টেনিস কোর্টের বাইরের বিষয় নিয়ে খুব কমই কথা বলতে দেখা যায় তাকে৷ কিন্তু গ্রেটা টুনব্যার্গ অভিযোগ তোলার পর আর চুপ থাকতে পারেননি৷ সুইডেনের পরিবেশবাদী শিক্ষার্থীকে সম্মান জানিয়েই জবাব দিয়েছেন সুইস টেনিস তারকা ফেডেরার৷
বিজ্ঞাপন
২০টি গ্র্যান্ডস্লাম একক শিরোপাজয়ী ফেডেরারের স্পন্সর সুইজারল্যান্ডের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইসে৷ তারা জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি শিল্প প্রতিষ্ঠানকেও ঋণ দেয়৷এই ক্রেডিট সুইসে আবার রজার ফেডেরারের অন্যতম স্পন্সর প্রতিষ্ঠান৷ এই বিষয়টিই হতাশ করেছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকার জন্য বিকল্প নোবেল জেতা গ্রেটা টুনব্যার্গকে৷ তিনি মনে করেন, এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্পন্সনশিপ চুক্তি করে পরোক্ষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছেন ফেডেরার৷
এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ফেডেরার৷ তবে বছরের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টটি শুরু হওয়ার আগে ভয়াবহ দাবানলের ক্ষতি সামাল দেয়ায় অর্থ সহায়তার জন্য একটা চ্যারিটি টুর্নামেন্টও খেলবেন ৩৮ বছর বয়সি সুপারস্টার৷ সেরেনা উইলিয়ামস, রাফায়েল নাদালসহ বেশ কয়েকজন তারকা খেলোয়াড় অংশ নেবেন সেখানে৷
ফিরে এলেন ফেডেরার
টেনিস দুনিয়ায় রজার ফেডেরার এখন এমন এক নাম, যার চেয়ে এগিয়ে আর কেউ নেই৷ শেষ পাঁচ বছর কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারেননি৷ কিন্তু এবার আবার ঝলসে উঠেছে তাঁর র্যাকেট৷
ছবি: Getty Images/J. Finney
ফেডেরারের ধারেকাছে কেউ নেই
ফেডেরারের র্যাকেট যখন ফেডেরারের মতোই চলতে থাকে, প্রতিপক্ষকে তখন খুঁজতে হয় পালাবার পথ৷ এই শতকের প্রথম দশক ছিল গ্রিন কোর্টে তাঁর সাফল্যের কাল৷ একের পর এক শিরোনাম ছিল ফেডেরারের দখলে৷ এই দশকে তাঁর সেই উজ্জ্বলতায় কিছুটা ঘাটতি পড়েছে৷ কিন্তু এই বছর দু-দু’টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ে আবার নিজেকে ফিরে পাওয়ার আভাস দিচ্ছেন ফেডেরার৷
ছবি: Getty Images/J. Finney
১৯ বছরে ১৯ গ্র্যান্ড স্ল্যাম
পেশাদার টেনিসে সেই ১৯৯৮ সাল থেকে এক চমকের নাম রজার ফেডেরার৷ ২০১৭ সালের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জেতার রেকর্ডে নিজের দাবি প্রতিষ্ঠিত করলেন তিনি৷ ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে ১৯ গ্র্যান্ড স্ল্যাম৷ গণনা এখনও চলছে…
ছবি: Picture Alliance/G. Fuller/Pool Photo via AP
উইম্বলডন আটবার
আট্টি উইম্বলডন জয়ী প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র খেলোয়াড় রজার ফেডেরার৷ এই কাণ্ড ফেডেরার ঘটিয়েছেন ৩৫ বছর বয়সে! টেনিস ইতিহাসের সবচেয়ে পুরনো এবং মর্যাদাপূর্ণ এই গ্র্যান্ড স্ল্যামে ফেডেরারের প্রথম জয় এসেছিল ২০০৩ সালে৷ এর আগে সবচেয়ে বেশিবার উইম্বলডন জেতা তারকা ছিলেন পিট সাম্প্রাস এবং উইলিয়াম রেনশো৷
ছবি: AP
ঘাসের কোর্টের রাজা
গ্র্যান্ড স্ল্যামের ইতিহাসে রজার ফেডেরারকে শুধু শুধুই সেরা বলা হয় না৷ উইম্বলডনের রেকর্ড ছাড়াও টান পাঁচবার ইউএস ওপেন এবং পাঁচবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের রেকর্ড আছে তাঁর৷ লাল কোর্টে বারবার অসফলতা আসলেও ২০০৯ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনও জিতে নেন ফেডেরার৷
