জার্মানির খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল বা সিডিইউ-এর সাংসদ ক্লাউস-পেটার ভিলশ ২০১০ সাল থেকেই সংকটপীড়িত ইউরো দেশগুলির জন্য ত্রাণ কর্মসূচির বিরোধিতা করে আসছেন৷ ‘পরিস্থিতির জন্য গ্রিকরা নিজেরাই দায়ি', বললেন ভিলশ৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ইউরো গোষ্ঠীর বৈঠকের আগে সংসদে ইউনিয়ন দলগুলির বাজেট বিষয়ক মুখপাত্র ক্লাউস-পেটার ভিলশ-কে টেলিফোনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন জার্মান বেতার সংস্থা ডিএলএফ-এর সম্পাদিকা বেটিনা ক্লাইন৷
বেটিনা ক্লাইন: তাহলে কি গ্রিসকে ইউরো জোনে রাখার সব প্রচেষ্টা বন্ধ করা উচিত?
ক্লাউস-পেটার ভিলশ: গ্রিক সরকারের সব দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে এ পক্ষ যে সব কিছু করার চেষ্টা করছে, সেটা দেখানোটা বোধহয় ভালো৷ কিন্তু আমার কাছে কার দোষ কতোটা, তা স্পষ্ট৷... (গ্রিস) নিজেই এই সংকট সৃষ্টি করেছে৷
(জার্মানির) বামদল বলছে, গ্রিসকে কোনো অর্থ প্রদান করা হয়নি; টাকা গেছে (গ্রিক) ব্যাংকগুলোর কাছে, তাদের আরো স্থিতিশীল করতে৷
এক-তৃতীয়াংশ গেছে ব্যাংকগুলোর কাছে৷....আর এক তৃতীয়াংশ গেছে গ্রিকদের ফোলা-ফাঁপা জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে, অর্থাৎ বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি মেটাতে৷ আরো এক-তৃতীয়াংশ যাচ্ছে গ্রিস থেকে পুঁজি পাচারের ইন্ধন জোটাতে৷ সে টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে৷
তাহলে কি আলাপ-আলোচনা চালিয়ে কোনো লাভ আছে বলে আপনার ধারণা?
সত্যি বলতে কি, মিস্টার চিরপাস-এর পিছন পিছন ধামাধরা হয়ে ঘুরে তাঁকে দয়া করে টাকাটা নিতে বলাটা খুব সম্মানের কাজ বলে আমার মনে হচ্ছে না৷ আমার কাছে ওটা খুবই অস্বাভাবিক৷
গ্রিস আদৌ ইউরোয় থাকতে চায় না, শুধু ইউরো থেকে বেরনোর জন্য সর্বোচ্চ মূল্য আদায় করতে চায় (বলে কারো-কারো ধারণা)৷ আপনার কী মত?
গত চার-পাঁচ মাস ধরে ওরা তা-ই করে আসছে৷ সেই সঙ্গে টাঁকশালে সমানে ইউরো ছাপা চলেছে৷ গ্রিসের আপৎকালীন নগদ তহবিল ইতিমধ্যে ৮৩ বিলিয়ন ইউরোয় গিয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এর প্রায় সবটাই কাঁচা টাকা, যা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে অন্য কোথাও জমা রাখা হচ্ছে, কিংবা সরাসরি বিদেশে পাচার করা হচ্ছে৷
কিন্তু গ্রেক্সিট, অর্থাৎ গ্রিসের ইউরো এলাকা থেকে বিদায় নেওয়ার দামটা কি পড়বে?
