লেসবস দ্বীপ থেকে দেড় হাজার শরণার্থীকে জার্মানিতে পুনর্বাসন দেওয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে তাঁদের শিবির পুড়ে গিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহেই আগুন লেগেছিল গ্রিসের লেসবস দ্বীপের শরণার্থী শিবিরে। গৃহহীন হয়ে পড়েছিলেন ১২ হাজারেরও বেশি উদ্বাস্তু। গৃহহীন সেই মানুষদের ১৫০০ জনকে আপাতত জার্মানিতে নিয়ে এসে পুনর্বাসন দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিল জার্মানি। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল নিজে এই ঘোষণা করেছেন। জার্মানি জানিয়েছে, লেসবস দ্বীপে যাঁরা অসহায় ভাবে বসে আছেন, তাঁদের সকলের যাতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায়, তার জন্য ইউরোপের অন্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গেও আলোচনার প্রক্রিয়া চলছে।
লেসবস দ্বীপের শরণার্থী শিবিরে আগুন নিয়ে নানা জনের নানা মত। তদন্তকারীদের অনেকরই ধারণা শরণার্থীরা নিজেরাই ওই আশ্রয়শিবিরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। শরণার্থীদের বক্তব্য, যে ভাবে তাঁদের থাকতে হচ্ছিল, তা কার্যত নরকযন্ত্রণা। বস্তুত, লেসবসে খুবই গায়ে গায়ে থাকতে হতো শরণার্থীদের। ছোট জায়গায় অনেক বেশি মানুষকে রাখা হয়েছিল। তারই মধ্যে শিবিরে একজনের করোনা ধরা পড়ে। তারপর লকডাউন ঘোষণা করে গ্রিস প্রশাসন। যা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। অনেকেরই ধারণা সম্ভবত সে কারণেই আগুন ধরানো হয়। বস্তুত, আগুন লাগার পরেই গোটা ইউরোপের চোখ যায় শরণার্থীদের দিকে। তারপরেই তাঁদের পুনর্বাসন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
গ্রিসে শরণার্থী শিবিরে আগুন ও কিছু প্রশ্ন
পরপর দুই দিন আগুন লেগেছে গ্রিসের লেসবস দ্বীপের শরণার্থী শিবিরে। প্রচুর শরণার্থী থাকতেন ওই শিবিরগুলিতে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তাঁদের বাসস্থান। কিন্তু এই আগুন ও শরণার্থীদের নিয়ে উঠছে অনেক প্রশ্ন।
ছবি: Reuters/E. Marcou
ইউরোপের সব চেয়ে বড় শিবির
গ্রিসের এই শরণার্থী শিবির হলো ইউরোপের সব চেয়ে বড় শিবির। প্রায় ১৩ হাজার শরণার্থী ছিলেন এখানে। গ্রিসের মূল ভূখণ্ডে তাঁদের রাখা হয়নি। লেসবস দ্বীপেই ছিল তাঁদের শিবির। ইউরোপে যাঁরা আশ্রয় নিতে চান, তাঁরাই প্রথমে আসতেন গ্রিসে।
ছবি: Imago Images/Zuma/N. Economou
পাঁচ বছর ধরে ছিলেন শরণার্থীরা
পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এই শিবিরগুলিতে ছিলেন শরণার্থীরা। ২০১৫-১৬তে তাঁরা সব চেয়ে বেশি এসেছিলেন ইরাক ও সিরিয়া থেকে। অন্য দেশ থেকেও এসেছেন। কিন্তু এতদিনেও তাঁদের গ্রিসের মূল ভূখণ্ড বা ইউরোপের অন্য দেশে আশ্রয় জোটেনি। পড়ে থাকতে হয়েছে একটি দ্বীপে।
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
ছোট জায়গায় অনেক শরণার্থী
গ্রিসের ওই শরণার্থী শিবিরে ছিলেন প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। গাদাগাদি করে। মানবাধিকার সংগঠনের মতে, ওখানে হাজার তিনেক মানুষ ভালোভাবে থাকতে পারেন। সেখানে চারগুণ বেশি মানুষকে রাখা হয়েছিল। ফলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিল।
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
লকডাউনের কড়াকড়ি
সম্প্রতি ওই শিবিরে থাকা এক শরণার্থীর করোনা ধরা পড়ে। তারপর শুরু হয় লকডাউনের কড়াকড়ি। ক্ষোভ আরো বাড়ে। শরণার্থীদের মতে, ওই জায়গায় কোয়ারান্টিনে থাকা সম্ভবই নয়।
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
আগুন লাগার পর
দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। আর শরণার্থীরা যে যা পেরেছেন, তাই হাতে নিয়ে পালাচ্ছেন জায়গা ছেড়ে। তাঁদের মাথার উপর ছাদও আর থাকল না।
ছবি: Reuters/E. Marcou
