গ্রিস সংকটের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সেদেশের নাগরিকরা উৎকণ্ঠিত হয়ে ব্যাংক থেকে অর্থ তোলার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ ফলে ব্যাংকগুলো তহবিল শূন্য হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
এই পরিস্থিতিতে সোমবার সকালে এক গেজেট ঘোষণার মাধ্যমে আগামী ৬ জুলাই পর্যন্ত সব ব্যাংক বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে গ্রিস৷ এছাড়া এটিএম থেকে অর্থ তোলার ক্ষেত্রে সীমাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ ফলে গ্রিকরা এটিএম থেকে ৬০ ইউরোর বেশি তুলতে পারবেন না৷
এর আগে দাতাদের প্রস্তাব নিয়ে সিদ্ধান্ত পেতে আগামী ৫ জুলাই গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস৷ শুক্রবার হঠাৎ করে দেয়া এই ঘোষণার সময় ঋণের অর্থ (মঙ্গলবারের মধ্যে আইএমএফ-কে ১.৫ বিলিয়ন ইউরো দিতে হবে) ফেরত দেয়ার সময়সীমা বাড়ানোরও আহ্বান জানান গ্রিক প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্তু শনিবার ইউরোজোনের অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলনে গ্রিসের সেই প্রস্তাব না মানার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ ফলে সংকট আরও ঘণীভূত হয়ে ওঠে৷ এরপরই শুরু হয় গ্রিকদের অর্থ তোলার হিড়িক৷ এটিএমগুলোতে লম্বা লাইন দিয়ে গ্রিকরা অর্থ তোলা শুরু করেন৷
গ্রিসে অভিবাসীদের চরম দুর্দশা
আর্থিক মন্দার কারণে সামগ্রিকভাবে গ্রিসের অবস্থা অত্যন্ত কাহিল৷ এই কাহিল দশার ভুক্তভোগী হচ্ছেন সেদেশে অবস্থানরত বৈধ, অবৈধ অভিবাসীরা৷ অনেকে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন ভিক্ষাবৃত্তি, জীবন কাটাচ্ছেন রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয় এবং ঘৃণা
‘ভয়ের সভ্যতায় স্বাগতম’ - অভিবাসীদের জন্য গ্রিস ক্রমশ ভয়ের রাজ্যে রূপ নিচ্ছে৷ তাদের নিত্যদিনের জীবন এখন সহিংসতা, বৈষম্য আর দারিদ্র্যের বিস্বাদে ভরা৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কিছুই বাকি নেই
কাগজপত্র ছাড়া দুই অভিবাসীকে একটু আগেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক এই দুই ব্যক্তি তাকিয়ে আছেন নিয়তির দিকে৷ গ্রিসে বসবাসকারী এরকম অসংখ্য অবৈধ ব্যক্তিকে প্রতিদিন গ্রেপ্তার করছে পুলিশ৷ গ্রেপ্তারের পর এদেরকে বাসে করে আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়৷ প্রতিদিন অবৈধ অভিবাসী ভর্তি ১০-১৫টি বাস আটক কেন্দ্রে পৌঁছায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বাক্সের মধ্যে জীবনযাপন
অর্থনৈতিক মন্দা গ্রিসের বাসিন্দাদের অত্যন্ত শক্তভাবে আঘাত করেছে৷ এর ফলে অনেকে হয়েছেন গৃহহীন, বাস করছেন রাস্তায়৷ ২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমানে সেদেশের রাস্তায় বসবাসকারী গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েছে ২৫ শতাংশ৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয়ের মধ্যে বসবাস
আনা টাসাভি একজন সিরীয় শরণার্থী৷ কোন কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে এথেন্সে বাস করেন তিনি৷ তিনি দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধুর বাড়িতে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকেন৷ তার মধ্যে সবসময় আতঙ্ক কাজ করে, এই বুঝি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবেন কিংবা ডানপন্থী গুণ্ডাদের আক্রমণের শিকার হবেন৷ নিজের দেশে ফেরাটাও তার জন্য অনেক বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বহিরাগত
একজন অভিবাসী নারী এবং তার শিশু এথেন্সের আটক কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন৷ অবৈধ হিসেবে আটক হওয়ায় কয়েকমাস কারাভোগ করতে হয়েছে তাদের৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বৈশ্বিক অর্থনীতি
গ্রিসে আর্থিক মন্দার কারণে সেদেশের সরকার এবং বিশ্বায়নে তাদের ভূমিকার উপর গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ব্যাপক ভিড়
এথেন্সের পররাষ্ট্র দপ্তরের সামনে প্রতিদিন ভিড় করেন অসংখ্য অভিবাসী৷ উদ্দেশ্য গ্রিসে বসবাসের একটি বৈধ কাগজ বের করার চেষ্টা করা৷ খুব ভোর থেকে গভীর রাত অবধি অপেক্ষা করেন তারা, কিন্তু এদের মধ্য থেকে খুব কম লোকই সেদেশে ছয়মাস বৈধভাবে বসবাসের কাগজ পান৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কোন ভবিষ্যত নেই?
‘এমনিতেই এথেন্সে বসবাস অত্যন্ত কঠিন, আর একজন অভিবাসী হিসেবে অসম্ভব৷ আমি এখানে এসেছিলাম একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায়, কিন্তু এখানে কোন ভবিষ্যতই নেই’, ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন এক অভিবাসী৷ নিজের নাম প্রকাশে আগ্রহী নন তিনি৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কঠিন বাস্তবতা
ইউরোপে আগমনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গ্রিসে আসেন আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ৷ কিন্তু এরপর তারা এক জটিলতা থেকে অন্য জটিলতার মুখোমুখি হন৷ গ্রিসের বাস্তবতা এখন বড় কঠিন৷
ছবি: DW/ A. Stahl
গ্রিক ট্রাজেডি
এথেন্সের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এরকম গ্রাফিটির সংখ্যা অনেক৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব গ্রাফিটি গ্রিসের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে স্থানীয়দের মনোভাব ফুটিয়ে তোলে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
যাওয়ার কোন জায়গা নেই
গ্রিসে বসবাসরত অভিবাসীরা ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন৷ তাদের জন্য কোন চাকুরি নেই, ভবিষ্যত অন্ধকার৷ অনেক অভিবাসী শেষমেষ বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি আর জীবন কাটান রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
11 ছবি1 | 11
এদিকে, সোমবার বিকেলে গ্রিসের জন্য নতুন প্রস্তাব নিয়ে হাজির হবেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার৷ ইইউ-র অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিশনার জানিয়েছেন এই তথ্য৷ ফ্রান্সের একটি বেতারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইয়ুংকারের নতুন প্রস্তাবে সংকট থেকে উত্তরণের নতুন পথের কথা বলা হবে৷ সবাই সেই পথ অনুসরণ করবে বলেও মনে করেন ইইউ কমিশনার৷
গণভোট প্রসঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ বলেছেন, সেটা গ্রিক নাগরিকদের অধিকার৷ ‘‘ইউরোজোনে তাঁরা থাকবে নাকি থাকবেনা, সেটা ঠিক করার অধিকার তাঁদের রয়েছে,'' সোমবার বলেন তিনি৷ গ্রিস চাইলে বিষয়টি নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে কথা বলতে পারে জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট গ্রিস ও দাতাদের মধ্যে এখনও চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