সমুদ্রের নিচে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন দেখার সৌভাগ্য সাধারণত প্রত্নতাত্ত্বিক ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে৷ গ্রিসে পানির নিচে প্রথম মিউজিয়াম পর্যটকদেরও সেই সুযোগ করে দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
গ্রিসের ঐতিহাসিক সম্পদ শুধু জমির উপরে নয়, পানির নীচেও ছড়িয়ে রয়েছে৷ এজিয়ান সাগরের উত্তরে আলোনিসস দ্বীপের কাছে দেশের প্রথম আন্ডারওয়াটার মিউজিয়াম অবস্থিত৷ ডাইভিং প্রশিক্ষক হিসেবে ইলিয়ানা ইয়ালামা পানির নীচে ভ্রমণের আয়োজন করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি একজন ডাইভিং প্রশিক্ষক৷ গত পাঁচ বছর ধরে এই শিল্পক্ষেত্রে কাজ করছি৷ মানুষের সামনে ভিন্ন এক জগতের দ্বার খুলে দিতে আমার অসাধারণ লাগে৷ বিশেষ করে এখন পানির নীচে মিউজিয়াম হবার পর৷’’
আলোনিসস ও পেরিস্টেরা দ্বীপের মাঝে সমুদ্রের নীচে প্রায় চার হাজার প্রাচীন অ্যাম্ফোরে বা মাটির কলসি ছড়িয়ে রয়েছে৷ সে কারণে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে এই মূল্যবান সম্পদ পরিদর্শন করতে হয়৷ ইলিয়ানা ইয়ালামা বলেন, ‘‘আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমি আপনাদের আরও কিছুটা সতর্ক করে দিতে চাই, যাতে চিরকালের জন্য এই সৌধ অক্ষত রাখা সম্ভব হয়৷ তাই আমাদের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের চারিপাশে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷’’
গ্রিসের প্রথম ‘আন্ডারওয়াটার মিউজিয়াম’
04:24
পর্যটকরা প্রায় ৪০ মিনিট ধরে পানির নীচের মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে পারেন৷ প্রায় ২৮ মিটার গভরে প্রাচীন এক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়৷ জাহাজের কাঠ প্রায় পুরোপুরি ক্ষয়ে গেছে, মালপত্র হিসেবে শুধু সুরার পাত্রগুলি দেখা যায়৷ সেটি প্রায় আড়াই হাজার বছর পুরানো এক বাণিজ্য জাহাজ বলে অনুমান করা হয়৷ অজানা কোনো কারণে অগ্নিকাণ্ডের ফলে এথেন্সের জাহাজটি ডুবে গিয়েছিল৷ পর্যটকদের কাছে সেই দৃশ্য সত্যি এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা৷ সেসিলিয়া ডার্সি সেই সুযোগ পেয়ে আপ্লুত৷ তিনি বলেন, ‘‘মিউজিয়ামে গেলে সব সময়ে ফলক ও লিখিত বর্ণনা দেখা যায়৷ এখানেও সে সব রয়েছে৷ সাধারণ মিউজিয়ামের সঙ্গে মিল দেখলে বেশ মজা লাগে৷ সম্পূর্ণ অন্যরকম পরিবেশে এমন বৈশিষ্ট্য সত্যি অসাধারণ৷’’
