গ্রুপ জি: অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ঘানা ও পর্তুগাল৷ গ্রুপের শেষ দু’টি খেলা বৃহস্পতিবার: অ্যামেরিকা বনাম জার্মানি, ঘানা বনাম পর্তুগাল৷ সব দলই প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছনোর আশা – কিংবা বাদ পড়ার আশঙ্কা করতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
পয়েন্টের পরিস্থিতি এখন এই: জার্মানি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চার পয়েন্ট; ঘানা এবং পর্তুগাল এক পয়েন্ট৷ সেই সঙ্গে থাকছে গোল ডিফারেন্স৷ সেখানেও পর্তুগাল একেবারে তলানি৷ বৃহস্পতিবার রেসিফের মাঠে জার্মানি আর অ্যামেরিকা যদি পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নেয়, তাহলেই দু'টি দল পাঁচ পয়েন্ট করে নিয়ে সোজা প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে যাবে৷ মুশকিল এই যে, সারা বিশ্বও সেটা জানে৷
সারা বিশ্ব এটাও জানে যে, মার্কিন কোচ ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমানের স্বদেশ হলো জার্মানি; তিনি ছিলেন জার্মানির বিশ্বকাপ জেতা দল এবং ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা দলের সদস্য৷ ২০০৬ সালে তিনি যখন জার্মান জাতীয় দলের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ান, তখন তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন অ্যাসিস্ট্যান্ট কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ৷ কাজেই পয়েন্ট ভাগাভাগির জন্য দুই পুরাতন সম্বন্ধীর মধ্যে একটা ফোনালাপই তো যথেষ্ট৷
জার্মানির বিশ্বকাপ দল
বিশ্বকাপ জয়ের জন্য জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ ২৩ জন খেলোয়াড় নিয়ে এখন ব্রাজিলে৷ জার্মান দলে পরিচিত মুখ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে কিছু নতুন মুখও, যাঁরা চমক দেখাতে পারেন৷ এই ছবিঘরে পাবেন তাঁদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য৷
ছবি: Lennart Preiss/Bongarts/Getty Images
মানুয়েল নয়ার
সেই ২০১০ সালের বিশ্বকাপ থেকেই জার্মানির এক নম্বর গোলরক্ষক হিসেবে রয়েছেন নয়ার৷ অবশ্য ঘাড়ে ইনজুরির কারণে চলতি বিশ্বকাপের আগে তাঁর ফিটনেস নিয়ে খানিকটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল৷ তবে আশার কথা হচ্ছে, তিনি সেরে উঠেছেন৷ জাতীয় দলের হয়ে ৪৫ বার মাঠে নেমেছেন নয়ার৷
ছবি: Patrik Stollarz/AFP/Getty Images
রোমান ভাইডেনফেলার
ভাইডেনফেলার জার্মান দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক৷ ক্যামেরুনের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে পুরো ৯০ মিনিটই খেলেছেন তিনি৷ তবে জাতীয় দলের পক্ষে এখন অবধি শুধুমাত্র দু’বার খেলার সুযোগ পেয়েছেন ডর্টমুন্ডের এই গোলরক্ষক৷
ছবি: Getty Images
রন-রবার্ট সিলার