রাত কাটছে রাস্তায়
শরণার্থীদের রাত কেটেছে রাস্তায়। সপরিবারে রাস্তায় শুয়ে পড়েছেন তাঁরা। অনেকে বসে। একসময় কঠিন অবস্থার মধ্যে দেশ ছেড়ে আসতে হয়েছিল। এতদিন শিবিরে ছিলেন। সেটাও পুড়ে গেল। খাবার নেই, জল নেই, নবজাতকের জন্য দুধ নেই। ভয়ঙ্কর অবস্থা।
ছবি: Imago Images/Xinhua/P. Balaskas
আগুন লাগার কারণ
কী করে আগুন লাগল এই শরণার্থী শিবিরে? স্থানীয় মিডিয়ার রিপোর্ট বলছে, শরণার্থীরাই শিবিরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা লকডাউনের কড়াকড়ি নিয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিলেন। বছরের পর বছর ওই শিবিরে কাটাতে হচ্ছে বলে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছিল। পরে প্রশাসনও জানিয়েছে, আগুন লাগানো হয়েছিল।
ছবি: Reuters/E. Marcou
সাহায্যের হাত
আগুন লাগার পরেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডস। জার্মানি ও ফ্রান্স ৪০০ বাচ্চাকে নেবে বলে জানিয়েছে। নেদারল্যান্ড ১০০ জন বাচ্চাকে। জার্মানির চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল জানিয়েছেন, এটা হলো প্রাথমিক পদক্ষেপ। যে অপ্রাপ্তবয়স্করা একা, তাঁদের আশ্রয় দেবে জার্মানি। জার্মানির রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া এক হাজার জন শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে চায়।
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
আপত্তি দক্ষিণপন্থীদের
জার্মানির চরম দক্ষিণপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি এ ভাবে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের দাবি, শরণার্থীরা নিজেরাই শিবিরে আগুন ধরিয়েছেন। এরপর তাঁদের ওখানেই থাকতে হবে। গ্রিসের দ্বীপে আবার তাঁদের জন্য শিবির তৈরি করে দেয়া হোক। এ ভাবে জবরদস্তি করে তাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয় পাবে, এটা মানা যায় না বলে জানিয়েছে এই চরম দক্ষিণপন্থী দল।
ছবি: Reuters/E. Marcou
রেডক্রসের দাবি
রেডক্রস বলেছে, যে শরণার্থীরা খোলা আকাশের তলায় আছেন, তাঁদের অবিলম্বে উদ্ধার করুক ইউরোপীয় ইউনিয়ন। গ্রিসের দ্বীপে শরণার্থীরা খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। দ্রুত তাঁদের গ্রিসের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা উচিত বলে তারা মনে করে।
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Ntantamis
10 ছবি1 | 10
প্রাথমিক ভাবে জার্মানি জানিয়েছিল, লেসবস থেকে একশ থেকে দেড়শ শিশুকে জার্মানিতে নিয়ে আসা হবে। তবে এখনই কোনও পরিবারকে আনা সম্ভব হবে না। কিন্তু আগুন লাগার পর থেকেই জার্মানিতে শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য আন্দোলন শুরু হয়। গ্রিন পার্টি দাবি করে অন্তত পাঁচ হাজার শরণার্থীকে দেশে নিয়ে আসার জন্য। মঙ্গলবার এই বিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ম্যার্কেল জানান, আপাতত ১৫০০ পরিবারকে আনা হবে। তবে ভবিষ্যতে আরও শরণার্থীকে নিয়ে আসা হতে পারে। শুধুমাত্র লেসবসই নয়, গ্রিসের আরও বেশ কয়েকটি দ্বীপে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছেন শরণার্থীরা। সেখান থেকেও তাঁদের আনা হতে পারে বলে চ্যান্সেলর জানিয়েছেন।
ইউরোপের অন্য দেশগুলিও যাতে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়, সেই আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি। তবে এও ঠিক, শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে জার্মানিতে জোরালো বিরোধী মতও রয়েছে। দক্ষিণপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড বা এএফডি আগেই বলেছিল, গ্রিসে শরণার্থীদের আশ্রয় শিবির নতুন করে বানানোর জন্য অর্থ সাহায্য করা যেতে পারে, কিন্তু তাঁদের দেশে নিয়ে আসার কোনও অর্থ হয় না।