1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্রিসের সমুদ্রে উদ্বাস্তুদের ওপর আক্রমণ

৩০ জুন ২০২০

তুরস্ক থেকে গ্রিসের পথে উদ্বাস্তুদের ওপর আক্রমণ চালালো কিছু মুখোশধারী ব্যক্তি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কাজ করেছে গ্রিসের কোস্ট গার্ড।

ছবি: Getty Images/AFP/A. Messinis

'মা ওরা আমাদের মেরে ফেলবে।' গত ৪ জুন ঠিক এ ভাবেই আর্তচিৎকার করেছিল শিশুটি। মুখোশ পরা কয়েকজন ততক্ষণে উঠে পড়েছে তাদের নৌকোয়। ছুরি দিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে নৌকোর ইঞ্জিন। ফুটো করে দেওয়া হচ্ছে মেঝে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে। এই সবটাই ঘটছে সমুদ্রের মাঝখানে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতোও কেউ নেই।

দীর্ঘ দিন ধরেই তুরস্কের পথ ধরে ইউরোপে পালাচ্ছেন সিরিয়া, আফগানিস্তানের উদ্বাস্তুরা। যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে এটাই তাঁদের পালানোর একমাত্র পথ। তুরস্কে দালালদের টাকা দিলে গ্রিসের নৌকোয় ওঠার অনুমতি মেলে। সেই নৌকো করেই ইউরোপে নতুন স্বপ্নের খোঁজে পাড়ি দেন উদ্বাস্তুরা

গত ৪ জুনও সেভাবেই নৌকোয় চেপে বসেছিলেন অনেকে। ভূমধ্যসাগর দিয়ে নৌকো যখন গ্রিসের জলে ঢোকে তখনই ঘটে বিপত্তি। হঠাৎই সকলে দেখতে পান, দূরে দাঁড়িয়ে আছে কোস্ট গার্ডের একটি জাহাজ। আর সেখান থেকে দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে আরেকটি নৌকো। চার-পাঁচজন মুখ ঢাকা ব্যক্তি সেই নৌকো করে চলে আসেন উদ্বাস্তুদের নৌকোর কাছে। রুল দিয়ে মারতে মারতে তারা উঠে উদ্বাস্তুদের নৌকোয়। নষ্ট করে দেওয়া হয় ইঞ্জিন, ভেঙে দেওয়া হয় সব কিছু। প্রাণ বাঁচাতে একের পর এক উদ্বাস্তু সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে শুরু করেন। এই সবটাই ঘটেছে গ্রিসের লেসবস দ্বীপের কাছে।

শরণার্থীদের জীবন আজও তমসাচ্ছন্ন

01:26

This browser does not support the video element.

দীর্ঘ দিন ধরে জলপথে আসা উদ্বাস্তুদের নিয়ে কাজ করছে একটি সংস্থা। জলে উদ্বাস্তুরা সমস্যায় পড়লে ওই সংস্থাটি হেল্পলাইন নম্বরে ফোন পায়। গোটা ঘটনাটির পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা তাদের কাছে আছে। তাদের দাবি, সব কিছু খতিয়ে দেখে বোঝাই যাচ্ছে ঘটনাটি গ্রিসের কোস্ট গার্ডরাই ঘটিয়েছে। কিন্তু বিষয়টি প্রমাণ করার মতো কোনও তথ্য নেই। কারণ যারা উদ্বাস্তুদের নৌকো আক্রমণ করেছিল, তারা কেউ ইউনিফর্মে ছিল না। মুখ ঢাকা ছিল। যে নৌকোটি করে তারা এসেছিল, সেই নৌকোটিতেও কোনও সংস্থার নাম লেখা ছিল না। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দূরে গ্রিস কোস্টগার্ডের জাহাজ তাঁরা দেখতে পেয়েছেন।

একবার নয়, মুখোশধারী ব্যক্তিদের এমন আক্রমণ বার বার ঘটেছে। ৪ জুনের ঘটনার পরে ফের ৫ জুন একই ঘটনা ঘটে। যদিও ৫ জুন গোটা ঘটনার ভিডিও করতে পারেননি উদ্বাস্তুরা।

গ্রিসের কোস্টগার্ডের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছিল ডিডাব্লিউ। তারা স্বাভাবিক ভাবেই ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে। শুধু তাই নয়, তারা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক জলসীমার আইন মেনেই তারা কাজ করে। উদ্বাস্তু বিষয়ে যা যা আইন রয়েছে, তাও তারা মেনে চলে। যদিও বিষয়টিকে এখানেই ছেড়ে দিতে চাইছে না বিভিন্ন অধিকার রক্ষা সংস্থা। উদ্বাস্তুদের ভিডিও থেকে তারা যা তথ্য সংগ্রহ করেছে, তা থেকে স্পষ্ট, এ কাজ গ্রিসের কোস্টগার্ডরাই ঘটিয়েছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপের কথাও ভাবছে তারা।

তুরস্ক থেকে গ্রিসে পৌঁছতে গিয়ে এর আগেও একাধিক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। শিশুর মৃতদেহ জলে ভাসতে দেখা গিয়েছে। ঘটেছে একাধিক নৌকোডুবির ঘটনা। বিভিন্ন সময় উদ্বাস্তুদের আটকাতে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে গ্রিস। বহু উদ্বাস্তু আবার ইউরোপে পৌঁছতেও পেরেছেন। বহু উদ্বাস্তু পালানোর পথে পরিবারকে হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ অবস্থা। তারই মধ্যে নতুন এই ঘটনা সাড়া ফেলে দিয়েছে। সকলেই জানতে চাইছেন, কারা ঘটালো এই ঘটনা।

এসজি/জিএইচ (ডিডাব্লিউ)