জার্মানে এদের নাম ‘গ্লানৎসবিল্ড' বা চকমকে ছবি, বোধহয় অভ্রের গুঁড়ো মাখানো থাকত বলে৷ স্টিকার হিসেবে বা বড়দিনের কার্ডে হয়তো আপনারাও দেখেছেন, অন্য এক জগতের, অন্য এক মানসিকতার সব ছবি৷
বিজ্ঞাপন
ঊনবিংশ শতাব্দীর সব ছবি আর নকশা – স্টেন্সিল করা কিংবা প্রেস করা, আর বিশেষ করে বড়দিনের সময় অভ্রের গুঁড়ো মাখানো এই সব ‘গ্লান্ৎসবিল্ড' আজও সারা দুনিয়ায় বিক্রি হয়৷
‘গ্লান্ৎসবিল্ড' বিক্রেতা রাল্ফ-টর্স্টেন ফ্রাইহোফ বলেন, ‘‘বিশেষ করে আজকের দিনে আমরা যে দুনিয়ায় থাকি, তার সঙ্গে এর অনেক তফাৎ৷ সহিংসতায় ভরা পৃথিবী, ক্রমেই আরো বেশি জোরে, আরো বেশি উঁচু, আরো রঙীন – আমাদের ছবিগুলো কিন্তু মানুষের মনে ঠিক তার উল্টো প্রভাব সৃষ্টি করে৷''
রাল্ফ-টর্স্টেন ফ্রাইহোফ আর তাঁর বোন আনে-রুথ দু'জনে মিলে ‘ইএফ গ্লান্ৎসবিল্ডার' কোম্পানিটি চালান৷ বহু দশক ধরে তিনি পুরনো পোয়েট্রি অ্যালবাম আর বই সংগ্রহ করে আসছেন৷
পোয়েট্রি অ্যালবামে অনেক সময় নানা ছবি কেটে জোড়া দেওয়া সব ‘কোলাজ' পাওয়া যায়৷
যে ছবিতে ধরা পড়েছে প্রকৃতির শক্তি
এ বছরের ‘ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার’ এর পুরস্কার জিতেছেন টিম ল্যাম্যান৷ এর জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাঁকে৷ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরও যেসব ছবি জিতেছে সেগুলো দেখলে আপনি বিস্মিত অথবা দুঃখ ভারাক্রান্ত হতে পারেন৷
হলদে সবুজ ওরাংওটাং
এই একটি ছবিতে ৫০ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলেছেন টিম ল্যাম্যান৷ আর জিতে নিয়েছেন ‘ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি অফ দ্য ইয়ারের’ সেরা পুরস্কার৷ ইন্দোনেশিয়ার রেইন ফরেস্টে বিলুপ্ত হতে যাওয়া বোর্নিয়ান ওরাংওটাংয়ের ছবি এটি৷ বেশ কিছুদিন চেষ্টা করে অনেক উঁচু এই গাছটিতে উঠে ক্যামেরা সেট করতে হয়েছে ল্যাম্যানকে৷ একসাথে ৬ টি ছবি তুলেছেন তিনি৷ ছবিগুলোর মাধ্যমে বিলুপ্ত হতে যাওয়া প্রাণিটির গল্প জানিয়েছেন৷
কাক আর চাঁদ
মাত্র ১৬ বছরের ব্রিটিশ আলোকচিত্র শিল্পী গিডেয়ন নাইট জিতে নিয়েছেন ‘ইয়ং ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ারের’ খেতাব৷ তার ছবিতে তেমন বিশেষত্ব না থাকলেও রোমান্টিক ছবিটিতে একটি রহস্য লুকিয়ে আছে, যাতে রূপকথার আভাস পাওয়া যায়৷
প্যাঙ্গোলিন
আলোকচিত্রী পল হিল্টনের এই ছবি তোলার সময় এ দৃশ্য সহ্য করতে নিশ্চয়ই কষ্ট হয়েছিল৷ যে কাউকে এ ছবি আহত করবে৷ ৪ হাজার মৃত প্যাঙ্গোলিন জমা করে রাখা হয়েছে এখানে৷ চীন ও ভিয়েতনামে এই মাংসের খুব চাহিদা৷ আর তাদের চামড়া ও হাড় ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ এই প্রাণীগুলোর আটটি প্রজাতিই রয়েছে হুমকির মুখে৷
স্ত্রী ফুল