আকার অনুযায়ী পাত্রগুলির শৈলির মধ্যে পার্থক্য বোর্ডে তুলে ধরা হয়েছে৷ পানির নিচে মিউজিয়ামের দৌলতে এতকাল অপরিচিত আলোনিসস দ্বীপে আরও পর্যটকের সমাগম হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ ফ্রান্সের পর্যটকরা সেখানে গিয়ে বেশ সন্তুষ্ট৷ প্যারিসের পর্যটক ফাব্রিস ডেরসি বলেন, ‘‘আমাদের ভাগ্য ভালো৷ আমরা প্রায় বিশ্বের সর্বত্র ডাইভিং করেছি৷ এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ অ্যামেরিকা, ক্যারিবীয় দ্বিপপুঞ্জে গেছি৷ এই ছুটিকে সত্যি পারিবারিক প্রকল্প বলা চলে৷ যখন জানতে পারলাম যে এখানে আড়াই হাজার বছর পুরানো জাহাজের ধ্বংসস্তূপের কাছে ডাইভিং করা যায়, সঙ্গে সঙ্গে বুকিং করে ফেললাম৷ সত্যি অসাধারণ৷’’
আলোনিসস দ্বীপের বাসিন্দারাও তাদের নতুন আকর্ষণ সম্পর্কে উৎসাহী৷ পেট্রোস ভাফনিস শুধু দ্বীপের মেয়র নন, তিনি এর মধ্যে বেশ দক্ষ ডুবুরি হয়ে উঠেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মেয়র হিসেবে ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করি৷ নিজেই ডুব মেরে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখা আমার জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল৷’’
যারা ডাইভিং করতে পারেন না, তাঁদের জন্য আলোনিসস দ্বীপের বুকেও একটি মিউজিয়াম গড়ে তোলা হয়েছে৷ সেখানে পানির নিচের সম্পদের ছবি, ভিডিও ও কিছু নিদর্শন দেখা যায়৷ একটি মডেলে জাহাজের রূপরেখা বরাবর পাত্রগুলি দেখা যাচ্ছে৷ ভারচুয়াল রিয়ালিটি চশমা পরে মিউজিয়ামের দর্শকরা সমুদ্রের তলদেশের অনুভূতি পেতে পারেন৷ প্রকৃত অর্থে প্রাচীন গ্রিসের ইতিহাসে ডুব দেবার সুযোগ সত্যি আকর্ষণীয় বটে৷
টেওডোরা মাভ্রোপুলোস/এসবি
জার্মানির অদ্ভুত সব জাদুঘর
নির্যাতনের বস্তু আর মানুষের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে শুরু করে প্রস্রাবের পাত্র– এমন অদ্ভুত সব বিষয় নিয়েও জাদুঘর আছে জার্মানিতে৷ ছবিঘরে পরিচিত হোন এমন কিছু জাদুঘরের সঙ্গে৷
ছবি: Mittelalterliches Foltermuseum, Rüdesheim
শিকারি কুকুরের জাদুঘর
জার্মানির বহু মানুষের কাছে কুকুরের খুব কদর৷ আবার অনাদিকাল থেকে শিকারি কুকুর নিয়েও আগ্রহের কমতি নেই মানুষের৷ শিকারি কুকুর নিয়ে জার্মানির পাসাউ শহরে রয়েছে একটি জাদুঘর৷ ‘ডাকেলমুজিয়ুম’-এ দেখা মিলবে সাড়ে চার হাজার নানা রকমের শিকারি কুকুরের৷ ২০১৮ সালে চালু হয় বিশ্বের প্রথম এই শিকারি কুকুরের জাদুঘরটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Weigel
থলের জাদুঘর
পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন বস্তুগুলোর একটি বস্তা বা থলে৷ নিহাইম এলাকার থলে জাদুঘরে আছে ৭ হাজার রকমের থলের প্রদর্শনী৷ সময়ের ধারাবাহিকতায় এসবের বিবর্তনও দেখা যাবে সেখানে৷ উপরের ছবিতে ক্ষুদ্র একটি ‘মেল- ব্যাগ’ দেখা যাচ্ছে , যা ব্যবহৃত হয়েছিল ১৯৩০ সালে৷
রাতে প্রস্রাব করার জন্য অনেক দেশে বিছানার নীচে ছোট পাত্র রাখা হয়ে থাকে৷ এ ধরনের ৬০০টি পাত্র নিয়ে একটি জাদুঘর গড়ে তুলেছেন সৌখিন সংগ্রাহক এলিজাবেথ হেসে৷ লোয়ার স্যাক্সনির ভাসব্যুটেল এলাকায় অবস্থিত তাঁর এই ব্যক্তিগত জাদুঘর৷ ছবিতে রয়েছে, এলিজাবেথের সংগ্রহে থাকা সবচেয়ে পুরাতন প্রস্রাব পাত্র৷ ১৮৭৫ সালের প্রস্রাব পাত্র এটি৷