ছবি: picture alliance/empics/A. Davy
পরাজয়ে ডরে না বীর
এখন র্যাংকিংয়ে তিন নম্বরে থাকলেও ২০১৪ সালে ফেডেরার ছিলেন এক নম্বর৷ ২০০৩ থেকে ২০০৭ ছিল ফেডেরারের স্বর্ণযুগ৷ এই সময়ে তিনি ১২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে নেন৷ এর পর বেশ কয়েকবার তাঁর ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়লেও বারবারই ফিরে এসেছেন ফেডেরার৷ ২০১২ সালের পর গ্র্যান্ড স্ল্যামের জন্য তাকে বেশ লম্বা সময়ই অপেক্ষা করতে হলো৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo/MAXPPP
রোজগারেও নাম্বার টু
শিরোপা জিতে ১০ কোটি ৭৩ লাখ ডলার কামাই করেছেন ফেডেরার৷ সবচেয়ে বেশি রোজগার করা টেনিস তারকার তালিকায় তিনি আছেন দু’নম্বরে৷ মাত্র ১২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেও ফেডেরারের চেয়ে এগিয়ে আছেন সার্ব তারকা জকোভিচ৷ ফেডেরারের পর রয়েছে ১৫ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী রাফায়েল নাদালের নাম৷
সাফল্যের অপর পিঠে ব্যর্থতা
এক বছরে চার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ড নেই রজার ফেডেরারের৷ এছাড়া অলিম্পিক স্বর্ণপদকও কখনও জিততে পারেননি এই তারকা৷ অলিম্পিকে তাঁর সেরা সাফল্য ২০১২ সালে লন্ডনে রৌপ্য জয়৷ তবে ২৯ গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলা এবং এটিপি র্যাংকিংয়ে সর্বাধিক ৩০২ সপ্তাহ শীর্ষে থাকা ফেডেরারের ঔজ্জ্বল্য কি সোনা দিয়ে পরিমাপ করা যায়?
ছবি: Reuters
কোর্টের বাইরেও বাজিমাত
নারী টেনিস তারকা মির্কার সঙ্গে ফেডেরারের পরিচয় ২০০ সালের সিডনি অলিম্পিকে৷ সেই পরিচয় খুব দ্রুতই রূপ নেই প্রেমে৷ ২০০৯ সালে আবদ্ধ হন বিবাহবন্ধনে৷ এরপর তাঁদের ঘর আলো করে আসে যমজ মেয়ে এবং পরের বার যমজ ছেলে৷ তাই ফেডেরার দম্পতির ঘরে শুধু মেডেলের ঝনঝন শব্দ নয়, খিলখিল হাসির ধ্বনিও শোনা যায় প্রায়ই৷ গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব ম্যাচেই উৎসাহ জোগাতে গ্যালারিতে হাজির থাকে ফেডেরার পরিবার৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Tallis
8 ছবি1 | 8
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এবং তার আগের প্রদর্শনী ম্যাচগুলোর আগেই গ্রেটা টুনব্যার্গের সমালোচনার জবাবে মুখ খুলেছেন রজার ফেডেরার৷এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং হুমকিকে আমি সবসময়ই খুব গুরুত্ব দেই৷ এবার তো আমি পরিবার নিয়ে (অস্ট্রেলিয়ায়) এসেছি এমন সময়ে যখন ভয়াবহ দাবানল চলছে৷'' গ্রেটা টুনব্যার্গের প্রশংসা করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সবার আচরণ এবং কাজকর্ম নিয়ে চিন্তাভাবনায় উদ্বুদ্ধ করতে চাপ প্রয়োগ করে সমাধানের পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমি তরুণ পরিবেশকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞ৷'' বিবৃতিতে বিষয়টি সুরাহার জন্য স্পন্সর কোম্পানির সঙ্গে কথা বলার ইঙ্গিতও দিয়েছেন ফেডেরার৷
এদিকে ক্রেডিট সুইসে জানিয়েছে, ভবিষ্যতে আর কখনো তারা জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেবে না৷
‘বিকল্প নোবেল’ পেল গ্রেটা টুনব্যার্গ