বুন্ডেসলিগায় অন্যতম শক্তিশালী গোলরক্ষক হিসেবে বিবেচিত সিলার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড অ্যাকাডেমি থেকে প্রশিক্ষিত৷ তৃতীয় গোলরক্ষক হিসেবে জার্মান দলের সঙ্গে আছেন তিনি৷ বলাবাহুল্য, জার্মান দলের এই অবস্থানটিতেও প্রতিযোগিতা কম নয়৷ কোচ ল্যোভের অবশ্য ২৪ বছর বয়সি সিলারকে দারুণ পছন্দ৷
ছবি: Wagner/Bongarts/Getty Images
পেয়ার ম্যার্টেসাকার
আর্সেনালে চমৎকার একটি মৌসুম পার করা ম্যার্টেসাকার বিশ্বকাপেও ভালো করার আশা রাখছেন৷ ক্যামেরুনের বিপক্ষে অধিনায়কের ‘আর্মব্যান্ড’ পরে মাঠে নেমেছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters
জেরোম বোয়াটেং
ল্যোভের রক্ষণভাগের এক শক্তিশালী খেলোয়াড় বোয়াটেং, যিনি ৩৮ বার জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন৷ প্রীতি ম্যাচে লামের অনুপস্থিতি বুঝতেই দেননি তিনি৷ তবে বোয়াটিং মধ্যমাঠেই সবচেয়ে ভালো খেলেন৷
ছবি: Getty Images
মাটস হুমেলস
জাতীয় দলের হয়ে ২৯ বার মাঠে নামা হুমেলস তাঁর সতীর্থদের তুলনায় অভিজ্ঞতার বিচারে হয়ত পিছিয়ে থাকতে পারেন৷ কিন্তু রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে বুন্ডেসলিগায় ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি৷
ছবি: Reuters
বেনেডিক্ট হ্যোভেডেজ
শালকের অধিনায়ক হ্যোভেডেজ দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় দলের সঙ্গে রয়েছেন৷ ব্রাজিলেও তাঁর ব্যতিক্রম ঘটেনি৷ ‘সেন্টার-ব্যাক’ অবস্থানে সবচেয়ে যোগ্য হ্যোভেডেজ প্রয়োজনে ‘রাইট-ব্যাকেও’ খেলতে পারেন৷ তবে তিনি জাতীয় দলের হয়ে এখন অবধি মাত্র ১৮ বার মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এরিক ডুর্ম
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রেয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ভালো করা ডর্টমুন্ডের খেলোয়াড় ডুর্ম জাতীয় দলে একেবারেই নতুন৷ ক্যামেরুনের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচটি দিয়ে তাঁর জাতীয় দলে যাত্রা শুরু হয়৷
ছবি: Getty Images
কেভিন গ্রোসক্রয়েৎস
গ্রোসক্রয়েৎসের মতো খেলোয়াড় দলে পেলে যে কোনো ম্যানেজারই খুশি হবেন৷ ডর্টমুন্ডের এই তারকা ‘ডিফেন্ডার’ হিসেবে তো বটেই, মাঠের যে কোনো অবস্থানেই ভালো খেলতে পারেন৷ ফলে জাতীয় দলের ২৩ জনের তালিকায় তাঁর স্থান পাওয়ায় বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই!
ছবি: Getty Images
ফিলিপ লাম
দল এবং দেশের পক্ষে খেলাগুলিতে ফিলিপ লামকে বিভিন্ন অবস্থানে খেলানো হয়েছে৷ তবে ল্যোভের বিবেচনায় ‘রাইট ব্যাক’ অবস্থানের জন্যই সবচেয়ে উপযুক্ত তিনি৷ জাতীয় দলের পক্ষে ১০৫ বার মাঠে নামা লাম এবার তাঁর সাফল্যের তালিকায় বিশ্বকাপ ট্রফিও যোগ করতে চান৷ ৩০ বছর বয়সি এই ফুটবলার জার্মান জাতীয় দলের অধিনায়ক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মাটিয়াস গিন্টার
ফুটবল মাঠে বিভিন্ন পজিশনে খেলতে পারদর্শী মাটিয়াস গিন্টারও কোচ ল্যোভের বিশেষ পছন্দের তালিকায় রয়েছেন৷ জার্মানির ঘরোয়া ফুটবলে চমৎকার একটি বছর কাটিয়েছেন ফ্রাইবুর্গের এই তরুণ খেলোয়াড়৷
