গ্রিসের মোরিয়া শরণার্থী শিবিরে আগুন। একাধিক শিবিরে আগুন লেগেছে বলে জানা গেছে। ১২ হাজার উদ্বাস্তু থাকেন ওই শিবিরগুলিতে।
বিজ্ঞাপন
গ্রিসের লেসবস দ্বীপে সব চেয়ে বড় শরণার্থী শিবির রয়েছে। সেখানেই বুধবার আগুন লাগে। দমকলের অভিযোগ, আগুন নেভাতে যাওয়ার পর তাদের বাধা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় মিডিয়ায় এমন অভিযোগও উঠছে, করোনা নিয়ে কড়াকড়ির প্রতিবাদে এখানে আগুন লাগানো হয়েছে। গত সপ্তাহে করোনা নিয়ে এই শিবিরগুলিতে কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। তবে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আগুন লাগার কারণ এখনো জানা যায়নি।
এই সপ্তাহের গোড়ায় মোরিয়া শিবিরে একজন সোমালি শরণার্থীর করোনা ধরা পড়ে। তারপরই সেখানে প্রচুর কড়াকড়ি চালু করা হয়েছে।
মোরিয়াতে ১২ হাজার শরণার্থী বিভিন্ন শিবিরে আছেন। তাঁরা সকলেই আশ্রয়প্রার্থী। অনেকেই ইরাক ও সিরিয়া থেকে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পালিয়ে এসেছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলির মতে, এই শিবিরে গাদাগাদি করে মানুষ থাকছেন। এখান থেকে কিছু উদ্বাস্তুকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও তাঁরা সরকারকে বলেছেন। কিন্তু সরকার সেই অনুরোধে কান দেয়নি।
ঘর হারা মানুষ এখন আরো অসহায়
যুদ্ধ বা অন্য কারণে জোর করে মানুষকে ঘরহীন করে দেয়ার ঘটনাগুলো সম্প্রতি স্থায়ী রূপ নিচ্ছে৷ অর্থাৎ এই মানুষগুলো ফিরতে পারছেন না ঘরে৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে এমন কথা৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/M. Abu Ghosh
এক দশকে দ্বিগুণ
ইউএনএইচসিআরের হিসেবে, ২০১৯ সালের শেষ পর্যন্ত সংঘাত ও যুদ্ধের কারণে ঘরহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় আট কোটি (৭.৯৫ কোটি)৷ এর অর্থ বিশ্বের প্রতি ৯৭ জনে ১ জনকে জোরপূর্বক ঘর ছাড়া করা হয়েছে৷ ২০১০ সালে এ সংখ্যা ছিল চার কোটি দশ লাখ৷ অর্থাৎ এক দশকে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ এমন নিয়তির শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Chiba
স্থায়ীভাবে ঘরহীন
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ঘরহীন মানুষের সংখ্যা শুধু পৃথিবীজুড়ে বাড়ছে তা নয়, মানুষ স্থায়ীভাবে ঘরহীন হচ্ছেন৷ বলা হচ্ছে, শরণার্থীদের ৭৭ ভাগই দীর্ঘমেয়াদে আটকা পড়েছেন আশ্রয় পাওয়া অন্য এলাকা বা দেশে৷
ছবি: DW/ P. Vishwanathan
নাজুক অবস্থা
নানা কারণে বাস্তুহীনদের মধ্যে অন্তত ৮০ ভাগ খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিতে ভুগছেন৷ অনেক দেশ জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতেও রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance /AA/A. Mehmet
পাঁচ দেশের নাগরিক বেশি
ঘরহীন হওয়া মানুষদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই পাঁচটি দেশের৷ দেশগুলো হলো, সিরিয়া (৬৬ লাখ), ভেনেজুয়েলা (৩৭ লাখ), আফগানিস্তান (২৭ লাখ), দক্ষিণ সুদান (২২ লাখ) ও মিয়ানমার (১১ লাখ)৷ এই দেশগুলোর বেশিরভাগই আশ্রয় নিয়েছেন পার্শবর্তী দেশে৷ যেমন রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে৷
ছবি: Reuters/F. Aziz
উন্নয়নশীল দেশেই সবচেয়ে বেশি
প্রতি দশ জন শরণার্থীর আট জনই উন্নয়নশীল দেশে আটকা পড়ে আছেন৷ তুরস্কে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৩৬ লাখ শরণার্থী আছেন৷ কলম্বিয়ায় ১৮ লাখ, পাকিস্তান ও উগান্ডায় ১৪ লাখ করে আশ্রয় পেয়েছেন৷ জার্মানিতে প্রায় ১১ লাখ এবং বাংলাদেশে সাড়ে আট লাখ শরণার্থী আশ্রয় পেয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Gurel
দশ জনে চার জন শিশু
হিসেব অনুযায়ী, শরণার্থীদের ৪০ ভাগই শিশু, অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সের নীচে৷ সংখ্যায় তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Watad
6 ছবি1 | 6
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক ইভা কোসি বলেছেন, শরণার্থী শিবিরের যা অবস্থা তাতে সেখানে জনস্বাস্থ্য বজায় রাখা অসম্ভব। করোনার মোকাবিলায় যে নির্দেশ জারি করা হয়েছে, তাও মানা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, এই জনবহুল ক্যাম্পে কড়াকড়ি মানা যায় না। এখানে মানুষকে নিভৃতবাসে পাঠানোই সম্ভব নয়।
জার্মানির গ্রিন পার্টির নেতা বলেছেন, মোরিয়ায় শরণার্থীদের অবস্থা নিয়ে ইউরোপের দেশগুলির সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা সেই কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মোরিয়া সবসময়ই জ্বলছে। তবে সেই আগুন হলো ক্ষোভের আগুন।