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে আলোচিত সুইডেনের ১৬ বছর বয়সি শিক্ষার্থী গ্রেটা টুনব্যার্গ ২০১৯ সালের ‘বিকল্প নোবেল’ জিতলেন৷ আরো তিনজন এবার এই অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/S. Reynolds
বিকল্প নোবেল
বর্তমান সময়ের অতি জরুরি সমস্যার বাস্তবসম্মত উপায় বের করায় যাঁরা অবদান রাখেন, তাঁদের সম্মানিত করতে ১৯৮০ সাল থেকে ‘রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হচ্ছে৷ এটি ‘বিকল্প নোবেল’ নামেও পরিচিত পেয়েছে৷ জার্মান-সুইডিশ লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনীতিবিদ কার্ল ভোলমার ইয়াকব ফন উক্সক্যুল (ছবি) এই অ্যাওয়ার্ড চালু করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যেসব বিষয় প্রাধান্য পায়
সাধারণত পরিবেশ রক্ষা, মানবাধিকার, টেকসই উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও শান্তি বিষয়ে অবদান রাখায় বিকল্প নোবেল দেয়া হয়ে থাকে৷ সুইডেনের স্টকহোমে যেদিন নোবেল দেয়া হয় তার আগের দিন সুইডিশ সংসদে বিকল্প নোবেলের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে৷
বাংলাদেশও পেয়েছে
১৯৯১ সালে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ২০০৭ সালে গ্রামীণ শক্তি ‘রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
গ্রেটা টুনব্যার্গ
২০১৯ সালে বিকল্প নোবেল পাচ্ছেন চারজন৷ এর মধ্যে একজন সুইডেনের ১৬ বছর বয়সি শিক্ষার্থী গ্রেটা টুনব্যার্গ৷ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার সে৷ সম্প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে সে বলেছে, ‘‘আমরা বিশাল মাত্রায় বিলুপ্তির পথে চলতে শুরু করেছি৷ আর আপনারা শুধু টাকাপয়সা আর অনন্তকাল ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির রূপকথার কাহিনি শুনিয়ে চলেছেন৷ কী সাহস আপনাদের!’’
ছবি: Getty Images/S. Silbiger
আমিনাতু হায়দার
আফ্রিকার পশ্চিম সাহারা এলাকায় বসবাসকারী সারাউই সম্প্রদায়ের আমিনাতু হায়দার পশ্চিম সাহারার স্বাধীনতার জন্য ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে লড়ছেন৷ এই সময়ে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন, মরক্কোর পুলিশের মার খেয়েছেন৷ কারণ, মরক্কো এই অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করে৷ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করায় অনেকে হায়দারকে ‘সারাউই গান্ধী’ বলে ডাকেন৷ স্বাধীনতার দাবিতে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছেন তিনি৷
ছবি: Right Livelihood Foundation
গুয় জিয়েনমেই
নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা চীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আইনজীবী তিনি৷ চাকরিতে নারীদের পুরুষের সমান বেতন নিশ্চিত করা, যৌন হয়রানি, চাকরির নিয়োগপত্রে শর্ত হিসেবে গর্ভবতী না হওয়ার শর্ত আরোপের বিরোধিতা ইত্যাদি নিয়ে কাজ করেন জিয়েনমেই৷
ছবি: Right Livelihood Foundation
দাভি কোপেনাভা ও হুটুকারা ইয়ানোমামি অ্যাসোসিয়েশন
ব্রাজিল ও ভেনেজুয়েলার অ্যামাজন রেনফরেস্টে প্রায় ৩৫ হাজার ইয়ানোমামি আদিবাসীর বাস৷ খনিমালিকসহ অন্যদের কাছ থেকে অনেক চাপের মুখে থাকেন তাঁরা৷ ইয়ানোমামিদের অধিকার ও অ্যামাজন বন রক্ষায় কাজ করে থাকে কোপেনাভা ও তাঁর সংগঠন৷