ছবি: Getty Images
বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার
জাতীয় দলের হয়ে একশোবার মাঠে নামার সৌভাগ্যবানদের তালিকায় কিছু দিন আগেই নাম লিখিয়েছেন শোয়াইনস্টাইগার৷ মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা এবারের বিশ্বকাপে জার্মানিকে সহায়তা করবে বলে আশা করছেন অনেকেই৷ পাশাপাশি তরুণ খেলোয়াড়দেরও তাঁর কাছ থেকে শেখার আছে অনেক৷
ছবি: Getty Images
ক্রিস্টোফ ক্রামার
মাঠে নিরলস ভাবে দৌঁড়ানো এবং নির্ভুল ‘পাস’ দেয়ার সুনামের অধিকারী ক্রামার পোল্যান্ডের বিপক্ষে চমৎকার খেলেছেন৷ আর ক্যামেরুনের বিপক্ষে শেষের ১৫ মিনিটে তাঁর খেলা ল্যোভের মন জয় করার জন্য ছিল যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images
সামি খেদিরা
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে এক পর্যায় মাঠ থেকে তুলে নেয়া হয় সামি খেদিরাকে৷ গত নভেম্বরে হাঁটুতে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলেন তিনি৷ তবে তিনি দ্রুতই সেরে উঠছেন৷ পুরোপুরি ফর্ম ফিরে পেলে জার্মানির বিশ্বকাপ দৌঁড়ে বড় অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে তাঁর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
টোনি ক্রোস
বায়ার্ন মিউনিখে নিজের ভবিষ্যত কী হবে – সেটা নিয়ে এখন সম্ভবত ভাবছেন না ক্রোস৷ তাঁর চিন্তা এখন শুধুই বিশ্বকাপকে ঘিরে৷ অসাধারণ ‘পাস’ দিতে দক্ষ এই তারকা জাতীয় দলের অন্যতম কাণ্ডারি৷
ছবি: Getty Images
ইউলিয়ান ড্রাক্সলার
ল্যোভের আরেক আবিষ্কার ড্রাক্সলার৷ মধ্যমাঠের আক্রমণাত্মক মেজাজের এই খেলোয়াড়ের বয়স মাত্র ২০ বছর৷ গত মৌসুমে অবশ্য তাঁর খেলায় ছন্দটি ঠিক ছিল না৷ তবে এবার দলের সঙ্গে থেকে যে অভিজ্ঞতা তিনি অর্জন করবেন, তা ভবিষ্যতেও কাজে দেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শ্কদ্রান মুস্তাফি
বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে মার্কো রয়েসের ইনজুরি যেন মুস্তাফির কপাল খুলে দিয়েছে৷ ২০০৯ সালে উয়েফা অনুর্ধ-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী জার্মান দলের সদস্য তিনি৷ তাঁর বয়স এখন ২২৷
ছবি: Martin Rose/Bongarts/Getty Images
মেসুত ও্যজিল
চলতি মৌসুমের শেষের দিকে খানিকটা নিষ্প্রভ হয়ে যান ও্যজিল৷ তবে শুধুমাত্র একটি মৌসুম দিয়ে ‘পারফর্মেন্স’ বিবেচনা করার মতো খেলোয়াড় তিনি নন৷ জাতীয় দলের হয়ে পঞ্চাশবারের বেশি মাঠে নেমেছেন তিনি৷ চূড়ান্ত বিবেচনায় তাই জার্মান দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় মেসুত ও্যজিল৷
ছবি: Alexander Hassenstein/Bongarts/Getty Images
মারিও গ্যোটৎসে
সর্বশেষ মৌসুমে ডর্টমুন্ড ছেড়ে মিউনিখে যাওয়ায় খানিকটা সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন গ্যোটৎসে৷ এমনকি পুরাতন ক্লাবের বিপক্ষে গোল করে নিজের সাবকে ভক্তদেরও মন ভেঙে দিয়েছেন তিনি৷ চলতি বিশ্বকাপে আক্রমণভাগে বেশি দেখা যেতে পারে গ্যোটৎসেকে৷
ছবি: Reuters
