বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন গ্রিস আর ম্যাসিডোনিয়ার মাঝখানে আটকে পড়া শরণার্থীরা৷ শনিবার থেকে চলছে তাঁদের বিক্ষোভ, প্রতিবাদ৷ শরণার্থীরা বলছেন, ম্যাসিডোনিয়ায় প্রবেশের জন্য তাঁদের অপেক্ষা সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ম্যাসিডোনিয়া আর গ্রিসের মাঝখানের ইডোমেনিতে আটকে পড়ে দুর্বিষহ জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন প্রায় ৭ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ ম্যাসিডোনিয়ায় প্রবেশ করতে চান তাঁরা৷ সেখান থেকে জার্মানিতে প্রবেশের উদ্দেশ্য নিয়েই নিজেদের দেশ ছেড়ে এসেছেন৷ কেউ এসেছেন ট্যাক্সিতে চড়ে, কেউ বা পায়ে হেঁটে৷
বলা হয়েছিল, প্রতিদিন গড়ে ৫০০ জনকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে৷ কিন্তু আদতে তা হচ্ছে না৷ খুব কম মানুষই পাচ্ছেন এ সুযোগ৷ সোমবার মাত্র ৫০ জনকে সীমান্ত অতিক্রম করতে দেয়া হয়েছে৷
অথচ প্রতিদিন অন্তত দেড়শ নতুন অভিবাসনপ্রত্যাশী আসছেন সিরিয়া, ইরাক বা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে৷ ফলে যে জায়গায় ৩ হাজার মানুষের স্থান সংকুলান হয়, সেখানে এখন ৭ হাজার মানুষের ভিড়৷
শনিবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ৷ বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাঁদের ম্যাসিডোনিয়ায় প্রবেশ করতে দিতে হবে৷ দাবি মেনে না নেয়ায় সীমান্তরক্ষীদের প্রতি প্রথমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়, তারপর ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টাও করেন তারা৷ পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ে তাদের নিরস্ত করে৷
এদিকে সিরিয়ার পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অন্যান্য দেশ থেকে যাঁরা জার্মানিতে এসেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে জার্মান সরকার৷ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে মরক্কো থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ৷ অভিবাসন এবং শরণার্থী বিষয়ক কার্যালয় বিএএমএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে মরক্কো থেকে জার্মানিতে এসেছে অন্তত ১০ হাজার মানুষ৷ তাঁদের অনেকেই জার্মানিতে প্রবেশ করে পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে নিজেদের সিরীয় হিসেবে দাবি করেন৷
তাঁদের মাত্র শতকরা ৩ দশমিক ৭ ভাগ এ পর্যন্ত রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুমতি পেয়েছেন৷ বাকিদের মরক্কোয় ফেরত পাঠানোর উদ্যোগে সম্মতি জানিয়েছে মরক্কো৷ রাজধানী রাবাতে জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস দেমেজিয়েরের সঙ্গে বৈঠকে মরক্কো সরকারের পক্ষ থেকে এ সম্মতির কথা জানান সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহামেদ হাসাদ৷
সীমান্তেই পথের শেষ
গ্রিক-ম্যাসিডোনীয় সীমান্তে শত শত উদ্বাস্তু আটকা পড়েছেন৷ গত সোমবার থেকে চালু হয়েছে এই নতুন কানুন: বিশেষ কয়েকটি দেশ থেকে না এলে, উদ্বাস্তুদের নিজের ভাগ্য নিজেদের হাতে৷
ছবি: Reuters/O. Teofilovski
সেকেন্ড ক্লাস রেফিউজি?
‘‘বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, ইরানি, নেপালি বা মরোক্কানরা কি মানুষ নন?’’ এই স্লোগান দিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার ওপার থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন উদ্বাস্তুরা৷ তারা সবাই গেভগেলিয়া সীমান্তে আটকা পড়েছেন৷ ম্যাসিডোনিয়া শুধুমাত্র সিরিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/S. Nenov
মূক প্রতিবাদ
এক উদ্বাস্তু ছুঁচসুতো দিয়ে নিজের ঠোঁট সেলাই করে রেখেছেন৷ এরা নাকি ইরান থেকে এসেছেন৷ ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভেনিয়া – বলকান অঞ্চলের এই চারটি দেশের জন্য ইরান থেকে আসা মানুষরা ‘অর্থনৈতিক উদ্বাস্তু’৷ কাজেই তাদের দেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Licovski
আমলাদের খামখেয়াল
এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রায় হাজার খানেক মানুষ সীমান্তের গ্রিক তরফে অপেক্ষা করছেন৷ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে এক নজর দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে; শুধু মুখ দেখেই আন্দাজ করা হচ্ছে, উদ্বাস্তু কোন দেশ থেকে এসেছেন৷
ছবি: Reuters/S. Nenov
‘হেল্প!’
একটি ইরানি মেয়ের দুই গালে লেখা ‘হেল্প!’, ‘সাহায্য করো৷’ সীমান্তের পরিস্থিতি থমথমে৷ ম্যাসিডোনিয়ার প্রেসিডেন্ট গিয়র্গে ইভানভ ঝগড়া-মারামারির ‘সমুচ্চ ঝুঁকির’ কথা বলেছেন৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
অবরোধ
গ্রিক তরফে একাধিক মালগাড়ি গত কয়েকদিন ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ শত শত উদ্বাস্তু থেসালোনিকি আর ম্যাসিডোনিয়ার মধ্যের রেললাইন অবরোধ করে রেখেছেন৷
ছবি: Reuters/S. Nenov
ফেরার পথ নেই
‘আমাদের গুলি করে মারো, আমরা কখনো ফিরে যাব না৷’ বাংলাদেশি তরুণটি এই শীতেও জামা খুলে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ জাতিসংঘের উদ্বাস্তু ত্রাণ সংস্থা ম্যাসিডোনিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ করেছে৷ সব দেশের মানুষেরই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার অধিকার আছে, বলেছে ইউএনএইচসিআর৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
আকুল প্রতিবাদ
প্রায় দু’শো উদ্বাস্তু অনশন ধর্মঘট শুরু করেছেন৷ উদ্বাস্তুদের অধিকাংশ উত্তর ইউরোপে যেতে চান৷ তাদের কেউই গ্রিসে থাকতে চান না৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
শীত আসছে
শরীর গরম রাখার থার্মাল ব্ল্যাঙ্কেট জড়িয়ে শীত আটকানোর চেষ্টা করছেন কিছু মহিলা ও একটি শিশু৷ এখন মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি পড়ছে; রাত্রে তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি নেমে যায়৷
ছবি: Reuters/S. Nenov
ত্রাণের আশা
‘জার্মানি আমাদের সাহায্য করো’ – লেখা রয়েছে পিচবোর্ডের টুকরোয়৷ সেপ্টেম্বরের গোড়ায় জার্মান সরকার হাঙ্গেরিতে যে সব উদ্বাস্তু আটকা পড়েছেন, তাদের নেবার সিদ্ধান্ত করেন৷ ‘নো-ম্যানস-বর্ডার’-এ আটক উদ্বাস্তুরাও ঠিক সেই আশা করছেন৷