আলোকচিত্রী ভালতের বিনোতোসের ইটালির উত্তরাঞ্চলে নিজের বাড়িন উঠোনে এই হেজেল নাট বা হেজেল বাদামের গাছ৷ একটি গাছে একসাথে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ফোটে৷ সবচেয়ে কষ্টসাধ্য হলো বাতাসে যখন ফুলগুলো দোলে তখন স্ত্রী ফুলের (লাল রঙের) ছবি তোলা৷
শহরের উপকণ্ঠে চিতাবাঘ
মুম্বইয়ের উপকণ্ঠে সঞ্জয় গান্ধী জাতীয় উদ্যানের কাছে একটি সরু গলিতে রাতের বেলায় এই চিতাবাঘটির দেখা মিলেছিল৷ খাদ্যের খোঁজে বেড়িয়েছিল এটি৷ এই ছবিটি তুলেছেন নয়ন খনলকার৷ ‘আর্বান’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে এটি৷
পেঁচার শোক
সুইডিশ আলোকচিত্রী ম্যাটস অ্যান্ডারসন ‘সাদা-কালো’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কারটি জিতেছেন এই ছবির জন্য৷ বসন্তের দিনগুলোতে অ্যান্ডারসন বনের মধ্যে হাঁটতে যেতেন৷ প্রায়ই দু’টো পেঁচা সঙ্গী হতো তাঁর৷ এর মধ্যে একটি একদিন মারা গেলো৷ অন্য পেঁচাটির দুঃখ তাঁকে স্পর্শ করলো৷ এই সাদা-কালো ছবির মাধ্যমে সেই শোককেই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন তিনি৷
স্ন্যাপার পার্টি
প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলে পূর্ণিমার সময় হাজারো ‘টু স্পট’ লাল স্ন্যাপার ডিম ছাড়ার জন্য এভাবে ঝাঁক বেঁধে ঘুরতে থাকে৷ আলো-আঁধারিতে শুক্রানু আর ডিম্বানু পানিতে খেলা করে৷ টনি উ এই ছবিটি তুলেছেন, যা জিতে নিয়েছে, ‘আন্ডার ওয়াটার’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার৷
স্টারফিসের সঙ্গে খেলা
ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরে এই ছোট্ট সিন্ধু ঘোটকটিকে একটি স্টারফিসের সঙ্গে খেলতে দেখা যাচ্ছে৷ লুই হাভিয়ের সান্দোভাল এই ছবির জন্য ‘ইমপ্রেসন’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছেন৷
8 ছবি1 | 8
রাল্ফ-টর্স্টেন ফ্রাইহোফ জানালেন, ‘‘না, আমার নিজের কখনো পোয়েট্রি অ্যালবাম ছিল না৷ কিন্তু আমি ছেলেবেলা থেকেই এ ধরনের ছবি সংগ্রহ করতে শুরু করি৷ শুধু জার্মানিতে নয়, ফ্রান্সের ফ্লি মার্কেটে গিয়ে এইসব চকমকে ছবি সংগ্রহ করেছি আমি, যা আমার আজকের কলেকশানের ভিত্তি৷''
তাঁর সংগ্রহের নানা ছবি ও নকশার অনুকরণ করে তাঁর কোম্পানির স্ক্র্যাপ ছবি তৈরি করা হয়৷ একটি বিশেষ কোম্পানি ঐতিহাসিক ছবিগুলিকে তাদের ইম্প্রিন্ট সহ স্ক্যান করে৷ পরে রাল্ফ-টর্স্টেন একক ছবিগুলো বেছে বেছে একটি নতুন পিকচার শিট তৈরি করেন৷
রাল্ফ-টর্স্টেন ফ্রাইহোফ শোনালেন, ‘‘মাঝেমধ্যে এমনও হয় যে, বিশেষ করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা তাঁদের পোয়েট্রি অ্যালবামগুলো পাঠান, সাথে চিঠিতে লেখা থাকে, ‘‘আশা করি আপনি এগুলো যত্নে রাখবেন, তাহলে এগুলো অতীতের সাক্ষী হিসেবে বেঁচে থাকবে৷''
প্রতিটি নতুন পিকচার শিটে অনেক হাতের কাজ থাকে৷ আর ছবিগুলো মানুষের চোখে আনন্দের ঝিলিক এনে দেয় বলেই বোধহয় তাদের নাম ‘গ্লানৎসবিল্ড' বা চকমকে ছবি৷