ছবি: Elisabeth Hesse
শেষ বিদায় জাদুঘর
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নানাবিধ সংস্কৃতি নিয়ে জার্মানির ক্যাসেলে আছে একটি বিরল জাদুঘর৷ ‘মিউজিয়াম ফর সেপালক্রাল কালচার’ নামে জাদুঘরটি চালু হয় ১৯৯২ সালে৷ এতে কয়েক শতাব্দী ধরে পৃথিবীর নানাপ্রান্তে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিবর্তন দেখানো হয়েছে৷ অলঙ্কিত শবযান, কফিন, মৃতের ধ্বংসাবশেষ, খাটিয়া, শবযাত্রার গয়নাসহ বহু জিনিসপত্রের সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে সেখানে৷
ছবি: Museum für Sepulkralkultur Kassel
মধ্যযুগের নির্যাতন নিয়ে জাদুঘর
বেত্রাঘাতের খাম্বা আর ফাঁসির মঞ্চ থেকে শুরু করে ন, তাক, আংটা কী নেই সেখানে! মধ্যযুগে নির্যাতনে ব্যবহৃত এসব জিনিসপত্র নিয়ে জার্মানির রুডেসহাইমে গড়া হয়েছে মধ্যযুগীয় নির্যাতন জাদুঘর (মেডিয়াভেল টর্চার মিউজিয়াম)৷ এর পাশাপাশি চিত্রের মাধ্যমে তদন্তের সময় ক্যাথলিক চার্চের নানা নির্যাতনের বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে ওই জাদুঘরে৷
ছবি: Mittelalterliches Foltermuseum, Rüdesheim
কর্কস্ক্রু জাদুঘর
ওয়াইনের বোতল খুলতে খুব প্রয়োজনীয় যন্ত্র ‘কর্কস্ক্রু’৷ ১ হাজার রকমের কর্কস্ক্রু নিয়ে ফগ্টসবুর্গে শহরে এই জাদুঘর গড়েছেন বার্নহাড মাউয়ার৷ আদিকালের সাধারণ কর্কস্ক্রু থেকে শুরু করে বর্তমানের যান্ত্রিক ‘ওপেনার’ দিয়ে জাদুঘরটি সাজিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Korkenzieher Museum Kaiserstuhl
আঙুলের টোপরের জাদুঘর
হাতে সেলাইয়ের সময় আঙুলে পরা হয়ে থাকে টোপর৷ পৃথিবীর নানা প্রান্তে ব্যবহৃত বহুবিধ টোপর নিয়ে জাদুঘর আছে দক্ষিণ জার্মানির ক্রেগলিংগেন-এ৷ সাধারণ টোপর থেকে শুরু করে চমৎকার কারুকাজের বহু টোপরের সন্নিবেশ ঘটেছে সেখানে৷
ছবি: Fingerhutmuseum Creglingen
ছুরি-চামচের জাদুঘর
স্টিলের পণ্যের জন্য সুপরিচিত পশ্চিম জার্মানির জোলিংগেন শহর৷ ছুরি-চামচের জাদুঘর তৈরির জন্যও তাই উপযুক্ত এটি৷ জার্মান ব্লেড মিউজিয়ামে ছুরি-চামচের প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে এসবের বিবর্তন৷ প্রাচীন যুগে হাড় দিয়ে তৈরি চামচ আর ব্রোঞ্জ যুগের পণ্যের সঙ্গে বর্তমানের ছুরি-চামচের নানা দিকও ফুটে উঠেছে সেখানে৷
ছবি: Deutsches Klingenmuseum
হপ মিউজিয়াম
হপ-সহ বিয়ার তৈরির বিভিন্ন উপাদান নিয়ে এই জাদুঘর৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি হপ উৎপাদনকারী রাজ্য বাভারিয়া-ই তো উপযুক্ত এই জাদুঘরের জন্য৷ বাভারিয়ান হালারটাউ-তে এই জাদুঘরটি অবস্থিত৷