর এক দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার নির্বাচন করেছেন; এবার নেতা নির্বাচনের সময় তাদের আর একটু সাবধান হওয়া দরকার, বলেন এলেনা৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
খাবারের সময় রাজনীতি আর কার ভালো লাগে
বন-এর গ্রিক রেস্টুরেন্টগুলোর মালিকরা আর্থিক সংকট নিয়ে কথা বলতে রাজি নন৷ অতীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর তাঁদের রেস্টুরেন্টের খদ্দেরের সংখ্যাই কমে গেছে৷ যেখানে জীবিকার প্রশ্ন, সেখানে দেশ কিংবা প্রবাসের প্রতি বিশ্বস্ততা কিছুটা প্রচ্ছন্ন রাখাই বোধহয় শ্রেয়৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
গ্রিস ছাড়া ইউরোপ হয় না
বহু বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী, এমনকি রাজনীতিকদের অভিমত৷ কেননা ইউরোপীয় সভ্যতার সূচনাই তো গ্রিসে৷ ইউরোপ নামটাই এসেছে ইউরোপা নামধারী এক রাজকন্যের নাম থেকে৷ প্রাচীন গ্রিসের দেবতাদের প্রধান ভগবান জিয়ুস স্বয়ং প্রেমে পড়েছিলেন ইউরোপার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
এদিকে যে গণভোটে গ্রিসের মানুষ দ্বিতীয় সাহায্য কর্মসূচির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন, তার ফলাফল কিন্তু উপেক্ষা করা হচ্ছে৷ নতুন করে তৃতীয় দফার আরও বড় আকারের সাহায্য কর্মসূচি দিয়ে গ্রিসকে রক্ষা করার চেষ্টা চলছে৷ অবশ্যই তাতে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে অনেক নতুন শর্ত৷ ভালো করে পড়ে দেখলে বোঝা যাবে, যে আইনসঙ্গত এই কর্মসূচির মানদণ্ড কিন্তু আগের থেকেও অনেক কড়া৷
জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা পপুলিস্ট নেতা সিপ্রাস কি সেই কর্মসূচি অনুমোদন করাতে পারবেন? ইউরো এলাকার দেশগুলির সংসদগুলিও কি আগামী দুই বছরে আরও একবার কোটি কোটি ইউরো বিনিয়োগ করার ছাড়পত্র দিতে প্রস্তুত? এথেন্সে বসে যে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করে এসেছেন, যিনি সম্প্রতি দাতাদের ব্ল্যাকমেলার তকমা দিয়ে গালিগালাজ করেছেন, তাঁর প্রতি আস্থা রাখা যায় কি?
গ্রিসের জন্য পশ্চাদ্গতি
আগামী রবিবার পর্যন্ত এ সব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে৷ ততদিন পর্যন্ত সার্বিক এক কর্মসূচির কাঠামো প্রস্তুত করার কাজ চলবে৷ গ্রিসকে আবেদন ও কাগজপত্র পেশ করতে হবে৷ সেটা আদৌ সম্ভব হবে কিনা, তাও দেখতে হবে৷ তারপর দ্রুত গতিতে সেই সব কাগজপত্র পরীক্ষা করতে হবে৷ ইইউ কমিশনকে ঘোষণা করতে হবে, যে ইউরো এলাকার স্থিতিশীলতা বিপন্ন৷ কারণ এটাই ইউরোপীয় জরুরি তহবিল – ইএসএম কাজে লাগানোর পূর্বশর্ত৷ এতকাল কমিশন বলে এসেছে, যে গ্রিক সংকট ইউরো এলাকার জন্য মোটেই কোনো হুমকি নয়৷ এখন আচমকা সবকিছু বদলে গেল৷ এই দৃষ্টান্ত দেখিয়ে দিচ্ছে, গ্রিসকে রক্ষার্থে যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তার ভিত্তি মোটেই তেমন মজবুত নয়৷ কী ভাবেই বা সেটা সম্ভব? বার্লিন ও প্যারিসের নীতি-নির্ধারকরা একেবারে শেষ মুহূর্তে এই শেষ সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন৷
অথচ দুই পক্ষের সদিচ্ছা থাকলে গত এপ্রিল মাসেই প্রয়োজনীয় সাহায্য কর্মসূচি সম্পর্কে আলোচনা হতে পারতো৷ কিন্তু গ্রিক সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীন গোঁয়ারতুমির কারণে একেবারে শেষ মুহূর্তে এই চাপ সৃষ্টি হয়েছে৷ তারা এর মধ্যে দেশকে আর্থিক বিপর্যয়ের প্রান্তে ঠেলে দিয়েছে৷ অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের কার্যত জিম্মি করে আলেক্সিস সিপ্রাস লড়াই করে শেষ বারের মতো একটা সুযোগ আদায় করেছেন৷ এখনও তিনি সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার না করলে ‘গ্রেক্সিট' অনিবার্য৷ ইউরো এলাকায় গ্রিসকে তখন আর ধরে রাখা যাবে না৷