আন্দ্রে শ্যুর্লে
জাতীয় দলের সঙ্গে থাকলেও মাঠে শ্যুর্লের অবস্থান কী হবে – তা এখনো নিশ্চিত নয়৷ কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ তাঁকে আক্রমণভাগে রাখতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লুকাস পোডোলস্কি
জাতীয় দলের হয়ে ১১২ বার মাঠে নেমেছেন পোডোলস্কি, যা এক রেকর্ড৷ খুব কম খেলোয়াড়ের পক্ষেই এমন রেকর্ড ভাঙা সম্ভব৷ ইদানীং অবশ্য দলের হয়ে মাঠে নামার চেয়ে ‘সাইড বেঞ্চে’ বসে থাকতেই বেশি দেখা যায় তাঁকে৷ তবে যে কোনো সময় জ্বলে ওঠার ক্ষমতা রাখেন পোডোলস্কি৷
ছবি: Getty Images
টোমাস ম্যুলার
জার্মান দলের হয়ে গোল করতে অন্যতম দক্ষ ম্যুলার৷ সতীর্থ ক্লোজের সঙ্গে এক্ষেত্রে তাঁর মিল অনেক৷ জাতীয় দলের হয়ে ৪৭ বার মাঠে নেমে ১৮ গোল করেছেন ম্যুলার৷
ছবি: Getty Images
মিরোস্লাভ ক্লোজে
জাতীয় দলের হয়ে ৬৮টি গোল করা ক্লোজের সামনে দুটি রেকর্ড ভাঙার সুযোগ রয়েছে৷ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ডটি রোনাল্ডোর কাছ থেকে নিয়ে নিতে পারেন তিনি৷ আর জার্মানির হয়ে সর্বোচ্চ গোল করে গের্ট ম্যুলারের গড়া রেকর্ডও এবার ভাঙতে পারেন তিনি৷
ছবি: Lennart Preiss/Bongarts/Getty Images
23 ছবি1 | 23
কিন্তু সে ফোনালাপ ঘটবে না৷ ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিটি খেলা জান লড়িয়ে খেলে৷ আমাদের সে সুনাম এবং ফাইটিং স্পিরিট ও এনার্জি আছে৷ ড্র করা আমাদের স্বভাব নয়৷ উভয় দলই ম্যাচ জিতে গ্রুপে প্রথম হতে চাইবে,'' বলেছেন ক্লিন্সমান৷ বলতে কি, ‘ক্লিন্সি' তাঁর দল সম্পর্কে যা বলেছেন, ‘ইওগি' তাঁর দল সম্পর্কে ঐ একই কথা বলতে পারেন৷ অ্যামেরিকানদের মতো জার্মানরাও হাল ছাড়তে জানে না৷
কাজেই ২৬শে জুন রেসিফেতে সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি নয়, বরং সমানে সমানে ষাঁড়াষাঁড়ি হবার সম্ভাবনাই বেশি, কেননা জার্মান ফুটবলের গুণগত বৈশিষ্ট্যগুলির অনেকটাই ধীরে ধীরে মার্কিন ফুটবলে সঞ্চারিত করেছেন ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান৷ কিন্তু জার্মানদের যেখানে মনমরা এবং হতাশ হবার একটা সহজাত প্রবণতা আছে, তার স্থান নিয়েছে এক সহজাত মার্কিন আশাবাদিতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষমতা, যার কল্যাণে এই মার্কিন দল খেলছে এক মন, এক প্রাণ হয়ে; দৌড়াচ্ছে মাঠ জুড়ে এবং দেখা যাচ্ছে, ফুটবলের ‘বেসিক' স্কিলগুলির একটিও তাদের রপ্ত করা বাকি নেই৷
ক্লিন্সমানকেও সহজে মেনে নেয়নি অ্যামেরিকা৷ তিনি নাকি প্লেয়ারদের বড় বেশি ট্রেনিং করিয়েছেন৷ তা সত্ত্বেও মানাউসের ৩০ ডিগ্রি গরম আর ৬৫ শতাংশ আর্দ্রতায় মার্কিনিরা যে খেল দেখিয়েছে, তা ক্লিন্সমানের প্রি-টুর্নামেন্ট বুট-ক্যাম্প ছাড়া সম্ভব হতো না – এটা আজ সকলেই বুঝেছে৷ অপরদিকে ক্লিন্সমান বলেছেন, প্লেয়ার, ফ্যান, কোচ এবং বিকল্প খেলোয়াড়রা, সকলকেই এবার এই ম্যাচ ভুলে আগের ম্যাচটার কথা ভাবতে হবে, কেননা বিশ্বকাপ মানেই পরের গেমটা নিয়ে মাথাব্যথা৷