‘না' ভোট দিয়ে গ্রিসের জনগণ বেইলআউট প্রত্যাখ্যান করেছে৷ তাতে দেশটির ইউরোজোন থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা বাড়লেও সোমবার অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারুফাকিস পদত্যাগও করেছেন৷ ইইউ-র সঙ্গে আলোচনার স্বার্থেই তাঁর এই পদত্যাগ৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার ঋণদাতাদের পুনরুদ্ধারের প্রস্তাব, অর্থাৎ বেইলআউট নিয়ে গ্রিসে গণভোট হয়েছে৷ সেখানে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ ‘না' ভোটের বিপরীতে মাত্র ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ ‘হ্যাঁ' ভোট পড়ায় বেইলআউটের প্রস্তাব পরিষ্কারভাবেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে৷
ভোটাররা ব্যাপকহারে ‘না' ভোট দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন৷ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা খুব সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ আপনারা আমাকে যে কর্তৃত্ব দিয়েছেন সে সম্পর্কে আমি সচেতন, তা যে বিচ্ছেদের জন্য নয় এটাও আমি জানি৷''
এদিকে সোমবার গ্রিসের অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারুফাকিস পদত্যাগ পদত্যাগ করেছেন৷ ‘না' ভোটের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার পেছনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা স্বঘোষিত ‘মার্ক্সপন্থি অর্থনীতিবিদ' ইয়ানিস তাঁর স্বভাবসুলভ বক্তৃতার মাধ্যমে ইউরোজোনভুক্ত অন্যান্য দেশের নেতাদের বিরাগভাজন হয়েছেন৷ গ্রিসের গণমাধ্যম বলছে, গণভোটের পর ইইউ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির করার স্বার্থেই পদত্যাগ করেছেন ইয়ানিস ভারুফাকিস৷
নতুন অর্থমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়েও শুরু হয়ে গেছে জল্পনা-কল্পনা৷ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছে ইউক্লিড সাকালোটোস-এর নাম৷ গত কয়েক মাসে ঋণদাতাদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টায় গ্রিসের প্রধান সমঝোতাকারীর ভূমিকা পালন করেছেন৷
গণভোটে গ্রিসের অধিকাংশ ভোটার দাতাদের শর্ত মেনে ঋণ সহায়তা না নেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস স্বাভাবিক কারণেই উচ্ছ্বসিত৷ তবে ইউরোজোন থেকে বেরিয়ে যাওয়া এখনো তাঁর প্রত্যাশিত নয়, জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, গ্রিস আলোচনায় বসার জন্য মুখিয়ে আছে৷
গ্রিক হওয়ার বিপদ
গ্রিসের ইউরো এলাকায় থাকা বা না থাকা নিয়ে বিতর্ক যখন চরমে, ঠিক সেই মুহূর্তে বন শহরের গ্রিক বাসিন্দারা স্বদেশবাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও, কোনো পক্ষ সরাসরি সমর্থন করতে গররাজি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘আমি গ্রিক শিখছি’
বন-এর একটি গ্রিক রেস্টুরেন্টের এই পেপার ন্যাপকিনটির ওপর বেশ কিছু গ্রিক শব্দ ও তাদের জার্মান অনুবাদ ছাপা রয়েছে৷ যে সব জার্মান রাজনীতিক গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাসকে নতুন প্রস্তাবগুলো বোঝানোর চেষ্টায় রয়েছেন, তাদের হয়ত এই ন্যাপকিনের শব্দকোষ কাজে লাগতে পারতো!
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
জার্মানিতে গ্রিকদের কোনো কমতি নেই
জার্মানিতে ৩ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি গ্রিক অভিবাসী বাস করেন৷ বিদেশি-বহিরাগতদের কেন্দ্রীয় তালিকা অনুযায়ী গ্রিকরা হলেন জার্মানির পঞ্চম বৃহত্তম বিদেশি গোষ্ঠী: তুর্কি, পোলিশ, ইটালিয়ান এবং রোমানিয়ানদের ঠিক পরেই৷
ছবি: DW
শিয়রে সংকট
গ্রিস আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণেরএকটি দেড় বিলিয়ন ইউরো পরিমাণ কিস্তি সময়মতো শোধ করতে পারেনি; কাজেই গ্রিস বস্তুত দেউলিয়া হওয়ার মুখে৷ গ্রিসের পাওনাদাররা, আইএমএফ এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দাবি, গ্রিক সরকারকে শ্রম বাজারের পুনর্গঠন, অবসরভাতা হ্রাস ইত্যাদি ব্যয়সংকোচ নীতি কার্যকরি করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ROPI
আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে
বন-এর সনাতনপন্থি গ্রিক গির্জার প্রধান যাজক সোক্রাটিস ন’টালিস জানালেন যে, ব্যয়সংকোচ সংক্রান্ত প্রতিটি পদক্ষেপ কার্যকরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রিকদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাও বেড়েছে৷ জার্মান আইন মন্ত্রণালয়ের একটি জরিপ অনুযায়ী, ২০১২ সালে এই সংখ্যা বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
এক দেশ থেকে আরেক দেশে
জার্মানিতে গ্রিক খাবারের খুব চল, বিশেষ করে এই ধরনের ছোট্ট রেস্টুরেন্ট থেকে: যেমন স্যালাড আর সাৎসিকি সহযোগে গিরোস৷ কিন্তু এথেন্সের আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বহু জার্মান অভিবাসী গ্রিক তাঁদের মতামত ব্যক্ত করতে রাজি নন৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
গ্রিকদের মনস্থির করা উচিত
গ্রিসের এলেনা আলিকি পাপিরু প্রায় দশ বছর ধরে বন-এ আছেন; অনুবাদিকা হিসেবে কাজ করছেন৷ গ্রিসের মানুষ অতীতে একের পর এক দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার নির্বাচন করেছেন; এবার নেতা নির্বাচনের সময় তাদের আর একটু সাবধান হওয়া দরকার, বলেন এলেনা৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
খাবারের সময় রাজনীতি আর কার ভালো লাগে
বন-এর গ্রিক রেস্টুরেন্টগুলোর মালিকরা আর্থিক সংকট নিয়ে কথা বলতে রাজি নন৷ অতীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর তাঁদের রেস্টুরেন্টের খদ্দেরের সংখ্যাই কমে গেছে৷ যেখানে জীবিকার প্রশ্ন, সেখানে দেশ কিংবা প্রবাসের প্রতি বিশ্বস্ততা কিছুটা প্রচ্ছন্ন রাখাই বোধহয় শ্রেয়৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
গ্রিস ছাড়া ইউরোপ হয় না
বহু বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী, এমনকি রাজনীতিকদের অভিমত৷ কেননা ইউরোপীয় সভ্যতার সূচনাই তো গ্রিসে৷ ইউরোপ নামটাই এসেছে ইউরোপা নামধারী এক রাজকন্যের নাম থেকে৷ প্রাচীন গ্রিসের দেবতাদের প্রধান ভগবান জিয়ুস স্বয়ং প্রেমে পড়েছিলেন ইউরোপার৷