এখনো অবধি গ্রিসে আমাদের যে মূলধন আটক আছে, তার অনেকটাই খোয়া যাবে বলে আমাদের ধরে নিতে হবে৷ ওরা তা ফেরৎ দিতে পারবে না৷ এখন প্রশ্ন হলো: আমরা কি বাজে বকেয়ার পিছনে ভালো টাকা ঢালব, নাকি এখানেই ইতি টানব৷ প্রতিযোগিতায় টিঁকে থাকার ক্ষমতার বিচারে গ্রিসের ইউরো এলাকায় থাকার যোগ্যতা নেই৷ দেশে বিভিন্ন কাঠামোর সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে বহু বছর ধরে আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসা হচ্ছে, সে কাজও ঠিকমতো এগোচ্ছে না৷ কোনো কার্যকরি কর প্রশাসন নেই৷ ইইউ তার সংহতি তহবিল, কাঠামো তহবিল ইত্যাদি থেকে গ্রিসের জন্য যা করছে, তার শতকরা ৯৫ ভাগই ইতিমধ্যে ভরতুকি৷ ফেরৎ দিতে হবে মাত্র পাঁচ শতাংশ৷....তা-ও ওরা করে উঠতে পারছে না৷
গ্রিসে অভিবাসীদের চরম দুর্দশা
আর্থিক মন্দার কারণে সামগ্রিকভাবে গ্রিসের অবস্থা অত্যন্ত কাহিল৷ এই কাহিল দশার ভুক্তভোগী হচ্ছেন সেদেশে অবস্থানরত বৈধ, অবৈধ অভিবাসীরা৷ অনেকে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন ভিক্ষাবৃত্তি, জীবন কাটাচ্ছেন রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয় এবং ঘৃণা
‘ভয়ের সভ্যতায় স্বাগতম’ - অভিবাসীদের জন্য গ্রিস ক্রমশ ভয়ের রাজ্যে রূপ নিচ্ছে৷ তাদের নিত্যদিনের জীবন এখন সহিংসতা, বৈষম্য আর দারিদ্র্যের বিস্বাদে ভরা৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কিছুই বাকি নেই
কাগজপত্র ছাড়া দুই অভিবাসীকে একটু আগেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক এই দুই ব্যক্তি তাকিয়ে আছেন নিয়তির দিকে৷ গ্রিসে বসবাসকারী এরকম অসংখ্য অবৈধ ব্যক্তিকে প্রতিদিন গ্রেপ্তার করছে পুলিশ৷ গ্রেপ্তারের পর এদেরকে বাসে করে আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়৷ প্রতিদিন অবৈধ অভিবাসী ভর্তি ১০-১৫টি বাস আটক কেন্দ্রে পৌঁছায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বাক্সের মধ্যে জীবনযাপন
অর্থনৈতিক মন্দা গ্রিসের বাসিন্দাদের অত্যন্ত শক্তভাবে আঘাত করেছে৷ এর ফলে অনেকে হয়েছেন গৃহহীন, বাস করছেন রাস্তায়৷ ২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমানে সেদেশের রাস্তায় বসবাসকারী গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েছে ২৫ শতাংশ৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয়ের মধ্যে বসবাস
আনা টাসাভি একজন সিরীয় শরণার্থী৷ কোন কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে এথেন্সে বাস করেন তিনি৷ তিনি দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধুর বাড়িতে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকেন৷ তার মধ্যে সবসময় আতঙ্ক কাজ করে, এই বুঝি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবেন কিংবা ডানপন্থী গুণ্ডাদের আক্রমণের শিকার হবেন৷ নিজের দেশে ফেরাটাও তার জন্য অনেক বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বহিরাগত
একজন অভিবাসী নারী এবং তার শিশু এথেন্সের আটক কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন৷ অবৈধ হিসেবে আটক হওয়ায় কয়েকমাস কারাভোগ করতে হয়েছে তাদের৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বৈশ্বিক অর্থনীতি
গ্রিসে আর্থিক মন্দার কারণে সেদেশের সরকার এবং বিশ্বায়নে তাদের ভূমিকার উপর গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ব্যাপক ভিড়
এথেন্সের পররাষ্ট্র দপ্তরের সামনে প্রতিদিন ভিড় করেন অসংখ্য অভিবাসী৷ উদ্দেশ্য গ্রিসে বসবাসের একটি বৈধ কাগজ বের করার চেষ্টা করা৷ খুব ভোর থেকে গভীর রাত অবধি অপেক্ষা করেন তারা, কিন্তু এদের মধ্য থেকে খুব কম লোকই সেদেশে ছয়মাস বৈধভাবে বসবাসের কাগজ পান৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কোন ভবিষ্যত নেই?
‘এমনিতেই এথেন্সে বসবাস অত্যন্ত কঠিন, আর একজন অভিবাসী হিসেবে অসম্ভব৷ আমি এখানে এসেছিলাম একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায়, কিন্তু এখানে কোন ভবিষ্যতই নেই’, ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন এক অভিবাসী৷ নিজের নাম প্রকাশে আগ্রহী নন তিনি৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কঠিন বাস্তবতা
ইউরোপে আগমনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গ্রিসে আসেন আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ৷ কিন্তু এরপর তারা এক জটিলতা থেকে অন্য জটিলতার মুখোমুখি হন৷ গ্রিসের বাস্তবতা এখন বড় কঠিন৷
ছবি: DW/ A. Stahl
গ্রিক ট্রাজেডি
এথেন্সের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এরকম গ্রাফিটির সংখ্যা অনেক৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব গ্রাফিটি গ্রিসের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে স্থানীয়দের মনোভাব ফুটিয়ে তোলে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
যাওয়ার কোন জায়গা নেই
গ্রিসে বসবাসরত অভিবাসীরা ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন৷ তাদের জন্য কোন চাকুরি নেই, ভবিষ্যত অন্ধকার৷ অনেক অভিবাসী শেষমেষ বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি আর জীবন কাটান রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
11 ছবি1 | 11
২০১০ সালের মে মাসে জার্মান সংসদের ভোটে যে পাঁচজন সদস্য গ্রিসের জন্য আর্থিক সাহায্য এবং সাধারণভাবে ইউরো ত্রাণ কর্মসূচির বিরুদ্ধে ভোট দেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন সিডিইউ সাংসদ ক্লাউস-পেটার ভিলশ৷