জিব্রাল্টার প্রণালীতে আটক থেকে আদালতের নির্দেশে মুক্তির পর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে সোমবার গ্রিসের দিকে যাত্রা করেছে ইরানি ট্যাংকার৷
বিজ্ঞাপন
গ্রেস ১ নাম বদলে দারিয়া ১ নাম ধারণ করে ট্যাংকারটি রোববার ১১টার দিকে জিব্রাল্টার থেকে যাত্রা করে৷ সোমবার সকালে এটি গ্রিসের কালামাতায় অবস্থান করছিল বলে রেফিনিটিভ জাহাজ ট্র্যাকিংয়ে ধরা পড়ে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷
এমন পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে তেহরান বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ট্যাংকারটি আটকের কোনো পদক্ষেপ নিলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ৷
যুক্তরাজ্যের রাজকীয় নৌবাহিনীর মেরিন ইউনিটের সদস্যদের সহায়তায় জিব্রাল্টারের কর্মকর্তারা ৪ জুলাই ইরানের সুপার-ট্যাংকার গ্রেস ১ জব্দ করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ওই ট্যাংকারটিতে ইরান থেকে সিরিয়ায় অশোধিত তেল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে সন্দেহ করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার জিব্রাল্টার প্রণালী থেকে ট্যাংকারটিকে মুক্তি দেওয়া হলেও পরদিন ওয়াশিংটনের একটি ফেডারেল আদালত ট্যাংকারটি আটকের পরোয়ানা জারি করে৷ ইরানের সস্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এর সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে দাবি তুলে ওয়াশিংটন ট্যাংকারটি আটক রাখতে চেয়েছিল৷
তবে রোববার জিব্রাল্টার বলছে, ইইউ আইন অনুযায়ী তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওই অনুরোধ রাখতে পারছে না৷ এনিয়ে গ্রিসও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি৷
ইরান বলছে. যুক্তরাষ্ট্র ট্যাঙ্কারটি জব্দের কোনো চেষ্টা করলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ৷ জিব্রাল্টার থেকে জাহাজটি যাত্রা শুরুর পর সোমবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়র মুখপাত্র আব্বাস মুসাবি বলেছেন, ''যুক্তরাষ্ট্র যদি জাহাজটি আটকের অনুরাধ করে বা এ জাতীয় পদক্ষেপ, এমনকি এ নিয়ে কথা বললেও উন্মুক্ত সমুদ্রে জাহাজ চলাচল ব্যবস্থা বিপন্ন হবে৷''
ট্যাংকারটিকে ঠিকভাবে গন্তব্যে নিয়ে আসতে ইরান তাদের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন দূতাবাসে প্রয়োজনীয় সতর্কতা জারি করেছে৷ দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা বলেছেন, ব্রিটেন ও ইরানের সম্পর্কে সংকট তৈরি হয়েছে৷ ইরানের ট্যাংকারটি গন্তব্যে না পৌঁছা পর্যন্ত তেহরান ব্রিটিশ পতাকাবাহী যে ট্যাংকার আটক করেছে তার সুরাহা হবে না৷
জিব্রাল্টারে ইরানি ট্যাংকার জব্দের পর ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী গত ১৯ জুলাই হরমুজ প্রণালী থেকে একটি ব্রিটিশ তেলবাহী ট্যাংকার আটক করে৷
ইরানের জাতীয় সংসদের জাতীয় সুরক্ষা এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য হেশমাতুল্লাহ ফালাহাতপিশেহ বলেন, ''ইরানী তেল ট্যাংকার তার গন্তব্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত ব্রিটিশদের অবশ্যই এই সঙ্কট শেষ করতে সহায়তা করতে হবে৷ এর অর্থ হলো ব্রিটেনের সঙ্গে সংকট শেষ হয়নি। তেল ট্যাংকার নিয়ে এই সংকট শেষ করার প্রাথমিক দায়বদ্ধতাও ব্রিটেনের৷''
জিব্রাল্টার প্রণালীতে ইরানি তেল ট্যাংকার জব্দের জন্য যুক্তরাজ্যকে মারত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।
এসআই/কেএম (রয়টার্স)
ইরান পরমাণু চুক্তি কী ও কেন?
অ্যামেরিকা একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলেও বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামের এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ?
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/IIPA
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
চুক্তির প্রথম আট বছরে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষণাও বন্ধ থাকবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থা আইএইএ ইরানের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া এক্ষেত্রে আইএইএ-র মূল্যায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷
ছবি: Kazem Ghane/AFP/Getty Images
পরমাণু ভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ
চুক্তির আওতায় ইরান ৩,৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর অঙ্গীকার করেছিল৷ অর্থাৎ ১৫ বছরের জন্য ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি এমন মানের ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে থাকার কথা নয়৷ ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ আপাতত বন্ধ থাকছে৷
ছবি: BEHROUZ MEHRI/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা শিথিল
ইরান শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ইরান আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল৷ অ্যামেরিকার চাপের মুখে সেই সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না ইরান৷
ছবি: FARS
চুক্তিভঙ্গের পরিণতি
পরমাণু কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ফলে একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে ইরানের কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে রকম প্রচেষ্টা চালালে আবার সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিধান মেনে নিয়েছে ইরান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jenis
চুক্তির মেয়াদ শেষের অবস্থা
সমালোচকরা বার বার চুক্তির ‘সানসেট ক্লজ’ বা মেয়াদ শেষের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন৷ তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও ইরান চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে৷ তবে চুক্তির প্রবক্তারা মনে করিয়ে দেন, যে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের উপর ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে৷
ছবি: Fars
ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বাড়বাড়ন্ত ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সে দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির কড়া সমালোচনা করেন৷ ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশও বিষয়ে একমত৷ তবে ‘সফল’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তা কাজে লাগিয়ে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা৷